Part 15
17 Al-Isrâ’
শুরু
করছি আল্লাহর
নামে যিনি পরম
করুণাময়, অতি
দয়ালু।
[17:1]
পরম
পবিত্র ও মহিমাময়
সত্তা তিনি, যিনি
স্বীয় বান্দাকে
রাত্রি বেলায়
ভ্রমণ করিয়েছিলেন
মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার
চার দিকে আমি পর্যাপ্ত
বরকত দান করেছি
যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু
নিদর্শন দেখিয়ে
দেই। নিশ্চয়ই
তিনি পরম শ্রবণকারী
ও দর্শনশীল।
[17:2]
আমি
মূসাকে কিতাব দিয়েছি
এবং সেটিকে
বনী-ইসরাঈলের জন্যে
হেদায়েতে পরিণত
করেছি যে, তোমরা
আমাকে ছাড়া কাউকে কার্যনিবাহী
স্থির করো না।
[17:3]
তোমরা
তাদের সন্তান, যাদেরকে আমি নূহের সাথে
সওয়ার করিয়েছিলাম। নিশ্চয়
সে ছিল কৃতজ্ঞ
বান্দা।
[17:4]
আমি
বনী ইসরাঈলকে কিতাবে পরিষ্কার বলে
দিয়েছি যে, তোমরা
পৃথিবীর বুকে দুবার
অনর্থ সৃষ্টি করবে
এবং অত্যন্ত
বড় ধরনের অবাধ্যতায়
লিপ্ত হবে।
[17:5]
অতঃপর
যখন প্রতিশ্রুতি
সেই প্রথম
সময়টি এল, তখন আমি
তোমাদের বিরুদ্ধে
প্রেরণ করলাম আমার
কঠোর যোদ্ধা বান্দাদেরকে। অতঃপর
তারা প্রতিটি জনপদের
আনাচে-কানাচে পর্যন্ত
ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ
হওয়ারই ছিল।
[17:6]
অতঃপর
আমি তোমাদের জন্যে
তাদের বিরুদ্ধে
পালা ঘুয়িয়ে
দিলাম, তোমাদেরকে
ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান
দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে
জনসংখ্যার দিক
দিয়ে একটা বিরাট
বাহিনীতে পরিণত
করলাম।
[17:7]
তোমরা
যদি ভাল কর, তবে নিজেদেরই ভাল
করবে এবং যদি মন্দ
কর তবে তাও নিজেদের
জন্যেই। এরপর
যখন দ্বিতীয় সে সময়টি এল, তখন অন্য
বান্দাদেরকে প্রেরণ
করলাম, যাতে তোমাদের
মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয়, আর মসজিদে
ঢুকে পড়ে যেমন
প্রথমবার ঢুকেছিল
এবং যেখানেই জয়ী
হয়, সেখানেই পুরোপুরি
ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।
[17:8]
হয়ত
তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের প্রতি
অনুগ্রহ করবেন। কিন্তু
যদি পুনরায় তদ্রূপ
কর, আমিও পুনরায়
তাই করব। আমি জাহান্নামকে
কাফেরদের জন্যে
কয়েদখানা করেছি।
[17:9]
এই
কোরআন এমন পথ প্রদর্শন
করে, যা সর্বাধিক
সরল এবং সৎকর্ম
পরায়ণ মুমিনদেরকে
সুসংবাদ দেয় যে, তাদের
জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে।
[17:10]
এবং
যারা পরকালে বিশ্বাস
করে না, আমি তাদের
জন্যে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি প্রস্তুত
করেছি।
[17:11]
মানুষ
যেভাবে কল্যাণ
কামনা করে, সেভাবেই
অকল্যাণ কামনা
করে। মানুষ
তো খুবই দ্রুততা
প্রিয়।
[17:12]
আমি
রাত্রি ও দিনকে
দুটি নিদর্শন
করেছি। অতঃপর
নিস্প্রভ করে দিয়েছি
রাতের নিদর্শন
এবং দিনের নিদর্শনকে দেখার উপযোগী
করেছি, যাতে তোমরা
তোমাদের পালনকর্তার
অনুগ্রহ অন্বেষণ
কর এবং যাতে তোমরা স্থির করতে
পার বছরসমূহের
গণনা ও হিসাব এবং
আমি সব বিষয়কে
বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছি।
[17:13]
আমি
প্রত্যেক মানুষের
কর্মকে তার গ্রীবলগ্ন
করে রেখেছি। কেয়ামতের
দিন বের করে দেখাব
তাকে একটি কিতাব, যা সে খোলা অবস্থায়
পাবে।
[17:14]
পাঠ
কর তুমি তোমার
কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের
জন্যে তুমিই যথেষ্ট।
[17:15]
যে
কেউ সৎপথে চলে, তারা
নিজের মঙ্গলের
জন্যেই সৎ
পথে চলে। আর যে
পথভ্রষ্ট হয়, তারা
নিজের অমঙ্গলের
জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের
বোঝা বহন করবে
না। কোন রাসূল
না পাঠানো পর্যন্ত
আমি কাউকেই
শাস্তি দান করি
না।
[17:16]
যখন
আমি কোন জনপদকে
ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন
তার অবস্থাপন্ন
লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ
করি অতঃপর তারা
পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে
জনগোষ্টীর উপর
আদেশ অবধারিত হয়ে
যায়। অতঃপর
আমি তাকে উঠিয়ে
আছাড় দেই।
[17:17]
নূহের
পর আমি অনেক উম্মতকে ধ্বংস করেছি। আপনার
পালনকর্তাই বান্দাদের
পাপাচারের সংবাদ
জানা ও দেখার জন্যে যথেষ্ট।
[17:18]
যে
কেউ ইহকাল কামনা
করে, আমি সেসব
লোককে যা ইচ্ছা
সত্ত্বর দিয়ে
দেই। অতঃপর
তাদের জন্যে জাহান্নাম
নির্ধারণ করি। ওরা তাতে
নিন্দিত-বিতাড়িত
অবস্থায় প্রবেশ
করবে।
[17:19]
আর
যারা পরকাল কামনা
করে এবং মুমিন
অবস্থায় তার জন্য
যথাযথ চেষ্টা-সাধনা
করে, এমন লোকদের
চেষ্টা স্বীকৃত হয়ে থাকে।
[17:20]
এদেরকে
এবং ওদেরকে প্রত্যেককে আমি আপনার পালনকর্তার
দান পৌছে দেই এবং
আপনার পালকর্তার
দান অবধারিত।
[17:21]
দেখুন, আমি তাদের
একদলকে অপরের উপর কিভাবে শ্রেষ্ঠত্ব
দান করলাম। পরকাল
তো নিশ্চয়ই মর্তবায়
শ্রেষ্ঠ এবং ফযীলতে শ্রেষ্ঠতম।
[17:22]
স্থির
করো না আল্লাহর
সাথে অন্য কোন
উপাস্য। তাহলে
তুমি নিন্দিত ও
অসহায় হয়ে পড়বে।
[17:23]
তোমার
পালনকর্তা আদেশ
করেছেন যে, তাঁকে
ছাড়া অন্য কারও
এবাদত করো না এবং
পিতা-মাতার সাথে
সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ
অথবা উভয়েই যদি
তোমার জীবদ্দশায়
বার্ধক্যে উপনীত
হয়; তবে তাদেরকে
‘উহ’ শব্দটিও
বলো না এবং তাদেরকে
ধমক দিও না এবং
বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।
[17:24]
তাদের
সামনে ভালবাসার
সাথে, নম্রভাবে
মাথা নত করে দাও
এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের
উভয়ের প্রতি রহম
কর, যেমন তারা
আমাকে শৈশবকালে
লালন-পালন করেছেন।
[17:25]
তোমাদের
পালনকর্তা তোমাদের
মনে যা আছে
তা ভালই জানেন। যদি তোমরা
সৎ হও, তবে তিনি
তওবাকারীদের জন্যে
ক্ষমাশীল।
[17:26]
আত্নীয়-স্বজনকে
তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত
ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই
অপব্যয় করো না।
[17:27]
নিশ্চয়
অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান
স্বীয় পালনকর্তার
প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।
[17:28]
এবং
তোমার পালনকর্তার
করুণার প্রত্যাশায়
অপেক্ষামান থাকাকালে
যদি কোন সময় তাদেরকে
বিমুখ করতে হয়, তখন তাদের সাথে নম্রভাবে
কথা বল।
[17:29]
তুমি
একেবারে ব্যয়-কুষ্ঠ হয়োনা এবং একেবারে
মুক্ত হস্তও হয়ো
না। তাহলে তুমি
তিরস্কৃতি, নিঃস্ব
হয়ে বসে থাকবে।
[17:30]
নিশ্চয়
তোমার পালকর্তা
যাকে ইচ্ছা
অধিক জীবনোপকরণ
দান করেন এবং তিনিই
তা সংকুচিতও করে
দেন। তিনিই
তাঁর বান্দাদের
সম্পর্কে ভালোভাবে
অবহিত,-সব কিছু দেখছেন।
[17:31]
দারিদ্রের
ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে
হত্যা করো না। তাদেরকে
এবং তোমাদেরকে
আমিই জীবনোপকরণ
দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে
হত্যা করা মারাত্নক
অপরাধ।
[17:32]
আর
ব্যভিচারের কাছেও
যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল
কাজ এবং মন্দ পথ।
[17:33]
সে
প্রাণকে হত্যা
করো না, যাকে আল্লাহ হারাম
করেছেন; কিন্তু ন্যায়ভাবে। যে ব্যক্তি
অন্যায়ভাবে নিহত
হয়, আমি তার উত্তরাধিকারীকে
ক্ষমতা দান করি। অতএব, সে যেন
হত্যার ব্যাপারে
সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয়
সে সাহায্যপ্রাপ্ত।
[17:34]
আর, এতিমের
মালের কাছেও যেয়ো না, একমাত্র তার
কল্যাণ আকাংখা
ছাড়া; সংশ্লিষ্ট
ব্যক্তির যৌবনে
পদার্পন করা পর্যন্ত এবং অঙ্গীকার
পূর্ন কর। নিশ্চয়
অঙ্গীকার সম্পর্কে
জিজ্ঞাসাবাদ করা
হবে।
[17:35]
মেপে
দেয়ার সময় পূর্ণ
মাপে দেবে এবং
সঠিক দাঁড়িপালায়
ওজন করবে। এটা উত্তম; এর পরিণাম
শুভ।
[17:36]
যে
বিষয়ে তোমার কোন
জ্ঞান নেই, তার পিছনে
পড়ো না। নিশ্চয়
কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ
এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।
[17:37]
পৃথিবীতে
দম্ভভরে পদচারণা
করো না। নিশ্চয়
তুমি তো ভূ পৃষ্ঠকে
কখনই বিদীর্ণ করতে
পারবে না এবং উচ্চতায়
তুমি কখনই পর্বত
প্রমাণ হতে পারবে
না।
[17:38]
এ
সবের মধ্যে যেগুলো
মন্দকাজ, সেগুলো
তোমার পালনকর্তার
কাছে অপছন্দনীয়।
[17:39]
এটা
ঐ হিকমতের অন্তর্ভূক্ত, যা আপনার পালনকর্তা
আপনাকে ওহী মারফত
দান করেছেন। আল্লাহর
সাথে অন্য কোন
উপাস্য স্থির
করবেন না। তাহলে
অভিযুক্ত ও আল্লাহর
অনুগ্রহ থেকে বিতাড়িত
অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত
হবেন।
[17:40]
তোমাদের
পালনকর্তা কি তোমাদের জন্যে পুত্র সন্তান
নির্ধারিত করেছেন
এবং নিজের জন্যে
ফেরেশতাদেরকে
কন্যারূপে গ্রহণ করেছেন? নিশ্চয়
তোমরা গুরুতর গর্হিত
কথাবার্তা বলছ।
[17:41]
আমি
এই কোরআনে নানাভাবে বুঝিয়েছি, যাতে
তারা চিন্তা করে। অথচ এতে
তাদের কেবল বিমুখতাই
বৃদ্ধি পায়।
[17:42]
বলুনঃ
তাদের কথামত যদি
তাঁর সাথে অন্যান্য
উপাস্য থাকত; তবে তারা
আরশের মালিক পর্যন্ত
পৌছার পথ অন্বেষন
করত।
[17:43]
তিনি
নেহায়েত পবিত্র
ও মহিমান্বিত
এবং তারা যা বলে
থাকে তা থেকে বহু
উর্ধ্বে।
[17:44]
সপ্ত
আকাশ ও পৃথিবী
এবং এগুলোর মধ্যে যাকিছু
আছে সমস্ত কিছু
তাঁরই পবিত্রতা
ও মহিমা ঘোষণা
করে। এবং এমন
কিছু নেই যা
তার সপ্রশংস পবিত্রতা
ও মহিমা ঘোষনা
করে না। কিন্তু
তাদের পবিত্রতা, মহিমা
ঘোষণা তোমরা অনুধাবন
করতে পার না। নিশ্চয়
তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।
[17:45]
যখন
আপনি কোরআন পাঠ
করেন, তখন আমি আপনার
মধ্যে ও পরকালে
অবিশ্বাসীদের
মধ্যে প্রচ্ছন্ন
পর্দা ফেলে দেই।
[17:46]
আমি
তাদের অন্তরের
উপর আবরণ রেখে
দেই, যাতে তারা
একে উপলব্ধি করতে
না পারে এবং তাদের
কর্ণকুহরে বোঝা
চাপিয়ে দেই। যখন আপনি
কোরআনে পালনকর্তার
একত্ব আবৃত্তি
করেন, তখন ও অনীহাবশতঃ
ওরা পৃষ্ট প্রদর্শন করে
চলে যায়।
[17:47]
যখন
তারা কান পেতে
আপনার কথা শোনে, তখন তারা কেন
কান পেতে তা শোনে, তা আমি
ভাল জানি এবং এও
জানি গোপনে আলোচনাকালে যখন
জালেমরা বলে, তোমরা
তো এক যাদুগ্রস্থ
ব্যক্তির অনুসরণ
করছ।
[17:48]
দেখুন, ওরা আপনার
জন্যে কেমন উপমা দেয়। ওরা পথভ্রষ্ট
হয়েছে। অতএব, ওরা পথ
পেতে পারে না।
[17:49]
তারা
বলেঃ যখন আমরা
অস্থিতে পরিণত
ও চূর্ণ বিচূর্ণ
হয়ে যাব, তখনও
কি নতুন করে সৃজিত
হয়ে উত্থিত হব?
[17:50]
বলুনঃ
তোমরা পাথর হয়ে
যাও কিংবা
লোহা।
[17:51]
অথবা
এমন কোন বস্তু, যা তোমাদের ধারণায়
খুবই কঠিন; তথাপি
তারা বলবেঃ আমাদের
কে পুর্নবার কে
সৃষ্টি করবে। বলুনঃ
যিনি তোমাদেরকে
প্রথমবার সৃজন
করেছেন। অতঃপর
তারা আপনার সামনে
মাথা নাড়বে
এবং বলবেঃ এটা
কবে হবে? বলুনঃ
হবে, সম্ভবতঃ শ্রীঘ্রই।
[17:52]
যেদিন
তিনি তোমাদেরকে
আহবান করবেন, অতঃপর
তোমরা তাঁর প্রশংসা
করতে করতে চলে
আসবে। এবং তোমরা
অনুমান করবে যে, সামান্য
সময়ই অবস্থান
করেছিলে।
[17:53]
আমার
বান্দাদেরকে বলে
দিন, তারা যেন যা
উত্তম এমন কথাই
বলে। শয়তান
তাদের মধ্যে সংঘর্ষ
বাধায়। নিশ্চয় শয়তান মানুষের
প্রকাশ্য শত্রু।
[17:54]
তোমাদের
পালনকর্তা তোমাদের সম্পর্কে ভালভাবে
জ্ঞাত আছেন। তিনি
যদি চান, তোমাদের
প্রতি রহমত করবেন
কিংবা যদি চান, তোমাদের আযাব
দিবেন। আমি আপনাকে
ওদের সবার তত্ত্বাবধায়ক
রূপে প্রেরণ করিনি।
[17:55]
আপনার
পালনকর্তা তাদের সম্পর্কে ভালভাবে
জ্ঞাত আছেন, যারা
আকাশসমূহে ও ভুপৃষ্ঠে
রয়েছে। আমি তো
কতক পয়গম্বরকে
কতক পয়গম্বরের
উপর শ্রেষ্ঠত্ব
দান করেছি এবং
দাউদকে যবুর দান
করেছি।
[17:56]
বলুনঃ
আল্লাহ ব্যতীত
যাদেরকে তোমরা
উপাস্য মনে কর, তাদেরকে
আহবান কর। অথচ ওরা
তো তোমাদের কষ্ট
দুর করার ক্ষমতা
রাখে না এবং তা
পরিবর্তনও করতে
পারে না।
[17:57]
যাদেরকে
তারা আহবান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের
পালনকর্তার নৈকট্য
লাভের জন্য মধ্যস্থ
তালাশ করে যে, তাদের মধ্যে কে নৈকট্যশীল। তারা
তাঁর রহমতের আশা
করে এবং তাঁর শাস্তিকে
ভয় করে। নিশ্চয় আপনার
পালনকর্তার শাস্তি
ভয়াবহ।
[17:58]
এমন
কোন জনপদ নেই, যাকে
আমি কেয়ামত
দিবসের পূর্বে
ধ্বংস করব না অথবা
যাকে কঠোর শাস্তি
দেব না। এটা তো গ্রন্থে লিপিবদ্ধ
হয়ে গেছে।
[17:59]
পূর্ববর্তীগণ
কতৃêক নিদর্শন অস্বীকার করার
ফলেই আমাকে নিদর্শনাবলী
প্রেরণ থেকে বিরত
থাকতে হয়েছে। আমি তাদেরকে বোঝাবার
জন্যে সামুদকে
উষ্ট্রী দিয়েছিলাম। অতঃপর
তারা তার প্রতি
জুলুম করেছিল। আমি ভীতি
প্রদর্শনের উদ্দেশেই
নিদর্শন প্রেরণ
করি।
[17:60]
এবং
স্মরণ করুন, আমি আপনাকে বলে দিয়েছিলাম
যে, আপনার পালনকর্তা
মানুষকে পরিবেষ্টন
করে রেখেছেন এবং
যে দৃশ্য আমি আপনাকে
দেখিয়েছি তাও
কোরআনে উল্লেখিত
অভিশপ্ত বৃক্ষ
কেবল মানুষের পরীক্ষার জন্যে। আমি তাদেরকে
ভয় প্রদর্শন করি। কিন্তু
এতে তাদের অবাধ্যতাই
আরও বৃদ্ধি পায়।
[17:61]
স্মরণ
কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে
বললামঃ আদমকে সেজদা
কর, তখন ইবলীস
ব্যতীত সবাই সেজদায়
পড়ে গেল। কিন্তু সে বললঃ
আমি কি এমন ব্যক্তিকে
সেজদা করব, যাকে
আপনি মাটির দ্বারা
সৃষ্টি করেছেন?
[17:62]
সে
বললঃ দেখুন তো, এনা সে ব্যক্তি, যাকে
আপনি আমার চাইতেও
উচ্চ মার্যাদা
দিয়ে দিয়েছেন। যদি আপনি
আমাকে কেয়ামত
দিবস পর্যন্ত সময়
দেন, তবে আমি সামান্য
সংখ্যক ছাড়া তার
বংশধরদেরকে সমূলে নষ্ট করে
দেব।
[17:63]
আল্লাহ
বলেনঃ চলে যা, অতঃপর তাদের মধ্য থেকে
যে তোর অনুগামী
হবে, জাহান্নামই
হবে তাদের সবার
শাস্তি-ভরপুর শাস্তি।
[17:64]
তুই
সত্যচ্যুত করে
তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস
স্বীয় আওয়ায
দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী
ও পদাতিক বাহিনী
নিয়ে তাদেরকে
আক্রমণ কর, তাদের
অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে
শরীক হয়ে যা এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি
দে। ছলনা ছাড়া
শয়তান তাদেরকে
কোন প্রতিশ্রুতি
দেয় না।
[17:65]
আমার
বান্দাদের উপর
তোর কোন ক্ষমতা
নেই আপনার পালনকর্তা
যথেষ্ট কার্যনির্বাহী।
[17:66]
তোমাদের
পালনকর্তা তিনিই, যিনি তোমাদের জন্যে
সমুদ্রে জলযান
চালনা করেন, যাতে
তোমরা তার অনুগ্রহ
অন্বেষন করতে পারো। নিঃ সন্দেহে
তিনি তোমাদের প্রতি
পরম দয়ালূ।
[17:67]
যখন
সমুদ্রে তোমাদের
উপর বিপদ আসে, তখন শুধু
আল্লাহ ব্যতীত
যাদেরকে তোমরা
আহবান করে থাক
তাদেরকে তোমরা
বিস্মৃত হয়ে
যাও। অতঃপর
তিনি যখন তোমাদেরকে
স্থলে ভিড়িয়ে
উদ্ধার করে নেন, তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ
বড়ই অকৃতজ্ঞ।
[17:68]
তোমরা
কি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত রয়েছ যে, তিনি
তোমাদেরকে স্থলভাগে
কোথাও ভূগর্ভস্থ
করবেন না। অথবা
তোমাদের উপর প্রস্তর বর্ষণকারী
ঘুর্ণিঝড় প্রেরণ
করবেন না, তখন তোমরা
নিজেদের জন্যে
কোন কর্মবিধায়ক
পাবে না।
[17:69]
অথবা
তোমরা কি এ বিষয়ে নিশ্চিন্ত যে, তিনি
তোমাদেরকে আরেকবার
সমুদ্রে নিয়ে
যাবেন না, অতঃপর
তোমাদের জন্যে
মহা ঝটিকা প্রেরণ
করবেন না, অতঃপর
অকৃতজ্ঞতার শাস্তিস্বরূপ
তোমাদেরকে নিমজ্জত করবেন
না, তখন তোমরা
আমার বিরুদ্ধে
এ বিষয়ে সাহায্যকারী
কাউকে পাবে না।
[17:70]
নিশ্চয়
আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে
স্থলে ও জলে চলাচলের
বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ
প্রদান করেছি এবং
তাদেরকে অনেক সৃষ্ট
বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব
দান করেছি।
[17:71]
স্মরণ
কর, যেদিন আমি
প্রত্যেক দলকে তাদের নেতাসহ
আহবান করব, অতঃপর
যাদেরকে তাদের
ডান হাতে আমলনামা
দেয়া হবে, তারা
নিজেদের আমলনামা
পাঠ করবে এবং তাদের
প্রতি সামান্য
পরিমাণও জুলুম
হবে না।
[17:72]
যে
ব্যক্তি ইহকালে
অন্ধ ছিল সে পরকালেও অন্ধ
এবং অধিকতর পথভ্রান্ত।
[17:73]
তারা
তো আপনাকে হটিয়ে
দিতে চাচ্ছিল
যে বিষয় আমি আপনার
প্রতি ওহীর মাধ্যমে
যা প্রেরণ করেছি
তা থেকে আপনার পদঙ্খলন ঘটানোর
জন্যে তারা চুড়ান্ত
চেষ্টা করেছে, যাতে
আপনি আমার প্রতি
কিছু মিথ্যা
সম্বন্ধযুক্ত
করেন। এতে সফল
হলে তারা আপনাকে
বন্ধুরূপে গ্রহণ
করে নিত।
[17:74]
আমি
আপনাকে দৃঢ়পদ
না রাখলে আপনি
তাদের প্রতি কিছুটা
ঝুঁকেই পড়তেন।
[17:75]
তখন
আমি অবশ্যই আপনাকে
ইহজীবনে ও পরজীবনে
দ্বিগুণ শাস্তির
আস্বাদন করাতাম। এ সময়
আপনি আমার মোকাবিলায়
কোন সাহায্যকারী
পেতেন না।
[17:76]
তারা
তো আপনাকে এ ভুখন্ড
থেকে উৎখাত করে দিতে
চুড়ান্ত চেষ্টা
করেছিল যাতে আপনাকে
এখান থেকে বহিস্কার
করে দেয়া
যায়। তখন তারাও
আপনার পর সেখানে
অল্প কালই মাত্র
টিকে থাকত।
[17:77]
আপনার
পূর্বে আমি যত
রসূল প্রেরণ
করেছি, তাদের ক্ষেত্রেও
এরূপ নিয়ম ছিল। আপনি
আমার নিয়মের কোন
ব্যতিক্রম পাবেন না।
[17:78]
সূর্য
ঢলে পড়ার সময়
থেকে রাত্রির
অন্ধকার পর্যন্ত
নামায কায়েম করুন
এবং ফজরের কোরআন
পাঠও। নিশ্চয়
ফজরের কোরআন
পাঠ মুখোমুখি হয়।
[17:79]
রাত্রির
কিছু অংশ কোরআন
পাঠ সহ জাগ্রত
থাকুন। এটা আপনার
জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত
বা আপনার পালনকর্তা
আপনাকে মোকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন।
[17:80]
বলুনঃ
হে পালনকর্তা!
আমাকে দাখিল
করুন সত্যরূপে
এবং আমাকে বের
করুন সত্যরূপে
এবং দান করুন আমাকে
নিজের কাছ থেকে রাষ্ট্রীয়
সাহায্য।
[17:81]
বলুনঃ
সত্য এসেছে এবং
মিথ্যা বিলুপ্ত
হয়েছে। নিশ্চয়
মিথ্যা বিলুপ্ত
হওয়ারই ছিল।
[17:82]
আমি
কোরআনে এমন বিষয়
নাযিল করি যা
রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের
জন্য রহমত। গোনাহগারদের
তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।
[17:83]
আমি
মানুষকে নেয়ামত
দান করলে সে মুখ
ফিরিয়ে নেয় এবং
অহংকারে দুরে সরে
যায়; যখন তাকে কোন
অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে একেবারে
হতাশ হয়ে পড়ে।
[17:84]
বলুনঃ
প্রত্যেকেই নিজ
রীতি অনুযায়ী
কাজ করে। অতঃপর
আপনার পালনকর্তা
বিশেষ রূপে জানেন, কে সর্বাপেক্ষা নির্ভূল পথে আছে।
[17:85]
তারা
আপনাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দিনঃ
রূহ আমার পালনকর্তার
আদেশ ঘটিত। এ বিষয়ে
তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই
দান করা হয়েছে।
[17:86]
আমি
ইচ্ছা করলে আপনার
কাছে ওহীর মাধমে
যা প্রেরণ করেছি
তা অবশ্যই প্রত্যাহার
করতে পারতাম। অতঃপর
আপনি নিজের জন্যে তা আনয়নের
ব্যাপারে আমার
মোকাবিলায় কোন
দায়িত্ব বহনকারী
পাবেন না।
[17:87]
এ
প্রত্যাহার না
করা আপনার পালনকর্তার মেহেরবানী। নিশ্চয়
আপনার প্রতি তাঁর
করুণা বিরাট।
[17:88]
বলুনঃ
যদি মানব ও জ্বিন
এই কোরআনের
অনুরূপ রচনা করে
আনয়নের জন্যে
জড়ো হয়, এবং তারা
পরস্পরের সাহায্যকারী হয়; তবুও তারা
কখনও এর অনুরূপ
রচনা করে আনতে
পারবে না।
[17:89]
আমি
এই কোরআনে মানুষকে
বিভিন্ন উপকার
দ্বারা সব রকম
বিষয়বস্তু বুঝিয়েছি। কিন্তু
অধিকাংশ লোক অস্বীকার
না করে থাকেনি।
[17:90]
এবং
তারা বলেঃ আমরা
কখনও আপনাকে
বিশ্বাস করব না, যে পর্যন্ত
না আপনি ভূপৃষ্ঠ
থেকে আমাদের জন্যে
একটি ঝরণা প্রবাহিত করে
দিন।
[17:91]
অথবা
আপনার জন্যে খেজুরের
ও আঙ্গুরের
একটি বাগান হবে, অতঃপর
আপনি তার মধ্যে
নির্ঝরিনীসমূহ
প্রবাহিত করে দেবেন।
[17:92]
অথবা
আপনি যেমন বলে
থাকেন, তেমনিভাবে
আমাদের উপর আসমানকে
খন্ড-বিখন্ড করে
ফেলে দেবেন অথবা
আল্লাহ ও ফেরেশতাদেরকে
আমাদের সামনে নিয়ে
আসবেন।
[17:93]
অথবা
আপনার কোন সোনার
তৈরী গৃহ হবে অথবা
আপনি আকাশে আরোহণ
করবেন এবং আমরা
আপনার আকাশে আরোহণকে
কখনও বিশ্বাস করবনা, যে পর্যন্ত
না আপনি অবতীর্ণ
করেন আমাদের প্রতি
এক গ্রন্থ, যা আমরা
পাঠ করব। বলুনঃ
পবিত্র মহান আমার
পালনকর্তা, একজন
মানব, একজন রসূল
বৈ আমি কে?
[17:94]
আল্লাহ
কি মানুষকে পয়গম্বর করে পাঠিয়েছেন? তাদের
এই উক্তিই মানুষকে
ঈমান আনয়ন থেকে
বিরত রাখে, যখন তাদের নিকট আসে হেদায়েত।
[17:95]
বলুনঃ
যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ
করত, তবে আমি আকাশ
থেকে কোন ফেরেশতাকেই
তাদের নিকট পয়গাম্বর করে প্রেরণ করতাম।
[17:96]
বলুনঃ
আমার ও তোমাদের
মধ্যে সত্য
প্রতিষ্ঠাকারী
হিসেবে আল্লাহই
যথেষ্ট। তিনি
তো স্বীয় বান্দাদের
বিষয়ে খবর রাখেন ও দেখেন।
[17:97]
আল্লাহ
যাকে পথ প্রদর্শন
করেন, সেই তো সঠিক
পথ প্রাপ্ত এবং
যাকে পথ ভ্রষ্ট
করেন, তাদের জন্যে
আপনি আল্লাহ ছাড়া কোন সাহায্যকারী
পাবেন না। আমি কেয়ামতের
দিন তাদের সমবেত
করব তাদের মুখে
ভর দিয়ে
চলা অবস্থায়, অন্ধ
অবস্থায়, মুক অবস্থায়
এবং বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখনই
নির্বাপিত হওয়ার
উপক্রম হবে আমি
তখন তাদের জন্যে অগ্নি আরও বৃদ্ধি
করে দিব।
[17:98]
এটাই
তাদের শাস্তি। কারণ, তারা আমার নিদর্শনসমূহ
অস্বীকার করেছে
এবং বলেছেঃ আমরা
যখন অস্থিতে পরিণত
ও চুর্ণ-বিচুর্ণ
হয়ে যাব, তখনও
কি আমরা নতুনভাবে
সৃজিত হয়ে উত্থিত
হব?
[17:99]
তারা
কি দেখেনি যে, যে আল্লাহ আসমান ও যমিন সৃজিত
করেছেন, তিনি তাদের
মত মানুষও পুনরায়
সৃষ্টি করতে সক্ষম? তিনি
তাদের জন্যে স্থির
করেছেন একটি নির্দিষ্ট
কাল, এতে কোন সন্দেহ
নেই; অতঃপর জালেমরা অস্বীকার
ছাড়া কিছু করেনি।
[17:100]
বলুনঃ
যদি আমার পালনকর্তার রহমতের ভান্ডার
তোমাদের হাতে থাকত, তবে ব্যয়িত
হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়
অবশ্যই তা ধরে রাখতে। মানুষ
তো অতিশয় কৃপণ।
[17:101]
আপনি
বণী-ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করুন, আমি মূসাকে
নয়টি প্রকাশ্য
নিদর্শন দান করেছি। যখন তিনি
তাদের কাছে আগমন করেন, ফেরাউন তাকে
বললঃ হে মূসা, আমার
ধারনায় তুমি তো
জাদুগ্রস্থ।
[17:102]
তিনি
বললেনঃ তুমি জান
যে, আসমান ও যমীনের
পালনকর্তাই এসব
নিদর্শনাবলী প্রত্যক্ষ
প্রমাণস্বরূপ
নাযিল করেছেন। হে ফেরাউন, আমার
ধারণায় তুমি ধ্বংস
হতে চলেছো।
[17:103]
অতঃপর
সে বনী ইসরাঈলকে
দেশ থেকে উৎখাত করতে চাইল, তখন আমি
তাকে ও তার সঙ্গীদের
সবাইকে নিমজ্জত
করে দিলাম।
[17:104]
তারপর
আমি বনী ইসলাঈলকে
বললামঃ এ দেশে
তোমরা বসবাস কর। অতঃপর
যখন পরকালের ওয়াদা
বাস্তবায়িত হবে, তখন তোমাদের কে জড়ো করে নিয়ে
উপস্থিত হব।
[17:105]
আমি
সত্যসহ এ কোরআন
নাযিল করেছি
এবং সত্য সহ এটা
নাযিল হয়েছে। আমি তো
আপনাকে শুধু সুসংবাদাতা
ও ভয়প্রদর্শক
করেই প্রেরণ করেছি।
[17:106]
আমি
কোরআনকে যতিচিহ্ন
সহ পৃথক পৃথকভাবে
পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে
আপনি একে লোকদের
কাছে ধীরে ধীরে
পাঠ করেন এবং আমি একে যথাযথ
ভাবে অবতীর্ণ করেছি।
[17:107]
বলুনঃ
তোমরা কোরআনকে
মান্য কর অথবা
অমান্য কর; যারা
এর পূর্ব থেকে
এলেম প্রাপ্ত হয়েছে, যখন তাদের
কাছে এর তেলাওয়াত
করা হয়, তখন তারা
নতমস্তকে সেজদায়
লুটিয়ে পড়ে।
[17:108]
এবং
বলেঃ আমাদের পালনকর্তা পবিত্র, মহান। নিঃসন্দেহে
আমাদের পালকর্তার
ওয়াদা অবশ্যই
পূর্ণ হবে।
[17:109]
তারা
ক্রন্দন করতে করতে নতমস্তকে ভুমিতে
লুটিয়ে পড়ে এবং
তাদের বিনয়ভাব
আরো বৃদ্ধি পায়। [ Sajdah ]
[17:110]
বলুনঃ
আল্লাহ বলে আহবান
কর কিংবা
রহমান বলে, যে নামেই
আহবান কর না কেন, সব সুন্দর
নাম তাঁরই। আপনি
নিজের নামায
আদায়কালে স্বর
উচ্চগ্রাসে নিয়ে
গিয়ে পড়বেন না
এবং নিঃশব্দেও
পড়বেন না। এতদুভয়ের
মধ্যমপন্থা অবলম্বন
করুন।
[17:111]
বলুনঃ
সমস্ত প্রশংসা
আল্লাহর যিনি
না কোন সন্তান
রাখেন, না তাঁর সার্বভৌমত্বে
কোন শরীক আছে এবং
যিনি দুর্দশাগ্রস্ত
হন না, যে কারণে তাঁর
কোন সাহয্যকারীর
প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং আপনি স-সম্ভ্রমে
তাঁর মাহাত্ন? বর্ণনা
করতে থাকুন।
@
18 Al-Kahf
শুরু
করছি আল্লাহর
নামে যিনি পরম
করুণাময়, অতি
দয়ালু।
[18:1]
সব
প্রশংসা আল্লাহর
যিনি নিজের বান্দার প্রতি
এ গ্রন্থ নাযিল
করেছেন এবং তাতে
কোন বক্রতা রাখেননি।
[18:2]
একে
সুপ্রতিষ্ঠিত
করেছেন যা আল্লাহর পক্ষ
থেকে একটি ভীষণ
বিপদের ভয় প্রদর্শন
করে এবং মুমিনদেরকে
যারা সৎকর্ম সম্পাদন
করে-তাদেরকে সুসংবাদ
দান করে যে, তাদের
জন্যে উত্তম প্রতিদান রয়েছে।
[18:3]
তারা
তাতে চিরকাল অবস্থান করবে।
[18:4]
এবং
তাদেরকে ভয় প্রদর্শন
করার জন্যে
যারা বলে যে, আল্লাহর
সন্তান রয়েছে।
[18:5]
এ
সম্পর্কে তাদের
কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের
পিতৃপুরুষদেরও
নেই। কত কঠিন
তাদের মুখের কথা। তারা
যা বলে তা তো সবই মিথ্যা।
[18:6]
যদি
তারা এই বিষয়বস্তুর
প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন না করে, তবে তাদের
পশ্চাতে সম্ভবতঃ
আপনি পরিতাপ করতে
করতে নিজের প্রাণ নিপাত করবেন।
[18:7]
আমি
পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে
শোভা করেছি, যাতে
লোকদের পরীক্ষা
করি যে, তাদের মধ্যে
কে ভাল কাজ করে।
[18:8]
এবং
তার উপর যাকিছু
রয়েছে, অবশ্যই তা
আমি উদ্ভিদশূন্য
মাটিতে পরিণত করে
দেব।
[18:9]
আপনি
কি ধারণা করেন
যে, গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা
আমার নিদর্শনাবলীর
মধ্যে বিস্ময়কর
ছিল ?
[18:10]
যখন
যুবকরা পাহাড়ের
গুহায় আশ্রয়গ্রহণ
করে তখন দোআ করেঃ
হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে
নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন
এবং আমাদের জন্যে
আমাদের কাজ সঠিকভাবে
পূর্ণ করুন।
[18:11]
তখন
আমি কয়েক বছরের
জন্যে গুহায়
তাদের কানের উপর
নিদ্রার পর্দা
ফেলে দেই।
[18:12]
অতঃপর
আমি তাদেরকে পুনরত্থিত করি, একথা জানার
জন্যে যে, দুই দলের
মধ্যে কোন দল তাদের
অবস্থানকাল সম্পর্কে অধিক নির্ণয়
করতে পারে।
[18:13]
আপনার
কাছে তাদের ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা
করছি। তারা ছিল
কয়েকজন যুবক। তারা
তাদের পালনকর্তার
প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করেছিল
এবং আমি তাদের
সৎপথে চলার
শক্তি বাড়িয়ে
দিয়েছিলাম।
[18:14]
আমি
তাদের মন দৃঢ়
করেছিলাম, যখন তারা
উঠে দাঁড়িয়েছিল। অতঃপর
তারা বললঃ আমাদের
পালনকর্তা আসমান
ও যমীনের পালনকর্তা
আমরা কখনও তার
পরিবর্তে অন্য
কোন উপাস্যকে আহবান
করব না। যদি করি, তবে তা অত্যন্ত গর্হিত
কাজ হবে।
[18:15]
এরা
আমাদেরই স্ব-জাতি, এরা তাঁর পরিবর্তে
অনেক উপাস্য গ্রহণ
করেছে। তারা
এদের সম্পর্কে
প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত করে না
কেন? যে আল্লাহ
সম্পর্কে মিথ্যা
উদ্ভাবন করে, তার চাইতে
অধিক গোনাহগার
আর কে?
[18:16]
তোমরা
যখন তাদের থেকে
পৃথক হলে এবং তারা
আল্লাহর পরিবর্তে
যাদের এবাদত করে
তাদের থেকে, তখন তোমরা
গুহায় আশ্রয়গ্রহণ
কর। তোমাদের পালনকর্তা
তোমাদের জন্যে
দয়া বিস্তার করবেন
এবং তিনি তোমাদের
জন্য তোমাদের কাজ
কর্মকে ফলপ্রসু
করার ব্যবস্থা
করবেন।
[18:17]
তুমি
সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা
থেকে পাশ কেটে
ডান দিকে চলে যায়
এবং যখন অস্ত যায়, তাদের
থেকে পাশ কেটে
বামদিকে চলে যায়, অথচ তারা
গুহার প্রশস্ত
চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর
অন্যতম। আল্লাহ
যাকে সৎপথে
চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং
তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি
কখনও তার জন্যে
পথপ্রদর্শনকারী
ও সাহায্যকারী
পাবেন না।
[18:18]
তুমি
মনে করবে তারা
জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। আমি তাদেরকে
পার্শ্ব পরিবর্তন
করাই ডান দিকে
ও বাম দিকে। তাদের কুকুর ছিল
সামনের পা দুটি
গুহাদ্বারে প্রসারিত
করে। যদি তুমি
উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন
ফিরে পলায়ন করতে
এবং তাদের ভয়ে
আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়তে।
[18:19]
আমি
এমনি ভাবে তাদেরকে
জাগ্রত করলাম, যাতে
তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ
করে। তাদের
একজন বললঃ তোমরা
কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ
বললঃ একদিন অথবা
একদিনের কিছু অংশ
অবস্থান করছি। কেউ কেউ
বললঃ তোমাদের
পালনকর্তাই ভাল
জানেন তোমরা কতকাল
অবস্থান করেছ। এখন তোমাদের
একজনকে তোমাদের
এই মুদ্রাসহ শহরে
প্রেরণ কর; সে যেন
দেখে কোন খাদ্য
পবিত্র। অতঃপর
তা থেকে যেন
কিছু খাদ্য নিয়ে
আসে তোমাদের জন্য; সে যেন
নম্রতা সহকারে
যায় ও কিছুতেই
যেন তোমাদের খবর
কাউকে না জানায়।
[18:20]
তারা
যদি তোমাদের খবর
জানতে পারে, তবে পাথর
মেরে তোমাদেরকে
হত্যা করবে, অথবা
তোমাদেরকে তাদের
ধর্মে ফিরিয়ে নেবে। তাহলে
তোমরা কখনই সাফল্য
লাভ করবে না।
[18:21]
এমনিভাবে
আমি তাদের খবর
প্রকাশ করে দিলাম, যাতে
তারা জ্ঞাত হয়
যে, আল্লাহর ওয়াদা
সত্য এবং কেয়ামতে
কোন সন্দেহ
নেই। যখন তারা
নিজেদের কর্তব্য
বিষয়ে পরস্পর
বিতর্ক করছিল, তখন তারা বললঃ তাদের উপর
সৌধ নির্মাণ কর। তাদের
পালনকর্তা তাদের
বিষয়ে ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে
যাদের মত প্রবল
হল, তারা বললঃ
আমরা অবশ্যই তাদের
স্থানে মসজিদ নির্মান করব।
[18:22]
অজ্ঞাত
বিষয়ে অনুমানের
উপর ভিত্তি
করে এখন তারা বলবেঃ
তারা ছিল তিন জন; তাদের
চতুর্থটি তাদের
কুকুর। একথাও বলবে; তারা পাঁচ
জন। তাদের ছষ্ঠটি
ছিল তাদের কুকুর। আরও বলবেঃ
তারা ছিল সাত জন। তাদের অষ্টমটি
ছিল তাদের কুকুর। বলুনঃ
আমার পালনকর্তা
তাদের সংখ্যা ভাল
জানেন। তাদের খবর অল্প
লোকই জানে। সাধারণ
আলোচনা ছাড়া আপনি
তাদের সম্পর্কে
বিতর্ক করবেন
না এবং তাদের অবস্থা
সম্পর্কে তাদের
কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ
ও করবেন না।
[18:23]
আপনি
কোন কাজের বিষয়ে
বলবেন না যে, সেটি
আমি আগামী কাল
করব।
[18:24]
‘আল্লাহ
ইচ্ছা করলে’ বলা ব্যতিরেকে। যখন ভুলে
যান, তখন আপনার
পালনকর্তাকে স্মরণ
করুন এবং বলুনঃ
আশা করি আমার
পালনকর্তা আমাকে
এর চাইতেও নিকটতম
সত্যের পথ নির্দেশ
করবেন।
[18:25]
তাদের
উপর তাদের গুহায়
তিনশ বছর, অতিরিক্ত
আরও নয় বছর অতিবাহিত
হয়েছে।
[18:26]
বলুনঃ
তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই
ভাল জানেন। নভোমন্ডল
ও ভুমন্ডলের অদৃশ্য
বিষয়ের জ্ঞান
তাঁরই কাছে
রয়েছে। তিনি
কত চমৎকার দেখেন
ও শোনেন। তিনি
ব্যতীত তাদের জন্য
কোন সাহায্যকারী
নেই। তিনি কাউকে
নিজ কর্তৃত্বে
শরীক করেন না।
[18:27]
আপনার
প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট
করা হয়েছে, তা পাঠ
করুন। তাঁর বাক্য
পরিবর্তন করার
কেউ নাই। তাঁকে
ব্যতীত আপনি কখনই
কোন আশ্রয় স্থল
পাবেন না।
[18:28]
আপনি
নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা
সকাল ও সন্ধ্যায়
তাদের পালনকর্তাকে
তাঁর সন্তুষ্টি
অর্জনের উদ্দেশ্যে
আহবান করে এবং
আপনি পার্থিব জীবনের
সৌন্দর্য কামনা
করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি
ফিরিয়ে নেবেন
না। যার মনকে আমার
স্মরণ থেকে গাফেল
করে দিয়েছি, যে, নিজের
প্রবৃত্তির অনুসরণ
করে এবং যার কার্য
কলাপ হচ্ছে সীমা
অতিক্রম করা, আপনি
তার অনুগত্য করবেন
না।
[18:29]
বলুনঃ
সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস
স্থাপন করুক এবং
যার ইচ্ছা অমান্য করুক। আমি জালেমদের
জন্যে অগ্নি প্রস্তুত
করে রেখেছি, যার বেষ্টনী
তাদের কে পরিবেষ্টন
করে থাকবে। যদি তারা
পানীয় প্রার্থনা
করে, তবে পুঁজের
ন্যায় পানীয় দেয়া হবে যা তাদের
মুখমন্ডল দগ্ধ
করবে। কত নিকৃষ্ট
পানীয় এবং খুবই
মন্দ আশ্রয়।
[18:30]
যারা
বিশ্বাস স্থাপন
করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন
করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার
নষ্ট করি না।
[18:31]
তাদেরই
জন্যে আছে বসবাসের জান্নাত। তাদের
পাদদেশে প্রবাহিত
হয় নহরসমূহ। তাদের
তথায় স্বর্ণ-কংকনে
অলংকৃত করা হবে
এবং তারা পাতলা
ও মোটা রেশমের
সবুজ কাপর পরিধান
করবে এমতাবস্থায়
যে, তারা সিংহাসনে
সমাসীন হবে। চমৎকার প্রতিদান
এবং কত উত্তম
আশ্রয়।
[18:32]
আপনি
তাদের কাছে দু
ব্যক্তির উদাহরণ বর্ণনা
করুন। আমি তাদের
একজনকে দুটি আঙ্গুরের
বাগান দিয়েছি
এবং এ দু’টিকে
খর্জুর বৃক্ষ দ্বারা
পরিবেষ্টিত করেছি
এবং দু এর মাঝখানে
করেছি শস্যক্ষেত্র।
[18:33]
উভয়
বাগানই ফলদান করে
এবং তা থেকে
কিছুই হ্রাস করত
না এবং উভয়ের
ফাঁকে ফাঁকে আমি
নহর প্রবাহিত করেছি।
[18:34]
সে
ফল পেল। অতঃপর
কথা প্রসঙ্গে সঙ্গীকে বললঃ
আমার ধন-সম্পদ
তোমার চাইতে বেশী
এবং জনবলে আমি
অধিক শক্তিশালী।
[18:35]
নিজের
প্রতি জুলুম করে
সে তার বাগানে
প্রবেশ করল। সে বললঃ
আমার মনে হয় না
যে, এ বাগান কখনও
ধ্বংস হয়ে যাবে।
[18:36]
এবং
আমি মনে করি না
যে, কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। যদি কখনও
আমার পালনকর্তার
কাছে আমাকে পৌঁছে
দেয়া হয়, তবে সেখানে
এর চাইতে উৎকৃষ্ট পাব।
[18:37]
তার
সঙ্গী তাকে কথা
প্রসঙ্গে বললঃ তুমি তাঁকে
অস্বীকার করছ, যিনি
তোমাকে সৃষ্টি
করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, অতঃপর
র্পূনাঙ্গ করেছেন
তোমাকে মানবাকৃতিতে?
[18:38]
কিন্তু
আমি তো একথাই বলি, আল্লাহই
আমার পালনকর্তা
এবং আমি কাউকে
আমার পালনকর্তার
শরীক মানি না।
[18:39]
যদি
তুমি আমাকে ধনে
ও সন্তানে তোমার চাইতে কম
দেখ, তবে যখন তুমি
তোমার বাগানে প্রবেশ
করলে, তখন একথা কেন
বললে না; আল্লাহ
যা চান, তাই হয়। আল্লাহর
দেয়া ব্যতীত কোন
শক্তি নেই।
[18:40]
আশাকরি
আমার পালকর্তা
আমাকে তোমার
বাগান অপেক্ষা
উৎকৃষ্টতর
কিছু দেবেন এবং
তার (তোমার বাগানের)
উপর আসমান থেকে আগুন প্রেরণ
করবেন। অতঃপর
সকাল বেলায় তা
পরিষ্কার ময়দান
হয়ে যাবে।
[18:41]
অথবা
সকালে তার পানি
শুকিয়ে যাবে। অতঃপর
তুমি তা তালাশ
করে আনতে পারবে
না।
[18:42]
অতঃপর
তার সব ফল ধ্বংস
হয়ে গেল এবং
সে তাতে যা ব্যয়
করেছিল, তার জন্য সকালে
হাত কচলিয়ে আক্ষেপ
করতে লাগল। বাগনটি কাঠসহ
পুড়ে গিয়েছিল। সে বলতে
লাগলঃ হায়, আমি যদি
কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে
শরীক না করতাম।
[18:43]
আল্লাহ
ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোন লোক হল
না এবং সে নিজেও
প্রতিকার করতে
পারল না।
[18:44]
এরূপ
ক্ষেত্রে সব অধিকার
সত্য আল্লাহর। তারই
পুরস্কার উত্তম
এবং তারই প্রদত্ত
প্রতিদান শ্রেষ্ঠ।
[18:45]
তাদের
কাছে পার্থিব জীবনের উপমা বর্ণনা করুন। তা পানির
ন্যায়, যা আমি আকাশ
থেকে নাযিল করি। অতঃপর
এর সংমিশ্রণে
শ্যামল সবুজ ভূমিজ
লতা-পাতা নির্গত
হয়; অতঃপর তা এমন
শুস্ক চুর্ণ-বিচুর্ণ
হয় যে, বাতাসে উড়ে
যায়। আল্লাহ
এ সবকিছুর উপর
শক্তিমান।
[18:46]
ধনৈশ্বর্য
ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের
সৌন্দর্য এবং স্থায়ী
সৎকর্মসমূহ
আপনার পালনকর্তার
কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা
লাভের জন্যে উত্তম।
[18:47]
যেদিন
আমি পর্বতসমূহকে পরিচালনা করব
এবং আপনি পৃথিবীকে
দেখবেন একটি উম্মুক্ত
প্রান্তর এবং আমি
মানুষকে একত্রিত
করব অতঃপর তাদের
কাউকে ছাড়ব না।
[18:48]
তারা
আপনার পালনকর্তার
সামনে পেশ হবে
সারিবদ্ধ ভাবে
এবং বলা হবেঃ তোমরা
আমার কাছে এসে
গেছ; যেমন তোমাদেরকে প্রথম বার সৃষ্টি
করেছিলাম। না, তোমরা
তো বলতে যে, আমি তোমাদের
জন্যে কোন প্রতিশ্রুত সময়
নির্দিষ্ট করব
না।
[18:49]
আর
আমলনামা সামনে
রাখা হবে। তাতে যা আছে; তার কারণে
আপনি অপরাধীদেরকে
ভীত-সন্ত্রস্ত
দেখবেন। তারা
বলবেঃ হায় আফসোস, এ কেমন আমলনামা। এ যে ছোট
বড় কোন কিছুই
বাদ দেয়নি-সবই
এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে
সামনে উপস্থিত
পাবে। আপনার
পালনকর্তা কারও
প্রতি জুলুম করবেন না।
[18:50]
যখন
আমি ফেরেশতাদেরকে
বললামঃ আদমকে
সেজদা কর, তখন সবাই
সেজদা করল ইবলীস
ব্যতীত। সে ছিল
জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ
অমান্য করল। অতএব
তোমরা কি আমার
পরিবর্তে তাকে
এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ
করছ? অথচ তারা তোমাদের
শত্রু। এটা জালেমদের
জন্যে খুবই নিকৃষ্ট বদল।
[18:51]
নভোমন্ডল
ও ভুমন্ডলের সৃজনকালে আমি তাদেরকে সাক্ষ্য
রাখিনি এবং তাদের
নিজেদের সৃজনকালেও
না। এবং আমি এমনও
নই যে, বিভ্রান্ত
কারীদেরকে সাহায্যকারীরূপে
গ্রহণ করবো।
[18:52]
যেদিন
তিনি বলবেনঃ তোমরা যাদেরকে আমার
শরীক মনে করতে
তাদেরকে ডাক। তারা
তখন তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু
তারা এ আহবানে
সাড়া দেবে না। আমি তাদের
মধ্যস্থলে রেখে
দেব একটি মৃত্যু
গহবর।
[18:53]
অপরাধীরা
আগুন দেখে বোঝে
নেবে যে, তাদেরকে
তাতে পতিত হতে
হবে এবং তারা তা
থেকে রাস্তা পরিবর্তন
করতে পারবে না।
[18:54]
নিশ্চয়
আমি এ কোরআনে মানুষকে নানাভাবে বিভিন্ন
উপমার দ্বারা আমার
বাণী বুঝিয়েছি। মানুষ
সব বস্তু থেকে
অধিক তর্কপ্রিয়।
[18:55]
হেদায়েত
আসার পর এ প্রতীক্ষাই শুধু মানুষকে
বিশ্বাস স্থাপন
করতে এবং তাদের
পালনকর্তার কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করতে বিরত রাখে
যে, কখন আসবে তাদের
কাছে পূর্ববর্তীদের
রীতিনীতি অথবা
কখন আসবে তাদের
কাছেআযাব সামনাসামনি।
[18:56]
আমি
রাসূলগনকে সুসংবাদ
দাতা ও ভয় প্রদর্শন
কারীরূপেই প্রেরণ
করি এবং কাফেররাই
মিথ্যা অবলম্বনে
বিতর্ক করে, তা দ্বারা সত্যকে
ব্যর্থ করে দেয়ার
উদ্দেশে এবং তারা
আমার নিদর্শনাবলীও
যদ্বারা তাদেরকে
ভয় প্রদর্শন করা
হয়, সেগুলোকে
ঠাট্টারূপে গ্রহণ
করেছে।
[18:57]
তার
চাইতে অধিক জালেম
কে, যাকে তার পালনকর্তার
কালাম দ্বারা বোঝানো
হয়, অতঃপর সে তা
থেকে মুখ ফিরিয়ে
নেয় এবং তার পূর্ববর্তী
কৃতকর্মসমূহ ভুলে
যায়? আমি তাদের
অন্তরের উপর পর্দা
রেখে দিয়েছি, যেন তা
না বোঝে এবং তাদের
কানে রয়েছে বধিরতার
বোঝা। যদি আপনি
তাদেরকে সৎপথের প্রতি দাওয়াত
দেন, তবে কখনই তারা
সৎপথে আসবে
না।
[18:58]
আপনার
পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু, যদি তিনি
তাদেরকে তাদের
কৃতকর্মের জন্যে
পাকড়াও করেন তবে
তাদের শাস্তি ত্বরাম্বিত করতেন, কিন্তু
তাদের জন্য রয়েছে
একটি প্রতিশ্রুত
সময়, যা থেকে তারা সরে যাওয়ার জায়গা
পাবে না।
[18:59]
এসব
জনপদও তাদেরকে
আমি ধংস করে দিয়েছি, যখন তারা
জালেম হয়ে গিয়েছিল
এবং আমি তাদের
ধ্বংসের জন্যে
একটি প্রতিশ্রুত
সময় নির্দিষ্ট
করেছিলাম।
[18:60]
যখন
মূসা তাঁর যুবক
(সঙ্গী) কে বললেনঃ দুই সমুদ্রের
সঙ্গমস্থলে না
পৌছা পর্যন্ত আমি
আসব না অথবা আমি
যুগ যুগ ধরে চলতে
থাকব।
[18:61]
অতঃপর
যখন তাঁরা দুই
সুমুদ্রের সঙ্গমস্থলে পৌছালেন, তখন তাঁরা
নিজেদের মাছের
কথা ভুলে গেলেন। অতঃপর
মাছটি সমুদ্রে
সুড়ঙ্গ পথ সৃষ্টি
করে নেমে গেল।
[18:62]
যখন
তাঁরা সে স্থানটি
অতিক্রম করে গেলেন, মূসা
সঙ্গী কে বললেনঃ
আমাদের নাশতা আন। আমরা
এই সফরে পরিশ্রান্ত
হয়ে পড়েছি।
[18:63]
সে
বললঃ আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা
যখন প্রস্তর খন্ডে
আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন আমি
মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম। শয়তানই
আমাকে একথা স্মরণ
রাখতে ভুলিয়ে
দিয়েছিল। মাছটি
আশ্চর্য জনক ভাবে
সমুদ্রে নিজের
পথ করে নিয়েছে।
[18:64]
মূসা
বললেনঃ আমরা তো
এ স্থানটিই
খুঁজছিলাম। অতঃপর
তাঁরা নিজেদের
চিহ্ন ধরে ফিরে
চললেন।
[18:65]
অতঃপর
তাঁরা আমার বান্দাদের মধ্যে এমন একজনের
সাক্ষাত পেলেন, যাকে
আমি আমার পক্ষ
থেকে রহমত দান
করেছিলাম ও আমার পক্ষ থেকে
দিয়েছিলাম এক
বিশেষ জ্ঞান।
[18:66]
মূসা
তাঁকে বললেনঃ আমি
কি এ শর্তে
আপনার অনুসরণ করতে
পারি যে, সত্যপথের
যে জ্ঞান আপনাকে
শেখানো হয়েছে, তা থেকে আমাকে কিছু
শিক্ষা দেবেন?
[18:67]
তিনি
বললেনঃ আপনি আমার
সাথে কিছুতেই
ধৈর্য্যধারণ করে
থাকতে পারবেন না।
[18:68]
যে
বিষয় বোঝা আপনার আয়ত্তাধীন নয়, তা দেখে
আপনি ধৈর্য্যধারণ
করবেন কেমন করে?
[18:69]
মূসা
বললেনঃ আল্লাহ
চাহেন তো আপনি
আমাকে ধৈর্য্যশীল
পাবেন এবং আমি
আপনার কোন আদেশ
অমান্য করব না।
[18:70]
তিনি
বললেনঃ যদি আপনি
আমার অনুসরণ
করেনই তবে কোন
বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন
করবেন না, যে পর্যন্ত
না আমি নিজেই সে সম্পর্কে আপনাকে
কিছু বলি।
[18:71]
অতঃপর
তারা চলতে লাগলঃ
অবশেষে যখন তারা
নৌকায় আরোহণ করল, তখন তিনি
তাতে ছিদ্র করে
দিলেন। মূসা
বললেনঃ আপনি কি এর আরোহীদেরকে
ডুবিয়ে দেয়ার
জন্যে এতে ছিদ্র
করে দিলেন? নিশ্চয়ই
আপনি একটি গুরুতর মন্দ কাজ
করলেন।
[18:72]
তিনি
বললেনঃ আমি কি
বলিনি যে, আপনি
আমার সাথে কিছুতেই
ধৈর্য্য ধরতে পারবেন
না ?
[18:73]
মূসা
বললেনঃ আমাকে আমার
ভুলের জন্যে
অপরাধী করবেন না
এবং আমার কাজে
আমার উপর কঠোরতা
আরোপ করবেন না।
[18:74]
অতঃপর
তারা চলতে লাগল। অবশেষে যখন একটি বালকের
সাক্ষাত পেলেন, তখন তিনি
তাকে হত্যা করলেন। মূসা
বললেন? আপনি কি একটি নিস্পাপ
জীবন শেষ করে দিলেন
প্রাণের বিনিময়
ছাড়াই? নিশ্চয়ই
আপনি তো এক গুরুতর অন্যায়
কাজ করলেন।