Part 3
[2:253]
এই
রসূলগণ-আমি তাদের
কাউকে কারো
উপর মর্যাদা দিয়েছি। তাদের
মধ্যে কেউ তো হলো
তারা যার সাথে
আল্লাহ কথা বলেছেন, আর কারও
মর্যাদা উচ্চতর
করেছেন এবং আমি
মরিয়ম তনয় ঈসাকে
প্রকৃষ্ট মুজেযা দান করেছি
এবং তাকে শক্তি
দান করেছি রুহূল
কুদ্দুস অর্থৎ জিবরাঈলের মাধ্যমে। আর আল্লাহ
যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে
পরিস্কার নির্দেশ
এসে যাবার পর পয়গম্বরদের
পেছনে যারা ছিল
তারা লড়াই করতো
না। কিন্তু তাদের
মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়ে গেছে। অতঃপর
তাদের কেউ তো ঈমান
এনেছে, আর কেউ হয়েছে
কাফের। আর আল্লাহ যদি ইচ্ছা
করতেন, তাহলে তারা
পরস্পর লড়াই করতো, কিন্তু
আল্লাহ তাই করেন, যা তিনি
ইচ্ছা করেন।
[2:254]
হে
ঈমানদারগণ! আমি
তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন
আসার পূর্বেই তোমরা
তা থেকে ব্যয়
কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে
সুপারিশ কিংবা
বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই
হলো প্রকৃত যালেম।
[2:255]
আল্লাহ
ছাড়া অন্য কোন
উপাস্য নেই, তিনি
জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে
তন্দ্রাও স্পর্শ
করতে পারে না এবং
নিদ্রাও নয়। আসমান
ও যমীনে যা কিছু
রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ
এমন, যে সুপারিশ
করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি
ছাড়া? দৃষ্টির সামনে
কিংবা পিছনে যা
কিছু রয়েছে সে
সবই তিনি জানেন। তাঁর
জ্ঞানসীমা থেকে
তারা কোন কিছুকেই
পরিবেষ্টিত করতে
পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা
করেন। তাঁর সিংহাসন
সমস্ত আসমান ও
যমীনকে পরিবেষ্টিত
করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ
করা তাঁর পক্ষে
কঠিন নয়। তিনিই
সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
[2:256]
দ্বীনের
ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা
নেই। নিঃসন্দেহে
হেদায়াত গোমরাহী
থেকে পৃথক হয়ে
গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী
তাগুতদেরকে
মানবে না এবং আল্লাহতে
বিশ্বাস স্থাপন
করবে, সে ধারণ
করে নিয়েছে সুদৃঢ়
হাতল যা ভাংবার
নয়। আর আল্লাহ
সবই শুনেন এবং
জানেন।
[2:257]
যারা
ঈমান এনেছে, আল্লাহ
তাদের অভিভাবক। তাদেরকে
তিনি বের করে আনেন
অন্ধকার থেকে আলোর
দিকে। আর যারা
কুফরী করে তাদের অভিভাবক
হচ্ছে তাগুত। তারা
তাদেরকে আলো থেকে
বের করে অন্ধকারের
দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো
দোযখের অধিবাসী, চিরকাল
তারা সেখানেই থাকবে।
[2:258]
তুমি
কি সে লোককে দেখনি, যে পালনকর্তার ব্যাপারে
বাদানুবাদ করেছিল
ইব্রাহীমের সাথে
এ কারণে যে, আল্লাহ
সে ব্যাক্তিকে
রাজ্য দান করেছিলেন? ইব্রাহীম
যখন বললেন, আমার
পালনকর্তা হলেন
তিনি, যিনি জীবন
দান করেন এবং মৃত্যু
ঘটান। সে বলল, আমি জীবন
দান করি এবং মৃত্যু
ঘটিয়ে থাকি। ইব্রাহীম
বললেন, নিশ্চয়ই
তিনি সুর্যকে উদিত
করেন পূর্ব দিক
থেকে এবার তুমি তাকে পশ্চিম
দিক থেকে উদিত
কর। তখন সে কাফের
হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ সীমালংঘণকারী
সম্প্রদায়কে
সরল পথ প্রদর্শন
করেন না।
[2:259]
তুমি
কি সে লোককে দেখনি
যে এমন এক জনপদ
দিয়ে যাচ্ছিল
যার বাড়ীঘরগুলো
ভেঙ্গে ছাদের উপর
পড়ে ছিল? বলল, কেমন করে আল্লাহ মরনের
পর একে জীবিত করবেন? অতঃপর
আল্লাহ তাকে মৃত
অবস্থায় রাখলেন একশ বছর। তারপর
তাকে উঠালেন। বললেন, কত কাল
এভাবে ছিলে? বলল আমি
ছিলাম, একদিন কংবা একদিনের
কিছু কম সময়। বললেন, তা নয়; বরং তুমি
তো একশ বছর ছিলে। এবার চেয়ে দেখ নিজের
খাবার ও পানীয়ের
দিকে-সেগুলো পচে
যায় নি এবং দেখ
নিজের গাধাটির
দিকে। আর আমি
তোমাকে মানুষের
জন্য দৃষ্টান্ত
বানাতে চেয়েছি। আর হাড়গুলোর দিকে
চেয়ে দেখ যে, আমি এগুলোকে
কেমন করে জুড়ে
দেই এবং সেগুলোর
উপর মাংসের
আবরণ পরিয়ে দেই। অতঃপর
যখন তার উপর এ অবস্থা
প্রকাশিত হল, তখন বলে উঠল-আমি জানি, নিঃসন্দেহে
আল্লাহ সর্ব বিষয়ে
ক্ষমতাশীল।
[2:260]
আর
স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার পালনকর্তা
আমাকে দেখাও, কেমন
করে তুমি মৃতকে
জীবিত করবে। বললেন; তুমি
কি বিশ্বাস কর
না? বলল, অবশ্যই
বিশ্বাস করি, কিন্তু
দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি
লাভ করতে পারি। বললেন, তাহলে
চারটি পাখী ধরে
নাও। পরে সেগুলোকে নিজের
পোষ মানিয়ে নাও, অতঃপর
সেগুলোর দেহের
একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর
রেখে দাও। তারপর
সেগুলোকে ডাক; তোমার
নিকট দৌড়ে চলে
আসবে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই
আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি জ্ঞান
সম্পন্ন।
[2:261]
যারা
আল্লাহর রাস্তায়
স্বীয় ধন সম্পদ
ব্যয় করে, তাদের
উদাহরণ একটি বীজের
মত, যা থেকে সাতটি
শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে
একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ
অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।
[2:262]
যারা
স্বীয় ধন সম্পদ
আল্লাহর রাস্তায়
ব্যয় করে, এরপর
ব্যয় করার পর
সে অনুগ্রহের কথা
প্রকাশ করে না
এবং কষ্টও
দেয় না, তাদেরই
জন্যে তাদের পালনকর্তার
কাছে রয়েছে পুরস্কার
এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা
চিন্তিতও হবে না।
[2:263]
নম্র
কথা বলে দেয়া
এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা
ঐ দান খয়রাত অপেক্ষা
উত্তম, যার পরে কষ্ট
দেয়া হয়। আল্লাহ তাআলা সম্পদশালী, সহিঞ্চু।
[2:264]
হে
ঈমানদারগণ!তোমরা
অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে
এবং কষ্ট দিয়ে
নিজেদের দান খয়রাত
বরবাদ করো না সে
ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ
লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে
ব্যয় করে এবং
আল্লাহ ও পরকালের
প্রতি বিশ্বাস
রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির
দৃষ্টান্ত একটি
মসৃণ পাথরের মত
যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর
এর উপর প্রবল বৃষ্টি
বর্ষিত হলো, অনন্তর
তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে
দিল। তারা ঐ
বস্তুর কোন সওয়াব
পায় না, যা তারা
উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের
সম্প্রদায়কে
পথ প্রদর্শন করেন
না।
[2:265]
যারা
আল্লাহর রাস্তায়
স্বীয় ধন-সম্পদ
ব্যয় করে আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জনের
লক্ষ্যে এবং নিজের
মনকে সুদৃঢ় করার জন্যে তাদের
উদাহরণ টিলায়
অবস্থিত বাগানের
মত, যাতে প্রবল
বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর
দ্বিগুণ ফসল দান
করে। যদি এমন
প্রবল বৃষ্টিপাত
নাও হয়, তবে হাল্কা
বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ
তোমাদের কাজকর্ম
যথার্থই প্রত্যক্ষ
করেন।
[2:266]
তোমাদের
কেউ পছন্দ করে
যে, তার একটি
খেজুর ও আঙ্গুরের
বাগান হবে, এর তলদেশ
দিয়ে নহর প্রবাহিত
হবে, আর এতে সর্বপ্রকার ফল-ফসল
থাকবে এবং সে বার্ধক্যে
পৌছবে, তার দুর্বল
সন্তান সন্ততিও থাকবে, এমতাবস্থায়
এ বাগানের একটি
ঘূর্ণিবায়ু আসবে, যাতে
আগুন রয়েছে, অনন্তর
বাগানটি ভষ্মীভূত
হয়ে যাবে? এমনিভাবে
আল্লাহ তাআলা তোমাদের
জন্যে নিদর্শনসমূহ
বর্ননা করেন-যাতে
তোমরা চিন্তা-ভাবনা
কর।
[2:267]
হে
ঈমানদারগণ! তোমরা
স্বীয় উপার্জন
থেকে এবং যা আমি
তোমাদের জন্যে
ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে
উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর
এবং তা থেকে নিকৃষ্ট
জিনিস ব্যয় করতে
মনস্থ করো না। কেননা, তা তোমরা কখনও গ্রহণ
করবে না; তবে যদি
তোমরা চোখ বন্ধ
করে নিয়ে নাও। জেনে
রেখো, আল্লাহ অভাব
মুক্ত, প্রশংসিত।
[2:268]
শয়তান
তোমাদেরকে অভাব
অনটনের ভীতি
প্রদর্শন করে এবং
অশ্লীলতার আদেশ
দেয়। পক্ষান্তরে
আল্লাহ তোমাদেরকে
নিজের পক্ষ
থেকে ক্ষমা ও বেশী
অনুগ্রহের ওয়াদা
করেন। আল্লাহ
প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ।
[2:269]
তিনি
যাকে ইচ্ছা বিশেষ
জ্ঞান দান করেন
এবং যাকে বিশেষ
জ্ঞান দান করা
হয়, সে প্রভুত
কল্যাণকর বস্তু
প্রাপ্ত হয়। উপদেশ
তারাই গ্রহণ করে, যারা
জ্ঞানবান।
[2:270]
তোমরা
যে খয়রাত বা সদ্ব্যয় কর কিংবা কোন মানত
কর, আল্লাহ নিশ্চয়ই
সেসব কিছুই জানেন। অন্যায়কারীদের
কোন সাহায্যকারী
নেই।
[2:271]
যদি
তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা
কতইনা উত্তম। আর যদি
খয়রাত গোপনে কর
এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা
তোমাদের জন্যে
আরও উত্তম। আল্লাহ
তাআলা তোমাদের
কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ
তোমাদের কাজ কর্মের
খুব খবর রাখেন।
[2:272]
তাদেরকে
সৎপথে আনার
দায় তোমার নয়। বরং আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত
করেন। যে মাল
তোমরা ব্যয় কর, তা নিজ উপাকারার্থেই
কর। আল্লাহর সন্তুষ্টি
ছাড়া অন্য কোন
উদ্দেশ্যে ব্যয়
করো না। তোমরা যে, অর্থ
ব্যয় করবে, তার পুরস্কার
পুরোপুরি পেয়ে
যাবে এবং তোমাদের
প্রতি অন্যায়
করা হবে না।
[2:273]
খয়রাত
ঐ সকল গরীব লোকের
জন্যে যারা
আল্লাহর পথে আবদ্ধ
হয়ে গেছে-জীবিকার
সন্ধানে অন্যত্র
ঘোরাফেরা করতে
সক্ষম নয়। অজ্ঞ
লোকেরা যাঞ্চা
না করার কারণে
তাদেরকে অভাবমুক্ত
মনে করে। তোমরা তাদেরকে তাদের
লক্ষণ দ্বারা চিনবে। তারা
মানুষের কাছে কাকুতি-মিনতি
করে ভিক্ষা চায় না। তোমরা যে অর্থ
ব্যয় করবে, তা আল্লাহ
তাআলা অবশ্যই
পরিজ্ঞাত।
[2:274]
যারা
স্বীয় ধন-সম্পদ
ব্যয় করে, রাত্রে
ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের
জন্যে তাদের সওয়াব
রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের
কোন আশংঙ্কা নেই
এবং তারা চিন্তিত
ও হবে না।
[2:275]
যারা
সুদ খায়, তারা
কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে
দন্ডায়মান হয়
ঐ ব্যক্তি, যাকে
শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে
দেয়। তাদের
এ অবস্থার কারণ
এই যে, তারা বলেছেঃ
ক্রয়-বিক্রয়
ও তো সুদ নেয়ারই
মত! অথচ আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয়
বৈধ করেছেন এবং
সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর
যার কাছে তার পালনকর্তার
পক্ষ থেকে উপদেশ
এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে
যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার
আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায়
সুদ নেয়, তারাই
দোযখে যাবে। তারা
সেখানে চিরকাল
অবস্থান করবে।
[2:276]
আল্লাহ
তাআলা সুদকে
নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে
বর্ধিত করেন। আল্লাহ
পছন্দ করেন না
কোন অবিশ্বাসী
পাপীকে।
[2:277]
নিশ্চয়ই
যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ
করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত
করেছে এবং যাকাত
দান করেছে, তাদের
জন্যে তাদের
পুরষ্কার তাদের
পালনকর্তার কছে
রয়েছে। তাদের
কোন শঙ্কা নেই
এবং তারা দুঃখিত
হবে না।
[2:278]
হে
ঈমানদারগণ, তোমরা
আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের
যে সমস্ত বকেয়া
আছে, তা পরিত্যাগ
কর, যদি তোমরা
ঈমানদার হয়ে থাক।
[2:279]
অতঃপর
যদি তোমরা পরিত্যাগ
না কর, তবে আল্লাহ
ও তাঁর রসূলের
সাথে যুদ্ধ করতে
প্রস্তুত হয়ে
যাও। কিন্তু
যদি তোমরা
তওবা কর, তবে তোমরা
নিজের মূলধন পেয়ে
যাবে। তোমরা
কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ
তোমাদের প্রতি
অত্যাচার করবে
না।
[2:280]
যদি
খাতক অভাবগ্রস্থ
হয়, তবে তাকে
সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত
সময় দেয়া উচিত। আর যদি
ক্ষমা করে দাও, তবে তা
খুবই উত্তম
যদি তোমরা উপলব্ধি
কর।
[2:281]
ঐ
দিনকে ভয় কর, যে দিন
তোমরা আল্লাহর
কাছে প্রত্যাবর্তিত
হবে। অতঃপর
প্রত্যেকেই তার
কর্মের ফল পুরোপুরি
পাবে এবং তাদের
প্রতি কোন রূপ
অবিচার করা হবে
না।
[2:282]
হে
মুমিনগণ! যখন তোমরা
কোন নির্দিষ্ট
সময়ের জন্যে ঋনের
আদান-প্রদান কর, তখন তা
লিপিবদ্ধ করে নাও
এবং তোমাদের
মধ্যে কোন লেখক
ন্যায়সঙ্গতভাবে
তা লিখে দেবে; লেখক
লিখতে অস্বীকার
করবে না। আল্লাহ
তাকে যেমন শিক্ষা
দিয়েছেন, তার উচিত
তা লিখে দেয়া। এবং ঋন
গ্রহীতা যেন লেখার
বিষয় বলে দেয়
এবং সে যেন স্বীয়
পালনকর্তা আল্লাহকে
ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও
বেশ কম না করে। অতঃপর
ঋণগ্রহীতা যদি
নির্বোধ হয় কিংবা দূর্বল হয় অথবা
নিজে লেখার বিষয়বস্তু
বলে দিতে অক্ষম
হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে
লিখাবে। দুজন
সাক্ষী কর, তোমাদের
পুরুষদের মধ্যে
থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন
পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের
মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর
যাতে একজন যদি
ভুলে যায়, তবে একজন
অন্যজনকে স্মরণ
করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের
অস্বীকার করা উচিত
নয়। তোমরা
এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক
কিংবা বড়, নির্দিষ্ট
সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ
করণ আল্লাহর কাছে সুবিচারকে
অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে
অধিক সুসংহত রাখে
এবং তোমাদের সন্দেহে পতিত
না হওয়ার পক্ষে
অধিক উপযুক্ত। কিন্তু
যদি কারবার নগদ
হয়, পরস্পর হাতে হাতে আদান-প্রদান
কর, তবে তা না লিখলে
তোমাদের প্রতি
কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের
সময় সাক্ষী রাখ। কোন লেখক
ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত
করো না। যদি তোমরা এরূপ কর, তবে তা
তোমাদের পক্ষে
পাপের বিষয়। আল্লাহকে
ভয় কর তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা
দেন। আল্লাহ
সব কিছু জানেন।
[2:283]
আর
তোমরা যদি প্রবাসে
থাক এবং কোন লেখক
না পাও তবে বন্ধকী
বন্তু হস্তগত রাখা
উচিত। যদি একে
অন্যকে বিশ্বাস করে, তবে যাকে বিশ্বাস
করা হয়, তার উচিত
অন্যের প্রাপ্য
পরিশোধ করা এবং
স্বীয় পালনকর্তা
আল্লাহকে ভয় কর!
তোমরা সাক্ষ্য
গোপন করো না। যে কেউ
তা গোপন করবে, তার অন্তর
পাপপূর্ণ হবে। তোমরা
যা করা, আল্লাহ সে
সম্পর্কে খুব জ্ঞাত।
[2:284]
যা
কিছু আকাশসমূহে
রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে
আছে, সব আল্লাহরই। যদি তোমরা
মনের কথা প্রকাশ
কর কিংবা গোপন
কর, আল্লাহ তোমাদের
কাছ থেকে তার হিসাব
নেবেন। অতঃপর
যাকে ইচ্ছা তিনি
ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা
তিনি শাস্তি দেবেন। আল্লাহ
সর্ববিষয়ে শক্তিমান।
[2:285]
রসূল
বিশ্বাস রাখেন
ঐ সমস্ত বিষয়
সম্পর্কে যা তাঁর
পালনকর্তার পক্ষ
থেকে তাঁর কাছে
অবতীর্ণ হয়েছে
এবং মুসলমানরাও
সবাই বিশ্বাস রাখে
আল্লাহর প্রতি, তাঁর
ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের
প্রতি এবং তাঁর
পয়গম্বরগণের
প্রতি। তারা
বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের
মধ্যে কোন তারতম্য
করিনা। তারা
বলে, আমরা শুনেছি
এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা
চাই, হে আমাদের
পালনকর্তা। তোমারই
দিকে প্রত্যাবর্তন
করতে হবে।
[2:286]
আল্লাহ
কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার
দেন না, সে তাই পায়
যা সে উপার্জন
করে এবং তাই তার
উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের
পালনকর্তা, যদি আমরা
ভুলে যাই কিংবা
ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের
পালনকর্তা! এবং
আমাদের উপর এমন
দায়িত্ব অর্পণ
করো না, যেমন আমাদের
পূর্ববর্তীদের
উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের
প্রভূ! এবং আমাদের
দ্বারা ঐ বোঝা
বহন করিও না, যা বহন
করার শক্তি আমাদের
নাই। আমাদের
পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা
কর এবং আমাদের
প্রতি দয়া কর। তুমিই
আমাদের প্রভু। সুতরাং
কাফের সম্প্রদায়ের
বিরুদ্ধে আমাদের
কে সাহায্যে কর।
@
3 Al-Imran
শুরু
করছি আল্লাহর
নামে যিনি পরম
করুণাময়, অতি
দয়ালু।
[3:1]
আলিফ
লাম মীম।
[3:2]
আল্লাহ
ছাড়া কোন উপাস্য
নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর
ধারক।
[3:3]
তিনি
আপনার প্রতি কিতাব
নাযিল করেছেন
সত্যতার সাথে; যা সত্যায়ন
করে পূর্ববর্তী
কিতাবসমুহের।
[3:4]
নাযিল
করেছেন তাওরত ও
ইঞ্জিল, এ কিতাবের
পূর্বে, মানুষের হেদায়েতের
জন্যে এবং অবতীর্ণ
করেছেন মীমাংসা। নিঃসন্দেহে যারা
আল্লাহর আয়াতসমূহ
অস্বীকার করে, তাদের
জন্যে রয়েছে কঠিন
আযাব। আর আল্লাহ
হচ্ছেন পরাক্রমশীল, প্রতিশোধ
গ্রহণকারী।
[3:5]
আল্লাহর
নিকট আসমান ও যমীনের কোন বিষয়ই গোপন
নেই।
[3:6]
তিনিই
সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের আকৃতি
গঠন করেন মায়ের
গর্ভে, যেমন তিনি
চেয়েছেন। তিনি
ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি
প্রবল পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।
[3:7]
তিনিই
আপনার প্রতি কিতাব
নাযিল করেছেন। তাতে
কিছু আয়াত রয়েছে
সুস্পষ্ট, সেগুলোই
কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং
যাদের অন্তরে কুটিলতা
রয়েছে, তারা অনুসরণ
করে ফিৎনা
বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার
উদ্দেশে তন্মধ্যেকার
রূপকগুলোর। আর সেগুলোর
ব্যাখ্যা আল্লাহ
ব্যতীত কেউ জানে
না। আর যারা জ্ঞানে
সুগভীর, তারা বলেনঃ
আমরা এর প্রতি
ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার
পক্ষ থেকে অবতীর্ণ
হয়েছে। আর বোধশক্তি
সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা
গ্রহণ করে না।
[3:8]
হে
আমাদের পালনকর্তা!
সরল পথ প্রদর্শনের
পর তুমি আমাদের
অন্তরকে সত্যলংঘনে
প্রবৃত্ত করোনা
এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে
অনুগ্রহ দান কর। তুমিই
সব কিছুর দাতা।
[3:9]
হে
আমাদের পালনকর্তা!
তুমি মানুষকে
একদিন অবশ্যই একত্রিত
করবেঃ এতে কোনই
সন্দেহ নেই। নিশ্চয়
আল্লাহ তাঁর ওয়াদার অন্যথা
করেন না।
[3:10]
যারা
কুফুরী করে, তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি
আল্লাহর সামনে
কখনও কাজে আসবে
না। আর তারাই হচ্ছে দোযখের ইন্ধন।
[3:11]
ফেরআউনের
সম্প্রদায় এবং
তাদের পূর্ববর্তীদের
ধারা অনুযায়ীই
তারা আমার আয়াতসমূহকে
মিথ্যা প্রতিপন্ন
করেছে। ফলে তাদের পাপের
কারণে আল্লাহ তাদেরকে
পাকড়াও করেছেন
আর আল্লাহর আযাব
অতি কঠিন।
[3:12]
কাফেরদিগকে
বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা
পরাভূত হয়ে দোযখের
দিকে হাঁকিয়ে
নীত হবে-সেটা কতই
না নিকৃষ্টতম অবস্থান।
[3:13]
নিশ্চয়ই
দুটো দলের মোকাবিলার মধ্যে তোমাদের
জন্য নিদর্শন ছিল। একটি
দল আল্লাহর রাহে
যুদ্ধ করে। আর অপর
দল ছিল কাফেরদের
এরা স্বচক্ষে তাদেরকে
দ্বিগুন দেখছিল। আর আল্লাহ
যাকে নিজের সাহায্যের মাধ্যমে শক্তি
দান করেন। এরই মধ্যে
শিক্ষনীয় রয়েছে
দৃষ্টি সম্পন্নদের
জন্য।
[3:14]
মানবকূলকে
মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত
স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত
অশ্ব, গবাদি পশুরাজি
এবং ক্ষেত-খামারের
মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই
হচ্ছে পার্থিব
জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর
নিকটই হলো উত্তম
আশ্রয়।
[3:15]
বলুন, আমি কি
তোমাদেরকে এসবের চাইতেও উত্তম
বিষয়ের সন্ধান
বলবো?-যারা পরহেযগার, আল্লাহর
নিকট তাদের জন্যে রয়েছে বেহেশত, যার তলদেশে
প্রস্রবণ প্রবাহিত-তারা
সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আর রয়েছে পরিচ্ছন্ন
সঙ্গিনীগণ এবং
আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ
তাঁর বান্দাদের
প্রতি সুদৃষ্টি
রাখেন।
[3:16]
যারা
বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা
ঈমান এনেছি, কাজেই
আমাদের গোনাহ ক্ষমা
করে দাও আর আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে
রক্ষা কর।
[3:17]
তারা
ধৈর্য্যধারণকারী, সত্যবাদী, নির্দেশ
সম্পাদনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী
এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।
[3:18]
আল্লাহ
সাক্ষ্য দিয়েছেন
যে, তাঁকে ছাড়া
আর কোন উপাস্য
নেই। ফেরেশতাগণ
এবং ন্যায়নিষ্ঠ
জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি
ছাড়া আর কোন ইলাহ
নেই। তিনি পরাক্রমশালী
প্রজ্ঞাময়।
[3:19]
নিঃসন্দেহে
আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন
একমাত্র ইসলাম। এবং যাদের
প্রতি কিতাব দেয়া
হয়েছে তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান
আসার পরও ওরা মতবিরোধে
লিপ্ত হয়েছে, শুধুমাত্র
পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ, যারা
আল্লাহর নিদর্শনসমূহের
প্রতি কুফরী করে
তাদের জানা উচিত
যে, নিশ্চিতরূপে
আল্লাহ হিসাব গ্রহণে
অত্যন্ত দ্রুত।
[3:20]
যদি
তারা তোমার সাথে
বিতর্কে অবতীর্ণ
হয় তবে বলে দাও, "আমি এবং
আমার অনুসরণকারীগণ
আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করেছি।" আর আহলে
কিতাবদের এবং নিরক্ষরদের
বলে দাও যে, তোমরাও
কি আত্নসমর্পণ
করেছ? তখন যদি তারা
আত্নসমর্পণ করে, তবে সরল
পথ প্রাপ্ত হলো, আর যদি
মুখ ঘুরিয়ে
নেয়, তাহলে তোমার
দায়িত্ব হলো শুধু
পৌছে দেয়া। আর আল্লাহর
দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা।
[3:21]
যারা
আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে
এবং পয়গম্বরগণকে
হত্যা করে অন্যায়ভাবে, আর সেসব
লোককে হত্যা করে যারা ন্যায়পরায়ণতার
নির্দেশ দেয় তাদেরকে
বেদনাদায়ক শাস্তির
সংবাদ দিন।
[3:22]
এরাই
হলো সে লোক যাদের
সমগ্র আমল দুনিয়া
ও আখেরাত উভয়লোকেই
বিনষ্ট হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে
তাদের কোন সাহায্যকারীও
নেই।
[3:23]
আপনি
কি তাদের দেখেননি, যারা কিতাবের কিছু
অংশ পেয়েছে-আল্লাহর
কিতাবের প্রতি
তাদের আহবান করা
হয়েছিল যাতে তাদের মধ্যে মীমাংসা
করা যায়। অতঃপর
তাদের মধ্যে একদল
তা অমান্য করে
মুখ ফিরিয়ে
নেয়।
[3:24]
তা
এজন্য যে, তারা
বলে থাকে যে, দোযখের
আগুন আমাদের স্পর্শ
করবে না; তবে সামান্য
হাতে গোনা কয়েকদিনের
জন্য স্পর্শ
করতে পারে। নিজেদের
উদ্ভাবিত ভিত্তিহীন
কথায় তারা ধোকা
খেয়েছে।
[3:25]
কিন্তু
তখন কি অবস্থা
দাঁড়াবে যখন আমি তাদেরকে
একদিন সমবেত করবো
যে দিনের আগমনে
কোন সন্দেহ নেই
আর নিজেদের কৃতকর্ম তাদের
প্রত্যেকেই পাবে
তাদের প্রাপ্য
প্রদান মোটেই অন্যায়
করা হবে না।
[3:26]
বলুন
ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির
অধিকারী। তুমি
যাকে ইচ্ছা রাজ্য
দান কর এবং যার
কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে
নাও এবং যাকে ইচ্ছা
সম্মান দান কর
আর যাকে ইচ্ছা
অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে
যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই
তুমি সর্ব বিষয়ে
ক্ষমতাশীল।
[3:27]
তুমি
রাতকে দিনের ভেতরে
প্রবেশ করাও
এবং দিনকে রাতের
ভেতরে প্রবেশ করিয়ে
দাও। আর তুমিই
জীবিতকে মৃতের
ভেতর থেকে বের
করে আন এবং মৃতকে
জীবিতের ভেতর থেকে
বের কর। আর তুমিই
যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক
দান কর।
[3:28]
মুমিনগন
যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কেন কাফেরকে
বন্ধুরূপে গ্রহণ
না করে। যারা
এরূপ করবে আল্লাহর
সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে
না। তবে যদি তোমরা
তাদের পক্ষ থেকে
কোন অনিষ্টের আশঙ্কা
কর, তবে তাদের
সাথে সাবধানতার
সাথে থাকবে আল্লাহ
তাআলা তাঁর সম্পর্কে
তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই
কে তাঁর কাছে ফিরে
যেতে হবে।
[3:29]
বলে
দিন, তোমরা যদি
মনের কথা গোপন
করে রাখ অথবা প্রকাশ
করে দাও, আল্লাহ
সে সবই জানতে পারেন। আর আসমান
ও জমিনে যা কিছু
আছে, সেসব ও তিনি
জানেন। আল্লাহ
সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।
[3:30]
সেদিন
প্রত্যেকেই যা
কিছু সে ভাল কাজ
করেছে; চোখের সামনে
দেখতে পাবে এবং
যা কিছু মন্দ কাজ
করেছে তাও, ওরা তখন কামনা করবে, যদি তার
এবং এসব কর্মের
মধ্যে ব্যবধান
দুরের হতো! আল্লাহ
তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদের
সাবধান করছেন। আল্লাহ
তাঁর বান্দাদের
প্রতি অত্যন্ত
দয়ালু।
[3:31]
বলুন, যদি তোমরা
আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে
আমাকে অনুসরণ কর, যাতে
আল্লাহ ও তোমাদিগকে
ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা
করে দেন। আর আল্লাহ
হলেন ক্ষমাকারী
দয়ালু।
[3:32]
বলুন, আল্লাহ
ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ
যদি তারা বিমুখতা
অবলম্বন করে, তাহলে
আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।
[3:33]
নিঃসন্দেহে
আল্লাহ আদম (আঃ) নূহ (আঃ) ও ইব্রাহীম
(আঃ) এর বংশধর এবং এমরানের খান্দানকে
নির্বাচিত করেছেন।
[3:34]
যারা
বংশধর ছিলেন পরস্পরের। আল্লাহ শ্রবণকারী
ও মহাজ্ঞানী।
[3:35]
এমরানের
স্ত্রী যখন বললো-হে আমার পালনকর্তা!
আমার গর্ভে যা
রয়েছে আমি তাকে
তোমার নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ থেকে মুক্ত
রেখে। আমার পক্ষ
থেকে তুমি তাকে
কবুল করে নাও, নিশ্চয়ই
তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞাত।
[3:36]
অতঃপর
যখন তাকে প্রসব
করলো বলল, হে আমার
পালনকর্তা! আমি
একে কন্যা প্রসব
করেছি। বস্তুতঃ
কি সে প্রসব করেছে আল্লাহ তা ভালই
জানেন। সেই কন্যার
মত কোন পুত্রই
যে নেই। আর আমি
তার নাম রাখলাম মারইয়াম। আর আমি
তাকে ও তার সন্তানদেরকে
তোমার আশ্রয়ে
সমর্পণ করছি। অভিশপ্ত শয়তানের কবল
থেকে।
[3:37]
অতঃপর
তাঁর পালনকর্তা
তাঁকে উত্তম
ভাবে গ্রহণ করে
নিলেন এবং তাঁকে
প্রবৃদ্ধি দান
করলেন-অত্যন্ত
সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর তাঁকে
যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে
সমর্পন করলেন। যখনই
যাকারিয়া মেহরাবের মধ্যে
তার কছে আসতেন
তখনই কিছু খাবার
দেখতে পেতেন। জিজ্ঞেস
করতেন "মারইয়াম!
কোথা থেকে এসব
তোমার কাছে এলো?" তিনি
বলতেন, "এসব আল্লাহর
নিকট থেকে আসে। আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা বেহিসাব
রিযিক দান করেন।"
[3:38]
সেখানেই
যাকারিয়া তাঁর পালনকর্তার নিকট
প্রার্থনা করলেন। বললেন, হে, আমার
পালনকর্তা! তোমার
নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র
সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই
তুমি প্রার্থনা
শ্রবণকারী।
[3:39]
যখন
তিনি কামরার ভেতরে
নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন ফেরেশতারা
তাঁকে ডেকে বললেন
যে, আল্লাহ তোমাকে
সুসংবাদ দিচ্ছেন
ইয়াহইয়া সম্পর্কে, যিনি
সাক্ষ্য দেবেন
আল্লাহর নির্দেশের
সত্যতা সম্পর্কে, যিনি
নেতা হবেন এবং
নারীদের সংস্পর্শে
যাবেন না, তিনি
অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবী
হবেন।
[3:40]
তিনি
বললেন হে পালনকর্তা!
কেমন করে আমার
পুত্র সন্তান হবে, আমার
যে বার্ধক্য এসে
গেছে, আমার স্ত্রীও
যে বন্ধ্যা। বললেন, আল্লাহ
এমনি ভাবেই যা
ইচ্ছা করে থাকেন।
[3:41]
তিনি
বললেন, হে পালনকর্তা
আমার জন্য কিছু
নিদর্শন দাও। তিনি
বললেন, তোমার জন্য
নিদর্শন হলো এই
যে, তুমি তিন দিন পর্যন্ত কারও
সাথে কথা বলবে
না। তবে ইশারা
ইঙ্গতে করতে পারবে
এবং তোমার পালনকর্তাকে
অধিক পরিমাণে স্মরণ
করবে আর সকাল-সন্ধ্যা
তাঁর পবিত্রতা
ও মহিমা ঘোষনা করবে।
[3:42]
আর
যখন ফেরেশতা বলল
হে মারইয়াম!, আল্লাহ
তোমাকে পছন্দ করেছেন
এবং তোমাকে পবিত্র
পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন। আর তোমাকে
বিশ্ব নারী সমাজের
উর্ধ্বে মনোনীত
করেছেন।
[3:43]
হে
মারইয়াম! তোমার
পালনকর্তার উপাসনা কর এবং
রুকুকারীদের সাথে
সেজদা ও রুকু কর।
[3:44]
এ
হলো গায়েবী সংবাদ, যা আমি আপনাকে পাঠিয়ে
থাকি। আর আপনি
তো তাদের কাছে
ছিলেন না, যখন প্রতিযোগিতা
করছিল যে, কে প্রতিপালন
করবে মারইয়ামকে
এবং আপনি তাদের
কাছে ছিলেন না, যখন তারা
ঝগড়া করছিলো।
[3:45]
যখন
ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ
তোমাকে তাঁর এক
বানীর সুসংবাদ
দিচ্ছেন, যার নাম
হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয়
ঈসা, দুনিয়া ও
আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের
অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের
অন্তর্ভূক্ত।
[3:46]
যখন
তিনি মায়ের কোলে
থাকবেন এবং পূর্ণ
বয়স্ক হবেন তখন
তিনি মানুষের সাথে
কথা বলবেন। আর তিনি
সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত
হবেন।
[3:47]
তিনি
বললেন, পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার
সন্তান হবে; আমাকে
তো কোন মানুষ স্পর্শ
করেনি। বললেন
এ ভাবেই আল্লাহ
যা ইচ্ছা সৃষ্টি
করেন। যখন কোন
কাজ করার জন্য
ইচ্ছা করেন তখন
বলেন যে, হয়ে
যাও অমনি তা হয়ে
যায়।
[3:48]
আর
তাকে তিনি শিখিয়ে
দেবেন কিতাব, হিকমত, তওরাত, ইঞ্জিল।
[3:49]
আর
বণী ইসরাঈলদের
জন্যে রসূল হিসেবে তাকে মনোনীত
করবেন। তিনি
বললেন নিশ্চয়ই
আমি তোমাদের নিকট
তোমাদের পালনকর্তার
পক্ষ থেকে এসেছি
নিদর্শনসমূহ নিয়ে। আমি তোমাদের
জন্য মাটির দ্বারা পাখীর আকৃতি তৈরী
করে দেই। তারপর
তাতে যখন ফুৎকার প্রদান করি, তখন তা
উড়ন্ত পাখীতে
পরিণত হয়ে যায়
আল্লাহর হুকুমে। আর আমি
সুস্থ করে তুলি
জন্মান্ধকে এবং শ্বেত কুষ্ঠ রোগীকে। আর আমি
জীবিত করে দেই
মৃতকে আল্লাহর
হুকুমে। আর আমি তোমাদেরকে বলে
দেই যা তোমরা খেয়ে
আস এবং যা তোমরা
ঘরে রেখে আস। এতে প্রকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা
বিশ্বাসী হও।
[3:50]
আর
এটি পূর্ববর্তী
কিতাব সমুহকে
সত্যায়ন করে, যেমন
তওরাত। আর তা
এজন্য যাতে তোমাদের
জন্য হালাল করে
দেই কোন কোন
বস্তু যা তোমাদের
জন্য হারাম ছিল। আর আমি
তোমাদের নিকট এসেছি
তোমাদের পালনকর্তার
নিদর্শনসহ। কাজেই
আল্লাহকে ভয় কর
এবং আমার অনুসরণ
কর।
[3:51]
নিশ্চয়ই
আল্লাহ আমার পালনকর্তা এবং
তোমাদেরও পালনকর্তা-তাঁর
এবাদত কর, এটাই
হলো সরল পথ।
[3:52]
অতঃপর
ঈসা (আঃ) যখন বণী ইসরায়ীলের কুফরী
সম্পর্কে উপলব্ধি
করতে পারলেন, তখন বললেন, কারা
আছে আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য
করবে? সঙ্গী-সাথীরা
বললো, আমরা রয়েছি
আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা
আল্লাহর প্রতি
ঈমান এনেছি। আর তুমি
সাক্ষী থাক যে, আমরা
হুকুম কবুল
করে নিয়েছি।
[3:53]
হে
আমাদের পালনকর্তা!
আমরা সে বিষয়ের
প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করেছি যা
তুমি নাযিল করেছ, আমরা
রসূলের অনুগত হয়েছি। অতএব, আমাদিগকে
মান্যকারীদের
তালিকাভুক্ত করে
নাও।
[3:54]
এবং
কাফেরেরা চক্রান্ত
করেছে আর আল্লাহও
কৌশল অবলম্বন করেছেন। বস্তুতঃ
আল্লাহ হচ্ছেন
সর্বোত্তম কুশলী।
[3:55]
আর
স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বলবেন, হে ঈসা! আমি
তোমাকে নিয়ে নেবো
এবং তোমাকে নিজের
দিকে তুলে নিবো-কাফেরদের থেকে তোমাকে পবিত্র
করে দেবো। আর যারা
তোমার অনুগত রয়েছে
তাদেরকে কিয়ামতের
দিন পর্যন্ত
যারা অস্বীকৃতি
জ্ঞাপন করে তাদের
উপর জয়ী করে রাখবো। বস্তুতঃ
তোমাদের সবাইকে
আমার কাছেই ফিরে
আসতে হবে। তখন যে
বিষয়ে তোমরা বিবাদ
করতে, আমি তোমাদের মধ্যে তার ফয়সালা
করে দেবো।
[3:56]
অতএব
যারা কাফের হয়েছে, তাদেরকে
আমি কঠিন শাস্তি
দেবো দুনিয়াতে
এবং আখেরাতে-তাদের
কোন সাহায্যকারী
নেই।
[3:57]
পক্ষান্তরে
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে। তাদের
প্রাপ্য পরিপুর্ণভাবে
দেয়া হবে। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে
ভালবাসেন না।
[3:58]
আমি
তোমাদেরকে পড়ে
শুনাই এ সমস্ত
আয়াত এবং নিশ্চিত
বর্ণনা।
[3:59]
নিঃসন্দেহে
আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে
আদমেরই মতো। তাকে
মাটি দিয়ে তৈরী
করেছিলেন এবং তারপর
তাকে বলেছিলেন
হয়ে যাও, সঙ্গে
সঙ্গে হয়ে গেলেন।
[3:60]
যা
তোমার পালকর্তা
বলেন তাই হচ্ছে
যথার্থ সত্য। কাজেই
তোমরা সংশয়বাদী
হয়ো না।
[3:61]
অতঃপর
তোমার নিকট সত্য
সংবাদ এসে যাওয়ার
পর যদি এই কাহিনী
সম্পর্কে তোমার
সাথে কেউ বিবাদ
করে, তাহলে বল-এসো, আমরা
ডেকে নেই আমাদের
পুত্রদের এবং তোমাদের
পুত্রদের এবং আমাদের
স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের
এবং আমাদের নিজেদের
ও তোমাদের নিজেদের
আর তারপর চল আমরা
সবাই মিলে প্রার্থনা
করি এবং তাদের
প্রতি আল্লাহর
অভিসম্পাত করি
যারা মিথ্যাবাদী।
[3:62]
নিঃসন্দেহে
এটাই হলো সত্য ভাষণ। আর এক
আল্লাহ ছাড়া অন্য
কোন ইলাহ নেই। আর আল্লাহ; তিনিই
হলেন পরাক্রমশালী মহাপ্রাজ্ঞ।
[3:63]
তারপর
যদি তারা গ্রহণ
না করে, তাহলে প্রমাদ
সৃষ্টিকারীদেরকে
আল্লাহ জানেন।
[3:64]
বলুনঃ
হে আহলে-কিতাবগণ!
একটি বিষয়ের
দিকে আস-যা আমাদের
মধ্যে ও তোমাদের
মধ্যে সমান-যে, আমরা
আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত
করব না, তাঁর সাথে
কোন শরীক সাব্যস্ত
করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া
কাউকে পালনকর্তা
বানাব না। তারপর
যদি তারা স্বীকার
না করে, তাহলে বলে দাও যে, সাক্ষী
থাক আমরা তো অনুগত।
[3:65]
হে
আহলে কিতাবগণ!
কেন তোমরা ইব্রাহীমের বিষয়ে
বাদানুবাদ কর? অথচ তওরাত
ও ইঞ্জিল তাঁর
পরেই নাযিল হয়েছে। তোমরা কি বুঝ না?
[3:66]
শোন!
ইতিপূর্বে তোমরা
যে বিষয়ে
কিছু জানতে, তাই নিয়ে
বিবাদ করতে। এখন আবার
যে বিষয়ে তোমরা
কিছুই জান না, সে বিষয়ে
কেন বিবাদ করছ?
[3:67]
ইব্রাহীম
ইহুদী ছিলেন না
এবং নাসারাও
ছিলেন না, কিক্তু
তিনি ছিলেন হানীফ অর্থাৎ, সব মিথ্যা
ধর্মের প্রতি বিমুখ এবং আত্নসমর্পণকারী, এবং তিনি
মুশরিক ছিলেন না।
[3:68]
মানুষদের
মধ্যে যারা ইব্রাহীমের অনুসরণ
করেছিল, তারা, আর এই
নবী এবং যারা এ
নবীর প্রতি ঈমান
এনেছে তারা
ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতম-আর
আল্লাহ হচ্ছেন
মুমিনদের বন্ধু।
[3:69]
কোন
কোন আহলে-কিতাবের
আকাঙ্খা, যাতে
তোমাদের গোমরাহ
করতে পারে, কিন্তু
তারা নিজেদের ছাড়া
অন্য কাউকেই গোমরাহ করে না। অথচ তারা
বুঝতে পারে না।
[3:70]
হে
আহলে-কিতাবগণ, কেন তোমরা আল্লাহর কালামকে
অস্বীকার কর, অথচ তোমরাই
তাঁর প্রবক্তা?
[3:71]
হে
আহলে কিতাবগণ, কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার
সাথে সংমিশ্রণ
করছ এবং সত্যকে
গোপন করছ, অথচ তোমরা
তা জান।
[3:72]
আর
আহলে-কিতাবগণের
একদল বললো, মুসলমানগণের
উপর যা কিছু অবর্তীণ
হয়েছে তাকে দিনের
প্রথম ভাগে মেনে
নাও, আর দিনের
শেষ ভাগে অস্বীকার
ক র, হয়তো তারা
মুখ ফিরিয়ে নিতে
পারে।
[3:73]
যারা
তোমাদের ধর্মমতে
চলবে, তাদের ছাড়া
আর কাউকে বিশ্বাস
করবে না। বলে দিন
নিঃসন্দেহে হেদায়েত
সেটাই, যে হেদায়েত
আল্লাহ করেন। আর এসব
কিছু এ জন্যে যে, তোমরা
যা লাভ করেছিলে
তা অন্য কেউ কেন
প্রাপ্ত হবে, কিংবা
তোমাদের পালনকর্তার
সামনে তোমাদের
উপর তারা কেন প্রবল হয়ে যাবে! বলে
দিন, মর্যাদা আল্লাহরই
হাতে; তিনি যাকে
ইচ্ছা দান করেন
এবং আল্লাহ
প্রাচুর্যময়
ও সর্বজ্ঞ।
[3:74]
তিনি
যাকে ইচ্ছা নিজের
বিশেষ অনুগ্রহ
দান করেন। আর আল্লাহ
মহা অনুগ্রহশীল।
[3:75]
কোন
কোন আহলে কিতাব
এমনও রয়েছে, তোমরা
যদি তাদের কাছে
বহু ধন-সম্পদ আমানত
রাখ, তাহলেও তা
তোমাদের যথারীতি
পরিশোধ করবে। আর তোদের
মধ্যে অনেক এমনও
রয়েছে যারা একটি
দীনার গচ্ছিত রাখলেও ফেরত দেবে
না-যে পর্যন্ত
না তুমি তার মাথার
উপর দাঁড়াতে পারবে। এটা এজন্য যে, তারা
বলে রেখেছে যে, উম্মীদের
অধিকার বিনষ্ট
করাতে আমাদের কোন
পাপ নেই। আর তারা
আল্লাহ সম্পর্কে
জেনে শুনেই মিথ্যা
বলে।
[3:76]
যে
লোক নিজ প্রতিজ্ঞা
পূর্ন করবে
এং পরহেজগার হবে, অবশ্যই
আল্লাহ পরহেজগারদেরকে
ভালবাসেন।
[3:77]
যারা
আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং
প্রতিজ্ঞা সামান্য
মুল্যে বিক্রয়
করে, আখেরাতে তাদের
কেন অংশ নেই। আর তাদের সাথে
কেয়ামতের দিন
আল্লাহ কথা বলবেন
না। তাদের প্রতি
(করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে
পরিশুদ্ধও করবেন
না। বস্তুতঃ তাদের
জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
[3:78]
আর
তাদের মধ্যে একদল
রয়েছে, যারা বিকৃত
উচ্চারণে মুখ বাঁকিয়ে
কিতাব পাঠ করে, যাতে
তোমরা মনে কর যে, তার কিতাব থেকেই পাঠ
করছে। অথচ তারা
যা আবৃত্তি করছে
তা আদৌ কিতাব নয়। এবং তারা
বলে যে, এসব কথা
আল্লাহর তরফ থেকে
আগত। অথচ এসব
আল্লাহর তরফ থেকে
প্রেরিত নয়। তারা বলে যে, এটি আল্লাহর
কথা অথচ এসব আল্লাহর
কথা নয়। আর তারা
জেনে শুনে আল্লাহরই প্রতি মিথ্যারোপ
করে।
[3:79]
কোন
মানুষকে আল্লাহ
কিতাব, হেকমত ও নবুওয়ত
দান করার পর সে
বলবে যে, তোমরা
আল্লাহকে পরিহার
করে আমার বান্দা
হয়ে যাও-এটা সম্ভব
নয়। বরং তারা
বলবে, তোমরা আল্লাহওয়ালা
হয়ে যাও, যেমন, তোমরা
কিতাব শিখাতে এবং
যেমন তোমরা নিজেরা
ও পড়তে।
[3:80]
তাছাড়া
তোমাদেরকে একথা
বলাও সম্ভব
নয় যে, তোমরা ফেরেশতা
ও নবীগনকে নিজেদের
পালনকর্তা সাব্যস্ত
করে নাও। তোমাদের মুসলমান
হবার পর তারা কি
তোমাদেরকে কুফরী
শেখাবে?
[3:81]
আর
আল্লাহ যখন নবীগনের
কাছ থেকে অস্বীকার
গ্রহন করলেন যে, আমি যা
কিছু তোমাদের দান
করেছি কিতাব ও
জ্ঞান এবং অতঃপর তোমাদের
নিকট কোন রসূল
আসেন তোমাদের কিতাবকে
সত্য বলে দেয়ার
জন্য, তখন সে রসূলের প্রতি
ঈমান আনবে এবং
তার সাহায্য করবে। তিনি
বললেন, তোমার কি অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে
আমার ওয়াদা গ্রহণ
করে নিয়েছ? তারা
বললো, আমরা অঙ্গীকার করেছি। তিনি বললেন, তাহলে
এবার সাক্ষী থাক। আর আমিও
তোমাদের সাথে সাক্ষী
রইলাম।
[3:82]
অতঃপর
যে লোক এই ওয়াদা
থেকে ফিরে দাঁড়াবে, সেই হবে
নাফরমান।
[3:83]
তারা
কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য
দ্বীন তালাশ করছে? আসমান
ও যমীনে যা কিছু
রয়েছে স্বেচ্ছায়
হোক বা অনিচ্ছায়
হোক, তাঁরই অনুগত
হবে এবং তাঁর দিকেই
ফিরে যাবে।
[3:84]
বলুন, আমরা
ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা কিছু
অবতীর্ণ হয়েছে
আমাদের উপর, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাঁদের সন্তানবর্গের
উপর আর যা কিছু
পেয়েছেন মূসা
ও ঈসা এবং অন্যান্য
নবী রসূলগণ
তাঁদের পালনকর্তার
পক্ষ থেকে। আমরা
তাঁদের কারো মধ্যে
পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁরই
অনুগত।
[3:85]
যে
লোক ইসলাম ছাড়া
অন্য কোন ধর্ম
তালাশ করে, কস্মিণকালেও
তা গ্রহণ করা হবে
না এবং আখেরাতে
সে ক্ষতি গ্রস্ত।
[3:86]
কেমন
করে আল্লাহ এমন
জাতিকে হেদায়েত
দান করবেন, যারা
ঈমান আনার পর এবং
রসূলকে সত্য বলে
সাক্ষ্য দেয়ার
পর এবং তাদের
নিকট প্রমাণ এসে
যাওয়ার পর কাফের
হয়েছে। আর আল্লাহ
জালেম সম্প্রদায়কে
হেদায়েত দান করেন
না।
[3:87]
এমন
লোকের শাস্তি হলো
আল্লাহ, ফেরেশতাগণ
এবং মানুষ সকলেরই
অভিসম্পাত।
[3:88]
সর্বক্ষণই
তারা তাতে থাকবে। তাদের আযাব হালকাও
হবে না এবং তার
এত অবকাশও পাবে
না।
[3:89]
কিন্তু
যারা অতঃপর তওবা
করে নেবে এবং
সৎকাজ করবে
তারা ব্যতীত, নিশ্চয়
আল্লাহ ক্ষমাশীল
ও পরম দয়ালূ।
[3:90]
যারা
ঈমান আনার পর অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকৃতিতে
বৃদ্ধি ঘটেছে, কস্মিণকালেও
তাদের তওবা কবুল
করা হবে না। আর তারা হলো গোমরাহ।
[3:91]
যদি
সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও তার পরিবর্তে
দেয়া হয়, তবুও
যারা কাফের হয়েছে
এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে
তাদের তওবা কবুল
করা হবে না। তাদের
জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব! পক্ষান্তরে
তাদের কোনই সাহায্যকারী
নেই।
[3:92]
কস্মিণকালেও
কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের
প্রিয় বস্তু থেকে
তোমরা ব্যয় না
কর। আর তোমরা যদি
কিছু ব্যয়
করবে আল্লাহ তা
জানেন।