Part 12
[11:6]
আর
পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল
নেই, তবে সবার জীবিকার
দায়িত্ব আল্লাহ
নিয়েছেন তিনি
জানেন তারা কোথায়
থাকে এবং কোথায়
সমাপিত হয়। সবকিছুই
এক সুবিন্যস্ত
কিতাবে রয়েছে।
[11:7]
তিনিই
আসমান ও যমীন ছয়
দিনে তৈরী করেছেন, তাঁর
আরশ ছিল পানির
উপরে, তিনি তোমাদেরকে
পরীক্ষা করতে চান
যে, তোমাদের মধ্যে
কে সবচেয়ে ভাল
কাজ করে। আর যদি
আপনি তাদেরকে বলেন
যে, "নিশ্চয় তোমাদেরকে
মৃত্যুর পরে জীবিত
ওঠানো হবে, তখন কাফেরেরা
অবশ্য বলে এটা তো স্পষ্ট
যাদু!";
[11:8]
আর
যদি আমি এক নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত
তাদের আযাব স্থগিত
রাখি, তাহলে তারা
নিশ্চয়ই বলবে
কোন জিনিসে আযাব ঠেকিয়ে
রাখছে? শুনে রাখ, যেদিন
তাদের উপর আযাব
এসে পড়বে, সেদিন
কিন্তু তা ফিরে যাওয়ার
নয়; তারা যে ব্যাপারে
উপহাস করত তাই
তাদেরকে ঘিরে ফেলবে।
[11:9]
আর
অবশ্যই যদি আমি
মানুষকে আমার
রহমতের আস্বাদ
গ্রহণ করতে দেই, অতঃপর
তা তার থেকে ছিনিয়ে
নেই; তাহলে সে হতাশ ও কৃতঘ্ন
হয়।
[11:10]
আর
যদি তার উপর আপতিত
দুঃখ কষ্টের
পরে তাকে সুখভোগ
করতে দেই, তবে সে
বলতে থাকে যে, আমার
অমঙ্গল দূর হয়ে গেছে, আর সে আনন্দে
আত্নহারা হয়, অহঙ্কারে
উদ্দত হয়ে পড়ে।
[11:11]
তবে
যারা ধৈর্য্যধারণ
করেছে এবং সৎকার্য করেছে
তাদের জন্য ক্ষমা
ও বিরাট প্রতিদান
রয়েছে।
[11:12]
আর
সম্ভবতঃ ঐসব আহকাম
যা ওহীর মাধ্যমে
তোমার নিকট পাঠানো
হয়, তার কিছু অংশ
বর্জন করবে? এবং এতে
মন ছোট করে বসবে? তাদের এ কথায়
যে, তাঁর উপর কোন
ধন-ভান্ডার কেন
অবতীর্ণ হয়নি? অথবা
তাঁর সাথে কোন
ফেরেশতা আসেনি
কেন? তুমিতো শুধু
সতর্ককারী মাত্র; আর সব
কিছুরই দায়িত্বভার তো আল্লাহই নিয়েছেন।
[11:13]
তারা
কি বলে? কোরআন তুমি
তৈরী করেছ? তুমি
বল, তবে তোমরাও
অনুরূপ দশটি সূরা
তৈরী করে নিয়ে
আস এবং আল্লাহ
ছাড়া যাকে
পার ডেকে নাও, যদি তোমাদের
কথা সত্য হয়ে
থাকে।
[11:14]
অতঃপর
তারা যদি তোমাদের
কথা পুরণ করতে
অপারগ হয়; তবে জেনে
রাখ, এটি আল্লাহর
এলম দ্বারা অবতীর্ণ
হয়েছে; আরো একীন
করে নাও যে, আল্লাহ
ব্যতীত অন্য কোন
মাবুদ নেই। অতএব, এখন কি
তোমরা আত্নসমর্পন
করবে?
[11:15]
যে
ব্যক্তি পার্থিবজীবন
ও তার চাকচিক্যই
কামনা করে, হয় আমি
তাদের দুনিয়াতেই
তাদের আমলের প্রতিফল
ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের
প্রতি কিছুমাত্র
কমতি করা হয় না।
[11:16]
এরাই
হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন
ছাড়া নেই। তারা
এখানে যা কিছু
করেছিল সবই বরবাদ
করেছে; আর যা কিছু উপার্জন
করেছিল, সবই বিনষ্ট
হল।
[11:17]
আচ্ছা
বল তো, যে ব্যক্তি
তার প্রভুর
সুস্পষ্ট পথে রয়েছে, আর সাথে
সাথে আল্লাহর তরফ
থেকে একটি সাক্ষীও বর্তমান রয়েছে
এবং তার পূর্ববর্তী
মূসা (আঃ) এর কিতাবও
সাক্ষী যা ছিল পথনির্দেশক ও
রহমত স্বরূপ, (তিনি
কি অন্যান্যের
সমান) অতএব তাঁরা
কোরআনের প্রতি ঈমান আনেন। আর ঐসব
দলগুলি যে কেউ
তা অস্বীকার করে, দোযখই
হবে তার ঠিকানা। অতএব, আপনি
তাতে কোন সন্দেহে
থাকবেন না। নিঃসন্দেহে
তা আপনার পালনকর্তার
পক্ষ হতে ধ্রুব
সত্য; তথাপি অনেকেই
তা বিশ্বাস করে
না।
[11:18]
আর
তাদের চেয়ে বড়
যালেম কে হতে পারে, যারা
আল্লাহর প্রতি
মিথ্যারোপ করে। এসব লোককে
তাদের পালনকর্তার সাক্ষাত সম্মূখীন
করা হবে আর সাক্ষিগণ
বলতে থাকবে, এরাই
ঐসব লোক, যারা
তাদের পালনকর্তার
প্রতি মিথ্যারোপ
করেছিল। শুনে
রাখ, যালেমদের
উপর আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে।
[11:19]
যারা
আল্লাহর পথে বাধা
দেয়, আর তাতে বক্রতা
খুজে বেড়ায়, এরাই
আখরাতকে অস্বীকার
করে।
[11:20]
তারা
পৃথিবীতেও আল্লাহকে
অপারগ করতে
পারবে না এবং আল্লাহ
ব্যতীত তাদের কোন
সাহায্যকারীও
নেই, তাদের জন্য দ্বিগুণ শাস্তি
রয়েছে; তারা শুনতে
পারত না এবং দেখতেও
পেত না।
[11:21]
এরা
সে লোক, যারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত
করেছে, আর এরা যা
কিছু মিথ্যা মা’বুদ সাব্যস্ত
করেছিল, তা সবই তাদের
থেকে হারিয়ে গেছে।
[11:22]
আখেরাতে
এরাই হবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ
কোন সন্দেহ নেই।
[11:23]
নিশ্চয়ই
যারা ঈমান এনেছে
ও সৎকাজ
করেছে এবং স্বীয়
পালনকর্তার সমীপে
বিনতি প্রকাশ করেছে
তারাই বেহেশতবাসী, সেখানেই
তারা চিরকাল থাকবে।
[11:24]
উভয়
পক্ষের দৃষ্টান্ত
হচ্ছে যেমন
অন্ধ ও বধির এবং
যে দেখতে পায়
ও শুনতে পায় উভয়ের
অবস্থা কি এক সমান? তবুও
তোমরা কি ভেবে
দেখ না?
[11:25]
আর
অবশ্যই আমি নূহ
(আঃ) কে তাঁর জাতির
প্রতি প্রেরণ করেছি, (তিনি
বললেন) নিশ্চয়
আমি তোমাদের জন্য
প্রকাশ্য সতর্ককারী।
[11:26]
তোমরা
আল্লাহ ব্যতীত
কারো এবাদত
করবে না। নিশ্চয়
আমি তোমাদের ব্যাপারে
এক যন্ত্রণাদায়ক
দিনের আযাবের ভয় করছি।
[11:27]
তখন
তাঁর কওমের কাফের
প্রধানরা বলল আমরা তো আপনাকে
আমাদের মত একজন
মানুষ ব্যতীত আর
কিছু মনে করি না; আর আমাদের মধ্যে যারা ইতর
ও স্থুল-বুদ্ধিসম্পন্ন
তারা ব্যতীত কাউকে
তো আপনার আনুগত্য
করতে দেখি না
এবং আমাদের উপর
আপনাদের কেন প্রাধান্য
দেখি না, বরং আপনারা
সবাই মিথ্যাবাদী বলে আমারা মনে
করি।
[11:28]
নূহ
(আঃ) বললেন-হে আমার
জাতি! দেখ তো
আমি যদি আমার পালনকর্তার
পক্ষ হতে স্পষ্ট
দলীলের উপর থাক, আর তিনি
যদি তাঁর পক্ষ
হতে আমাকে রহমত
দান করে থাকেন, তারপরেও
তা তোমাদের চোখে
না পড়ে, তাহলে
আমি কি উহা তোমাদের
উপর তোমাদের ইচ্ছার
বিরুদ্ধেই চাপিয়ে
দিতে পারি ?
[11:29]
আর
হে আমার জাতি! আমি
তো এজন্য তোমাদের
কাছে কোন অর্থ
চাই না; আমার পারিশ্রমিক
তো আল্লাহর জিম্মায়
রয়েছে। আমি কিন্তু ঈমানদারদের
তাড়িয়ে দিতে
পারি না। তারা
অবশ্যই তাদের পালনকর্তার
সাক্ষাত লাভ করবে। বরঞ্চ
তোমাদেরই আমি অজ্ঞ
সম্প্রদায় দেখছি।
[11:30]
আর
হে আমার জাতি! আমি
যদি তাদের
তাড়িয়ে দেই তাহলে
আমাকে আল্লাহ হতে
রেহাই দেবে কে? তোমরা
কি চিন্তা করে দেখ না?
[11:31]
আর
আমি তোমাদেরকে
বলি না যে, আমার
কাছে আল্লাহর ভান্ডার
রয়েছে এবং একথাও
বলি না যে, আমি গায়বী
খবরও জানি; একথাও
বলি না যে, আমি একজন
ফেরেশতা; আর তোমাদের
দৃষ্টিতে যারা
লাঞ্ছিত আল্লাহ তাদের কোন কল্যাণ
দান করবেন না। তাদের
মনের কথা আল্লাহ
ভাল করেই জানেন। সুতরাং এমন কথা বললে আমি
অন্যায় কারী হব।
[11:32]
তারা
বলল-হে নূহ! আমাদের
সাথে আপনি তর্ক
করেছেন এবং অনেক
কলহ করেছেন। এখন আপনার
সেই আযাব নিয়ে
আসুন, যে সম্পর্কে
আপনি আমাদিগকে
সতর্ক করেছেন, যদি আপনি
সত্যবাদী হয়ে
থাকেন।
[11:33]
তিনি
বলেন, উহা তোমাদের
কাছে আল্লাহই
আনবেন, যদি তিনি ইচ্ছা
করেন তখন তোমরা
পালিয়ে তাঁকে
অপারগ করতে পারবে না।
[11:34]
আর
আমি তোমাদের নসীহত
করতে চাইলেও
তা তোমাদের জন্য
ফলপ্রসূ হবে না, যদি আল্লাহ
তোমাদেরকে গোমরাহ
করতে চান; তিনিই
তোমাদের পালনকর্তা
এবং তাঁর কাছেই
তোমাদের ফিরে যেতে
হবে।
[11:35]
তারা
কি বলে? আপনি কোরআন
রচনা করে এনেছেন? আপনি
বলে দিন আমি যদি
রচনা করে এনে থাকি, তবে সে
অপরাধ আমার, আর তোমরা যেসব অপরাধ
কর তার সাথে আমার
কোন সম্পর্ক নেই।
[11:36]
আর
নূহ (আঃ) এর প্রতি
ওহী প্রেরণ
করা হলো যে, যারা
ইতিমধ্যেই ঈমান
এনেছে তাদের ছাড়া
আপনার জাতির অন্য
কেউ ঈমান আনবেনা
এতএব তাদের কার্যকলাপে
বিমর্ষ হবেন না।
[11:37]
আর
আপনি আমার সম্মুখে
আমারই নির্দেশ
মোতাবেক একটি নৌকা
তৈরী করুন এবং
পাপিষ্ঠদের ব্যাপারে
আমাকে কোন কথা বলবেন না। অবশ্যই
তারা ডুবে মরবে।
[11:38]
তিনি
নৌকা তৈরী করতে
লাগলেন, আর তাঁর কওমের
নেতৃস্থানীয়
ব্যক্তিরা যখন
পার্শ্ব দিয়ে
যেত, তখন তাঁকে
বিদ্রুপ করত। তিনি
বললেন, তোমরা যদি
আমাদের উপহাস করে
থাক, তবে তোমরা
যেমন উপহাস করছ আমরাও তদ্রুপ
তোমাদের উপহাস
করছি।
[11:39]
অতঃপর
অচিরেই জানতে পারবে-লাঞ্ছনাজনক
আযাব কার উপর আসে
এবং চিরস্থায়ী
আযাব কার উপর অবতরণ
করে।
[11:40]
অবশেষে
যখন আমার হুকুম
এসে পৌঁছাল
এবং ভুপৃষ্ঠ উচ্ছসিত
হয়ে উঠল, আমি বললামঃ
সর্বপ্রকার জোড়ার
দুটি করে এবং যাদের
উপরে পূর্বহে?ই হুকুম
হয়ে গেছে তাদের
বাদি দিয়ে, আপনার
পরিজনবর্গ ও সকল ঈমানদারগণকে
নৌকায় তুলে নিন। বলাবাহুল্য
অতি অল্পসংখ্যক
লোকই তাঁর সাথে
ঈমান এনেছিল।
[11:41]
আর
তিনি বললেন, তোমরা
এতে আরোহন
কর। আল্লাহর নামেই
এর গতি ও স্থিতি। আমার
পালনকর্তা অতি
ক্ষমাপরায়ন, মেহেরবান।
[11:42]
আর
নৌকাখানি তাদের
বহন করে চলল পর্বত প্রমাণ
তরঙ্গমালার মাঝে, আর নূহ
(আঃ) তাঁর পুত্রকে
ডাক দিলেন আর সে
সরে রয়েছিল, তিনি
বললেন, প্রিয় বৎস! আমাদের সাথে
আরোহন কর এবং কাফেরদের
সাথে থেকো না।
[11:43]
সে
বলল, আমি অচিরেই
কোন পাহাড়ে
আশ্রয় নেব, যা আমাকে
পানি হতে রক্ষা
করবে। নূহ (আঃ)
বল্লেন আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম
থেকে কোন রক্ষাকারী
নেই। একমাত্র
তিনি যাকে দয়া
করবেন। এমন সময় উভয়ের মাঝে তরঙ্গ
আড়াল হয়ে দাঁড়াল, ফলে সে
নিমজ্জিত হল।
[11:44]
আর
নির্দেশ দেয়া
হল-হে পৃথিবী!
তোমার পানি গিলে
ফেল, আর হে আকাশ, ক্ষান্ত
হও। আর পানি হ্রাস
করা হল এবং কাজ শেষ হয়ে গেল, আর জুদী
পর্বতে নৌকা ভিড়ল
এবং ঘোষনা করা
হল, দুরাত্না কাফেররা নিপাত
যাক।
[11:45]
আর
নূহ (আঃ) তাঁর পালনকর্তাকে ডেকে বললেন-হে
পরওয়ারদেগার, আমার
পুত্র তো আমার
পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে
সত্য আর আপনিই
সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ
ফয়সালাকারী।
[11:46]
আল্লাহ
বলেন, হে নূহ! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত
নয়। নিশ্চই
সে দুরাচার! সুতরাং
আমার কাছে এমন
দরখাস্ত করবেন
না, যার খবর আপনি
জানেন না। আমি আপনাকে
উপপদেশ দিচ্ছি
যে, আপনি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবেন
না।
[11:47]
নূহ
(আঃ) বলেন-হে আমার পালনকর্তা আমার
যা জানা নেই এমন
কোন দরখাস্ত করা
হতে আমি আপনার
কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি
যদি আমাকে ক্ষমা
না করেন, দয়া
না করেন, তাহলে
আমি ক্ষতিগ্রস্ত
হব।
[11:48]
হুকুম
হল-হে নূহ (আঃ)! আমার পক্ষ হতে নিরাপত্তা
এবং আপনার নিজের
ও সঙ্গীয় সম্প্রদায়গুলির
উপর বরকত সহকারে অবতরণ করুণ। আর অন্যান্য
যেসব সম্প্রদায়
রয়েছে আমি তাদের
কেও উপকৃত হতে
দেব। অতঃপর
তাদের উপর আমার
দরুন আযাব আপতিত
হবে।
[11:49]
এটি
গায়বের খবর, আমি আপনার প্রতি ওহী প্রেরন
করছি। ইতিপূর্বে
এটা আপনার এবং
আপনার জাতির জানা
ছিল না। আপনি ধৈর্য্যধারণ
করুন। যারা ভয়
করে চলে, তাদের
পরিণাম ভাল, সন্দেহ
নেই।
[11:50]
আর
আদ জাতির প্রতি
আমি তাদের ভাই হুদকে প্রেরণ
করেছি; তিনি বলেন-হে
আমার জাতি, আল্লাহর
বন্দেগী কর, তিনি ভিন্ন তোমাদের
কোন মাবুদ নেই, তোমরা
সবাই মিথ্যা আরোপ
করছ।
[11:51]
হে
আমার জাতি! আমি
এজন্য তোমাদের
কাছে কোন মজুরী
চাই না; আমার মজুরী
তাঁরই কাছে যিনি
আমাকে পয়দা করেছেন; তবু তোমরা
কেন বোঝ না?
[11:52]
আর
হে আমার কওম! তোমাদের
পালন কর্তার
কাছে তোমরা ক্ষমা
প্রার্থনা কর, অতঃপর
তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ
কর; তিনি আসমান
থেকে তোমাদের উপর
বৃষ্টি ধারা প্রেরণ
করবেন এবং তোমাদের
শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা
কিন্তু অপরাধীদের
মত বিমুখ হয়ো
না।
[11:53]
তারা
বলল-হে হুদ, তুমি
আমাদের কাছে
কোন প্রমাণ নিয়ে
আস নাই, আমরা তোমার
কথায় আমাদের দেব-দেবীদের
বর্জন করতে পারি না আর আমরা
তোমার প্রতি ঈমান
আনয়নকারীও নই।
[11:54]
বরং
আমরাও তো বলি যে, আমাদের কোন দেবতা তোমার
উপরে শোচনীয় ভূত
চাপিয়ে দিয়েছে। হুদ বললেন-আমি
আল্লাহকে সাক্ষী করেছি
আর তোমাও সাক্ষী
থাক যে, আমার কোন সম্পর্ক
নাই তাঁদের সাথে
যাদের কে তোমরা
শরিক করছ;
[11:55]
তাকে
ছাড়া, তোমরা সবাই
মিলে আমার অনিষ্ট
করার প্রয়াস চালাও, অতঃপর
আমাকে কোন অবকাশ
দিও না।
[11:56]
আমি
আল্লাহর উপর নিশ্চিত
ভরসা করেছি
যিনি আমার এবং
তোমাদের পরওয়ারদেগার। পৃথিবীর
বুকে বিচরণকারী
এমন কোন প্রাণী
নাই যা তাঁর র্পূণ
আয়ত্তাধীন নয়। আমার
পালকর্তার সরল
পথে সন্দেহ নেই।
[11:57]
তথাপি
যদি তোমরা মুখ
ফেরাও, তবে আমি তোমাদেরকে
তা পৌছিয়েছি যা
আমার কাছে তোমাদের
প্রতি প্রেরিত
হয়েছে; আর আমার
পালনকর্তা অন্য
কোন জাতিকে তোমাদের
স্থলাভিষিক্ত
করবেন, আর তোমরা তাঁর কিছুই বিগড়াতে
পারবে না; নিশ্চয়ই
আমার পরওয়ারদেগারই
প্রতিটি বস্তুর
হেফাজতকারী।
[11:58]
আর
আমার আদেশ যখন
উপস্থিত হল, তখন আমি
নিজ রহমতে হুদ
এবং তাঁর সঙ্গী
ঈমানদারগণকে পরিত্রাণ
করি এবং তাদেরকে
এক কঠিন শাস্তি
থেকে রক্ষা করি।
[11:59]
এ
ছিল আদ জাতি, যারা
তাদের পালনকর্তার
আয়াতকে অমান্য
করেছে, আর তদীয় রসূলগণের
অবাধ্যতা করেছে
এবং প্রত্যেক
উদ্ধত বিরোধীদের
আদেশ পালন করেছে।
[11:60]
এ
দুনিয়ায় তাদের
পিছনে পিছনে লা’নত রয়েছে
এবং কেয়ামতের
দিনেও; জেনে রাখ, আদ জাতি
তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে, হুদের
জ্ঞাতি আদ জাতির
প্রতি অভিসম্পাত
রয়েছে জেনে রাখ।
[11:61]
আর
সামুদ জাতি প্রতি
তাদের ভাই সালেহ কে প্রেরণ
করি; তিনি বললেন, হে আমার
জাতি। আল্লাহর
বন্দেগী কর, তিনি
ছাড়া তোমাদের
কোন উপাস্য নাই। তিনিই
যমীন হতে তোমাদেরকে
পয়দা করেছেন, তন্মধ্যে তোমাদেরকে বসতি
দান করেছেন। অতএব; তাঁর
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
কর অতঃপর তাঁরই
দিকে ফিরে চল
আমার পালনকর্তা
নিকটেই আছেন, কবুল
করে থাকেন; সন্দেহ
নেই।
[11:62]
তারা
বলল-হে সালেহ, ইতিপূর্বে তোমার কাছে আমাদের
বড় আশা ছিল। আমাদের
বাপ-দাদা যা পূজা
করত তুমি কি আমাদেরকে তার পূজা করতে
নিষেধ কর? কিন্তু
যার প্রতি তুমি
আমাদের আহবান জানাচ্ছ
আমাদের তাতে
এমন সন্দেহ রয়েছে
যে, মন মোটেই সায়
দিচ্ছে না।
[11:63]
সালেহ
বললেন-হে আমার
জাতি! তোমরা
কি মনে কর, আমি যদি
আমার পালনকর্তার
পক্ষ হতে বুদ্ধি
বিবেচনা লাভ করে
থাকি আর তিনি
যদি আমাকে নিজের
তরফ হতে রহমত দান
করে থাকেন, অতঃপর
আমি যদি তাঁর অবাধ্য হই তবে তার থেকে
কে আমায় রক্ষা
করবে? তোমরা তো আমার
ক্ষতি ছাড়া কিছুই
বৃদ্ধি করতে
পরবে না
[11:64]
আর
হে আমার জাতি! আল্লাহর
এ উষ্ট্রীটি
তোমাদের জন্য নিদর্শন, অতএব
তাকে আল্লাহর যমীনে
বিচরণ করে খেতে
দাও, এবং তাকে মন্দভাবে
স্পর্শও করবে না। নতুবা
অতি সত্বর তোমাদেরকে
আযাব পাকড়াও করবে।
[11:65]
তবু
তারা উহার পা কেটে
দিল। তখন সালেহ
বললেন-তোমরা নিজেদের
গৃহে তিনটি দিন
উপভোগ করে নাও। ইহা এমন
ওয়াদা যা মিথ্যা হবে না।
[11:66]
অতঃপর
আমার আযাব যখন
উপস্থিত হল, তখন আমি
সালেহকে ও তদীয়
সঙ্গী ঈমানদারগণকে
নিজ রহমতে উদ্ধার
করি, এবং সেদিনকার
অপমান হতে রক্ষা
করি। নিশ্চয়
তোমার পালনকর্তা
তিনি সর্বশক্তিমান পরাক্রমশালী।
[11:67]
আর
ভয়ঙ্কর গর্জন
পাপিষ্ঠদের পাকড়াও করল, ফলে ভোর
হতে না হতেই তারা
নিজ নিজ গৃহসমূহে
উপুর হয়ে পড়ে
রইল।
[11:68]
যেন
তাঁরা কোনদিনই
সেখানে ছিল না। জেনে রাখ, নিশ্চয়
সামুদ জাতি তাদের
পালনকর্তার প্রতি
অস্বীকার করেছিল। আরো শুনে রাখ, সামুদ
জাতির জন্য অভিশাপ
রয়েছে।
[11:69]
আর
অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমেরে
কাছে সুসংবাদ নিয়ে
এসেছিল তারা বলল
সালাম, তিনিও বললেন-সালাম। অতঃপর
অল্পক্ষণের মধ্যেই
তিনি একটি ভুনা
করা বাছুর নিয়ে
এলেন!
[11:70]
কিন্তু
যখন দেখলেন যে, আহার্য্যের
দিকে তাদের হস্ত
প্রসারিত হচ্ছে
না, তখন তিনি সন্ধিগ্ধ
হলেন এবং মনে মনে তাঁদের সম্পর্কে
ভয় অনুভব করতে
লাগলেন। তারা
বলল-ভয় পাবেন
না। আমরা লূতের কওমের প্রতি প্রেরিত
হয়েছি।
[11:71]
তাঁর
স্ত্রীও নিকটেই দাড়িয়েছিল, সে হেসে
ফেলল। অতঃপর
আমি তাকে ইসহাকের
জন্মের সুখবর দিলাম
এবং ইসহাকের
পরের ইয়াকুবেরও।
[11:72]
সে
বলল-কি দুর্ভাগ্য
আমার! আমি সন্তান
প্রসব করব? অথচ আমি
বার্ধক্যের শেষ
প্রান্তে এসে উপনীত
হয়েছি আর আমার স্বামীও বৃদ্ধ, এতো ভারী
আশ্চর্য কথা।
[11:73]
তারা
বলল-তুমি আল্লাহর
হুকুম সম্পর্কে
বিস্ময়বোধ করছ? হে গৃহবাসীরা, তোমাদের
উপর আল্লাহর রহমত
ও প্রভুত বরকত রয়েছে। নিশ্চয়
আল্লাহ প্রশংসিত
মহিমাময়।
[11:74]
অতঃপর
যখন ইব্রাহীম
(আঃ) এর আতঙ্ক
দূর হল এবং তিনি
সুসংবাদ প্রাপ্ত
হলেন, তখন তিনি আমার
সাথে তর্ক শুরু করলেন কওমে লূত
সম্পর্কে।
[11:75]
ইব্রাহীম
(আঃ) বড়ই ধৈর্য্যশীল, কোমল
অন্তর, আল্লাহমুখী
সন্দেহ নেই।
[11:76]
ইব্রাহীম, এহেন
ধারণা পরিহার কর; তোমার পালনকর্তার
হুকুম এসে গেছে, এবং তাদের
উপর সে আযাব অবশ্যই
আপতিত হবে, যা কখনো
প্রতিহত হবার নয়।
[11:77]
আর
যখন আমার প্রেরিত
ফেরেশতাগণ লূত (আঃ) এর নিকট
উপস্থিত হল। তখন তাঁদের
আগমনে তিনি দুচিন্তাগ্রস্ত
হলেন এবং তিনি
বলতে লাগলেন, আজ অত্যন্ত
কঠিন দিন।
[11:78]
আর
তাঁর কওমের লোকেরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে
তার (গৃহ) পানে ছুটে
আসতে লাগল। পূর্ব
থেকেই তারা কু-কর্মে তৎপর ছিল। লূত (আঃ)
বললেন-হে আমার
কওম, এ আমার কন্যারা
রয়েছে, এরা তোমাদের
জন্য অধিক পবিত্রতমা। সুতরাং
তোমরা আল্লাহকে
ভয় কর এবং অতিথিদের
ব্যাপারে আমাকে লজ্জিত করো না, তোমাদের
মধ্যে কি কোন ভাল
মানুষ নেই।
[11:79]
তারা
বলল ু তুমি তো জানই, তোমার
কন্যাদের নিয়ে
আমাদের কোন গরজ
নেই। আর আমরা
কি চাই, তাও তুমি অবশ্যই
জান।
[11:80]
লূত
(আঃ) বললেন-হায়, তোমাদের বিরুদ্ধে যদি
আমার শক্তি থাকত
অথবা আমি কোন সূদৃঢ়
আশ্রয় গ্রহণ করতে
সক্ষম হতাম।
[11:81]
মেহমান
ফেরেশতাগন বলল-হে
লূত (আঃ) আমরা তোমাদের
পালনকর্তার পক্ষ
হতে প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখনো
তোমার দিকে পৌঁছাতে পারবে
না। ব্যস তুমি
কিছুটা রাত থাকতে
থাকতে নিজের লোকজন
নিয়ে বাইরে চলে যাও। আর তোমাদের
কেউ যেন পিছনে
ফিরে না তাকায়। কিন্তু
তোমার স্ত্রী নিশ্চয় তার উপরও তা আপতিত
হবে, যা ওদের উপর
আপতিত হবে। ভোর বেলাই
তাদের প্রতিশ্রুতির সময়, ভোর কি খুব
নিকটে নয়?
[11:82]
অবশেষে
যখন আমার হুকুম
এসে পৌঁছাল, তখন আমি
উক্ত জনপদকে উপরকে
নীচে করে দিলাম
এবং তার উপর স্তরে
স্তরে কাঁকর
পাথর বর্ষণ করলাম।
[11:83]
যার
প্রতিটি তোমার
পালনকর্তার নিকট চিহ্নিত
ছিল। আর সেই
পাপিষ্ঠদের থেকে
খুব দূরেও নয়।
[11:84]
আর
মাদইয়ানবাসীদের
প্রতি তাদের
ভাই শোয়ায়েব
(আঃ) কে প্রেরণ করেছি। তিনি
বললেন-হে আমার
কওম! আল্লাহর বন্দেগী কর, তিনি
ছাড়া আমাদের কোন
মাবুদ নাই। আর পরিমাপে
ও ওজনে কম দিও না, আজ আমি তোমাদেরকে
ভাল অবস্থায়ই
দেখছি, কিন্তু আমি
তোমাদের উপর এমন
একদিনের আযাবের আশঙ্কা করছি যেদিনটি
পরিবেষ্টনকারী।
[11:85]
আর
হে আমার জাতি, ন্যায়নিষ্ঠার
সাথে ঠিকভাবে পরিমাপ
কর ও ওজন দাও এবং
লোকদের জিনিসপত্রে
কোনরূপ ক্ষতি
করো না, আর পৃথিবীতে
ফাসাদ করে বেড়াবে
না।
[11:86]
আল্লাহ
প্রদত্ত উদ্ধৃত্ত তোমাদের জন্য
উত্তম, যদি তোমরা
ঈমানদার হও, আর আমি
তো তোমাদের উপর
সদা পর্যবেক্ষণকারী
নই।
[11:87]
তারা
বলল-হে শোয়ায়েব
(আঃ) আপনার
নামায কি আপনাকে
ইহাই শিক্ষা দেয়
যে, আমরা ঐসব উপাস্যদেরকে
পরিত্যাগ করব আমাদের বাপ-দাদারা
যাদের উপাসনা করত? অথবা
আমাদের ধন-সম্পদে
ইচ্ছামত যা কিছু
করে থাকি, তা ছেড়ে
দেব? আপনি তো একজন
খাস মহৎ
ব্যক্তি ও সৎপথের
পথিক।
[11:88]
শোয়ায়েব
(আঃ) বললেন-হে দেশবাসী, তোমরা
কি মনে কর! আমি যদি
আমার পরওয়ারদেগারের
পক্ষ হতে সুস্পষ্ট দলীলের উপর কায়েম
থাকি আর তিনি যদি
নিজের তরফ হতে
আমাকে উত্তম রিযিক
দান করে থাকেন, (তবে কি
আমি তাঁর হুকুম
অমান্য করতে পারি?) আর আমি
চাই না যে তোমাদেরকে যা ছাড়াতে চাই
পরে নিজেই সে কাজে
লিপ্ত হব, আমি তো
যথাসাধ্য শোধরাতে
চাই। আল্লাহর
মদদ দ্বারাই কিন্তু
কাজ হয়ে থাকে, আমি তাঁর
উপরই নির্ভর করি
এবং তাঁরই প্রতি ফিরে যাই।
[11:89]
আর
হে আমার জাতি! আমার
সাথে জিদ করে
তোমরা নূহ বা হুদ
অথবা সালেহ (আঃ)
এর কওমের মত নিজেদের
উপর আযাব ডেকে আনবে না। আর লূতের
জাতি তো তোমাদের
থেকে খুব দূরে
নয়।
[11:90]
আর
তোমাদের পালনকর্তার
কাছে মার্জনা
চাও এবং তাঁরই
পানে ফিরে এসো
নিশ্চয়ই আমার
পরওয়ারদেগার
খুবই মেহেরবান অতিস্নেহময়।
[11:91]
তারা
বলল-হে শোয়ায়েব
(আঃ) আপনি যা
বলেছেন তার অনেক
কথাই আমরা বুঝি
নাই, আমারা তো আপনাকে
আমাদের মধ্যে দূর্বল ব্যক্তি
রূপে মনে করি। আপনার
ভাই বন্ধুরা না
থাকলে আমরা আপনাকে প্রস্তরাঘাতে
হত্যা করতাম। আমাদের
দৃষ্টিতে আপনি
কোন মর্যাদাবান
ব্যক্তি নন।
[11:92]
শোয়ায়েব
(আঃ) বলেন-হে আমার জাতি, আমার ভাই বন্ধুরা
কি তোমাদের কাছে
আল্লাহর চেয়ে
প্রভাবশালী? আর তোমরা তাকে বিস্মৃত
হয়ে পেছনে ফেলে
রেখেছ, নিশ্চয় তোমাদের
কার্যকলাপ আমার
পালনকর্তার আয়ত্তে রয়েছে।
[11:93]
আর
হে আমার জাতি, তোমরা
নিজ স্থানে
কাজ করে যাও, আমিও
কাজ করছি, অচিরেই
জানতে পারবে কার
উপর অপমানকর আযাব আসে আর কে মিথ্যাবাদী? আর তোমরাও
অপেক্ষায় থাক, আমিও
তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম।
[11:94]
আর
আমার হুকুম যখন
এল, আমি শোয়ায়েব
(আঃ) ও তাঁর সঙ্গী
ঈমানদারগণকে নিজ
রহমতে রক্ষা করি
আর পাপিষ্ঠদের
উপর বিকট গর্জন
পতিত হলো। ফলে ভোর
না হতেই তারা নিজেদের
ঘরে উপুড় হয়ে
পড়ে রইল।
[11:95]
যেন
তারা সেখানে কখনো
বসবাসই করে নাই। জেনে
রাখ, সামুদের প্রতি
অভিসম্পাতের মত
মাদইয়ানবাসীর
উপরেও অভিসম্পাত।
[11:96]
আর
আমি মূসা (আঃ) কে
প্রেরণ করি আমার
নিদর্শনাদি ও সুস্পষ্ট
সনদসহ;
[11:97]
ফেরাউন
ও তার পারিষদবর্গের কাছে, তবুও তারা
ফেরাউনের হুকুমে
চলতে থাকে, অথচ ফেরাউনের
কোন কথা ন্যায়
সঙ্গত ছিল না।
[11:98]
কেয়ামতের
দিন সে তার জাতির লোকদের আগে আগে
থাকবে এবং তাদেরকে
জাহান্নামের আগুনে
পৌঁছে দিবে। আর সেটা
অতীব নিকৃষ্ট
স্থান, সেখানে তারা
পৌঁছেছে।।
[11:99]
আর
এ জগতেও তাদের
পেছনে লানত রয়েছে এবং কিয়ামতের
দিনেও; অত্যন্ত জঘন্য
প্রতিফল, যা তারা
পেয়েছে।
[11:100]
এ
হচ্ছে কয়েকটি
জনপদের সামান্য
ইতিবৃত্ত, যা আমি
আপনাকে শোনাচ্ছি। তন্মধ্যে
কোন কোনটি এখনও
বর্তমান আছে আর কোন কোনটির
শিকড় কেটে দেয়া
হয়েছে।
[11:101]
আমি
কিন্তু তাদের প্রতি
জুলুম করি নাই
বরং তারা নিজেরাই
নিজের উপর অবিচার
করেছে। ফলে আল্লাহকে
বাদ দিয়ে তারা যেসব মাবুদকে
ডাকতো আপনার পালনকর্তার
হুকুম যখন এসে
পড়ল, তখন কেউ কোন
কাজে আসল না। তারা
শুধু বিপর্যয়ই
বৃদ্ধি করল।
[11:102]
আর
তোমার পরওয়ারদেগার
যখন কোন পাপপূর্ণ
জনপদকে ধরেন, তখন এমনিভাবেই
ধরে থাকেন। নিশ্চয়
তাঁর পাকড়াও খুবই মারাত্নক, বড়ই
কঠোর।
[11:103]
নিশ্চয়
ইহার মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন প্রতিটি
মানুষের জন্য যে
আখেরাতের আযাবকে
ভয় করে। উহা এমন
একদিন, যে দিন সব
মানুষেই সমবেত
হবে, সেদিনটি যে
হাযিরের দিন।
[11:104]
আর
আমি যে উহা বিলম্বিত
করি, তা শুধু একটি
ওয়াদার কারণে
যা নির্ধারিত রয়েছে।
[11:105]
যেদিন
তা আসবে সেদিন
আল্লাহর অনুমতি
ছাড়া কেউ কোন
কথা বলতে পারে
না। অতঃপর কিছু
লোক হবে হতভাগ্য
আর কিছু লোক সৌভাগ্যবান।
[11:106]
অতএব
যারা হতভাগ্য তারা
দোযখে যাবে, সেখানে
তারা আর্তনাদ ও
চিৎকার করতে
থাকবে।
[11:107]
তারা
সেখানে চিরকাল
থাকবে, যতদিন আসমান
ও যমীন বর্তমান
থাকবে। তবে তোমার
প্রতিপালক অন্য
কিছু ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। নিশ্চয়
তোমার পরওয়ারদেগার
যা ইচ্ছা করতে
পারেন।
[11:108]
আর
যারা সৌভাগ্যবান
তারা বেহেশতের
মাঝে, সেখানেই চিরদিন
থাকবে, যতদিন আসমান
ও যমীন বর্তমান
থাকবে। তবে তোমার প্রভু অন্য
কিছু ইচ্ছা করলে
ভিন্ন কথা। এ দানের
ধারাবাহিকতা কখনো
ছিন্ন হওয়ার
নয়।
[11:109]
অতএব, তারা
যেসবের উপাসনা
করে তুমি সে
ব্যাপারে কোনরূপ
ধোঁকায় পড়বে
না। তাদের পূর্ববর্তী
বাপ-দাদারা যেমন পূজা উপাসনা করত, এরাও
তেমন করছে। আর নিশ্চয়
আমি তাদেরকে আযাবের
ভাগ কিছু মাত্রও
কম না করেই পুরোপুরি
দান করবো।
[11:110]
আর
আমি মূসা (আঃ)-কে
অবশ্যই কিতাব
দিয়েছিলাম অতঃপর
তাতে বিরোধ সৃষ্টি
হল; বলাবাহুল্য
তোমার পালনকর্তার
পক্ষ হতে, একটি
কথা যদি আগেই বলা
না হত, তাহলে তাদের
মধ্যে চুড়ান্ত
ফয়সালা হয়ে যেত তারা এ ব্যাপারে
এমনই সন্দেহ প্রবণ
যে, কিছুতেই নিশ্চিত
হতে পারছে না।
[11:111]
আর
যত লোকই হোক না
কেন, যখন সময়
হবে, তোমার প্রভু
তাদের সকলেরই আমলের
প্রতিদান পুরোপুরি
দান করবেন। নিশ্চয় তিনি তাদের যাবতীয়
কার্যকলাপের খবর
রাখেন।
[11:112]
অতএব, তুমি
এবং তোমার সাথে যারা তওবা করেছে
সবাই সোজা পথে
চলে যাও-যেমন তোমায়
হুকুম দেয়া হয়েছে
এবং সীমা লঙ্ঘন
করবে না, তোমরা
যা কিছু করছ, নিশ্চয়
তিনি তার প্রতি
দৃষ্টি রাখেন।
[11:113]
আর
পাপিষ্ঠদের প্রতি
ঝুঁকবে না। নতুবা
তোমাদেরকেও আগুনে
ধরবে। আর আল্লাহ
ব্যতীত তোমাদের
কোন বন্ধু নাই। অতএব কোথাও সাহায্য
পাবে না।
[11:114]
আর
দিনের দুই প্রান্তেই
নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতের
প্রান্তভাগে পূর্ণ
কাজ অবশ্যই পাপ
দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের
জন্য এটি এক মহা
স্মারক।
[11:115]
আর
ধৈর্য্যধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ পূণ্যবানদের
প্রতিদান বিনষ্ট
করেন না।
[11:116]
কাজেই, তোমাদের
পূর্ববতী জাতি গুলির মধ্যে এমন
সৎকর্মশীল
কেন রইল না, যারা
পৃথিবীতে বিপর্যয়
সৃষ্টি করতে বাধা দিত; তবে মুষ্টিমেয়
লোক ছিল যাদেরকে
আমি তাদের মধ্য
হতে রক্ষা করেছি। আর পাপিষ্ঠরা তো
ভোগ বিলাসে মত্ত
ছিল যার সামগ্রী
তাদেরকে যথেষ্ট
দেয়া হয়েছিল। আসলে তারা ছিল মহা অপরাধী।
[11:117]
আর
তোমার পালনকর্তা
এমন নন যে, জনবসতিগুলোকে
অন্যায়ভাবে ধ্বংস
করে দেবেন, সেখানকার
লোকেরা সৎকর্মশীল
হওয়া সত্ত্বেও।
[11:118]
আর
তোমার পালনকর্তা
যদি ইচ্ছা করতেন, তবে অবশ্যই
সব মানুষকে একই
জাতিসত্তায় পরিনত
করতে পারতেন আর
তারা বিভিন্ন
ভাগে বিভক্ত হতো
না।
[11:119]
তোমার
পালনকর্তা যাদের
উপর রহমত করেছেন, তারা
ব্যতীত সবাই চিরদিন
মতভেদ করতেই থাকবে
এবং এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমার
আল্লাহর কথাই পূর্ণ
হল যে, অবশ্যই আমি
জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ
দ্বারা একযোগে
ভর্তি করব।
[11:120]
আর
আমি রসূলগণের সব
বৃত্তান্তই তোমাকে বলছি, যদ্দ্বারা
তোমার অন্তরকে
মজবুত করছি। আর এভাবে
তোমার নিকট মহাসত্য এবং ঈমানদারদের
জন্য নসীহত ও স্বরণীয়
বিষয়বস্তু এসেছে।
[11:121]
আর
যারা ঈমান আনে
না, তাদেরকে বলে দাও যে, তোমরা
নিজ নিজ অবস্থায়
কাজ করে যাও আমরাও
কাজ করে যাই।
[11:122]
এবং
তোমরাও অপেক্ষা
করে থাক, আমরাও
অপেক্ষায় রইলাম।
[11:123]
আর
আল্লাহর কাছেই
আছে আসমান ও যমীনের গোপন তথ্য; আর সকল
কাজের প্রত্যাবর্তন
তাঁরই দিকে; অতএব, তাঁরই
বন্দেগী কর এবং
তাঁর উপর ভরসা
রাখ, আর তোমাদের
কার্যকলাপ সম্বন্ধে
তোমার পালনকর্তা কিন্তু বে-খবর
নন।
@
12 Yusuf
শুরু
করছি আল্লাহর
নামে যিনি পরম
করুণাময়, অতি
দয়ালু।
[12:1]
আলিফ-লা-ম-রা; এগুলো
সুস্পষ্ট গ্রন্থের আয়াত।
[12:2]
আমি
একে আরবী ভাষায়
কোরআন রূপে
অবতীর্ণ করেছি, যাতে
তোমরা বুঝতে পার।
[12:3]
আমি
তোমার নিকট উত্তম
কাহিনী বর্ণনা
করেছি, যেমতে আমি
এ কোরআন তোমার
নিকট অবতীর্ণ করেছি। তুমি
এর আগে অবশ্যই এ ব্যাপারে অনবহিতদের
অন্তর্ভূক্ত ছিলে।
[12:4]
যখন
ইউসুফ পিতাকে বললঃ
পিতা, আমি স্বপ্নে
দেখেছি এগারটি
নক্ষত্রকে। সুর্যকে
এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে
আমার উদ্দেশে
সেজদা করতে দেখেছি।
[12:5]
তিনি
বললেনঃ বৎস, তোমার
ভাইদের সামনে
এ স্বপ্ন বর্ণনা
করো না। তাহলে
তারা তোমার বিরুদ্ধে
চক্রান্ত করবে। নিশ্চয় শয়তান
মানুষের প্রকাশ্য।
[12:6]
এমনিভাবে
তোমার পালনকর্তা তোমাকে মনোনীত
করবেন এবং তোমাকে
বাণীসমূহের নিগুঢ়
তত্ত্ব শিক্ষা
দেবেন এবং পূর্ণ করবেন স্বীয়
অনুগ্রহ তোমার
প্রতি ও ইয়াকুব
পরিবার-পরিজনের
প্রতি; যেমন ইতিপূর্বে তোমার
পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম
ও ইসহাকের প্রতি
পূর্ণ করেছেন। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা
অত্যন্ত জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
[12:7]
অবশ্য
ইউসুফ ও তাঁর ভাইদের কাহিনীতে জিজ্ঞাসুদের
জন্যে নিদর্শনাবলী
রয়েছে।
[12:8]
যখন
তারা বললঃ অবশ্যই
ইউসুফ ও তাঁর
ভাই আমাদের পিতার
কাছে আমাদের চাইতে
অধিক প্রিয় অথচ
আমরা একটা সংহত
শক্তি বিশেষ। নিশ্চয়
আমাদের পিতা স্পষ্ট
ভ্রান্তিতে রয়েছেন।
[12:9]
হত্যা
কর ইউসুফকে কিংবা
ফেলে আস তাকে
অন্য কোন স্থানে। এতে শুধু
তোমাদের প্রতিই
তোমাদের পিতার
মনোযোগ নিবিষ্ট হবে এবং এরপর তোমরা
যোগ্য বিবেচিত
হয়ে থাকবে।
[12:10]
তাদের
মধ্য থেকে একজন
বলল, তোমরা ইউসুফ
কে হত্যা করো না, বরং ফেলে
দাও তাকে অন্ধকূপে
যাতে কোন পথিক
তাকে উঠিয়ে
নিয়ে যায়, যদি তোমাদের
কিছু করতেই হয়।
[12:11]
তারা
বললঃ পিতাঃ ব্যাপার
কি, আপনি ইউসুফের
ব্যাপারে আমাদেরকে
বিশ্বাস করেন না
? আমরা
তো তার হিতাকাংখী।
[12:12]
আগামীকাল
তাকে আমাদের সাথে প্রেরণ করুন-তৃপ্তিসহ
খাবে এবং খেলাধুলা
করবে এবং আমরা
অবশ্যই তার রক্ষণাবেক্ষন করব।
[12:13]
তিনি
বললেনঃ আমার দুশ্চিন্তা হয় যে, তোমরা তাকে
নিয়ে যাবে এবং
আমি আশঙ্কা করি
যে, ব্যাঘ্র তাঁকে
খেয়ে ফেলবে
এবং তোমরা তার
দিক থেকে গাফেল
থাকবে।
[12:14]
তারা
বললঃ আমরা একটি
ভারী দল থাকা
সত্ত্বেও যদি ব্যাঘ্র
তাকে খেয়ে ফেলে, তবে আমরা
সবই হারালাম।
[12:15]
অতঃপর
তারা যখন তাকে
নিয়ে চলল এবং অন্ধকূপে
নিক্ষেপ করতে একমত
হল এবং আমি তাকে
ইঙ্গিত করলাম যে, তুমি
তাদেরকে তাদের
এ কাজের কথা বলবে
এমতাবস্থায় যে, তারা
তোমাকে চিনবে না।
[12:16]
তারা
রাতের বেলায় কাঁদতে কাঁদতে পিতার
কাছে এল।
[12:17]
তারা
বললঃ পিতাঃ আমরা
দৌড় প্রতিযোগিতা
করতে গিয়েছিলাম
এবং ইউসুফকে আসবাব-পত্রের
কাছে রেখে গিয়েছিলাম। অতঃপর তাকে বাঘে
খেয়ে ফেলেছে। আপনি
তো আমাদেরকে বিশ্বাস
করবেন না, যদিও
আমরা সত্যবাদী।
[12:18]
এবং
তারা তার জামায়
কৃত্রিম রক্ত
লাগিয়ে আনল। বললেনঃ
এটা কখনই নয়; বরং তোমাদের
মন তোমাদেরকে একটা
কথা সাজিয়ে
দিয়েছে। সুতরাং
এখন ছবর করাই শ্রেয়। তোমরা
যা বর্ণনা করছ, সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহই
আমার সাহায্য স্থল।
[12:19]
এবং
একটি কাফেলা এল। অতঃপর তাদের পানি সংগ্রাহককে
প্রেরণ করল। সে বালতি
ফেলল। বললঃ কি
আনন্দের কথা। এ তো একটি কিশোর তারা
তাকে পন্যদ্রব্য
গণ্য করে গোপন
করে ফেলল। আল্লাহ
খুব জানেন যা কিছু তারা করেছিল।
[12:20]
ওরা
তাকে কম মূল্যে
বিক্রি করে দিল গনাগুণতি
কয়েক দেরহাম এবং
তাঁর ব্যাপারে
নিরাসক্ত ছিল।
[12:21]
মিসরে
যে ব্যক্তি তাকে
ক্রয় করল, সে তার
স্ত্রীকে বললঃ
একে সম্মানে রাখ। সম্ভবতঃ
সে আমাদের কাছে
আসবে অথবা আমরা তাকে পুত্ররূপে
গ্রহণ করে নেব। এমনিভাবে
আমি ইউসুফকে এদেশে
প্রতিষ্ঠিত করলাম এবং এ জন্যে
যে তাকে বাক্যাদির
পূর্ণ মর্ম অনুধাবনের
পদ্ধতি বিষয়ে
শিক্ষা দেই। আল্লাহ
নিজ কাজে প্রবল
থাকেন, কিন্তু অধিকাংশ
লোক তা জানে না।
[12:22]
যখন
সে পূর্ণ যৌবনে
পৌছে গেল, তখন তাকে
প্রজ্ঞা ও ব্যুৎপত্তি দান করলাম। এমননিভাবে
আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে প্রতিদান দেই।
[12:23]
আর
সে যে মহিলার ঘরে
ছিল, ঐ মহিলা
তাকে ফুসলাতে লাগল
এবং দরজাসমূহ বন্ধ
করে দিল। সে মহিলা
বললঃ শুন! তোমাকে বলছি, এদিকে আস, সে বললঃ
আল্লাহ রক্ষা করুন; তোমার
স্বামী আমার মালিক। তিনি আমাকে সযত্নে
থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয়
সীমা লংঘনকারীগণ
সফল হয় না।
[12:24]
নিশ্চয়
মহিলা তার বিষয়ে চিন্তা করেছিল
এবং সেও মহিলার
বিষয়ে চিন্তা
করত। যদি না
সে স্বীয় পালনকর্তার মহিমা অবলোকন
করত। এমনিবাবে
হয়েছে, যাতে আমি তার
কাছ থেকে মন্দ
বিষয় ও নিলজ্জ বিষয় সরিয়ে
দেই। নিশ্চয়
সে আমার মনোনীত
বান্দাদের একজন।
[12:25]
তারা
উভয়ে ছুটে দরজার
দিকে গেল এবং
মহিলা ইউসুফের
জামা পিছন দিক
থেকে ছিঁড়ে ফেলল। উভয়ে
মহিলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল। মহিলা
বললঃ যে ব্যক্তি
তোমার পরিজনের
সাথে কুকর্মের
ইচ্ছা করে, তাকে
কারাগারে পাঠানো
অথবা অন্য কোন
যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি দেয়া ছাড়া
তার আর কি শাস্তি
হতে পারে?
[12:26]
ইউসুফ
(আঃ) বললেন, সেই আমাকে আত্মসংবরণ না
করতে ফুসলিয়েছে। মহিলার
পরিবারে জনৈক সাক্ষী
দিল যে, যদি তার জামা সামনের দিক থেকে
ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা
সত্যবাদিনী এবং
সে মিথ্যাবাদি।
[12:27]
এবং
যদি তার জামা পেছনের
দিক থেকে ছিন্ন
থাকে, তবে মহিলা
মিথ্যাবাদিনী
এবং সে সত্যবাদী।
[12:28]
অতঃপর
গৃহস্বামী যখন
দেখল যে, তার জামা
পেছন দিক থেকে
ছিন্ন, তখন সে বলল, নিশ্চয়
এটা তোমাদের ছলনা। নিঃসন্দেহে তোমাদের
ছলনা খুবই মারাত্নক।
[12:29]
ইউসুফ
এ প্রসঙগ ছাড়!
আর হে নারী, এ পাপের
জন্য ক্ষমা প্রার্থনা
কর নিঃসন্দেহে
তুমি-ই পাপাচারিনী।
[12:30]
নগরে
মহিলারা বলাবলি
করতে লাগল যে, আযীযের স্ত্রী
স্বীয় গোলামকে
কুমতলব চরিতার্থ
করার জন্য ফুসলায়। সে তার প্রেমে উম্মত্ত
হয়ে গেছে। আমরা
তো তাকে প্রকাশ্য
ভ্রান্তিতে দেখতে
পাচ্ছি।
[12:31]
যখন
সে তাদের চক্রান্ত
শুনল, তখন তাদেরকে
ডেকে পাঠাল এবং
তাদের জন্যে একটি
ভোজ সভার আয়োজন
করল। সে তাদের প্রত্যেককে একটি
ছুরি দিয়ে বললঃ
ইউসুফ এদের সামনে
চলে এস। যখন তারা
তাকে দেখল, হতভম্ব
হয়ে গেল এবং আপন
হাত কেটে ফেলল। তারা
বললঃ কখনই নয়
এ ব্যক্তি মানব
নয়। এ তো কোন
মহান ফেরেশতা।
[12:32]
মহিলা
বললঃ এ ঐ ব্যক্তি, যার জন্যে তোমরা আমাকে
ভৎর্সনা করছিলে। আমি ওরই
মন জয় করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু
সে নিজেকে
নিবৃত্ত রেখেছে। আর আমি
যা আদেশ দেই, সে যদি
তা না করে, তবে অবশ্যই
সে কারাগারে
প্রেরিত হবে এবং
লাঞ্চিত হবে।
[12:33]
ইউসুফ
বললঃ হে পালনকর্তা
তারা আমাকে
যে কাজের দিকে
আহবান করে, তার চাইতে
আমি কারাগারই পছন্দ
করি। যদি আপনি তাদের চক্রান্ত
আমার উপর থেকে
প্রতিহত না করেন, তবে আমি
তাদের প্রতি আকৃষ্ট
হয়ে পড়ব এবং
অজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত
হয়ে যাব।
[12:34]
অতঃপর
তার পালনকর্তা
তার দোয়া কবুল করে নিলেন। অতঃপর
তাদের চক্রান্ত
প্রতিহত করলেন। নিশ্চয়
তিনি সর্বশ্রোতা
ও সর্বজ্ঞ।
[12:35]
অতঃপর
এসব নিদর্শন দেখার
পর তারা তাকে
কিছুদিন কারাগারে
রাখা সমীচীন মনে
করল।
[12:36]
তাঁর
সাথে কারাগারে
দুজন যুবক প্রবেশ করল। তাদের
একজন বললঃ আমি
স্বপ্নে দেখলাম
যে, আমি মদ নিঙড়াচ্ছি। অপরজন বললঃ আমি দেখলাম
যে, নিজ মাথায়
রুটি বহন করছি। তা থেকে
পাখী ঠুকরিয়ে
খাচ্ছে। আমাদের কে এর ব্যাখ্যা
বলুন। আমরা আপনাকে
সৎকর্মশীল
দেখতে পাচ্ছি।
[12:37]
তিনি
বললেনঃ তোমাদেরকে
প্রত্যহ যে খাদ্য
দেয়া হয়, তা তোমাদের
কাছে আসার আগেই
আমি তার ব্যাখ্যা
বলে দেব। এ জ্ঞান আমার পালনকর্তা
আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি ঐসব
লোকের ধর্ম পরিত্যাগ
করেছি যারা
আল্লাহর প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন
করে না এবং পরকালে
অবিশ্বাসী।
[12:38]
আমি
আপন পিতৃপুরুষ
ইব্রাহীম, ইসহাক
ও ইয়াকুবের ধর্ম
অনুসরণ করছি। আমাদের
জন্য শোভা পায়
না যে, কোন বস্তুকে আল্লাহর অংশীদার
করি। এটা আমাদের
প্রতি এবং অন্য
সব লোকের প্রতি
আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্ত
অধিকাংশ লোক অনুগ্রহ
স্বীকার করে না।
[12:39]
হে
কারাগারের সঙ্গীরা!
পৃথক পৃথক অনেক
উপাস্য ভাল, না পরাক্রমশালী
এক আল্লাহ?
[12:40]
তোমরা
আল্লাহকে ছেড়ে
নিছক কতগুলো
নামের এবাদত কর, সেগুলো
তোমরা এবং তোমাদের
বাপ-দাদারা সাব্যস্ত
করে নিয়েছে। আল্লাহ
এদের কোন প্রমাণ
অবতীর্ণ করেননি। আল্লাহ
ছাড়া কারও বিধান
দেবার ক্ষমতা
নেই। তিনি আদেশ
দিয়েছেন যে, তিনি
ব্যতীত অন্য কারও
এবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু
অধিকাংশ লোক তা
জানে না।
[12:41]
হে
কারাগারের সঙ্গীরা!
তোমাদের একজন
আপন প্রভুকে মদ্যপান
করাবে এবং দ্বিতীয়জন, তাকে
শুলে চড়ানো হবে। অতঃপর তার মস্তক থেকে
পাখী আহার করবে। তোমরা
যে, বিষয়ে জানার
আগ্রহী তার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।
[12:42]
যে
ব্যক্তি সম্পর্কে
ধারণা ছিল যে, সে মুক্তি
পাবে, তাকে ইউসুফ
বলে দিলঃ আপন প্রভুর
কাছে আমার আলোচনা
করবে। অতঃপর
শয়তান তাকে প্রভুর
কাছে আলোচনার কথা
ভুলিয়ে দিল। ফলে তাঁকে
কয়েক বছর কারাগারে থাকতে
হল।
[12:43]
বাদশাহ
বললঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম, সাতটি
মোটাতাজা গাভী-এদেরকে
সাতটি শীর্ণ গাভী
খেয়ে যাচ্ছে এবং
সাতটি সবুজ
শীষ ও অন্যগুলো
শুষ্ক। হে পরিষদবর্গ!
তোমরা আমাকে আমার
স্বপ্নের ব্যাখ্যা বল, যদি তোমরা
স্বপ্নের ব্যাখ্যায়
পারদর্শী হয়ে
থাক।
[12:44]
তারা
বললঃ এটা কল্পনাপ্রসূত স্বপ্ন। এরূপ
স্বপ্নের ব্যাখ্যা
আমাদের জানা নেই।
[12:45]
দু’জন কারারুদ্ধের
মধ্য থেকে যে ব্যক্তি মুক্তি
পেয়েছিল এবং দীর্ঘকাল
পর স্মরণ হলে, সে বলল, আমি তোমাদেরকে এর ব্যাখ্যা বলছি। তোমরা
আমাকে প্রেরণ কর।
[12:46]
সে
তথায় পৌঁছে বললঃ
হে ইউসুফ! হে সত্যবাদী!
সাতটি মোটাতাজা
গাভী-তাদেরকে খাচ্ছে
সাতটি শীর্ণ গাভী
এবং সাতটি সবুজ শীর্ষ ও অন্যগুলো
শুষ্ক; আপনি আমাদেরকে
এ স্বপ্ন সম্পর্কে
পথনির্দেশ প্রদান করুনঃ যাতে আমি
তাদের কাছে ফিরে
গিয়ে তাদের অবগত
করাতে পারি।
[12:47]
বললঃ
তোমরা সাত বছর
উত্তম রূপে চাষাবাদ করবে। অতঃপর
যা কাটবে, তার মধ্যে
যে সামান্য পরিমাণ
তোমরা খাবে তা
ছাড়া অবশিষ্ট
শস্য শীষ সমেত
রেখে দেবে।
[12:48]
এবং
এরপরে আসবে দূর্ভিক্ষের সাত বছর; তোমরা
এ দিনের জন্যে
যা রেখেছিলে, তা খেয়ে
যাবে, কিন্তু অল্প
পরিমাণ ব্যতীত, যা তোমরা
তুলে রাখবে।
[12:49]
এর
পরেই আসবে একবছর-এতে মানুষের উপর বৃষ্টি
বর্ষিত হবে এবং
এতে তারা রস নিঙড়াবে।
[12:50]
বাদশাহ
বললঃ ফিরে যাও
তোমাদের প্রভুর
কাছে এবং জিজ্ঞেস
কর তাকে ঐ মহিলার
স্বরূপ কি, যারা
স্বীয় হস্ত কর্তন করেছিল! আমার পালনকর্তা
তো তাদের ছলনা
সবই জানেন।
[12:51]
বাদশাহ
মহিলাদেরকে বললেনঃ তোমাদের হাল-হাকিকত
কি, যখন তোমরা
ইউসুফকে আত্মসংবরণ
থেকে ফুসলিয়েছিলে? তারা বললঃ আল্লাহ মহান, আমরা
তার সম্পর্কে মন্দ
কিছু জানি না। আযীয-পত্মি
বললঃ এখন সত্য
কথা প্রকাশ হয়ে
গেছে। আমিই তাকে
আত্মসংবরণ থেকে
ফুসলিয়েছিলাম
এবং সে সত্যবাদী।
[12:52]
ইউসুফ
বললেনঃ এটা এজন্য, যাতে আযীয জেনে নেয়
যে, আমি গোপনে
তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা
করিনি। আরও এই
যে, আল্লাহ বিশ্বাসঘাতকদের
প্রতারণাকে এগুতে
দেন না।