Part 16
[18:75]
তিনি
বললেনঃ আমি কি
বলিনি যে, আপনি
আমার সাথে ধৈর্য্য
ধরে থাকতে পারবেন
না।
[18:76]
মূসা
বললেনঃ এরপর যদি
আমি আপনাকে
কোন বিষয়ে প্রশ্ন
করি, তবে আপনি আমাকে
সাথে রাখবেন না। আপনি
আমার পক্ষ থেকে অভিযোগ মুক্ত
হয়ে গেছেন।
[18:77]
অতঃপর
তারা চলতে লাগল, অবশেষে যখন একটি জনপদের
অধিবাসীদের কাছে
পৌছে তাদের কাছে
খাবার চাইল, তখন তারা
তাদের অতিথেয়তা
করতে অস্বীকার
করল। অতঃপর
তারা সেখানে একটি
পতনোম্মুখ প্রাচীর
দেখতে পেলেন, সেটি
তিনি সোজা করে
দাঁড় করিয়ে দিলেন। মূসা
বললেনঃ আপনি ইচ্ছা
করলে তাদের কাছ থেকে এর পারিশ্রমিক
আদায় করতে পারতেন।
[18:78]
তিনি
বললেনঃ এখানেই
আমার ও আপনার
মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ
হল। এখন যে বিষয়ে
আপনি ধৈর্য্য ধরতে
পারেননি, আমি তার তাৎপর্য বলে
দিচ্ছি।
[18:79]
নৌকাটির
ব্যাপারে-সেটি
ছিল কয়েকজন
দরিদ্র ব্যক্তির। তারা
সমুদ্রে জীবিকা
অন্বেষন করত। আমি ইচ্ছা
করলাম যে, সেটিকে
ক্রটিযুক্ত করে
দেই। তাদের
অপরদিকে ছিল এক
বাদশাহ। সে বলপ্রয়োগে প্রত্যেকটি নৌকা
ছিনিয়ে নিত।
[18:80]
বালকটির
ব্যাপার তার পিতা-মাতা ছিল ঈমানদার। আমি আশঙ্কা
করলাম যে, সে অবাধ্যতা
ও কুফর দ্বারা
তাদেরকে প্রভাবিত করবে।
[18:81]
অতঃপর
আমি ইচ্ছা করলাম
যে, তাদের পালনকর্তা
তাদেরকে মহত্তর, তার চাইতে
পবিত্রতায় ও ভালবাসায়
ঘনিষ্ঠতর একটি শ্রেষ্ঠ
সন্তান দান করুক।
[18:82]
প্রাচীরের
ব্যাপার-সেটি ছিল নগরের দুজন পিতৃহীন
বালকের। এর নীচে
ছিল তাদের গুপ্তধন
এবং তাদের পিতা
ছিল সৎকর্ম পরায়ন। সুতরাং
আপনার পালনকর্তা
দায়বশতঃ ইচ্ছা
করলেন যে, তারা
যৌবনে পদার্পন
করুক এবং নিজেদের
গুপ্তধন উদ্ধার
করুক। আমি নিজ
মতে এটা করিনি। আপনি
যে বিষয়ে
ধৈর্য্যধারণ করতে
অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল
তার ব্যাখ্যা।
[18:83]
তারা
আপনাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা
করে। বলুনঃ
আমি তোমাদের কাছে
তাঁর কিছু অবস্থা
বর্ণনা করব।
[18:84]
আমি
তাকে পৃথিবীতে
প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং
প্রত্যেক বিষয়ের
কার্যোপকরণ দান
করেছিলাম।
[18:85]
অতঃপর
তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন।
[18:86]
অবশেষে
তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি
সুর্যকে এক পঙ্কিল
জলাশয়ে অস্ত যেতে
দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে
দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন!
আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন
অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে
গ্রহণ করতে পারেন।
[18:87]
তিনি
বললেনঃ যে কেউ সীমালঙ্ঘনকারী
হবে আমি তাকে শাস্তি
দেব। অতঃপর
তিনি তাঁর পালনকর্তার
কাছে ফিরে যাবেন। তিনি
তাকে কঠোর শাস্তি
দেবেন।
[18:88]
এবং
যে বিশ্বাস স্থাপন
করে ও সৎকর্ম করে তার
জন্য প্রতিদান
রয়েছে কল্যাণ
এবং আমার কাজে
তাকে সহজ নির্দেশ দেব।
[18:89]
অতঃপর
তিনি এক উপায়
অবলম্বন করলেন।
[18:90]
অবশেষে
তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন, তখন তিনি
তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের
উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ
থেকে আত্নরক্ষার
কোন আড়াল আমি
সৃষ্টি করিনি।
[18:91]
প্রকৃত
ঘটনা এমনিই। তার বৃত্তান্ত আমি
সম্যক অবগত আছি।
[18:92]
আবার
তিনি এক পথ ধরলেন।
[18:93]
অবশেষে
যখন তিনি দুই পর্বত প্রচীরের মধ্যস্থলে
পৌছলেন, তখন তিনি সেখানে
এক জাতিকে পেলেন, যারা
তাঁর কথা একেবারেই
বুঝতে পারছিল না।
[18:94]
তারা
বললঃ হে যুলকারনাইন, ইয়াজুজ
ও মাজুজ দেশে অশান্তি
সৃষ্টি করেছে। আপনি
বললে আমরা আপনার
জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে
যে, আপনি আমাদের
ও তাদের মধ্যে
একটি প্রাচীর নির্মাণ
করে দেবেন।
[18:95]
তিনি
বললেনঃ আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থ? দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা
আমাকে শ্রম দিয়ে
সাহায্য কর। আমি তোমাদের
ও তাদের মধ্যে
একটি সুদৃঢ় প্রাচীর
নির্মাণ করে দেব।
[18:96]
তোমরা
আমাকে লোহার পাত
এনে দাও। অবশেষে
যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী
ফাঁকা স্থান পূর্ণ
হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা
হাঁপরে দম দিতে
থাক। অবশেষে
যখন তা আগুনে পরিণত
হল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা
গলিত তামা নিয়ে
এস, আমি তা এর উপরে
ঢেলে দেই।
[18:97]
অতঃপর
ইয়াজুজ ও মাজুজ
তার উপরে আরোহণ
করতে পারল না এবং
তা ভেদ করতে ও সক্ষম
হল না।
[18:98]
যুলকারনাইন
বললেনঃ এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার
পালনকর্তার প্রতিশ্রুত
সময় আসবে, তখন তিনি
একে চূর্ণ-বিচূর্ণ
করে দেবেন এবং
আমার পালনকর্তার
প্রতিশ্রুতি সত্য।
[18:99]
আমি
সেদিন তাদেরকে
দলে দলে তরঙ্গের
আকারে ছেড়ে দেব
এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। অতঃপর
আমি তাদের সবাইকে একত্রিত
করে আনব।
[18:100]
সেদিন
আমি কাফেরদের কাছে জাহান্নামকে
প্রত্যক্ষ ভাবে
উপস্থিত করব।
[18:101]
যাদের
চক্ষুসমূহের উপর
পর্দা ছিল আমার
স্মরণ থেকে এবং
যারা শুনতেও সক্ষম
ছিল না।
[18:102]
কাফেররা
কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে
আমার বান্দাদেরকে
অভিভাবক রূপে গ্রহণ
করবে? আমি কাফেরদের অভ্যর্থনার জন্যে
জাহান্নামকে প্রস্তুত
করে রেখেছি।
[18:103]
বলুনঃ
আমি কি তোমাদেরকে
সেসব লোকের
সংবাদ দেব, যারা
কর্মের দিক দিয়ে
খুবই ক্ষতিগ্রস্ত।
[18:104]
তারাই
সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিবজীবনে
বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা
মনে করে যে, তারা
সৎকর্ম করেছে।
[18:105]
তারাই
সে লোক, যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনাবলী
এবং তাঁর সাথে
সাক্ষাতের বিষয়
অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে
যায়। সুতরাং
কেয়ামতের দিন
তাদের জন্য আমি
কোন গুরুত্ব স্থির করব না।
[18:106]
জাহান্নাম-এটাই
তাদের প্রতিফল; কারণ, তারা
কাফের হয়েছে এবং
আমার নিদর্শনাবলী
ও রসূলগণকে বিদ্রূপের
বিষয় রূপে গ্রহণ করেছে।
[18:107]
যারা
বিশ্বাস স্থাপন
করে ও সৎকর্ম সম্পাদন
করে, তাদের অভ্যর্থনার
জন্যে আছে জান্নাতুল
ফেরদাউস।
[18:108]
সেখানে
তারা চিরকাল থাকবে, সেখান
থেকে স্থান পরিবর্তন
করতে চাইবে না।
[18:109]
বলুনঃ
আমার পালনকর্তার
কথা, লেখার জন্যে
যদি সমুদ্রের পানি
কালি হয়, তবে আমার
পালনকর্তার কথা, শেষ হওয়ার আগেই সে সমুদ্র
নিঃশেষিত হয়ে
যাবে। সাহায্যার্থে
অনুরূপ আরেকটি
সমুদ্র এনে দিলেও।
[18:110]
বলুনঃ
আমি ও তোমাদের
মতই একজন মানুষ, আমার
প্রতি প্রত্যাদেশ
হয় যে, তোমাদের ইলাহই
একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার
সাক্ষাত কামনা
করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন
করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে
কাউকে শরীক না
করে।
19 Maryam
শুরু
করছি আল্লাহর
নামে যিনি পরম
করুণাময়, অতি
দয়ালু।
[19:1]
কাফ-হা-ইয়া-আইন-সাদ
[19:2]
এটা
আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহের বিবরণ
তাঁর বান্দা যাকারিয়ার
প্রতি।
[19:3]
যখন
সে তাঁর পালনকর্তাকে
আহবান করেছিল
নিভৃতে।
[19:4]
সে
বললঃ হে আমার পালনকর্তা আমার অস্থি বয়স-ভারাবনত
হয়েছে; বার্ধক্যে
মস্তক সুশুভ্র
হয়েছে; হে আমার পালনকর্তা! আপনাকে
ডেকে আমি কখনও
বিফলমনোরথ হইনি।
[19:5]
আমি
ভয় করি আমার পর
আমার স্বগোত্রকে
এবং আমার স্ত্রী
বন্ধ্যা; কাজেই
আপনি নিজের পক্ষ
থেকে আমাকে এক
জন কর্তব্য
পালনকারী দান করুন।
[19:6]
সে
আমার স্থলাভিষিক্ত
হবে ইয়াকুব
বংশের এবং হে আমার
পালনকর্তা, তাকে
করুন সন্তোষজনক।
[19:7]
হে
যাকারিয়া, আমি তোমাকে
এক পুত্রের
সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম
হবে ইয়াহইয়া। ইতিপূর্বে
এই নামে আমি কারও
নাম করণ করিনি।
[19:8]
সে
বললঃ হে আমার পালনকর্তা কেমন করে আমার
পুত্র হবে অথচ
আমার স্ত্রী যে
বন্ধ্যা, আর আমিও
যে বার্ধক্যের
শেষ প্রান্তে
উপনীত।
[19:9]
তিনি
বললেনঃ এমনিতেই
হবে। তোমার
পালনকর্তা বলে
দিয়েছেনঃ এটা
আমার পক্ষে সহজ। আমি তো
পুর্বে তোমাকে
সৃষ্টি করেছি
এবং তুমি কিছুই
ছিলে না।
[19:10]
সে
বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে
একটি নির্দশন দিন। তিনি
বললেন তোমার নিদর্শন
এই যে, তুমি সুস্থ
অবস্থায় তিন দিন মানুষের
সাথে কথাবার্তা
বলবে না।
[19:11]
অতঃপর
সে কক্ষ থেকে বের
হয়ে তার সম্প্রদায়ের
কাছে এল এবং ইঙ্গিতে
তাদেরকে সকাল সন্ধ্যায়
আল্লাহকে স্মরণ করতে বললঃ
[19:12]
হে
ইয়াহইয়া দৃঢ়তার
সাথে এই গ্রন্থ
ধারণ কর। আমি তাকে
শৈশবেই বিচারবুদ্ধি
দান করেছিলাম।
[19:13]
এবং
নিজের পক্ষ থেকে
আগ্রহ ও পবিত্রতা
দিয়েছি। সে ছিল
পরহেযগার।
[19:14]
পিতা-মাতার
অনুগত এবং সে উদ্ধত, নাফরমান ছিল
না।
[19:15]
তার
প্রতি শান্তি-যেদিন
সে জন্মগ্রহণ
করে এবং যেদিন
মৃত্যুবরণ করবে
এবং যেদিন জীবিতাবস্থায়
পুনরুত্থিত হবে।
[19:16]
এই
কিতাবে মারইয়ামের
কথা বর্ণনা
করুন, যখন সে তার
পরিবারের লোকজন
থেকে পৃথক হয়ে
পূর্বদিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।
[19:17]
অতঃপর
তাদের থেকে নিজেকে
আড়াল করার
জন্যে সে পর্দা
করলো। অতঃপর
আমি তার কাছে আমার
রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পুর্ণ মানবাকৃতিতে
আত্নপ্রকাশ করল।
[19:18]
মারইয়াম
বললঃ আমি তোমা
থেকে দয়াময়ের
আশ্রয় প্রার্থনা
করি যদি তুমি আল্লাহভীরু
হও।
[19:19]
সে
বললঃ আমি তো শুধু
তোমার পালনকর্তা
প্রেরিত, যাতে
তোমাকে এক পবিত্র
পুত্র দান করে
যাব।
[19:20]
মরিইয়াম
বললঃ কিরূপে আমার পুত্র হবে, যখন কোন
মানব আমাকে স্পর্শ
করেনি এবং আমি
ব্যভিচারিণীও
কখনও ছিলাম না ?
[19:21]
সে
বললঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার
জন্যে সহজ সাধ্য
এবং আমি তাকে মানুষের
জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার
পক্ষ থেকে অনুগ্রহ
স্বরূপ করতে চাই। এটা তো
এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।
[19:22]
অতঃপর
তিনি গর্ভে সন্তান
ধারণ করলেন
এবং তৎসহ এক
দূরবর্তী স্থানে
চলে গেলেন।
[19:23]
প্রসব
বেদনা তাঁকে এক
খেজুর বৃক্ষ-মূলে
আশ্রয় নিতে বাধ্য
করল। তিনি বললেনঃ
হায়, আমি যদি কোনরূপে
এর পূর্বে মরে যেতাম এবং
মানুষের স্মৃতি
থেকে বিলুপ্ত হয়ে, যেতাম!
[19:24]
অতঃপর
ফেরেশতা তাকে নিম্নদিক থেকে আওয়ায দিলেন
যে, তুমি দুঃখ
করো না। তোমার
পালনকর্তা তোমার
পায়ের তলায় একটি নহর জারি
করেছেন।
[19:25]
আর
তুমি নিজের দিকে
খেজুর গাছের
কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে
তোমার উপর সুপক্ক
খেজুর পতিত হবে।
[19:26]
যখন
আহার কর, পান কর
এবং চক্ষু শীতল কর। যদি মানুষের
মধ্যে কাউকে তুমি
দেখ, তবে বলে দিওঃ
আমি আল্লাহর উদ্দেশে রোযা মানত করছি। সুতরাং
আজ আমি কিছুতেই
কোন মানুষের সাথে
কথা বলব না।
[19:27]
অতঃপর
তিনি সন্তানকে
নিয়ে তার সম্প্রদায়ের
কাছে উপস্থিত হলেন। তারা
বললঃ হে মারইয়াম, তুমি
একটি অঘটন ঘটিয়ে বসেছ।
[19:28]
হে
হারূণ-ভাগিনী, তোমার
পিতা অসৎ ব্যক্তি ছিলেন
না এবং তোমার মাতাও
ছিল না ব্যভিচারিনী।
[19:29]
অতঃপর
তিনি হাতে সন্তানের
দিকে ইঙ্গিত
করলেন। তারা
বললঃ যে কোলের
শিশু তার সাথে
আমরা কেমন করে
কথা বলব?
[19:30]
সন্তান
বললঃ আমি তো আল্লাহর দাস। তিনি আমাকে
কিতাব দিয়েছেন
এবং আমাকে নবী
করেছেন।
[19:31]
আমি
যেখানেই থাকি, তিনি
আমাকে বরকতময়
করেছেন। তিনি
আমাকে নির্দেশ
দিয়েছেন, যতদিন
জীবিত থাকি, ততদিন
নামায ও যাকাত
আদায় করতে।
[19:32]
এবং
জননীর অনুগত থাকতে
এবং আমাকে
তিনি উদ্ধত ও হতভাগ্য
করেননি।
[19:33]
আমার
প্রতি সালাম যেদিন
আমি জন্মগ্রহণ
করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ
করব এবং যেদিন
পুনরুজ্জীবিত
হয়ে উত্থিত হব।
[19:34]
এই
মারইয়ামের পুত্র
ঈসা। সত্যকথা, যে সম্পর্কে
লোকেরা বিতর্ক
করে।
[19:35]
আল্লাহ
এমন নন যে, সন্তান গ্রহণ করবেন, তিনি
পবিত্র ও মহিমাময়
সত্তা, তিনি যখন কোন
কাজ করা সিদ্ধান্ত করেন, তখন একথাই
বলেনঃ হও এবং তা
হয়ে যায়।
[19:36]
তিনি
আরও বললেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ আমার পালনকর্তা
ও তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা
তার এবাদত কর। এটা সরল পথ।
[19:37]
অতঃপর
তাদের মধ্যে দলগুলো
পৃথক পৃথক পথ
অবলম্বন করল। সুতরাং
মহাদিবস আগমনকালে
কাফেরদের জন্যে
ধবংস।
[19:38]
সেদিন
তারা কি চমৎকার শুনবে এবং দেখবে, যেদিন
তারা আমার কাছে
আগমন করবে। কিন্তু
আজ জালেমরা প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে
রয়েছে।
[19:39]
আপনি
তাদেরকে পরিতাপের
দিবস সম্পর্কে
হুশিয়ার করে দিন
যখন সব ব্যাপারের
মীমাংসা হয়ে যাবে। এখন তারা অনবধানতায় আছে
এবং তারা বিশ্বাস
স্থাপন করছে না।
[19:40]
আমিই
চুড়ান্ত মালিকানার অধিকারী হব পৃথিবীর
এবং তার উপর যারা
আছে তাদের এবং
আমারই কাছে তারা প্রত্যাবর্তিত
হবে।
[19:41]
আপনি
এই কিতাবে ইব্রাহীমের
কথা বর্ণনা
করুন। নিশ্চয়
তিনি ছিলেন সত্যবাদী, নবী।
[19:42]
যখন
তিনি তার পিতাকে
বললেনঃ হে আমার পিতা, যে শোনে
না, দেখে না এবং
তোমার কোন উপকারে
আসে না, তার এবাদত
কেন কর?
[19:43]
হে
আমার পিতা, আমার
কাছে এমন জ্ঞান
এসেছে; যা তোমার কাছে
আসেনি, সুতরাং আমার
অনুসরণ কর, আমি তোমাকে
সরল পথ দেখাব।
[19:44]
হে
আমার পিতা, শয়তানের
এবাদত করো না। নিশ্চয়
শয়তান দয়াময়ের
অবাধ্য।
[19:45]
হে
আমার পিতা, আমি আশঙ্কা
করি, দয়াময়ের
একটি আযাব তোমাকে
স্পর্শ করবে, অতঃপর
তুমি শয়তানের
সঙ্গী হয়ে যাবে।
[19:46]
পিতা
বললঃ যে ইব্রাহীম, তুমি কি আমার উপাস্যদের
থেকে মুখ ফিরিয়ে
নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত
না হও, আমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে
তোমার প্রাণনাশ
করব। তুমি চিরতরে
আমার কাছ থেকে
দূর হয়ে যাও।
[19:47]
ইব্রাহীম
বললেনঃ তোমার উপর শান্তি হোক, আমি আমার
পালনকর্তার কাছে
তোমার জন্যে ক্ষমা
প্রার্থনা করব। নিশ্চয় তিনি আমার প্রতি
মেহেরবান।
[19:48]
আমি
পরিত্যাগ করছি
তোমাদেরকে এবং তোমরা আল্লাহ
ব্যতীত যাদের এবাদত
কর তাদেরকে; আমি আমার
পালনকর্তার এবাদত করব। আশা করি, আমার
পালনকর্তার এবাদত
করে আমি বঞ্চিত
হব না।
[19:49]
অতঃপর
তিনি যখন তাদেরকে
এবং তার আল্লাহ
ব্যতীত যাদের এবাদত
করত, তাদের সবাইকে
পরিত্যাগ করলেন, তখন আমি
তাকে দান করলাম
ইসহাক ও ইয়াকুব
এবং প্রত্যেককে
নবী করলাম।
[19:50]
আমি
তাদেরকে দান করলাম
আমার অনুগ্রহ
এবং তাদেরকে দিলাম
সমুচ্চ সুখ্যাতি।
[19:51]
এই
কিতাবে মূসার কথা
বর্ণনা করুন, তিনি
ছিলেন মনোনীত এবং
তিনি ছিলেন রাসূল, নবী।
[19:52]
আমি
তাকে আহবান করলাম
তূর পাহাড়ের
ডান দিক থেকে এবং
গুঢ়তত্ত্ব আলোচনার
উদ্দেশে তাকে নিকটবর্তী
করলাম।
[19:53]
আমি
নিজ অনুগ্রহে তাঁকে
দান করলাম
তাঁর ভাই হারুনকে
নবীরূপে।
[19:54]
এই
কিতাবে ইসমাঈলের
কথা বর্ণনা করুন, তিনি প্রতিশ্রুতি
পালনে সত্যাশ্রয়ী
এবং তিনি ছিলেন
রসূল, নবী।
[19:55]
তিনি
তাঁর পরিবারবর্গকে
নামায ও যাকাত
আদায়ের নির্দেশ
দিতেন এবং তিনি
তাঁর পালনকর্তার
কাছে পছন্দনীয়
ছিলেন।
[19:56]
এই
কিতাবে ইদ্রীসের
কথা আলোচনা করুন, তিনি ছিলেন
সত্যবাদী নবী।
[19:57]
আমি
তাকে উচ্চে উন্নীত করেছিলাম।
[19:58]
এরাই
তারা-নবীগণের মধ্য
থেকে যাদেরকে
আল্লাহ তা’আলা নেয়ামত
দান করেছেন। এরা আদমের
বংশধর এবং যাদেরকে
আমি নূহের
সাথে নৌকায় আরোহন
করিয়েছিলাম, তাদের
বংশধর, এবং ইব্রাহীম
ও ইসরাঈলের বংশধর এবং যাদেরকে
আমি পথ প্রদর্শন
করেছি ও মনোনীত
করেছি, তাদের বংশোদ্ভূত। তাদের কাছে যখন
দয়াময় আল্লাহর
আয়াতসমূহ পাঠ
করা হত, তখন তারা সেজদায়
লুটিয়ে পড়ত
এবং ক্রন্দন করত। [ Sajdah ]
[19:59]
অতঃপর
তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা
নামায নষ্ট করল
এবং কুপ্রবৃত্তির
অনুবর্তী হল। সুতরাং
তারা অচিরেই
পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ
করবে।
[19:60]
কিন্তু
তারা ব্যতীত, যারা
তওবা করেছে, বিশ্বাস
স্থাপন করেছে। সুতরাং
তারা জান্নাতে
প্রবেশ করবে এবং
তাদের উপর কোন জুলুম করা
হবে না।
[19:61]
তাদের
স্থায়ী বসবাস
হবে যার ওয়াদা
দয়াময় আল্লাহ
তাঁর বান্দাদেরকে
অদৃশ্যভাবে দিয়েছেন। অবশ্যই
তাঁর ওয়াদার
তারা পৌঁছাবে।
[19:62]
তারা
সেখানে সালাম ব্যতীত
কোন অসার কথাবার্তা
শুনবে না এবং সেখানে
সকাল-সন্ধ্যা তাদের
জন্যে রুযী থাকবে।
[19:63]
এটা
ঐ জান্নাত যার
অধিকারী করব আমার বান্দাদের
মধ্যে পরহেযগারদেরকে।
[19:64]
(জিব্রাইল
বললঃ) আমি আপনার পালনকর্তার আদেশ
ব্যতীত অবতরণ করি
না, যা আমাদের
সামনে আছে, যা আমাদের
পশ্চাতে আছে এবং
যা এ দুই-এর মধ্যস্থলে
আছে, সবই তাঁর এবং
আপনার পালনকর্তা
বিস্মৃত হওয়ার
নন।
[19:65]
তিনি
নভোমন্ডল, ভূমন্ডলে এতদুভয়ের মধ্যবর্তী
সবার পালনকর্তা। সুতরাং
তাঁরই বন্দেগী
করুন এবং তাতে
দৃঢ় থাকুন
আপনি কি তাঁর সমনাম
কাউকে জানেন?
[19:66]
মানুষ
বলেঃ আমার মৃত্যু
হলে পর আমি কি
জীবিত অবস্থায়
পুনরুত্থিত হব?
[19:67]
মানুষ
কি স্মরণ করে না
যে, আমি তাকে
ইতি পূর্বে সৃষ্টি
করেছি এবং সে তখন
কিছুই ছিল না।
[19:68]
সুতরাং
আপনার পালনকর্তার
কসম, আমি অবশ্যই
তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে
একত্রে সমবেত করব, অতঃপর
অবশ্যই তাদেরকে নতজানু অবস্থায়
জাহান্নামের চারপাশে
উপস্থিত করব।
[19:69]
অতঃপর
প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে যে দয়াময়
আল্লাহর সর্বাধিক
অবাধ্য আমি অবশ্যই
তাকে পৃথক করে
নেব।
[19:70]
অতঃপর
তাদের মধ্যে যারা জাহান্নামে প্রবেশের
অধিক যোগ্য, আমি তাদের
বিষয়ে ভালোভাবে
জ্ঞাত আছি।
[19:71]
তোমাদের
মধ্যে এমন কেউ
নেই যে তথায়
পৌছবে না। এটা আপনার
পালনকর্তার অনিবার্য
ফায়সালা।
[19:72]
অতঃপর
আমি পরহেযগারদেরকে উদ্ধার করব এবং
জালেমদেরকে সেখানে
নতজানু অবস্থায়
ছেড়ে দেব।
[19:73]
যখন
তাদের কাছে আমার
সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তেলাওয়াত
করা হয়, তখন কাফেররা
মুমিনদেরকে বলেঃ
দুই দলের মধ্যে
কোনটি মর্তবায়
শ্রেষ্ঠ এবং কার
মজলিস উত্তম?
[19:74]
তাদের
পূর্বে কত মানব
গোষ্ঠীকে আমি বিনাশ করেছি, তারা
তাদের চাইতে সম্পদে
ও জাঁক-জমকে শ্রেষ্ঠ
ছিল।
[19:75]
বলুন, যারা
পথভ্রষ্টতায়
আছে, দয়াময় আল্লাহ
তাদেরকে যথেষ্ট
অবকাশ দেবেন; এমনকি
অবশেষে তারা প্রত্যক্ষ
করবে যে বিষয়ে
তাদেরকে ওয়াদা
দেয়া হচ্ছে, তা আযাব
হোক অথবা কেয়ামতই
হোক। সুতরাং তখন তারা জানতে
পারবে কে মর্তবায়
নিকৃষ্ট ও দলবলে
দূর্বল।
[19:76]
যারা
সৎপথে চলে
আল্লাহ তাদের পথপ্রাপ্তি বৃদ্ধি
করেন এবং স্থায়ী
সৎকর্মসমূহ
তোমার পালনকর্তার
কাছে সওয়াবের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ
এবং প্রতিদান হিসেবেও
শ্রেষ্ট।
[19:77]
আপনি
কি তাকে লক্ষ্য
করেছেন যে, আমার
নিদর্শনাবলীতে
বিশ্বাস করে না
এবং বলেঃ আমাকে
অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি
অবশ্যই দেয়া হবে।
[19:78]
সে
কি অদৃশ্য বিষয়
জেনে ফেলেছে, অথবা
দয়াময় আল্লাহর
নিকট থেকে কোন
প্রতিশ্রুতি প্রাপ্ত
হয়েছে?
[19:79]
না, এটা ঠিক
নয়। সে যা
বলে আমি তা
লিখে রাখব এবং
তার শাস্তি দীর্ঘায়িত
করতে থাকব।
[19:80]
সে
যা বলে, মৃত্যুর পর
আমি তা নিয়ে
নেব এবং সে আমার
কাছে আসবে একাকী।
[19:81]
তারা
আল্লাহ ব্যতীত
অন্যান্য ইলাহ গ্রহণ করেছে, যাতে
তারা তাদের জন্যে
সাহায্যকারী হয়।
[19:82]
কখনই
নয়, তারা তাদের
এবাদত অস্বীকার
করবে এবং তাদের
বিপক্ষে চলে যাবে।
[19:83]
আপনি
কি লক্ষ্য করেননি
যে, আমি কাফেরদের
উপর শয়তানদেরকে
ছেড়ে দিয়েছি। তারা
তাদেরকে বিশেষভাবে
(মন্দকর্মে) উৎসাহিত
করে।
[19:84]
সুতরাং
তাদের ব্যাপারে
আপনি তাড়াহুড়া
করবেন না। আমি তো
তাদের গণনা পূর্ণ
করছি মাত্র।
[19:85]
সেদিন
দয়াময়ের কাছে পরহেযগারদেরকে
অতিথিরূপে সমবেত
করব,
[19:86]
এবং
অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের
দিকে হাঁকিয়ে
নিয়ে যাব।
[19:87]
যে
দয়াময় আল্লাহর
কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি
গ্রহণ করেছে, সে ব্যতীত
আর কেউ সুপারিশ
করার অধিকারী হবে
না।
[19:88]
তারা
বলেঃ দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ
করেছেন।
[19:89]
নিশ্চয়
তোমরা তো এক অদ্ভুত কান্ড করেছ।
[19:90]
হয়
তো এর কারণেই এখনই নভোমন্ডল ফেটে
পড়বে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড
হবে এবং পর্বতমালা
চূর্ণ-বিচুর্ণ
হবে।
[19:91]
এ
কারণে যে, তারা
দয়াময় আল্লাহর
জন্যে সন্তান আহবান
করে।
[19:92]
অথচ
সন্তান গ্রহণ করা দয়াময়ের জন্য
শোভনীয় নয়।
[19:93]
নভোমন্ডল
ও ভূ-মন্ডলে কেউ
নেই যে, দয়াময়
আল্লাহর কাছে দাস
হয়ে উপস্থিত হবে
না।
[19:94]
তাঁর
কাছে তাদের পরিসংখ্যান রয়েছে এবং তিনি
তাদেরকে গণনা করে
রেখেছেন।
[19:95]
কেয়ামতের
দিন তাদের সবাই
তাঁর কাছে একাকী
অবস্থায় আসবে।
[19:96]
যারা
বিশ্বাস স্থাপন
করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন
করে, তাদেরকে দয়াময়
আল্লাহ ভালবাসা
দেবেন।
[19:97]
আমি
কোরআনকে আপনার
ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে
আপনি এর দ্বারা
পরহেযগারদেরকে
সুসংবাদ দেন এবং
কলহকারী সম্প্রদায়কে
সতর্ক করেন।
[19:98]
তাদের
পূর্বে আমি কত মানবগোষ্ঠীকে
ধ্বংস করেছি। আপনি
কি তাদের কাহারও
সাড়া পান, অথবা
তাদের ক্ষীনতম আওয়ায ও শুনতে
পান?
20 Tâ-Hâ
শুরু
করছি আল্লাহর
নামে যিনি পরম
করুণাময়, অতি
দয়ালু।
[20:1]
তোয়া-হা
[20:2]
আপনাকে
ক্লেশ দেবার জন্য
আমি আপনার
প্রতি কোরআন অবতীর্ণ
করিনি।
[20:3]
কিন্তু
তাদেরই উপদেশের
জন্য যারা ভয়
করে।
[20:4]
এটা
তাঁর কাছ থেকে
অবতীর্ণ, যিনি
ভূমন্ডল ও সমুচ্চ
নভোমন্ডল সৃষ্টি
করেছেন।
[20:5]
তিনি
পরম দয়াময়, আরশে
সমাসীন হয়েছেন।
[20:6]
নভোমন্ডলে, ভুমন্ডলে, এতদুভয়ের
মধ্যবর্তী স্থানে
এবং সিক্ত ভূগর্ভে
যা আছে, তা তাঁরই।
[20:7]
যদি
তুমি উচ্চকন্ঠেও
কথা বল, তিনি তো গুপ্ত
ও তদপেক্ষাও গুপ্ত
বিষয়বস্তু জানেন।
[20:8]
আল্লাহ
তিনি ব্যতীত কোন
উপাস্য ইলাহ
নেই। সব সৌন্দর্যমন্ডিত
নাম তাঁরই।
[20:9]
আপনার
কাছে মূসার বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি।
[20:10]
তিনি
যখন আগুন দেখলেন, তখন পরিবারবর্গকে
বললেনঃ তোমরা এখানে
অবস্থান কর আমি
আগুন দেখেছি। সম্ভবতঃ
আমি তা থেকে
তোমাদের কাছে কিছু
আগুন জালিয়ে আনতে
পারব অথবা আগুনে
পৌছে পথের সন্ধান পাব।
[20:11]
অতঃপর
যখন তিনি আগুনের
কাছে পৌছলেন, তখন আওয়াজ
আসল হে মূসা,
[20:12]
আমিই
তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে
ফেল, তুমি পবিত্র
উপত্যকা তুয়ায়
রয়েছ।
[20:13]
এবং
আমি তোমাকে মনোনীত
করেছি, অতএব যা প্রত্যাদেশ
করা হচ্ছে, তা শুনতে
থাক।
[20:14]
আমিই
আল্লাহ আমি ব্যতীত
কোন ইলাহ নেই। অতএব
আমার এবাদত কর
এবং আমার স্মরণার্থে
নামায কায়েম কর।
[20:15]
কেয়ামত
অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে
প্রত্যেকেই তার
কর্মানুযায়ী
ফল লাভ করে।
[20:16]
সুতরাং
যে ব্যক্তি কেয়ামতে বিশ্বাস রাখে
না এবং নিজ খাহেশের
অনুসরণ করে, সে যেন
তোমাকে তা থেকে
নিবৃত্ত না করে। নিবৃত্ত
হলে তুমি ধবংস
হয়ে যাবে।
[20:17]
হে
মূসা, তোমার ডানহাতে
ওটা কি?
[20:18]
তিনি
বললেনঃ এটা আমার
লাঠি, আমি এর উপর
ভর দেই এবং এর দ্বারা
আমার ছাগপালের
জন্যে বৃক্ষপত্র
ঝেড়ে ফেলি এবং এতে আমার অন্যান্য
কাজ ও চলে।
[20:19]
আল্লাহ
বললেনঃ হে মূসা, তুমি ওটা নিক্ষেপ কর।
[20:20]
অতঃপর
তিনি তা নিক্ষেপ
করলেন, অমনি তা সাপ
হয়ে ছুটাছুটি
করতে লাগল।
[20:21]
আল্লাহ
বললেনঃ তুমি তাকে
ধর এবং ভয়
করো না, আমি এখনি একে
পূর্বাবস্থায়
ফিরিয়ে দেব।
[20:22]
তোমার
হাত বগলে রাখ, তা বের হয়ে আসবে নির্মল
উজ্জ্বল হয়ে অন্য
এক নিদর্শন রূপে; কোন দোষ
ছাড়াই।
[20:23]
এটা
এজন্যে যে, আমি আমার
বিরাট নিদর্শনাবলীর
কিছু তোমাকে দেখাই।
[20:24]
ফেরাউনের
নিকট যাও, সে দারুণ উদ্ধত হয়ে গেছে।
[20:25]
মূসা
বললেনঃ হে আমার
পালনকর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত
করে দিন।
[20:26]
এবং
আমার কাজ সহজ করে
দিন।
[20:27]
এবং
আমার জিহবা থেকে
জড়তা দূর করে দিন।
[20:28]
যাতে
তারা আমার কথা
বুঝতে পারে।
[20:29]
এবং
আমার পরিবারবর্গের
মধ্য থেকে আমার
একজন সাহায্যকারী
করে দিন।
[20:30]
আমার
ভাই হারুনকে।
[20:31]
তার
মাধ্যমে আমার কোমর
মজবুত করুন।
[20:32]
এবং
তাকে আমার কাজে
অংশীদার করুন।
[20:33]
যাতে
আমরা বেশী করে
আপনার পবিত্রতা
ও মহিমা ঘোষনা
করতে পারি।
[20:34]
এবং
বেশী পরিমাণে আপনাকে
স্মরণ করতে
পারি।
[20:35]
আপনি
তো আমাদের অবস্থা
সবই দেখছেন।
[20:36]
আল্লাহ
বললেনঃ হে মূসা, তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে
দেয়া হল।
[20:37]
আমি
তোমার প্রতি আরও
একবার অনুগ্রহ
করেছিলাম।
[20:38]
যখন
আমি তোমার মাতাকে
নির্দেশ দিয়েছিলাম
যা অতঃপর বর্ণিত
হচ্ছে।
[20:39]
যে, তুমি
(মূসাকে) সিন্দুকে রাখ, অতঃপর তা দরিয়ায়
ভাসিয়ে দাও, অতঃপর
দরিয়া তাকে তীরে
ঠেলে দেবে। তাকে আমার শক্র ও তার
শক্র উঠিয়ে নেবে। আমি তোমার
প্রতি মহব্বত সঞ্চারিত
করেছিলাম আমার নিজের পক্ষ
থেকে, যাতে তুমি
আমার দৃষ্টির সামনে
প্রতি পালিত হও।
[20:40]
যখন
তোমার ভগিনী এসে
বললঃ আমি কি তোমাদেরকে
বলে দেব কে তাকে
লালন পালন করবে। অতঃপর
আমি তোমাকে তোমার
মাতার কাছে
ফিরিয়ে দিলাম, যাতে
তার চক্ষু শীতল
হয় এবং দুঃখ না
পায়। তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা
করেছিলে, অতঃপর
আমি তোমাকে এই
দুশ্চিন্তা থেকে
মুক্তি দেই; আমি তোমাকে অনেক পরীক্ষা
করেছি। অতঃপর
তুমি কয়েক বছর
মাদইয়ান বাসীদের
মধ্যে অবস্থান
করেছিলে; হে মূসা, অতঃপর
তুমি নির্ধারিত
সময়ে এসেছ।
[20:41]
এবং
আমি তোমাকে আমার
নিজের জন্য
তৈরী করে নিয়েছি।
[20:42]
তুমি
ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনাবলীসহ
যাও এবং আমার স্মরণে
শৈথিল্য করো না।
[20:43]
তোমরা
উভয়ে ফেরআউনের
কাছে যাও সে খুব
উদ্ধত হয়ে গেছে।
[20:44]
অতঃপর
তোমরা তাকে নম্র
কথা বল, হয়তো সে চিন্তা-ভাবনা
করবে অথবা ভীত
হবে।
[20:45]
তারা
বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা
আশঙ্কা করি যে, সে আমাদের
প্রতি জুলুম করবে
কিংবা উত্তেজিত
হয়ে উঠবে।
[20:46]
আল্লাহ
বললেনঃ তোমরা ভয়
করো না, আমি তোমাদের
সাথে আছি, আমি শুনি
ও দেখি।
[20:47]
অতএব
তোমরা তার কাছে
যাও এবং বলঃ আমরা
উভয়েই তোমার পালনকর্তার
প্রেরিত রসূল, অতএব
আমাদের সাথে বনী
ইসরাঈলকে যেতে দাও এবং তাদেরকে
নিপীড়ন করো না। আমরা
তোমার পালনকর্তার
কাছ থেকে নিদর্শন নিয়ে তোমার কাছে
আগমন করেছি। এবং যে
সৎপথ অনুসরণ
করে, তার প্রতি
শান্তি।
[20:48]
আমরা
ওহী লাভ করেছি
যে, যে ব্যক্তি
মিথ্যারোপ করে
এবং মুখ ফিরিয়ে
নেয়, তার উপর আযাব
পড়বে।
[20:49]
সে
বললঃ তবে হে মূসা, তোমাদের পালনকর্তা কে?
[20:50]
মূসা
বললেনঃ আমাদের
পালনকর্তা তিনি, যিনি প্রত্যেক
বস্তুকে তার যোগ্য
আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর
পথপ্রদর্শন করেছেন।
[20:51]
ফেরাউন
বললঃ তাহলে অতীত
যুগের লোকদের
অবস্থা কি?
[20:52]
মূসা
বললেনঃ তাদের খবর
আমার পালনকর্তার
কাছে লিখিত আছে। আমার
পালনকর্তা ভ্রান্ত
হন না এং বিস্মৃতও
হন না।
[20:53]
তিনি
তোমাদের জন্যে
পৃথিবীকে শয্যা করেছেন
এবং তাতে চলার
পথ করেছেন, আকাশ
থেকে বৃষ্টি বর্ষণ
করেছেন এবং তা দ্বারা আমি বিভিন্ন
প্রকার উদ্ভিদ
উৎপন্ন করেছি।
[20:54]
তোমরা
আহার কর এবং তোমাদের চতুস্পদ জন্তু
চরাও। নিশ্চয়
এতে বিবেক বানদের
জন্যে নিদর্শন
রয়েছে।
[20:55]
এ
মাটি থেকেই আমি
তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই
তোমাদেরকে ফিরিয়ে
দিব এবং পুনরায়
এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব।
[20:56]
আমি
ফেরাউনকে আমার
সব নিদর্শন দেখিয়ে দিয়েছি, অতঃপর
সে মিথ্যা আরোপ
করেছে এবং অমান্য
করেছে।
[20:57]
সে
বললঃ হে মূসা, তুমি
কি যাদুর
জোরে আমাদেরকে
দেশ থেকে বহিষ্কার
করার জন্যে আগমন
করেছ?
[20:58]
অতএব, আমরাও
তোমার মোকাবেলায় তোমার নিকট অনুরূপ
যাদু উপস্থিত করব। সুতরাং
আমাদের ও তোমার
মধ্যে একটি ওয়াদার দিন ঠিক কর, যার খেলাফ
আমরাও করব না এবং
তুমিও করবে না
একটি পরিষ্কার
প্রান্তরে।
[20:59]
মূসা
বললঃ তোমাদের ওয়াদার
দিন উৎসবের দিন এবং
পূর্বাহে? লোকজন
সমবেত হবে।
[20:60]
অতঃপর
ফেরাউন প্রস্থান
করল এবং তার সব
কলাকৌশল জমা করল
অতঃপর উপস্থিত
হল।
[20:61]
মূসা
(আঃ) তাদেরকে বললেনঃ দুর্ভাগ্য তোমাদের; তোমরা
আল্লাহর প্রতি
মিথ্যা আরোপ করো
না। তাহলে তিনি তোমাদেরকে আযাব
দ্বারা ধবংস করে
দেবেন। যে মিথ্যা
উদভাবন করে, সেই বিফল
মনোরথ হয়েছে।
[20:62]
অতঃপর
তারা তাদের কাজে
নিজেদের মধ্যে
বিতর্ক করল এবং
গোপনে পরামর্শ
করল।
[20:63]
তারা
বললঃ এই দুইজন
নিশ্চিতই যাদুকর, তারা
তাদের যাদু দ্বারা
তোমাদেরকে তোমাদের
দেশ থেকে বহিস্কার
করতে চায় এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা
রহিত করতে চায়।
[20:64]
অতএব, তোমরা
তোমাদের কলাকৌশল সুসংহত কর, অতঃপর
সারিবদ্ধ হয়ে
আস। আজ যে জয়ী
হবে, সেই সফলকাম
হবে।
[20:65]
তারা
বললঃ হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ কর, না হয়
আমরা প্রথমে নিক্ষেপ
করি।
[20:66]
মূসা
বললেনঃ বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। তাদের
যাদুর প্রভাবে
হঠাৎ তাঁর
মনে হল, যেন তাদের
রশিগুলো ও লাঠিগুলো চুটাছুটি
করছে।
[20:67]
অতঃপর
মূসা মনে মনে কিছুটা ভীতি অনুভব করলেন।
[20:68]
আমি
বললামঃ ভয় করো
না, তুমি বিজয়ী
হবে।
[20:69]
তোমার
ডান হাতে যা আছে
তুমি তা নিক্ষেপ
কর। এটা যা কিছু
তারা করেছে তা
গ্রাস করে ফেলবে। তারা
যা করেছে তা তো কেবল যাদুকরের
কলাকৌশল। যাদুকর
যেখানেই থাকুক, সফল হবে
না।
[20:70]
অতঃপর
যাদুকররা সেজদায়
পড়ে গেল। তারা
বললঃ আমরা হারুন
ও মূসার পালনকর্তার
প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করলাম।
[20:71]
ফেরাউন
বললঃ আমার অনুমতি
দানের পূর্বেই? তোমরা
কি তার প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করলে; দেখছি
সেই তোমাদের প্রধান, সে তোমাদেরকে যাদু
শিক্ষা দিয়েছে। অতএব
আমি অবশ্যই তোমাদের
হস্তপদ বিপরীত
দিক থেকে কর্তন
করব এবং আমি তোমাদেরকে
খর্জুর বৃক্ষের
কান্ডে শূলে চড়াব
এবং তোমরা নিশ্চিত রূপেই
জানতে পারবে আমাদের
মধ্যে কার আযাব
কঠোরতর এবং অধিক্ষণ
স্থায়ী।
[20:72]
যাদুকররা
বললঃ আমাদের কাছে
যে, সুস্পষ্ট প্রমাণ
এসেছে তার উপর
এবং যিনি আমাদের
কে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর
উপর আমরা কিছুতেই
তোমাকে প্রাধান্য
দেব না। অতএব, তুমি
যা ইচ্ছা করতে
পার। তুমি তো
শুধু এই পার্থিব
জীবনেই যা করার
করবে।
[20:73]
আমরা
আমাদের পালনকর্তার
প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করেছি যাতে
তিনি আমাদের পাপ
এবং তুমি আমাদেরকে
যে যাদু করতে বাধ্য করেছ, তা মার্জনা
করেন। আল্লাহ
শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।
[20:74]
নিশ্চয়ই
যে তার পালনকর্তার কাছে অপরাধী হয়ে
আসে, তার জন্য রয়েছে
জাহান্নাম। সেখানে
সে মরবে না এবং বাঁচবেও না।
[20:75]
আর
যারা তাঁর কাছে
আসে এমন ঈমানদার
হয়ে যায় সৎকর্ম সম্পাদন
করেছে, তাদের জন্যে
রয়েছে সুউচ্চ
মর্তবা।
[20:76]
বসবাসের
এমন পুষ্পোদ্যান রয়েছে যার তলদেশে
দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ
প্রবাহিত হয়। সেখানে
তারা চিরকাল থাকবে এটা তাদেরই পুরস্কার, যারা
পবিত্র হয়।
[20:77]
আমি
মূসা প্রতি এই
মর্মে ওহী করলাম যে, আমার
বান্দাদেরকে নিয়ে
রাত্রিযোগে বের
হয়ে যাও এবং তাদের
জন্যে সমুদ্রে
শুষ্কপথ নির্মাণ
কর। পেছন থেকে
এসে তোমাদের ধরে
ফেলার আশঙ্কা করো
না এবং পানিতে
ডুবে যাওয়ার ভয়
করো না।
[20:78]
অতঃপর
ফেরাউন তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে তাদের পশ্চাদ্ধাবন
করল এবং সমুদ্র
তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে
নিমজ্জত করল।
[20:79]
ফেরআউন
তার সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করেছিল
এবং সৎপথ দেখায়নি।
[20:80]
হে
বনী-ইসরাঈল! আমি
তোমাদেরকে তোমাদের শক্রুর
কবল থেকে উদ্ধার
করেছি, তুর পাহাড়ের
দক্ষিণ পার্শ্বে
তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি
দান করেছি এবং
তোমাদের কাছে ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ নাযিল
করেছি।
[20:81]
বলেছিঃ
আমার দেয়া পবিত্র বস্তুসমূহ খাও
এবং এতে সীমালংঘন
করো না, তা হলে তোমাদের
উপর আমার ক্রোধ
নেমে আসবে এবং
যার উপর আমার ক্রোধ
নেমে আসে সে ধবংস
হয়ে যায়।
[20:82]
আর
যে তওবা করে, ঈমান
আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর
সৎপথে অটল থাকে, আমি তার
প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল।
[20:83]
হে
মূসা, তোমার সম্প্রদায়কে পেছনে ফেলে তুমি
ত্বরা করলে কেন?
[20:84]
তিনি
বললেনঃ এই তো তারা
আমার পেছনে
আসছে এবং হে আমার
পালনকর্তা, আমি তাড়াতাড়ি
তোমার কাছে এলাম, যাতে
তুমি সন্তুষ্ট
হও।
[20:85]
বললেনঃ
আমি তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করেছি
তোমার পর এবং সামেরী
তাদেরকে পথভ্রষ্ট
করেছে।
[20:86]
অতঃপর
মূসা তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেলেন
ক্রদ্ধ ও অনুতপ্ত
অবস্থায়। তিনি
বললেনঃ হে আমার
সম্প্রদায়, তোমাদের
পালনকর্তা কি তোমাদেরকে
একটি উত্তম প্রতিশ্রুতি
দেননি? তবে কি প্রতিশ্রুতির
সময়কাল তোমাদের
কাছে দীর্ঘ হয়েছে, না তোমরা
চেয়েছ যে, তোমাদের উপর তোমাদের পালনকর্তার
ক্রোধ নেমে আসুক, যে কারণে
তোমরা আমার সাথে
কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করলে?
[20:87]
তারা
বললঃ আমরা তোমার
সাথে কৃত ওয়াদা
স্বেচ্ছায় ভঙ্গ
করিনি; কিন্তু আমাদের
উপর ফেরউনীদের
অলংকারের বোঝা চাপিয়ে দেয়া
হয়েছিল। অতঃপর
আমরা তা নিক্ষেপ
করে দিয়েছি। এমনি
ভাবে সামেরীও নিক্ষেপ করেছে।
[20:88]
অতঃপর
সে তাদের জন্য
তৈরী করে বের করল
একটি গো-বৎস, একটা
দেহ, যার মধ্যে
গরুর শব্দ ছিল। তারা
বললঃ এটা তোমাদের উপাস্য এবং মূসার
ও উপাস্য, অতঃপর
মূসা ভুলে গেছে।
[20:89]
তারা
কি দেখে না যে, এটা তাদের কোন কথার উত্তর
দেয় না এবং তারে
কোন ক্ষতি ও উপকার
করার ক্ষমতাও রাখে
না?
[20:90]
হারুন
তাদেরকে পুর্বেই বলেছিলেনঃ হে
আমার কওম, তোমরা
তো এই গো-বৎস দ্বারা পরীক্ষায়
নিপতিত হয়েছ এবং তোমাদের পালনকর্তা
দয়াময়। অতএব, তোমরা
আমার অনুসরণ কর
এবং আমার আদেশ
মেনে চল।
[20:91]
তারা
বললঃ মূসা আমাদের
কাছে ফিরে আসা
পর্যন্ত আমরা সদাসর্বদা
এর সাথেই সংযুক্ত
হয়ে বসে থাকব।
[20:92]
মূসা
বললেনঃ হে হারুন, তুমি যখন তাদেরকে পথ
ভ্রষ্ট হতে দেখলে, তখন তোমাকে
কিসে নিবৃত্ত করল
?
[20:93]
আমার
পদাঙ্ক অনুসরণ
করা থেকে? তবে তুমি
কি আমার আদেশ অমান্য
করেছ?
[20:94]
তিনি
বললেনঃ হে আমার জননী-তনয়, আমার
শ্মশ্রু ও মাথার
চুল ধরে আকর্ষণ
করো না; আমি আশঙ্কা
করলাম যে, তুমি
বলবেঃ তুমি বনী-ইসরাঈলের
মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি
করেছ এবং আমার
কথা স্মরণে রাখনি।
[20:95]
মূসা
বললেন হে সামেরী, এখন তোমার ব্যাপার
কি?
[20:96]
সে
বললঃ আমি দেখলাম
যা অন্যেরা দেখেনি। অতঃপর
আমি সেই প্রেরিত
ব্যক্তির পদচিহে?র নীচ
থেকে এক মুঠি মাটি
নিয়ে নিলাম। অতঃপর
আমি তা নিক্ষেপ
করলাম। আমাকে
আমার মন এই মন্ত্রণাই
দিল।
[20:97]
মূসা
বললেনঃ দূর হ, তোর জন্য সারা জীবন এ শাস্তিই
রইল যে, তুই বলবি; আমাকে
স্পর্শ করো না, এবং তোর
জন্য একটি নির্দিষ্ট ওয়াদা
আছে, যার ব্যতিক্রম
হবে না। তুই তোর
সেই ইলাহের প্রতি
লক্ষ্য কর, যাকে
তুই ঘিরে থাকতি। আমরা
সেটি জালিয়ে দেবই। অতঃপর
একে বিক্ষিপ্ত
করে সাগরে ছড়িয়ে দেবই।
[20:98]
তোমাদের
ইলাহ তো কেবল আল্লাহই, যিনি
ব্যতীত অন্য কোন
ইলাহ নেই। সব বিষয়
তাঁর জ্ঞানের পরিধিভুক্ত।
[20:99]
এমনিভাবে
আমি পূর্বে যা
ঘটেছে, তার সংবাদ
আপনার কাছে বর্ণনা
করি। আমি আমার
কাছ থেকে আপনাকে
দান করেছি পড়ার গ্রন্থ।
[20:100]
যে
এ থেকে মুখ ফিরিয়ে
নেবে, সে কেয়ামতের
দিন বোঝা বহন করবে।
[20:101]
তারা
তাতে চিরকাল থাকবে
এবং কেয়ামতের
দিন এই বোঝা তাদের
জন্যে মন্দ হবে।
[20:102]
যেদিন
সিঙ্গায় ফূৎকার দেয়া হবে, সেদিন আমি
অপরাধীদেরকে সমবেত
করব নীল চক্ষু
অবস্থায়।
[20:103]
তারা
চুপিসারে পরস্পরে
বলাবলি করবেঃ
তোমরা মাত্র দশ
দিন অবস্থান করেছিলে।
[20:104]
তারা
কি বলে তা আমি ভালোভাবে জানি। তাদের
মধ্যে যে, অপেক্ষাকৃত
উত্তম পথের অনুসারী
সে বলবেঃ তোমরা
মাত্র একদিন
অবস্থান করেছিলে।
[20:105]
তারা
আপনাকে পাহাড়
সম্পর্কে প্রশ্ন করা। অতএব, আপনি
বলুনঃ আমার পালনকর্তা
পহাড়সমূহকে সমূলে
উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে
দিবেন।
[20:106]
অতঃপর
পৃথিবীকে মসৃণ
সমতলভূমি করে ছাড়বেন।
[20:107]
তুমি
তাতে মোড় ও টিলা
দেখবে না।
[20:108]
সেই
দিন তারা আহবানকারীর অনুসরণ করবে, যার কথা
এদিক-সেদিক হবে
না এবং দয়াময়
আল্লাহর ভয়ে সব
শব্দ ক্ষীণ হয়ে যাবে। সুতরাং
মৃদু গুঞ্জন ব্যতীত
তুমি কিছুই শুনবে
না।
[20:109]
দয়াময়
আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার
কথায় সন্তুষ্ট
হবেন সে ছাড়া
কারও সুপারিশ সেদিন
কোন উপকারে আসবে না।
[20:110]
তিনি
জানেন যা কিছু
তাদের সামনে
ও পশ্চাতে আছে
এবং তারা তাকে
জ্ঞান দ্বারা আয়ত্ত
করতে পারে না।
[20:111]
সেই
চিরঞ্জীব চিরস্থায়ীর সামনে সব মুখমন্ডল
অবনমিত হবে এবং
সে ব্যর্থ হবে
যে জুলুমের বোঝা
বহন করবে।
[20:112]
যে
ঈমানদার অবস্থায়
সৎকর্ম সম্পাদন করে, সে জুলুম
ও ক্ষতির আশঙ্কা
করবে না।
[20:113]
এমনিভাবে
আমি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি
এবং এতে নানাভাবে
সতর্কবাণী ব্যক্ত
করেছি, যাতে তারা আল্লাহভীরু হয়
অথবা তাদের অন্তরে
চিন্তার খোরাক
যোগায়।
[20:114]
সত্যিকার
অধীশ্বর আল্লাহ
মহান। আপনার
প্রতি আল্লাহর
ওহী সম্পুর্ণ হওয়ার
পূর্বে আপনি কোরআন
গ্রহণের ব্যপারে তাড়াহুড়া করবেন
না এবং বলুনঃ হে
আমার পালনকর্তা, আমার
জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।
[20:115]
আমি
ইতিপূর্বে আদমকে
নির্দেশ দিয়েছিলাম। অতঃপর
সে ভুলে গিয়েছিল
এবং আমি তার মধ্যে
দৃঢ়তা পাইনি।
[20:116]
যখন
আমি ফেরেশতাদেরকে
বললামঃ তোমরা
আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস
ব্যতীত সবাই সেজদা
করল। সে অমান্য
করল।
[20:117]
অতঃপর
আমি বললামঃ হে
আদম, এ তোমার
ও তোমার স্ত্রীর
শত্রু, সুতরাং সে
যেন বের করে না
দেয় তোমাদের জান্নাত থেকে। তাহলে
তোমরা কষ্টে পতিত
হবে।
[20:118]
তোমাকে
এই দেয়া হল যে, তুমি এতে ক্ষুধার্ত
হবে না এবং বস্ত্রহীণ
হবে না।
[20:119]
এবং
তোমার পিপাসাও
হবে না এবং রৌদ্রেও কষ্ট
পাবে না।
[20:120]
অতঃপর
শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বললঃ হে আদম, আমি কি
তোমাকে বলে দিব
অনন্তকাল জীবিত
থাকার বৃক্ষের
কথা এবং অবিনশ্বর
রাজত্বের কথা?
[20:121]
অতঃপর
তারা উভয়েই এর
ফল ভক্ষণ করল, তখন তাদের
সামনে তাদের লজ্জাস্থান
খুলে গেল এবং তারা
জান্নাতের বৃক্ষ-পত্র দ্বারা নিজেদেরকে
আবৃত করতে শুরু
করল। আদম তার
পালনকর্তার অবাধ্যতা
করল, ফলে সে পথ ভ্রষ্ঠ হয়ে
গেল।
[20:122]
এরপর
তার পালনকর্তা
তাকে মনোনীত
করলেন, তার প্রতি
মনোযোগী হলেন এবং
তাকে সুপথে আনয়ন
করলেন।
[20:123]
তিনি
বললেনঃ তোমরা উভয়েই
এখান থেকে এক
সঙ্গে নেমে যাও। তোমরা
একে অপরের শত্রু। এরপর
যদি আমার পক্ষ
থেকে তোমাদের
কাছে হেদায়েত
আসে, তখন যে আমার
বর্ণিত পথ অনুসরণ
করবে, সে পথভ্রষ্ঠ
হবে না এবং
কষ্টে পতিত হবে
না।
[20:124]
এবং
যে আমার স্মরণ
থেকে মুখ ফিরিয়ে
নেবে, তার জীবিকা
সংকীর্ণ হবে এবং
আমি তাকে কেয়ামতের
দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।
[20:125]
সে
বলবেঃ হে আমার
পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ
অবস্থায় উত্থিত
করলেন? আমি তো চক্ষুমান
ছিলাম।
[20:126]
আল্লাহ
বলবেনঃ এমনিভাবে
তোমার কাছে
আমার আয়াতসমূহ
এসেছিল, অতঃপর তুমি
সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে
আজ তোমাকে
ভুলে যাব।
[20:127]
এমনিভাবে
আমি তাকে প্রতিফল দেব, যে সীমালঙ্ঘন
করে এবং পালনকর্তার
কথায় বিশ্বাস
স্থাপন না করে। তার পরকালের শাস্তি কঠোরতর
এবং অনেক স্থায়ী।
[20:128]
আমি
এদের পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে
ধবংস করেছি। যাদের
বাসভুমিতে এরা
বিচরণ করে, এটা কি
এদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করল
না? নিশ্চয় এতে
বুদ্ধিমানদের
জন্যে নিদর্শনাবলী
রয়েছে।
[20:129]
আপনার
পালনকর্তার পক্ষ
থেকে পূর্ব
সিদ্ধান্ত এবং
একটি কাল নির্দিষ্ট
না থাকলে শাস্তি
অবশ্যম্ভাবী হয়ে
যেত।
[20:130]
সুতরাং
এরা যা বলে সে বিষয়ে ধৈর্য্য ধারণ
করুন এবং আপনার
পালনকর্তার প্রশংসা
পবিত্রতা ও মহিমা
ঘোষনা করুন সূর্যোদয়ের
পূর্বে, সূর্যাস্তের
পূর্বে এবং পবিত্রতা
ও মহিমা ঘোষনা
করুন রাত্রির
কিছু অংশ ও দিবাভাগে, সম্ভবতঃ
তাতে আপনি সন্তুষ্ট
হবেন।
[20:131]
আমি
এদের বিভিন্ন প্রকার
লোককে পরীক্ষা
করার জন্যে পার্থিবজীবনের
সৌন্দর্য স্বরূপ
ভোগ-বিলাসের যে
উপকরণ দিয়েছি, আপনি
সেই সব বস্তুর
প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ
করবেন না। আপনার
পালনকর্তার দেয়া রিযিক উৎকৃষ্ট ও অধিক
স্থায়ী।
[20:132]
আপনি
আপনার পরিবারের
লোকদেরকে নামাযের আদেশ
দিন এবং নিজেও
এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার
কাছে কোন রিযিক
চাই না। আমি আপনাকে
রিযিক দেই এবং
আল্লাহ ভীরুতার
পরিণাম শুভ।
[20:133]
এরা
বলেঃ সে আমাদের
কাছে তার পালনকর্তার
কাছ থেকে কোন নিদর্শন
আনয়ন করে না কেন? তাদের
কাছে কি প্রমাণ
আসেনি, যা পূর্ববর্তী
গ্রন্থসমূহে আছে?
[20:134]
যদি
আমি এদেরকে ইতিপূর্বে
কোন শাস্তি
দ্বারা ধ্বংস করতাম, তবে এরা
বলতঃ হে আমাদের
পালনকর্তা, আপনি
আমাদের কাছে একজন রসূল প্রেরণ
করলেন না কেন? তাহলে
তো আমরা অপমানিত
ও হেয় হওয়ার
পূর্বেই আপনার
নিদর্শন সমূহ মেনে
চলতাম।
[20:135]
বলুন, প্রত্যেকেই
পথপানে চেয়ে আছে, সুতরাং তোমরাও
পথপানে চেয়ে থাক। অদূর
ভবিষ্যতে তোমরা
জানতে পারবে কে
সরল পথের পথিক
এবং কে সৎপথ
প্রাপ্ত হয়েছে।