Part 2
[2:142]
এখন
নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে
দিল তাদের ঐ কেবলা
থেকে, যার উপর তারা
ছিল? আপনি বলুনঃ
পূর্ব ও পশ্চিম
আল্লাহরই। তিনি
যাকে ইচ্ছা সরল
পথে চালান।
[2:143]
এমনিভাবে
আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায়
করেছি যাতে করে
তোমরা সাক্ষ্যদাতা
হও মানবমন্ডলীর
জন্যে এবং যাতে
রসূল সাক্ষ্যদাতা
হন তোমাদের জন্য। আপনি
যে কেবলার উপর
ছিলেন, তাকে আমি এজন্যই কেবলা
করেছিলাম, যাতে
একথা প্রতীয়মান
হয় যে, কে রসূলের
অনুসারী থাকে আর কে পিঠটান দেয়। নিশ্চিতই
এটা কঠোরতর বিষয়, কিন্তু
তাদের জন্যে নয়, যাদেরকে আল্লাহ পথপ্রদর্শন
করেছেন। আল্লাহ
এমন নন যে, তোমাদের
ঈমান নষ্ট করে
দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ, মানুষের
প্রতি অত্যন্ত
স্নেহশীল, করুনাময়।
[2:144]
নিশ্চয়ই
আমি আপনাকে বার
বার আকাশের
দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই
আমি আপনাকে সে
কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে
দেব যাকে আপনি
পছন্দ করেন। এখন আপনি
মসজিদুল-হারামের
দিকে মুখ করুন
এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে
মুখ কর। যারা
আহলে-কিতাব, তারা
অবশ্যই জানে যে, এটাই
ঠিক পালনকর্তার
পক্ষ থেকে। আল্লাহ
বেখবর নন, সে সমস্ত
কর্ম সম্পর্কে
যা তারা করে।
[2:145]
যদি
আপনি আহলে কিতাবদের
কাছে সমুদয়
নিদর্শন উপস্থাপন
করেন, তবুও তারা
আপনার কেবলা মেনে
নেবে না এবং আপনিও তাদের কেবলা মানেন
না। তারাও একে
অন্যের কেবলা মানে
না। যদি আপনি তাদের
বাসনার অনুসরণ
করেন, সে জ্ঞানলাভের
পর, যা আপনার কাছে
পৌঁছেছে, তবে নিশ্চয়
আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত
হবেন।
[2:146]
আমি
যাদেরকে কিতাব
দান করেছি, তারা
তাকে চেনে, যেমন
করে চেনে নিজেদের
পুত্রদেরকে। আর নিশ্চয়ই
তাদের একটি সম্প্রদায় জেনে
শুনে সত্যকে গোপন
করে।
[2:147]
বাস্তব
সত্য সেটাই যা
তোমার পালনকর্তা
বলেন। কাজেই
তুমি সন্দিহান
হয়ো না।
[2:148]
আর
সবার জন্যই রয়েছে
কেবলা একেক
দিকে, যে দিকে সে
মুখ করে (এবাদত
করবে)। কাজেই
সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও। যেখানেই
তোমরা থাকবে, আল্লাহ
অবশ্যই তোমাদেরকে
সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ
সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।
[2:149]
আর
যে স্থান থেকে
তুমি বের হও, নিজের
মুখ মসজিদে হারামের
দিকে ফেরাও-নিঃসন্দেহে
এটাই হলো তোমার
পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্ধারিত
বাস্তব সত্য। বস্তুতঃ
তোমার পালনকর্তা
তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনবহিত
নন।
[2:150]
আর
তোমরা যেখান থেকেই
বেরিয়ে আস এবং
যেখানেই অবস্থান
কর, সেদিকেই মুখ
ফেরাও, যাতে করে মানুষের
জন্য তোমাদের সাথে ঝগড়া করার
অবকাশ না থাকে। অবশ্য
যারা অবিবেচক, তাদের
কথা আলাদা। কাজেই তাদের আপত্তিতে
ভীত হয়ো না। আমাকেই
ভয় কর। যাতে
আমি তোমাদের জন্যে
আমার অনুগ্রহ সমূহ পূর্ণ করে
দেই এবং তাতে যেন
তোমরা সরলপথ প্রাপ্ত
হও।
[2:151]
যেমন, আমি পাঠিয়েছি
তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের
জন্যে একজন রসূল, যিনি
তোমাদের নিকট আমার
বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র
করবেন; আর তোমাদের
শিক্ষা দেবেন কিতাব
ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন
এমন বিষয় যা কখনো
তোমরা জানতে না।
[2:152]
সুতরাং
তোমরা আমাকে স্মরণ
কর, আমিও তোমাদের
স্মরণ রাখবো এবং
আমার কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ
হয়ো না।
[2:153]
হে
মুমিন গন! তোমরা
ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে
সাহায্য প্রার্থনা
কর। নিশ্চিতই
আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের
সাথে রয়েছেন।
[2:154]
আর
যারা আল্লাহর রাস্তায়
নিহত হয়, তাদের
মৃত বলো না। বরং তারা
জীবিত, কিন্তু তোমরা
তা বুঝ না।
[2:155]
এবং
অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা
ভয়, ক্ষুধা, মাল ও
জানের ক্ষতি ও
ফল-ফসল বিনষ্টের
মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও
সবরকারীদের।
[2:156]
যখন
তারা বিপদে পতিত
হয়, তখন বলে, নিশ্চয়
আমরা সবাই আল্লাহর
জন্য এবং আমরা
সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে
ফিরে যাবো।
[2:157]
তারা
সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর
অফুরন্ত অনুগ্রহ
ও রহমত রয়েছে
এবং এসব লোকই হেদায়েত
প্রাপ্ত।
[2:158]
নিঃসন্দেহে
সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তাআলার
নিদর্শন গুলোর
অন্যতম। সুতরাং
যারা কাবা ঘরে
হজ্ব বা ওমরাহ
পালন করে, তাদের
পক্ষে এ দুটিতে
প্রদক্ষিণ করাতে
কোন দোষ নেই। বরং কেউ
যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ
করে, তবে আল্লাহ
তাআলার অবশ্যই
তা অবগত হবেন এবং
তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।
[2:159]
নিশ্চয়
যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত
তথ্য এবং হেদায়েতের
কথা নাযিল করেছি
মানুষের জন্য কিতাবের
মধ্যে বিস্তারিত
বর্ণনা করার পরও; সে সমস্ত
লোকের প্রতিই আল্লাহর
অভিসম্পাত এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীগণের
ও।
[2:160]
তবে
যারা তওবা করে
এবং বর্ণিত তথ্যাদির সংশোধন
করে মানুষের কাছে
তা বর্ণনা করে
দেয়, সে সমস্ত লোকের
তওবা আমি কবুল
করি এবং আমি তওবা
কবুলকারী পরম দয়ালু।
[2:161]
নিশ্চয়
যারা কুফরী করে
এবং কাফের
অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ
করে, সে সমস্ত লোকের
প্রতি আল্লাহর
ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের
লানত।
[2:162]
এরা
চিরকাল এ লানতের
মাঝেই থাকবে। তাদের
উপর থেকে আযাব
কখনও হালকা করা
হবে না বরং এরা
বিরাম ও পাবে না।
[2:163]
আর
তোমাদের উপাস্য
একইমাত্র উপাস্য। তিনি
ছাড়া মহা করুণাময়
দয়ালু কেউ নেই।
[2:164]
নিশ্চয়ই
আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও
দিনের বিবর্তনে
এবং নদীতে নৌকাসমূহের
চলাচলে মানুষের
জন্য কল্যাণ
রয়েছে। আর আল্লাহ
তা আলা আকাশ থেকে
যে পানি নাযিল
করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব
করে তুলেছেন এবং
তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন
সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে
এবং মেঘমালার যা
তাঁরই হুকুমের
অধীনে আসমান ও
যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই
সে সমস্ত বিষয়ের
মাঝে নিদর্শন রয়েছে
বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের
জন্যে।
[2:165]
আর
কোন লোক এমনও রয়েছে
যারা অন্যান্যকে
আল্লাহর সমকক্ষ
সাব্যস্ত করে এবং
তাদের প্রতি তেমনি
ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর
প্রতি ভালবাসা
হয়ে থাকে। কিন্তু
যারা আল্লাহর প্রতি
ঈমানদার তাদের
ভালবাসা ওদের তুলনায়
বহুগুণ বেশী। আর কতইনা
উত্তম হত যদি
এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ
করেই উপলব্ধি করে
নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা
শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য
এবং আল্লাহর আযাবই
সবচেয়ে কঠিনতর।
[2:166]
অনুসৃতরা
যখন অনুসরণকারীদের প্রতি অসন্তুষ্ট
হয়ে যাবে এবং
যখন আযাব প্রত্যক্ষ
করবে আর বিচ্ছিন্ন
হয়ে যাবে তাদের পারস্পরিক
সমস্ত সম্পর্ক।
[2:167]
এবং
অনুসারীরা বলবে, কতইনা
ভাল হত, যদি আমাদিগকে
পৃথিবীতে ফিরে
যাবার সুযোগ দেয়া
হত। তাহলে আমরাও
তাদের প্রতি তেমনি অসন্তুষ্ট
হয়ে যেতাম, যেমন
তারা অসন্তুষ্ট
হয়েছে আমাদের
প্রতি। এভাবেই আল্লাহ তাআলা তাদেরকে
দেখাবেন তাদের
কৃতকর্ম তাদেরকে
অনুতপ্ত করার জন্যে। অথচ, তারা
কস্মিনকালেও আগুন
থেকে বের হতে পারবে
না।
[2:168]
হে
মানব মন্ডলী, পৃথিবীর
হালাল ও পবিত্র
বস্তু-সামগ্রী
ভক্ষন কর। আর শয়তানের
পদাঙ্ক অনুসরণ
করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের
প্রকাশ্য শত্রু।
[2:169]
সে
তো এ নির্দেশই
তোমাদিগকে দেবে যে, তোমরা
অন্যায় ও অশ্লীল
কাজ করতে থাক এবং
আল্লাহর প্রতি
এমন সব বিষয়ে মিথ্যারোপ কর
যা তোমরা জান না।
[2:170]
আর
যখন তাদেরকে কেউ
বলে যে, সে হুকুমেরই
আনুগত্য কর যা
আল্লাহ তাআলা নাযিল
করেছেন, তখন তারা বলে
কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই
অনুসরণ করব। যাতে
আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে
দেখেছি। যদি ও
তাদের বাপ দাদারা
কিছুই জানতো না, জানতো
না সরল পথও।
[2:171]
বস্তুতঃ
এহেন কাফেরদের
উদাহরণ এমন, যেন কেউ
এমন কোন জীবকে
আহবান করছে যা
কোন কিছুই শোনে
না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া
বধির মুক, এবং অন্ধ। সুতরাং
তারা কিছুই বোঝে
না।
[2:172]
হে
ঈমানদারগণ, তোমরা
পবিত্র বস্তু
সামগ্রী আহার কর, যেগুলো
আমি তোমাদেরকে
রুযী হিসাবে দান
করেছি এবং শুকরিয়া আদায়
কর আল্লাহর, যদি তোমরা
তাঁরই বন্দেগী
কর।
[2:173]
তিনি
তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর
মাংস এবং সেসব
জীব-জন্তু যা আল্লাহ
ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য
যে লোক অনন্যোপায়
হয়ে পড়ে এবং
নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী
না হয়, তার জন্য কোন
পাপ নেই। নিঃসন্দেহে
আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত
দয়ালু।
[2:174]
নিশ্চয়
যারা সেসব বিষয়
গোপন করে, যা আল্লাহ
কিতাবে নাযিল করেছেন
এবং সেজন্য অল্প
মূল্য গ্রহণ করে, তারা
আগুন ছাড়া
নিজের পেটে আর
কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ
কেয়ামতের দিন
তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের
পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ
তাদের জন্যে রয়েছে
বেদনাদায়ক আযাব।
[2:175]
এরাই
হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে
গোমরাহী খরিদ করেছে
এবং (খরিদ করেছে)
ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা
দোযখের উপর কেমন
ধৈর্য্য ধারণকারী।
[2:176]
আর
এটা এজন্যে যে, আল্লাহ নাযিল করেছেন
সত্যপূর্ণ কিতাব। আর যারা
কেতাবের মাঝে মতবিরোধ
সৃষ্টি করেছে নিশ্চয়ই তারা
জেদের বশবর্তী
হয়ে অনেক দূরে
চলে গেছে।
[2:177]
সৎকর্ম শুধু এই
নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে
মুখ করবে, বরং বড়
সৎকাজ হল এই
যে, ঈমান আনবে
আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের
উপর, ফেরেশতাদের
উপর এবং সমস্ত
নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ
ব্যয় করবে
তাঁরই মহব্বতে
আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক
ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের
জন্যে। আর যারা
নামায প্রতিষ্ঠা
করে, যাকাত দান
করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী
এবং অভাবে, রোগে-শোকে
ও যুদ্ধের সময়
ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই
পরহেযগার।
[2:178]
হে
ঈমানদারগন! তোমাদের
প্রতি নিহতদের
ব্যাপারে কেসাস
গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ
করা হয়েছে। স্বাধীন
ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের
বদলায় এবং নারী
নারীর বদলায়। অতঃপর
তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে
কিছুটা মাফ করে
দেয়া হয়, তবে প্রচলিত
নিয়মের অনুসরণ
করবে এবং ভালভাবে
তাকে তা প্রদান
করতে হবে। এটা তোমাদের
পালনকর্তার তরফ
থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও
যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি
করে, তার জন্য রয়েছে
বেদনাদায়ক আযাব।
[2:179]
হে
বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের
মধ্যে তোমাদের
জন্যে জীবন রয়েছে, যাতে
তোমরা সাবধান হতে
পার।
[2:180]
তোমাদের
কারো যখন মৃত্যুর
সময় উপস্থিত
হয়, সে যদি কিছু
ধন-সম্পদ ত্যাগ
করে যায়, তবে তার
জন্য ওসীয়ত করা বিধিবদ্ধ করা
হলো, পিতা-মাতা
ও নিকটাত্নীয়দের
জন্য ইনসাফের সাথে
পরহেযগারদের জন্য এ নির্দেশ
জরুরী। নিশ্চয়
আল্লাহ তাআলা সবকিছু
শোনেন ও জানেন।
[2:181]
যদি
কেউ ওসীয়ত শোনার
পর তাতে কোন রকম
পরিবর্তন সাধন
করে, তবে যারা পরিবর্তন
করে তাদের উপর
এর পাপ পতিত হবে।
[2:182]
যদি
কেউ ওসীয়তকারীর
পক্ষ থেকে আশংকা করে পক্ষপাতিত্বের
অথবা কোন অপরাধমূলক
সিদ্ধান্তের এবং
তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, তবে তার
কোন গোনাহ হবে
না। নিশ্চয় আল্লাহ
তাআলা ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
[2:183]
হে
ঈমানদারগণ! তোমাদের
উপর রোজা ফরয
করা হয়েছে, যেরূপ
ফরজ করা হয়েছিল
তোমাদের পূর্ববর্তী
লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী
অর্জন করতে পার।
[2:184]
গণনার
কয়েকটি দিনের
জন্য অতঃপর
তোমাদের মধ্যে
যে, অসুখ থাকবে
অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে
অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে
নিতে হবে। আর এটি
যাদের জন্য অত্যন্ত
কষ্ট দায়ক হয়, তারা
এর পরিবর্তে
একজন মিসকীনকে
খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি
খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ
কর হয়। আর যদি
রোজা রাখ, তবে তোমাদের
জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা
তা বুঝতে পার।
[2:185]
রমযান
মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে
কোরআন, যা মানুষের
জন্য হেদায়েত
এবং সত্যপথ যাত্রীদের
জন্য সুষ্পষ্ট
পথ নির্দেশ আর
ন্যায় ও অন্যায়ের
মাঝে পার্থক্য
বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে
যে লোক এ মাসটি
পাবে, সে এ মাসের
রোযা রাখবে। আর যে
লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির
অবস্থায় থাকবে
সে অন্য দিনে গণনা
পূরণ করবে। আল্লাহ
তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের
জন্য জটিলতা কামনা
করেন না যাতে তোমরা
গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত
দান করার দরুন
আল্লাহ তাআলার
মহত্ত্ব বর্ণনা
কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার
কর।
[2:186]
আর
আমার বান্দারা
যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস
করে আমার ব্যাপারে
বস্তুতঃ আমি রয়েছি
সন্নিকটে। যারা
প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা
কবুল করে নেই, যখন আমার
কাছে প্রার্থনা
করে। কাজেই
আমার হুকুম
মান্য করা এবং
আমার প্রতি নিঃসংশয়ে
বিশ্বাস করা তাদের
একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে
আসতে পারে।
[2:187]
রোযার
রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা
তোমাদের জন্য হালাল
করা হয়েছে। তারা
তোমাদের পরিচ্ছদ
এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ
অবগত রয়েছেন যে, তোমরা
আত্নপ্রতারণা
করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা
করেছেন এবং তোমাদের
অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর
তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে
সহবাস কর এবং যা
কিছু তোমাদের জন্য
আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরন কর। আর পানাহার
কর যতক্ষণ না কাল
রেখা থেকে ভোরের
শুভ্র রেখা পরিষ্কার
দেখা যায়। অতঃপর
রোযা পূর্ণ কর
রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ
তোমরা এতেকাফ অবস্থায়
মসজিদে অবস্থান
কর, ততক্ষণ পর্যন্ত
স্ত্রীদের সাথে
মিশো না। এই হলো
আল্লাহ কর্তৃক
বেঁধে দেয়া
সীমানা। অতএব, এর কাছেও
যেও না। এমনিভাবে
বর্ণনা করেন আল্লাহ
নিজের আয়াত সমূহ মানুষের
জন্য, যাতে তারা
বাঁচতে পারে।
[2:188]
তোমরা
অন্যায়ভাবে একে
অপরের সম্পদ
ভোগ করো না। এবং জনগণের
সম্পদের কিয়দংশ
জেনে-শুনে পাপ
পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে
শাসন কতৃপক্ষের
হাতেও তুলে দিও
না।
[2:189]
তোমার
নিকট তারা জিজ্ঞেস
করে নতুন চাঁদের
বিষয়ে। বলে দাও
যে এটি মানুষের
জন্য সময় নির্ধারণ
এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম। আর পেছনের
দিক দিয়ে ঘরে
প্রবেশ করার মধ্যে
কোন নেকী বা কল্যাণ নেই। অবশ্য
নেকী হল আল্লাহকে
ভয় করার মধ্যে। আর তোমরা
ঘরে প্রবেশ কর
দরজা দিয়ে এবং আল্লাহকে
ভয় করতে থাক যাতে
তোমরা নিজেদের
বাসনায় কৃতকার্য
হতে পার।
[2:190]
আর
লড়াই কর আল্লাহর
ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা
লড়াই করে তোমাদের
সাথে। অবশ্য
কারো প্রতি বাড়াবাড়ি
করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ
সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে
পছন্দ করেন না।
[2:191]
আর
তাদেরকে হত্যাকর
যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে
বের করে দাও সেখান
থেকে যেখান থেকে
তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুতঃ
ফেতনা ফ্যাসাদ
বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা
সৃষ্টি করা হত্যার
চেয়েও কঠিন
অপরাধ। আর তাদের
সাথে লড়াই করো
না মসজিদুল হারামের
নিকটে যতক্ষণ না
তারা তোমাদের
সাথে সেখানে লড়াই
করে। অবশ্য
যদি তারা নিজেরাই
তোমাদের সাথে লড়াই
করে। তাহলে
তাদেরকে হত্যা
কর। এই হল কাফেরদের
শাস্তি।
[2:192]
আর
তারা যদি বিরত
থাকে, তাহলে আল্লাহ অত্যন্ত
দয়ালু।
[2:193]
আর
তোমরা তাদের সাথে
লড়াই কর, যে পর্যন্ত
না ফেতনার অবসান
হয় এবং আল্লাহর
দ্বীন প্রতিষ্ঠিত
হয়। অতঃপর
যদি তারা নিবৃত
হয়ে যায় তাহলে
কারো প্রতি কোন
জবরদস্তি নেই, কিন্তু
যারা যালেম (তাদের
ব্যাপারে আলাদা)।
[2:194]
সম্মানিত
মাসই সম্মানিত
মাসের বদলা। আর সম্মান
রক্ষা করারও বদলা
রয়েছে। বস্তুতঃ
যারা তোমাদের উপর
জবর দস্তি করেছে, তোমরা তাদের
উপর জবরদস্তি কর, যেমন
জবরদস্তি তারা
করেছে তোমাদের
উপর। আর তোমরা আল্লাহকে
ভয় কর এবং জেনে
রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ
তাদের সাথে রয়েছেন।
[2:195]
আর
ব্যয় কর আল্লাহর
পথে, তবে নিজের
জীবনকে ধ্বংসের
সম্মুখীন করো না। আর মানুষের
প্রতি অনুগ্রহ
কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে
ভালবাসেন।
[2:196]
আর
তোমরা আল্লাহর
উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ওমরাহ
পরিপূর্ণ ভাবে
পালন কর। যদি তোমরা
বাধা প্রাপ্ত হও, তাহলে
কোরবানীর জন্য যাকিছু সহজলভ্য, তাই তোমাদের
উপর ধার্য। আর তোমরা
ততক্ষণ পর্যন্ত
মাথা মুন্ডন
করবে না, যতক্ষণ
না কোরবাণী যথাস্থানে
পৌছে যাবে। যারা
তোমাদের মধ্যে
অসুস্থ হয়ে
পড়বে কিংবা মাথায়
যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে
তার পরিবর্তে রোজা
করবে কিংবা খয়রাত দেবে অথবা
কুরবানী করবে। আর তোমাদের
মধ্যে যারা হজ্জ্ব
ওমরাহ একত্রে একই সাথে পালন করতে
চাও, তবে যাকিছু
সহজলভ্য, তা দিয়ে
কুরবানী করাই তার
উপর কর্তব্য। বস্তুতঃ
যারা কোরবানীর
পশু পাবে না, তারা
হজ্জ্বের দিনগুলোর
মধ্যে রোজা রাখবে তিনটি আর
সাতটি রোযা রাখবে
ফিরে যাবার পর। এভাবে
দশটি রোযা পূর্ণ
হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি
তাদের জন্য, যাদের
পরিবার পরিজন মসজিদুল
হারামের আশে-পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহকে
ভয় করতে থাক। সন্দেহাতীতভাবে
জেনো যে, আল্লাহর
আযাব বড়ই কঠিন।
[2:197]
হজ্জ্বে
কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে
যে লোক হজ্জ্বের
পরিপূর্ণ নিয়ত
করবে, তার পক্ষে
স্ত্রীও সাথে নিরাভরণ হওয়া
জায়েজ নয়। না অশোভন
কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ
করা হজ্জ্বের সেই সময় জায়েজ
নয়। আর তোমরা
যাকিছু সৎকাজ
কর, আল্লাহ তো
জানেন। আর তোমরা
পাথেয় সাথে
নিয়ে নাও। নিঃসন্দেহে
সর্বোত্তম পাথেয়
হচ্ছে আল্লাহর
ভয়। আর আমাকে
ভয় করতে থাক, হে বুদ্ধিমানগন!
তোমাদের উপর তোমাদের
পালনকর্তার অনুগ্রহ
অন্বেষণ করায়
কোন পাপ নেই।
[2:198]
তোমাদের
উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ
অন্বেষন করায়
কোন পাপ নেই। অতঃপর
যখন তওয়াফের জন্য
ফিরে আসবে আরাফাত
থেকে, তখন মাশ আরে-হারামের
নিকটে আল্লাহকে
স্মরণ কর। আর তাঁকে স্মরণ কর তেমনি
করে, যেমন তোমাদিগকে
হেদায়েত করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই
ইতিপূর্বে তোমরা ছিলে অজ্ঞ।
[2:199]
অতঃপর
তওয়াফের জন্যে দ্রুতগতিতে সেখান
থেকে ফিরে আস, যেখান
থেকে সবাই ফিরে। আর আল্লাহর
কাছেই মাগফেরাত
কামনা কর। নিশ্চয়ই
আল্লাহ ক্ষমাকারী, করুনাময়।
[2:200]
আর
অতঃপর যখন হজ্জ্বের
যাবতীয় অনুষ্ঠানক্রিয়াদি
সমাপ্ত করে সারবে, তখন স্মরণ
করবে আল্লাহকে, যেমন
করে তোমরা স্মরণ করতে নিজেদের
বাপ-দাদাদেরকে; বরং তার
চেয়েও বেশী স্মরণ
করবে। তারপর
অনেকে তো বলে
যে পরওয়াদেগার!
আমাদিগকে দুনিয়াতে
দান কর। অথচ তার
জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই।
[2:201]
আর
তাদের মধ্যে কেউ
কেউ বলে-হে পরওয়ারদেগার!
আমাদিগকে দুনয়াতেও
কল্যাণ দান কর
এবং আখেরাতেও কল্যাণ
দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের
আযাব থেকে রক্ষা
কর।
[2:202]
এদেরই
জন্য অংশ রয়েছে
নিজেদের উপার্জিত
সম্পদের। আর আল্লাহ
দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
[2:203]
আর
স্মরণ কর আল্লাহকে নির্দিষ্ট সংখ্যক
কয়েকটি দিনে। অতঃপর
যে লোক তাড়াহুড়া
করে চলে যাবে শুধু
দু, দিনের মধ্যে, তার জন্যে
কোন পাপ নেই। আর যে
লোক থেকে যাবে
তাঁর উপর কোন পাপ
নেই, অবশ্য যারা
ভয় করে। আর তোমরা
আল্লাহকে ভয় করতে
থাক এবং নিশ্চিত
জেনে রাখ, তোমরা
সবাই তার সামনে
সমবেত হবে।
[2:204]
আর
এমন কিছু লোক রযেছে
যাদের পার্থিব
জীবনের কথাবার্তা
তোমাকে চমৎকৃত করবে। আর তারা
সাক্ষ্য স্থাপন
করে আল্লাহকে
নিজের মনের কথার
ব্যাপারে। প্রকৃতপক্ষে
তারা কঠিন ঝগড়াটে
লোক।
[2:205]
যখন
ফিরে যায় তখন
চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ
সৃষ্টি করতে পারে
এবং শস্যক্ষেত্র
ও প্রাণনাশ করতে
পারে। আল্লাহ
ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা
পছন্দ করেন না।
[2:206]
আর
যখন তাকে বলা হয়
যে, আল্লাহকে ভয়
কর, তখন তার পাপ
তাকে অহঙ্কারে
উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং
তার জন্যে দোযখই যথেষ্ট। আর নিঃসন্দেহে
তা হলো নিকৃষ্টতর
ঠিকানা।
[2:207]
আর
মানুষের মাঝে এক
শ্রেণীর লোক রয়েছে
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে
নিজেদের জানের
বাজি রাখে। আল্লাহ
হলেন তাঁর বান্দাদের
প্রতি অত্যন্ত
মেহেরবান।
[2:208]
হে
ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে
ইসলামের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে যাও এবং শয়তানের
পদাংক অনুসরণ কর
না। নিশ্চিত
রূপে সে তোমাদের
প্রকাশ্য শত্রু।
[2:209]
অতঃপর
তোমাদের মাঝে পরিস্কার নির্দেশ এসে গেছে
বলে জানার পরেও
যদি তোমরা পদস্খলিত
হও, তাহলে নিশ্চিত
জেনে রেখো, আল্লাহ, পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।
[2:210]
তারা
কি সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে যে, মেঘের
আড়ালে তাদের সামনে
আসবেন আল্লাহ ও
ফেরেশতাগণ ? আর তাতেই
সব মীমাংসা
হয়ে যাবে। বস্তুতঃ
সবকার্যকলাপই
আল্লাহর নিকট গিয়ে
পৌঁছবে।
[2:211]
বনী
ইসরাঈলদিগকে জিজ্ঞেস
কর, তাদেরকে আমি
কত স্পষ্ট নির্দশনাবলী
দান করেছি। আর আল্লাহর
নেয়ামত পৌছে যাওয়ার পর যদি কেউ সে নেয়ামতকে
পরিবর্তিত করে
দেয়, তবে আল্লাহর
আযাব অতি কঠিন।
[2:212]
পার্থিব
জীবনের উপর কাফেরদিগকে উম্মত্ত করে দেয়া
হয়েছে। আর তারা
ঈমানদারদের প্রতি
লক্ষ্য করে হাসাহাসি
করে। পক্ষান্তরে
যারা পরহেযগার
তারা সেই কাফেরদের
তুলনায় কেয়ামতের
দিন অত্যন্ত উচ্চমর্যাদায়
থাকবে। আর আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা সীমাহীন
রুযী দান করেন।
[2:213]
সকল
মানুষ একই জাতি
সত্তার অন্তর্ভুক্ত
ছিল। অতঃপর
আল্লাহ তাআলা পয়গম্বর
পাঠালেন সুসংবাদদাতা
ও ভীতি প্রদর্শনকরী
হিসাবে। আর তাঁদের
সাথে অবর্তীণ করলেন
সত্য কিতাব, যাতে
মানুষের মাঝে
বিতর্কমূলক বিষয়ে
মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুতঃ
কিতাবের ব্যাপারে
অন্য কেউ মতভেদ
করেনি; কিন্তু পরিষ্কার
নির্দেশ এসে যাবার
পর নিজেদের পারস্পরিক
জেদবশতঃ তারাই
করেছে, যারা কিতাব
প্রাপ্ত হয়েছিল। অতঃপর
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে
হেদায়েত করেছেন সেই সত্য
বিষয়ে, যে ব্যাপারে
তারা মতভেদ লিপ্ত
হয়েছিল। আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা, সরল পথ
বাতলে দেন।
[2:214]
তোমাদের
কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে
যাবে, অথচ সে লোকদের
অবস্থা অতিক্রম
করনি যারা তোমাদের
পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের
উপর এসেছে বিপদ
ও কষ্ট। আর এমনি
ভাবে শিহরিত হতে
হয়েছে যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা
ঈমান এনেছিল তাদেরকে
পর্যন্ত একথা বলতে
হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্যে!
তোমরা শোনে নাও, আল্লাহর
সাহায্যে একান্তই
নিকটবর্তী।
[2:215]
তোমার
কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও-যে
বস্তুই তোমরা ব্যয়
কর, তা হবে পিতা-মাতার
জন্যে, আত্নীয়-আপনজনের
জন্যে, এতীম-অনাথদের
জন্যে, অসহায়দের
জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। আর তোমরা
যে কোন সৎকাজ
করবে, নিঃসন্দেহে
তা অত্যন্ত ভালভাবেই
আল্লাহর জানা রয়েছে।
[2:216]
তোমাদের
উপর যুদ্ধ ফরয
করা হয়েছে, অথচ তা
তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে
তোমাদের কাছে হয়তো
কোন একটা বিষয়
পছন্দসই নয়, অথচ তা
তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা
কোন একটি বিষয়
তোমাদের কাছে পছন্দনীয়
অথচ তোমাদের জন্যে
অকল্যাণকর। বস্তুতঃ
আল্লাহই জানেন, তোমরা
জান না।
[2:217]
সম্মানিত
মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস
করে যে, তাতে যুদ্ধ
করা কেমন? বলে দাও
এতে যুদ্ধ করা
ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে
প্রতিবন্দ্বকতা
সৃষ্টি করা এবং
কুফরী করা, মসজিদে-হারামের
পথে বাধা দেয়া
এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে
বহিস্কার করা, আল্লাহর
নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের
ব্যাপারে ফেতনা
সৃষ্টি করা নরহত্যা
অপেক্ষাও মহা পাপ। বস্তুতঃ তারা
তো সর্বদাই তোমাদের
সাথে যুদ্ধ করতে
থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে
দিতে পারে যদি
সম্ভব হয়। তোমাদের
মধ্যে যারা নিজের
দ্বীন থেকে
ফিরে দাঁড়াবে
এবং কাফের অবস্থায়
মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া
ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট
হয়ে যাবে। আর তারাই
হলো দোযখবাসী। তাতে
তারা চিরকাল বাস করবে।
[2:218]
আর
এতে কোন সন্দেহের
অবকাশ নেই যে, যারা ঈমান
এনেছে এবং যারা
হিজরত করেছে আর
আল্লাহর পথে লড়াই
(জেহাদ) করেছে, তারা
আল্লাহর রহমতের
প্রত্যাশী। আর আল্লাহ
হচ্ছেন ক্ষমাকারী
করুনাময়।
[2:219]
তারা
তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করে। বলে দাও, এতদুভয়ের
মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও
রয়েছে, তবে এগুলোর
পাপ উপকারিতা অপেক্ষা
অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস
করে, কি তারা ব্যয়
করবে? বলে দাও, নিজেদের
প্রয়োজনীয় ব্যয়ের
পর যা বাঁচে
তাই খরচ করবে। এভাবেই
আল্লাহ তোমাদের
জন্যে নির্দেশ
সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে
তোমরা চিন্তা করতে
পার।
[2:220]
দুনিয়া
ও আখেরাতের বিষয়ে। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস
করে, এতীম সংক্রান্ত
হুকুম। বলে দাও, তাদের
কাজ-কর্ম সঠিকভাবে
গুছিয়ে দেয়া
উত্তম আর যদি তাদের
ব্যয়ভার নিজের
সাথে মিশিয়ে নাও, তাহলে
মনে করবে তারা
তোমাদের ভাই । বস্তুতঃ
অমঙ্গলকামী ও মঙ্গলকামীদেরকে
আল্লাহ জানেন। আল্লাহ
যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে
তোমাদের উপর জটিলতা
আরোপ করতে পারতেন। নিশ্চয়ই তিনি
পরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞ।
[2:221]
আর
তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ
না তারা ঈমান গ্রহণ
করে। অবশ্য
মুসলমান ক্রীতদাসী
মুশরেক নারী
অপেক্ষা উত্তম, যদিও
তাদেরকে তোমাদের
কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা
(নারীরা) কোন মুশরেকের
সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত
সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও
একজন মুশরেকের
তুলনায় অনেক ভাল, যদিও
তোমরা তাদের দেখে
মোহিত হও। তারা
দোযখের দিকে আহ্বান
করে, আর আল্লাহ
নিজের হুকুমের
মাধ্যমে আহ্বান
করেন জান্নাত
ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি
মানুষকে নিজের
নির্দেশ বাতলে
দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
[2:222]
আর
তোমার কাছে জিজ্ঞেস
করে হায়েয
(ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই
তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে
বিরত থাক। তখন পর্যন্ত
তাদের নিকটবর্তী
হবে না, যতক্ষণ না
তারা পবিত্র
হয়ে যায়। যখন উত্তম
রূপে পরিশুদ্ধ
হয়ে যাবে, তখন গমন
কর তাদের কাছে, যেভাবে
আল্লাহ তোমাদেরকে
হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই
আল্লাহ তওবাকারী
এবং অপবিত্রতা
থেকে যারা বেঁচে
থাকে তাদেরকে পছন্দ
করেন।
[2:223]
তোমাদের
স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা
যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে
ব্যবহার কর। আর নিজেদের
জন্য আগামী
দিনের ব্যবস্থা
কর এবং আল্লাহকে
ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে
জেনে রাখ যে, আল্লাহর
সাথে তোমাদেরকে
সাক্ষাত করতেই
হবে। আর যারা
ঈমান এনেছে তাদেরকে
সুসংবাদ জানিয়ে
দাও।
[2:224]
আর
নিজেদের শপথের
জন্য আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু
বানিও না মানুষের
সাথে কোন আচার
আচরণ থেকে পরহেযগারী
থেকে এবং মানুষের
মাঝে মীমাংসা করে
দেয়া থেকে বেঁচে
থাকার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ
সবকিছুই শুনেন
ও জানেন।
[2:225]
তোমাদের
নিরর্থক শপথের
জন্য আল্লাহ
তোমাদেরকে ধরবেন
না, কিন্তু সেসব
কসমের ব্যাপারে
ধরবেন, তোমাদের মন
যার প্রতিজ্ঞা
করেছে। আর আল্লাহ
হচ্ছেন ক্ষমাকারী
ধৈর্য্যশীল।
[2:226]
যারা
নিজেদের স্ত্রীদের
নিকট গমন করবেনা
বলে কসম খেয়ে
বসে তাদের জন্য
চার মাসের অবকাশ
রয়েছে অতঃপর যদি পারস্পরিক মিল-মিশ
করে নেয়, তবে আল্লাহ
ক্ষামাকারী দয়ালু।
[2:227]
আর
যদি বর্জন করার
সংকল্প করে নেয়, তাহলে নিশ্চয়ই
আল্লাহ শ্রবণকারী
ও জ্ঞানী।
[2:228]
আর
তালাকপ্রাপ্তা
নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে
তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি
সে আল্লাহর প্রতি
এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে
থাকে, তাহলে আল্লাহ
যা তার জরায়ুতে
সৃষ্টি করেছেন
তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি
সদ্ভাব রেখে চলতে
চায়, তাহলে তাদেরকে
ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের
স্বামীরা সংরক্ষণ
করে। আর পুরুষদের
যেমন স্ত্রীদের
উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি
ভাবে স্ত্রীদেরও
অধিকার রয়েছে
পুরুষদের উপর নিয়ম
অনুযায়ী। আর নারীরদের ওপর
পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব
রয়েছে। আর আল্লাহ
হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।
[2:229]
তালাকে-রাজঈ হল দুবার পর্যন্ত তারপর
হয় নিয়মানুযায়ী
রাখবে, না হয় সহৃদয়তার
সঙ্গে বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া সম্পদ
থেকে কিছু ফিরিয়ে
নেয়া তোমাদের
জন্য জায়েয নয়
তাদের কাছ থেকে। কিন্তু
যে ক্ষেত্রে স্বামী
ও স্ত্রী উভয়েই
এ ব্যাপারে ভয়
করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায়
রাখতে পারবে না, অতঃপর
যদি তোমাদের ভয়
হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ
বজায় রাখতে পারবে
না, তাহলে সেক্ষেত্রে
স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি
নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের
মধ্যে কারোরই কোন
পাপ নেই। এই হলো
আল্লাহ কর্তৃক
নির্ধারিত সীমা। কাজেই
একে অতিক্রম করো
না। বস্তুতঃ যারা
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা
লঙ্ঘন করবে, তারাই
জালেম।
[2:230]
তারপর
যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার)
তালাক দেয়া হয়, তবে সে
স্ত্রী যে পর্যন্ত
তাকে ছাড়া অপর
কোন স্বামীর
সাথে বিয়ে করে
না নেবে, তার জন্য
হালাল নয়। অতঃপর
যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে
তাদের উভয়ের জন্যই
পরস্পরকে পুনরায়
বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর
হুকুম বজায় রাখার
ইচ্ছা থাকে। আর এই
হলো আল্লাহ কতৃκক নির্ধারিত সীমা; যারা
উপলব্ধি করে তাদের
জন্য এসব বর্ণনা
করা হয়।
[2:231]
আর
যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর
তারা নির্ধারিত
ইদ্দত সমাপ্ত করে
নেয়, তখন তোমরা
নিয়ম অনুযায়ী
তাদেরকে রেখে দাও
অথবা সহানুভুতির
সাথে তাদেরকে মুক্ত
করে দাও। আর তোমরা তাদেরকে
জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি
করার উদ্দেশ্যে
আটকে রেখো না। আর যারা
এমন করবে, নিশ্চয়ই
তারা নিজেদেরই
ক্ষতি করবে। আর আল্লাহর
নির্দেশকে হাস্যকর
বিষয়ে পরিণত
করো না। আল্লাহর
সে অনুগ্রহের কথা
স্মরণ কর, যা তোমাদের
উপর রয়েছে এবং তাও স্মরণ কর, যে কিতাব
ও জ্ঞানের কথা
তোমাদের উপর নাযিল
করা হয়েছে যার
দ্বারা তোমাদেরকে
উপদেশ দান করা
হয়। আল্লাহকে
ভয় কর এবং জেনে
রাখ যে, আল্লাহ সর্ববিষয়েই
জ্ঞানময়।
[2:232]
আর
যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও
এবং তারপর তারাও
নির্ধারিত ইদ্দত
পূর্ন করতে থাকে, তখন তাদেরকে পূর্ব স্বামীদের
সাথে পারস্পরিক
সম্মতির ভিত্তিতে
নিয়মানুযায়ী
বিয়ে করতে বাধাদান করো না। এ উপদেশ
তাকেই দেয়া হচ্ছে, যে আল্লাহ
ও কেয়ামত দিনের
উপর বিশ্বাস
স্থাপন করেছে। এর মধ্যে
তোমাদের জন্য রয়েছে
একান্ত পরিশুদ্ধতা
ও অনেক পবিত্রতা। আর আল্লাহ
জানেন, তোমরা জান
না।
[2:233]
আর
সন্তানবতী নারীরা
তাদের সন্তানদেরকে
পূর্ন দুবছর দুধ
খাওয়াবে, যদি দুধ
খাওয়াবার পূর্ণ
মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। আর সন্তানের
অধিকারী অর্থাৎ, পিতার উপর
হলো সে সমস্ত নারীর
খোর-পোষের দায়িত্ব প্রচলিত
নিয়ম অনুযায়ী। কাউকে
তার সামর্থাতিরিক্ত
চাপের সম্মুখীন
করা হয় না। আর মাকে
তার সন্তানের জন্য
ক্ষতিগ্রস্ত করা
যাবে না। এবং যার
সন্তান তাকেও
তার সন্তানের কারণে
ক্ষতির সম্মুখীন
করা যাবে না। আর ওয়ারিসদের
উপরও দায়িত্ব
এই। তারপর যদি
পিতা-মাতা ইচ্ছা
করে, তাহলে দুবছরের
ভিতরেই নিজেদের পারস্পরিক পরামর্শক্রমে
দুধ ছাড়িয়ে দিতে
পারে, তাতে তাদের
কোন পাপ নেই, আর যদি তোমরা কোন ধাত্রীর
দ্বারা নিজের সন্তানদেরকে
দুধ খাওয়াতে চাও, তাহলে
যদি তোমরা সাব্যস্তকৃত
প্রচলিত বিনিময়
দিয়ে দাও তাতেও
কোন পাপ নেই। আর আল্লাহকে
ভয় কর এবং জেনে
রেখো যে, আল্লাহ
তোমাদের যাবতীয়
কাজ অত্যন্ত ভাল
করেই দেখেন।
[2:234]
আর
তোমাদের মধ্যে
যারা মৃত্যুবরণ
করবে এবং নিজেদের
স্ত্রীদেরকে ছেড়ে
যাবে, তখন সে স্ত্রীদের
কর্তব্য হলো নিজেকে
চার মাস দশ দিন
পর্যন্ত অপেক্ষা
করিয়ে রাখা। তারপর
যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের
ব্যাপারে নীতি
সঙ্গত ব্যবস্থা
নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের
ব্যাপারেই আল্লাহর
অবগতি রয়েছে।
[2:235]
আর
যদি তোমরা আকার
ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের
পয়গাম দাও, কিংবা
নিজেদের মনে গোপন
রাখ, তবে তাতেও
তোমাদের কোন পাপ নেই, আল্লাহ
জানেন যে, তোমরা
অবশ্যই সে নারীদের
কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু তাদের সাথে বিয়ে
করার গোপন প্রতিশ্রুতি
দিয়ে রেখো না। অবশ্য
শরীয়তের নির্ধারিত প্রথা অনুযায়ী
কোন কথা সাব্যস্ত
করে নেবে। আর নির্ধারিত
ইদ্দত সমাপ্তি
পর্যায়ে না যাওয়া অবধি
বিয়ে করার কোন
ইচ্ছা করো না। আর একথা
জেনে রেখো যে, তোমাদের
মনে যে কথা
রয়েছে, আল্লাহর তা
জানা আছে। কাজেই
তাঁকে ভয় করতে
থাক। আর জেনে
রেখো যে, আল্লাহ
ক্ষমাকারী ও ধৈর্য্যশীল।
[2:236]
স্ত্রীদেরকে
স্পর্শ করার আগে এবং কোন মোহর সাব্যস্ত
করার পূর্বেও যদি
তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতেও
তোমাদের কোন পাপ নেই। তবে তাদেরকে
কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের
জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং
কম সামর্থ্যবানদের
জন্য তাদের সাধ্য
অনুযায়ী। যে খরচ
প্রচলিত রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের
উপর দায়িত্ব।
[2:237]
আর
যদি মোহর সাব্যস্ত
করার পর স্পর্শ
করার পূর্বে তালাক
দিয়ে দাও, তাহলে
যে, মোহর সাব্যস্ত
করা হয়েছে তার অর্ধেক দিয়ে
দিতে হবে। অবশ্য
যদি নারীরা ক্ষমা
করে দেয় কিংবা
বিয়ের বন্ধন যার অধিকারে সে (অর্থাৎ, স্বামী) যদি
ক্ষমা করে দেয়
তবে তা স্বতন্ত্র
কথা। আর তোমরা পুরুষরা যদি ক্ষমা
কর, তবে তা হবে
পরহেযগারীর নিকটবর্তী। আর পারস্পরিক সহানুভূতির কথা
বিস্মৃত হয়ো না। নিশ্চয়
তোমরা যা কিছু
কর আল্লাহ সেসবই
অত্যন্ত ভাল করে
দেখেন।
[2:238]
সমস্ত
নামাযের প্রতি
যত্নবান হও, বিশেষ
করে মধ্যবর্তী
নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহর
সামনে একান্ত আদবের
সাথে দাঁড়াও।
[2:239]
অতঃপর
যদি তোমাদের কারো ব্যাপারে ভয়
থাকে, তাহলে পদচারী
অবস্থাতেই পড়ে
নাও অথবা সওয়ারীর
উপরে। তারপর যখন তোমরা নিরাপত্তা
পাবে, তখন আল্লাহকে
স্মরণ কর, যেভাবে
তোমাদের শেখানো হয়েছে, যা তোমরা
ইতিপূর্বে জানতে
না।
[2:240]
আর
যখন তোমাদের মধ্যে
যারা মৃত্যুবরণ
করবে তখন স্ত্রীদের
ঘর থেকে বের না
করে এক বছর পর্যন্ত
তাদের খরচের ব্যাপারে ওসিয়ত
করে যাবে। অতঃপর
যদি সে স্ত্রীরা
নিজে থেকে বেরিয়ে
যায়, তাহলে সে নারী যদি নিজের
ব্যাপারে কোন উত্তম
ব্যবস্থা করে, তবে তাতে
তোমাদের উপর কোন পাপ নেই। আর আল্লাহ
হচ্ছেন পরাক্রমশালী
বিজ্ঞতা সম্পন্ন।
[2:241]
আর
তালাকপ্রাপ্তা
নারীদের জন্য প্রচলিত নিয়ম
অনুযায়ী খরচ দেয়া
পরহেযগারদের উপর
কর্তব্য।
[2:242]
এভাবেই
আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ
বর্ণনা করেন যাতে
তোমরা তা বুঝতে
পার।
[2:243]
তুমি
কি তাদেরকে দেখনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে
নিজেদের ঘর ছেড়ে
বেরিয়ে গিয়েছিলেন? অথচ তারা
ছিল হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ
তাদেরকে বললেন
মরে যাও। তারপর
তাদেরকে জীবিত
করে দিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের
উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু
অধিকাংশ লোক শুকরিয়া
প্রকাশ করে না।
[2:244]
আল্লাহর
পথে লড়াই কর এবং
জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে
আল্লাহ সবকিছু
জানেন, সবকিছু শুনেন।
[2:245]
এমন
কে আছে যে, আল্লাহকে
করজ দেবে, উত্তম
করজ; অতঃপর আল্লাহ
তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ
বৃদ্ধি করে দিবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন
এবং তিনিই প্রশস্ততা
দান করেন এবং তাঁরই
নিকট তোমরা সবাই
ফিরে যাবে।
[2:246]
মূসার
পরে তুমি কি বনী ইসরাঈলের একটি
দলকে দেখনি, যখন তারা
বলেছে নিজেদের
নবীর কাছে যে, আমাদের
জন্য একজন বাদশাহ
নির্ধারিত করে
দিন যাতে আমরা
আল্লাহর পথে যুদ্ধ
করতে পারি। নবী বললেন, তোমাদের প্রতিও
কি এমন ধারণা করা
যায় যে, লড়াইর
হুকুম যদি হয়, তাহলে তখন তোমরা লড়বে
না? তারা বলল, আমাদের
কি হয়েছে যে, আমরা
আল্লাহর পথে লড়াই
করব না। অথচ আমরা
বিতাড়িত হয়েছি
নিজেদের ঘর-বাড়ী
ও সন্তান-সন্ততি
থেকে। অতঃপর
যখন লড়াইয়ের
নির্দেশ হলো, তখন সামান্য
কয়েকজন ছাড়া
তাদের সবাই ঘুরে
দাঁড়ালো। আর আল্লাহ তাআলা জালেমদের
ভাল করেই জানেন।
[2:247]
আর
তাদেরকে তাদের
নবী বললেন, নিশ্চয়ই
আল্লাহ তালূতকে
তোমাদের জন্য বাদশাহ
সাব্যস্ত করেছেন। তারা
বলতে লাগল তা কেমন করে হয়
যে, তার শাসন চলবে
আমাদের উপর। অথচ রাষ্ট্রক্ষমতা
পাওয়ার ক্ষেত্রে
তার চেয়ে আমাদেরই
অধিকার বেশী। আর সে
সম্পদের দিক দিয়েও
সচ্ছল নয়। নবী বললেন, নিশ্চয়
আল্লাহ তোমাদের
উপর তাকে পছন্দ
করেছেন এবং স্বাস্থ্য
ও জ্ঞানের দিক
দিয়ে প্রাচুর্য
দান করেছেন। বস্তুতঃ
আল্লাহ তাকেই রাজ্য
দান করেন, যাকে
ইচ্ছা। আর আল্লাহ
হলেন অনুগ্রহ দানকারী
এবং সব বিষয়ে
অবগত।
[2:248]
বনী-ইসরাঈলদেরকে
তাদের নবী আরো বললেন, তালূতের নেতৃত্বের
চিহ্ন হলো এই যে, তোমাদের
কাছে একটা সিন্দুক
আসবে তোমাদের
পালকর্তার পক্ষ
থেকে তোমাদের মনের
সন্তুষ্টির নিমিত্তে। আর তাতে
থাকবে মূসা, হারুন
এবং তাঁদের সন্তানবর্গের
পরিত্যক্ত কিছু
সামগ্রী। সিন্দুকটিকে
বয়ে আনবে ফেরেশতারা। তোমরা
যদি ঈমানদার হয়ে
থাক, তাহলে এতে
তোমাদের জন্য নিশ্চিতই পরিপূর্ণ নিদর্শন
রয়েছে।
[2:249]
অতঃপর
তালূত যখন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বেরুল, তখন বলল, নিশ্চয়
আল্লাহ তোমাদিগকে
পরীক্ষা করবেন
একটি নদীর মাধ্যমে। সুতরাং
যে লোক সেই নদীর
পানি পান করবে
সে আমার নয়। আর যে, লোক তার স্বাদ গ্রহণ করলো
না, নিশ্চয়ই সে
আমার লোক। কিন্তু
যে লোক হাতের আঁজলা
ভরে সামান্য
খেয়ে নেবে তার
দোষঅবশ্য তেমন
গুরুতর হবে না। অতঃপর
সবাই পান করল সে পানি, সামান্য কয়েকজন
ছাড়া। পরে তালূত
যখন তা পার হলো
এবং তার সাথে ছিল
মাত্র কয়েকজন
ঈমানদার, তখন তারা
বলতে লাগল, আজকের
দিনে জালূত এবং
তার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার
শক্তি আমাদের নেই, যাদের
ধারণা ছিল যে, আল্লাহর
সামনে তাদের একদিন উপস্থিত
হতে হবে, তারা
বার বার বলতে লাগল, সামান্য
দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী
হয়েছে আল্লাহর
হুকুমে। আর যারা
ধৈর্য্যশীল আল্লাহ
তাদের সাথে রয়েছেন।
[2:250]
আর
যখন তালূত ও তার
সেনাবাহিনী শত্রুর সম্মুখীন
হল, তখন বলল, হে আমাদের
পালনকর্তা, আমাদের
মনে ধৈর্য্য সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে
দৃঢ়পদ রাখ-আর
আমাদের সাহায্য
কর সে কাফের জাতির
বিরুদ্ধে।
[2:251]
তারপর
ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের
বাহিনীকে পরাজিত
করে দিল এবং দাউদ
জালূতকে হত্যা
করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন
রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে
যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ
যদি একজনকে
অপরজনের দ্বারা
প্রতিহত না করতেন, তাহলে
গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত
হয়ে যেতো। কিন্তু
বিশ্ববাসীর প্রতি
আল্লাহ একান্তই
দয়ালু, করুণাময়।
[2:252]
এগুলো
হলো আল্লাহর নিদর্শন, যা আমরা তোমাদেরকে
যথাযথভাবে শুনিয়ে
থাকি। আর আপনি
নিশ্চিতই আমার
রসূলগণের অন্তর্ভুক্ত।