Part 7
[5:82]
আপনি
সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক
শত্রু ইহুদী ও
মুশরেকদেরকে পাবেন
এবং আপনি সবার
চাইতে মুসলমানদের
সাথে বন্ধুত্বে
অধিক নিকটবর্তী
তাদেরকে পাবেন, যারা
নিজেদেরকে খ্রীষ্টান বলে। এর কারণ
এই যে, খ্রীষ্টানদের
মধ্যে আলেম রয়েছে, দরবেশ
রয়েছে এবং তারা
অহঙ্কার করে না।
[5:83]
আর
তারা রসূলের প্রতি
যা অবতীর্ণ
হয়েছে, তা যখন শুনে, তখন আপনি
তাদের চোখ অশ্রু
সজল দেখতে পাবেন; এ কারণে যে, তারা
সত্যকে চিনে নিয়েছে। তারা
বলেঃ হে আমাদের
প্রতি পালক, আমরা মুসলমান হয়ে
গেলাম। অতএব, আমাদেরকেও
মান্যকারীদের
তালিকাভুক্ত করে
নিন।
[5:84]
আমাদের
কি ওযর থাকতে পারে
যে, আমরা আল্লাহর
প্রতি এবং যে সত্য
আমাদের কাছে এসেছে, তৎপ্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করব না এবং এ আশা করবো
না যে, আমদের প্রতিপালক
আমাদেরকে সৎ লোকদের সাথে
প্রবিষ্ট করবেন?
[5:85]
অতঃপর
তাদেরকে আল্লাহ
এ উক্তির প্রতিদান
স্বরূপ এমন উদ্যান
দিবেন যার তলদেশে
নির্ঝরিণীসমূহ
প্রবাহিত হবে। তারা তন্মধ্যে চিরকাল
অবস্থান করবে। এটাই
সৎকর্মশীলদের
প্রতিদান।
[5:86]
যারা
কাফের হয়েছে এবং
আমার নিদর্শনাবলীকে
মিথ্যা বলেছে, তারাই
দোযখী।
[5:87]
হে
মুমিনগণ, তোমরা
ঐসব সুস্বাদু
বস্তু হারাম করো
না, যেগুলো আল্লাহ
তোমাদের জন্য হালাল
করেছেন এবং সীমা অতিক্রম করো না। নিশ্চয়
আল্লাহ সীমা অতিক্রমকারীদেরকে
পছন্দ করেন না।
[5:88]
আল্লাহ
তা’য়ালা যেসব
বস্তু তোমাদেরকে
দিয়েছেন, তন্মধ্য
থেকে হালাল ও পবিত্র
বস্তু খাও এবং
আল্লাহকে ভয় কর, যার প্রতি
তোমরা বিশ্বাসী।
[5:89]
আল্লাহ
তোমাদেরকে পাকড়াও
করেন না তোমাদের
অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু
পাকড়াও করেন ঐ
শপথের জন্যে যা
তোমরা মজবুত
করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা
এই যে, দশজন দরিদ্রকে
খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য
যা তোমরা স্বীয়
পরিবারকে দিয়ে
থাক। অথবা, তাদেরকে
বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন
ক্রীতদাস কিংবা
দাসী মুক্ত করে
দিবে। যে ব্যক্তি
সামর্থ্য রাখে না, সে তিন দিন
রোযা রাখবে। এটা কাফফরা
তোমাদের শপথের, যখন শপথ
করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ
রক্ষা কর এমনিভাবে
আল্লাহ তোমাদের
জন্য স্বীয় নির্দেশ
বর্ণনা করেন, যাতে
তোমরা কৃতজ্ঞতা
স্বীকার কর।
[5:90]
হে
মুমিনগণ, এই যে
মদ, জুয়া, প্রতিমা
এবং ভাগ্য-নির্ধারক
শরসমূহ এসব শয়তানের
অপবিত্র কার্য
বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো
থেকে বেঁচে থাক-যাতে
তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত
হও।
[5:91]
শয়তান
তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের
পরস্পরের মাঝে
শুত্রুতা ও বিদ্বেষ
সঞ্চারিত করে দিতে
এবং আল্লাহর
স্মরণ ও নামায
থেকে তোমাদেরকে
বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা
এখন ও কি নিবৃত্ত হবে?
[5:92]
তোমরা আল্লাহর অনুগত
হও, রসূলের অনুগত
হও এবং আত্মরক্ষা
কর। কিন্তু যদি
তোমরা বিমুখ হও, তবে জেনে রাখ, আমার
রসূলের দায়িত্ব
প্রকাশ্য প্রচার
বৈধ নয়।
[5:93]
যারা
বিশ্বাস স্থাপন
করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারা
পূর্বে যা ভক্ষণ
করেছে, সে জন্য তাদের
কোন গোনাহ নেই
যখন ভবিষ্যতের
জন্যে সংযত হয়েছে, বিশ্বাস
স্থাপন করেছে এবং
সৎকর্ম সম্পাদন
করেছে। এরপর সংযত থাকে
এবং বিশ্বাস স্থাপন
করে। এরপর সংযত
থাকে এবং সৎকর্ম করে। আল্লাহ সৎকর্মীদেরকে
ভালবাসেন।
[5:94]
হে
মুমিনগণ, আল্লাহ
তোমাদেরকে এমন কিছু শিকারের
মাধ্যমে পরীক্ষা
করবেন, যে শিকার পর্যন্ত
তোমাদের হাত ও
বর্শা সহজেই
পৌছতে পারবে-যাতে
আল্লাহ বুঝতে পারেন
যে, কে তাকে অদৃশ্যভাবে
ভয়করে। অতএব, যে ব্যক্তি
এরপর সীমা অতিক্রম
করবে, তার জন্য যন্ত্রনাদায়ক
শাস্তি রয়েছে।
[5:95]
মুমিনগণ, তোমরা
এহরাম অবস্থায় শিকার বধ করো না। তোমাদের
মধ্যে যে জেনেশুনে
শিকার বধ করবে, তার উপর
বিনিময় ওয়াজেব
হবে, যা সমান হবে
ঐ জন্তুর, যাকে
সে বধ করেছে। দু’জন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এর ফয়সালা
করবে-বিনিময়ের
জন্তুটি উৎসর্গ হিসেবে
কাবায় পৌছাতে
হবে। অথবা
তার উপর কাফফারা
ওয়াজেব-কয়েকজন
দরিদ্রকে খাওয়ানো
অথবা তার সমপরিমাণ
রোযা রাখতে
যাতে সে স্বীয়
কৃতকর্মের প্রতিফল
আস্বাদন করে। যা হয়ে
গেছে, তা আল্লাহ মাফ করেছেন। যে পুনরায়
এ কান্ড করবে, আল্লাহ
তার কাছ থেকে প্রতিশোধ
নিবেন। আল্লাহ পরাক্রান্ত, প্রতিশোধ
গ্রহণে সক্ষম।
[5:96]
তোমাদের
জন্য সমুদ্রের
শিকার ও সুমুদ্রের
খাদ্য হালাল করা
হয়েছে তোমাদের
উপকারার্থে এবং
তোমাদের এহরামকারীদের জন্যে হারাম করা
হয়েছে স্থল শিকার
যতক্ষণ এহরাম অবস্থায়
থাক। আল্লাহকে
ভয় কর, যার কাছে তোমরা
একত্রিত হবে।
[5:97]
আল্লাহ
সম্মানিত গৃহ কাবাকে মানুষের স্থীতিশীলতার
কারণ করেছেন এবং
সম্মানিত মাসসমূকে, হারাম
কোরবানীর জন্তুকে ও যাদের
গলায় আবরণ রয়েছে। এর কারণ
এই যে, যাতে তোমরা
জেনে নাও যে, আল্লাহ
নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের
সব কিছু জানেন
এবং আল্লাহ সর্ব
বিষয়ে মহাজ্ঞানী।
[5:98]
জেনে
নাও, নিশ্চয় আল্লাহ
কঠোর শাস্তি
দাতা ও নিশ্চয়
আল্লাহ ক্ষমাশীল-দয়ালূ।
[5:99]
রসূলের
দায়িত্ব শুধু
পৌছিয়ে দেওয়া। আল্লাহ
জানেন, যা কিছু তোমরা
প্রকাশ্যে কর এবং
যা কিছু গোপন
কর।
[5:100]
বলে
দিনঃ অপবিত্র ও
পবিত্র সমান
নয়, যদিও অপবিত্রের
প্রাচুর্য তোমাকে
বিস্মিত করে। অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে
ভয় কর-যাতে তোমরা
মুক্তি পাও।
[5:101]
হে
মুমিণগন, এমন কথাবার্তা জিজ্ঞেস করো না, যা তোমাদের
কাছে পরিব্যক্ত
হলে তোমাদের খারাপ
লাগবে। যদি কোরআন অবতরণকালে তোমরা
এসব বিষয় জিজ্ঞেস
কর, তবে তা তোমাদের
জন্যে প্রকাশ করা
হবে। অতীত
বিষয় আল্লাহ ক্ষমা
করেছেন আল্লাহ
ক্ষমাশীল, সহনশীল।
[5:102]
এরূপ
কথা বার্তা তোমাদের পুর্বে এক সম্প্রদায়
জিজ্ঞেস করেছিল। এর পর
তারা এসব বিষয়ে
অবিশ্বাসী হয়ে গেল।
[5:103]
আল্লাহ
‘বহিরা’ ‘সায়েবা’ ওসীলা’ এবং ‘হামী’ কে শরীয়তসিদ্ধ
করেননি। কিন্তু
যারা কাফের, তারা
আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ
আরোপ করে। তাদের
অধিকাংশেরই বিবেক
বুদ্ধি নেই।
[5:104]
যখন
তাদেরকে বলা হয়
যে, আল্লাহর নাযিলকৃত
বিধান এবং রসূলের
দিকে এস, তখন তারা
বলে, আমাদের জন্যে
তাই যথেষ্ট, যার উপর
আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে
পেয়েছি। যদি তাদের
বাপ দাদারা কোন জ্ঞান না রাখে
এবং হেদায়েত প্রাপ্ত
না হয় তবুও কি
তারা তাই করবে?
[5:105]
হে
মুমিনগণ, তোমরা
নিজেদের চিন্তা
কর। তোমরা যখন
সৎপথে রয়েছ, তখন কেউ
পথভ্রান্ত হলে
তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নাই। তোমাদের
সবাইকে আল্লাহর
কাছে ফিরে যেতে
হবে। তখন তিনি
তোমাদেরকে বলে দেবেন, যা কিছু তোমরা
করতে।
[5:106]
হে, মুমিনগণ, তোমাদের
মধ্যে যখন কারও
মৃত্যু উপস্থিত
হয়, তখন ওছিয়ত
করার সময় তোমাদের
মধ্য থেকে ধর্মপরায়ন দুজনকে
সাক্ষী রেখো। তোমরা
সফরে থাকলে এবং
সে অবস্থায় তোমাদের মৃত্যু উপস্থিত
হলে তোমরা তোমাদের
ছাড়াও দু ব্যক্তিকে
সাক্ষী রেখো। যদি তোমাদের সন্দেহ হয়, তবে উভয়কে
নামাযের পর থাকতে
বলবে। অতঃপর
উভয়েই আল্লাহর
নামে কসম খাবে
যে, আমরা এ কসমের
বিনিময়ে কোন উপকার
গ্রহণ করতে চাই
না, যদিও কোন আত্নীয়ও হয় এবং আল্লাহর
সাক্ষ্য আমরা গোপন
করব না। এমতাবস্থায়
কঠোর গোনাহগার
হব।
[5:107]
অতঃপর
যদি জানা যায়
যে, উভয় ওসি কোন
গোনাহে জড়িত রয়েছে, তবে যাদের
বিরুদ্ধে গোনাহ
হয়েছিল, তাদের
মধ্য থেকে মৃতু
ব্যক্তির নিকটতম
দু’ব্যক্তি তাদের
স্থলাভিষিক্ত
হবে। অতঃপর
আল্লাহর নামে
কসম খাবে যে, অবশ্যই
আমাদের সাক্ষ্য
তাদের সাক্ষ্যর
চাইতে অধিক সত্য
এবং আমরা সীমা
অতিক্রম করিনি। এমতাবস্থায়
আমরা অবশ্যই অত্যাচারী
হব।
[5:108]
এটি
এ বিষয়ের নিকটতম
উপায় যে, তারা
ঘটনাকে সঠিকভাবে
প্রকাশ করবে অথবা
আশঙ্কা করবে যে, তাদের
কাছ থেকে কসম নেয়ার পর আবার
কসম চাওয়া হবে। আল্লাহকে
ভয় কর এবং শুন, আল্লাহ
দুরাচারীদেরকে পথ-প্রদর্শন করবেন
না।
[5:109]
যেদিন
আল্লাহ সব পয়গম্বরকে একত্রিত করবেন, অতঃপর
বলবেন তোমরা কি
উত্তর পেয়েছিলে? তাঁরা
বলবেনঃ আমরা অবগত নই, আপনিই অদৃশ্য
বিষয়ে মহাজ্ঞানী।
[5:110]
যখন
আল্লাহ বলবেনঃ
হে ঈসা ইবনে মরিয়ম, তোমার
প্রতি ও তোমার
মাতার প্রতি আমার
অনুগ্রহ স্মরণ
কর, যখন আমি তোমাকে পবিত্র আত্মার
দ্বারা সাহায্য
করেছি। তুমি
মানুষের সাথে কথা
বলতে কোলে থাকতেও এবং পরিণত বয়সেও
এবং যখন আমি তোমাকে
গ্রন্থ, প্রগাঢ় জ্ঞান, তওরাত
ও ইঞ্জিল শিক্ষা
দিয়েছি এবং যখন
তুমি কাদামাটি
দিয়ে পাখীর প্রতিকৃতির
মত প্রতিকৃতি নির্মাণ করতে
আমার আদেশে, অতঃপর
তুমি তাতে ফুঁ
দিতে; ফলে তা আমার
আদেশে পাখী হয়ে যেত এবং তুমি
আমার আদেশে জন্মান্ধ
ও কুষ্টরোগীকে
নিরাময় করে দিতে
এবং যখন আমি বনী-ইসরাঈলকে
তোমা থেকে নিবৃত্ত
রেখেছিলাম, যখন তুমি
তাদের কাছে প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে, অতঃপর
তাদের মধ্যে যারা
কাফের ছিল, তারা
বললঃ এটা প্রকাশ্য
জাদু ছাড়া
কিছুই নয়।
[5:111]
আর
যখন আমি হাওয়ারীদের
মনে জাগ্রত
করলাম যে, আমার
প্রতি এবং আমার
রসূলের প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন কর, তখন তারা বলতে লাগল, আমরা
বিশ্বাস স্থাপন
করলাম এবং আপনি
সাক্ষী থাকুন যে, আমরা অনুগত্যশীল।
[5:112]
যখন
হাওয়ারীরা বললঃ
হে মরিয়ম তনয় ঈসা, আপনার
পালনকর্তা কি এরূপ
করতে পারেন যে, আমাদের
জন্যে আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা
অবতরণ করে দেবেন? তিনি
বললেনঃ যদি তোমরা
ঈমানদার হও, তবে আল্লাহকে ভয়
কর।
[5:113]
তারা
বললঃ আমরা তা থেকে
খেতে চাই; আমাদের
অন্তর পরিতৃপ্ত
হবে; আমরা জেনে
নেব যে, আপনি সত্য
বলেছেন এবং আমরা সাক্ষ্যদাতা
হয়ে যাব।
[5:114]
ঈসা
ইবনে মরিয়ম বললেনঃ
হে আল্লাহ
আমাদের পালনকর্তা
আমাদের প্রতি আকাশ
থেকে খাদ্যভর্তি
খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্যে
অর্থাৎ, আমাদের
প্রথম ও পরবর্তী
সবার জন্যে আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে
একটি নিদর্শন হবে। আপনি
আমাদের রুযী দিন। আপনিই
শ্রেষ্ট রুযীদাতা।
[5:115]
আল্লাহ
বললেনঃ নিশ্চয়
আমি সে খাঞ্চা
তোমাদের প্রতি
অবতরণ করব। অতঃপর
যে ব্যাক্তি এর
পরেও অকৃতজ্ঞ হবে, আমি তাকে এমন শাস্তি
দেব, যে শাস্তি
বিশ্বজগতের অপর
কাউকে দেব না।
[5:116]
যখন
আল্লাহ বললেনঃ
হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি
লোকদেরকে বলে দিয়েছিলে
যে, আল্লাহকে ছেড়ে
আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্য সাব্যস্ত
কর? ঈসা বলবেন; আপনি
পবিত্র! আমার জন্যে
শোভা পায় না যে, আমি এমন কথা বলি, যা বলার
কোন অধিকার আমার
নেই। যদি আমি
বলে থাকি, তবে আপনি
অবশ্যই পরিজ্ঞাত; আপনি
তো আমার মনের কথা
ও জানেন এবং আমি
জানি না যা আপনার
মনে আছে। নিশ্চয় আপনিই
অদৃশ্য বিষয়ে
জ্ঞাত।
[5:117]
আমি
তো তাদেরকে কিছুই
বলিনি, শুধু সে কথাই
বলেছি যা আপনি
বলতে আদেশ করেছিলেন
যে, তোমরা আল্লাহর
দাসত্ব অবলম্বন
কর যিনি আমার ও
তোমাদের পালনকর্তা
আমি তাদের সম্পর্কে
অবগত ছিলাম যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম। অতঃপর
যখন আপনি আমাকে
লোকান্তরিত করলেন, তখন থেকে
আপনিই তাদের
সম্পর্কে অবগত
রয়েছেন। আপনি
সর্ববিষয়ে পূর্ণ
পরিজ্ঞাত।
[5:118]
যদি
আপনি তাদেরকে শাস্তি
দেন, তবে তারা আপনার
দাস এবং যদি আপনি
তাদেরকে ক্ষমা
করেন, তবে আপনিই
পরাক্রান্ত, মহাবিজ্ঞ।
[5:119]
আল্লাহ
বললেনঃ আজকের দিনে সত্যবাদীদের
সত্যবাদিতা তাদের
উপকারে আসবে। তাদের
জন্যে উদ্যান রয়েছে, যার তলদেশে নির্ঝরিনী
প্রবাহিত হবে; তারা
তাতেই চিরকাল থাকবে। আল্লাহ
তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। এটিই
মহান সফলতা।
[5:120]
নভোমন্ডল, ভূমন্ডল
এবং এতদুভয়ে
অবস্থিত সবকিছুর
আধিপত্য আল্লাহরই। তিনি
সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
@
6 Al-Anaam
শুরু
করছি আল্লাহর
নামে যিনি পরম
করুণাময়, অতি
দয়ালু।
[6:1]
সর্ববিধ
প্রশংসা আল্লাহরই
জন্য যিনি নভোমন্ডল
ও ভূমন্ডল সৃষ্টি
করেছেন এবং অন্ধকার
ও আলোর উদ্ভব করেছেন। তথাপি কাফেররা স্বীয়
পালনকর্তার সাথে
অন্যান্যকে সমতুল্য
স্থির করে।
[6:2]
তিনিই
তোমাদেরকে মাটির
দ্বারা সৃষ্টি
করেছেন, অতঃপর নির্দিষ্টকাল
নির্ধারণ করেছেন। আর অপর
নির্দিষ্টকাল আল্লাহর কাছে
আছে। তথাপি
তোমরা সন্দেহ কর।
[6:3]
তিনিই
আল্লাহ নভোমন্ডলে
এবং ভূমন্ডলে। তিনি
তোমাদের গোপন ও
প্রকাশ্য বিষয়
জানেন এবং তোমরা
যা কর তাও অবগত।
[6:4]
তাদের
কাছে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী
থেকে কোন নিদর্শন
আসেনি; যার প্রতি
তারা বিমুখ হয়
না।
[6:5]
অতএব, অবশ্য
তারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে
যখন তা তাদের কাছে
এসেছে। বস্তুতঃ
অচিরেই তাদের কাছে
ঐ বিষয়ের সংবাদ আসবে, যার সাথে
তারা উপহাস করত।
[6:6]
তারা
কি দেখেনি যে, আমি তাদের পুর্বে কত সম্প্রদায়কে
ধ্বংস করে দিয়েছি, যাদেরকে
আমি পৃথিবীতে এমন
প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকে
দেইনি। আমি আকাশকে
তাদের উপর অনবরত
বৃষ্টি বর্ষণ করতে দিয়েছি এবং তাদের
তলদেশে নদী সৃষ্টি
করে দিয়েছি, অতঃপর
আমি তাদেরকে তাদের পাপের কারণে ধ্বংস
করে দিয়েছি এবং
তাদের পরে অন্য
সম্প্রদায় সৃষ্টি
করেছি।
[6:7]
যদি
আমি কাগজে লিখিত
কোন বিষয় তাদের প্রতি নাযিল
করতাম, অতঃপর তারা
তা সহস্তে স্পর্শ
করত, তবুও অবিশ্বাসীরা একথাই বলত যে, এটা প্রকাশ্য
জাদু বৈ কিছু নয়।
[6:8]
তারা
আরও বলে যে, তাঁর
কাছে কোন ফেরেশতা
কেন প্রেরণ করা
হল না ? যদি আমি কোন
ফেরেশতা প্রেরণ
করতাম, তবে গোটা ব্যাপারটাই শেষ
হয়ে যেত। অতঃপর
তাদেরকে সামান্যও
অবকাশ দেওয়া হতনা।
[6:9]
যদি
আমি কোন ফেরেশতাকে
রসূল করে পাঠাতাম, তবে সে
মানুষের আকারেই
হত। এতেও ঐ সন্দেহই
করত, যা এখন করছে।
[6:10]
নিশ্চয়ই
আপনার পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণের
সাথেও উপহাস করা
হয়েছে। অতঃপর
যারা তাঁদের সাথে
উপহাস করেছিল, তাদেরকে
ঐ শাস্তি বেষ্টন
করে নিল, যা নিয়ে
তারা উপহাস করত।
[6:11]
বলে
দিনঃ তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতপর
দেখ, মিথ্যারোপ
কারীদের পরিণাম
কি হয়েছে?
[6:12]
জিজ্ঞেস
করুন, নভোমন্ডল
ও ভুমন্ডলে
যা আছে, তার মালিক
কে? বলে দিনঃআল্লাহ। তিনি
অনুকম্পা প্রদর্শনকে
নিজ দায়িত্বে
লিপিবদ্ধ করে নিয়েছেন। তিনি
অবশ্যই তোমাদেরকে
কেয়ামতের দিন
একত্রিত করবেন। এর আগমনে
কোন সন্দেহ নেই। যারা
নিজেদের কে ক্ষতিগ্রস্ত
করেছে, তারাই বিশ্বাস স্থাপন করে না।
[6:13]
যা
কিছু রাত ও দিনে
স্থিতি লাভ করে, তাঁরই। তিনিই
শ্রোতা, মহাজ্ঞানী।
[6:14]
আপনি
বলে দিনঃ আমি কি
আল্লাহ ব্যতীত-যিনি
নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের
স্রষ্টা এবং যিনি
সবাইকে আহার্য
দানকরেন ও তাঁকে কেউ আহার্য
দান করে না অপরকে
সাহায্যকারী স্থির
করব? আপনি বলে দিনঃ
আমি আদিষ্ট
হয়েছি যে, সর্বাগ্রে
আমিই আজ্ঞাবহ হব। আপনি
কদাচ অংশীবাদীদের
অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
[6:15]
আপনি
বলুন, আমি আমার প্রতিপালকের
অবাধ্য হতে ভয়
পাই কেননা, আমি একটি
মহাদিবসের শাস্তিকে
ভয় করি।
[6:16]
যার
কাছ থেকে ঐদিন
এ শাস্তি সরিয়ে
নেওয়া হবে, তার প্রতি
আল্লাহর অনুকম্পা
হবে। এটাই বিরাট
সাফল্য।
[6:17]
আর
যদি আল্লাহ তোমাকে
কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি
ব্যতীত তা অপসারণকারী
কেউ নেই। পক্ষান্তরে
যদি তোমার মঙ্গল
করেন, তবে তিনি সবকিছুর
উপর ক্ষমতাবান।
[6:18]
তিনিই
পরাক্রান্ত স্বীয় বান্দাদের উপর। তিনিই
জ্ঞানময়, সর্বজ্ঞ।
[6:19]
আপনি
জিজ্ঞেস করুনঃ
সর্ববৃহৎ সাক্ষ্যদাতা
কে ? বলে দিনঃ আল্লাহ
আমার ও তোমাদের
মধ্যে সাক্ষী। আমার
প্রতি এ কোরআন
অবর্তীর্ণ হয়েছে-যাতে
আমি তোমাদেরকে
এবং যাদের কাছে
এ কোরআন পৌঁছে
সবাইকে ভীতি
প্রদর্শন করি। তোমরা
কি সাক্ষ্য দাও
যে, আল্লাহর সাথে
অন্যান্য উপাস্যও রয়েছে ? আপনি
বলে দিনঃ আমি এরূপ
সাক্ষ্য দেব না। বলে দিনঃ
তিনিই একমাত্র উপাস্য; আমি অবশ্যই
তোমাদের শিরক থেকে
মুক্ত।
[6:20]
যাদেরকে
আমি কিতাব দান
করেছি, তারা তাকে
চিনে, যেমন তাদের
সন্তানদেরকে চিনে। যারা
নিজেদেরকে ক্ষতির
মধ্যে ফেলেছে, তারা
বিশ্বাস স্থাপন
করবে না।
[6:21]
আর
যে, আল্লাহর প্রতি
অপবাদ আরোপ
করে অথবা তাঁর
নিদর্শনাবলীকে
মিথ্যা বলে, তার চাইতে
বড় জালেম কে? নিশ্চয় জালেমরা সফলকাম
হবে না।
[6:22]
আর
যেদিন আমি তাদের
সবাইকে একত্রিত
করব, অতঃপর যারা
শিরক করেছিল, তাদের
বলবঃ যাদেরকে তোমরা
অংশীদার বলে ধারণা করতে, তারা
কোথায়?
[6:23]
অতঃপর
তাদের কোন অপরিচ্ছন্নতা থাকবে না; তবে এটুকুই
যে তারা বলবে আমাদের
প্রতিপালক আল্লাহর
কসম, আমরা মুশরিক ছিলাম না।
[6:24]
দেখতো, কিভাবে
মিথ্যা বলছে নিজেদের বিপক্ষে
? এবং যেসব
বিষয় তারা আপনার
প্রতি মিছামিছি
রচনা করত, তা সবই উধাও হয়ে গেছে।
[6:25]
তাদের
কেউ কেউ আপনার
দিকে কান লাগিয়ে
থাকে। আমি তাদের
অন্তরের উপর আবরণ
রেখে দিয়েছি যাতে
একে না বুঝে এবং তাদের কানে বোঝা
ভরে দিয়েছি। যদি তারা
সব নিদর্শন অবলোকন
করে তবুও সেগুলো বিশ্বাস করবে
না। এমনকি, তারা
যখন আপনার কাছে
ঝগড়া করতে আসে, তখন কাফেররা
বলেঃ এটি পুর্ববর্তীদের
কিচ্ছাকাহিনী
বৈ তো নয়।
[6:26]
তারা
এ থেকে বাধা প্রদান
করে এবং এ
থেকে পলায়ন করে। তারা
নিজেদেরকে ধ্বংস
করেছে, কিন্তু বুঝছে
না।
[6:27]
আর
আপনি যদি দেখেন, যখন তাদেরকে দোযখের
উপর দাঁড় করানো
হবে! তারা বলবেঃ
কতই না ভাল হত, যদি আমরা
পুনঃ প্রেরিত
হতাম; তা হলে আমরা
স্বীয় পালনকর্তার
নিদর্শনসমূহে
মিথ্যারোপ করতাম
না এবং আমরা
বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে যেতাম।
[6:28]
এবং
তারা ইতি পূর্বে
যা গোপন করত, তা তাদের
সামনে প্রকাশ হয়ে
পড়েছে। যদি তারা
পুনঃ প্রেরিত হয়, তবুও
তাই করবে, যা তাদেরকে
নিষেধ করা হয়েছিল। নিশ্চয়
তারা মিথ্যাবাদী।
[6:29]
তারা
বলেঃ আমাদের এ
পার্থিব জীবনই
জীবন। আমাদেরকে
পুনরায় জীবিত
হতে হবে না।
[6:30]
আর
যদি আপনি দেখেন; যখন তাদেরকে প্রতিপালকের
সামনে দাঁড় করানো
হবে। তিনি বলবেনঃ
এটা কি বাস্তব
সত্য নয়? তারা
বলবেঃ হঁ্যা আমাদের
প্রতিপালকের কসম। তিনি
বলবেনঃ অতএব, স্বীয়
কুফরের কারণে
শাস্তি আস্বাদন
কর।
[6:31]
নিশ্চয়
তারা ক্ষতিগ্রস্ত, যারা
আল্লাহর সাক্ষাৎকে মিথ্যা মনে
করেছে। এমনকি, যখন কিয়ামত
তাদের কাছে অকস্মাৎ
এসে যাবে, তারা
বলবেঃ হায় আফসোস, এর ব্যাপারে
আমরা কতই না ক্রটি
করেছি। তার স্বীয় বোঝা
স্বীয় পৃষ্ঠে
বহন করবে। শুনে
রাখ, তারা যে বোঝা
বহন করবে, তা নিকৃষ্টতর বোঝা।
[6:32]
পার্থিব
জীবন ক্রীড়া ও
কৌতুক ব্যতীত
কিছুই নয়। পরকালের
আবাস পরহেযগারদের
জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা
কি বুঝ না ?
[6:33]
আমার
জানা আছে যে, তাদের
উক্তি আপনাকে
দুঃখিত করে। অতএব, তারা
আপনাকে মিথ্যা
প্রতিপন্ন করে
না, বরং জালেমরা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে
অস্বীকার করে।
[6:34]
আপনার
পূর্ববর্তী অনেক পয়গম্বরকে মিথ্যা
বলা হয়েছে। তাঁরা
এতে ছবর করেছেন। তাদের
কাছে আমার সাহায্য পৌঁছে পর্যন্ত
তারা নির্যাতিত
হয়েছেন। আল্লাহর
বানী কেউ পরিবর্তন
করতে পারে না। আপনার কাছে পয়গম্বরদের
কিছু কাহিনী পৌঁছেছে।
[6:35]
আর
যদি তাদের বিমুখতা
আপনার পক্ষে
কষ্টকর হয়, তবে আপনি
যদি ভূতলে কোন
সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে
কোন সিড়ি অনুসন্ধান করতে
সমর্থ হন, অতঃপর
তাদের কাছে কোন
একটি মোজেযা আনতে
পারেন, তবে নিয়ে
আসুন। আল্লাহ
ইচ্ছা করলে সবাইকে
সরল পথে সমবেত
করতে পারতেন। অতএব, আপনি নির্বোধদের অন্তর্ভুক্ত
হবেন না।
[6:36]
তারাই
মানে, যারা শ্রবণ
করে। আল্লাহ
মৃতদেরকে জীবিত
করে উত্থিত করবেন। অতঃপর
তারা তাঁরই দিকে
প্রত্যাবর্তিত হবে।
[6:37]
তারা
বলেঃ তার প্রতি
তার পালনকর্তার
পক্ষ থেকে কোন
নিদর্শন অবতীর্ণ
হয়নি কেন? বলে দিনঃ
আল্লাহ নিদর্শন অবতরণ করতে পূর্ন
সক্ষম; কিন্তু তাদের
অধিকাংশই জানে
না।
[6:38]
আর
যত প্রকার প্রাণী
পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে
এবং যত প্রকার
পাখী দু’ ডানাযোগে
উড়ে বেড়ায় তারা
সবাই তোমাদের
মতই একেকটি শ্রেণী। আমি কোন
কিছু লিখতে ছাড়িনি। অতঃপর
সবাই স্বীয় প্রতিপালকের
কাছে সমবেত হবে।
[6:39]
যারা
আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে, তারা
অন্ধকারের মধ্যে
মূক ও বধির। আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট
করেন এবং যাকে
ইচ্ছা সরল পথে
পরিচালিত করেন।
[6:40]
বলুন, বলতো
দেখি, যদি তোমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি
পতিত হয় কিংবা
তোমাদের কাছে কিয়ামত
এসে যায়, তবে তোমরা
কি আল্লাহ
ব্যতীত অন্যকে
ডাকবে যদি তোমরা
সত্যবাদী হও।
[6:41]
বরং
তোমরা তো তাঁকেই
ডাকবে। অতঃপর যে বিপদের
জন্যে তাঁকে ডাকবে, তিনি
ইচ্ছা করলে তা
দুরও করে দেন। যাদেরকে অংশীদার করছ, তখন তাদেরকে
ভুলে যাবে।
[6:42]
আর
আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতিও
পয়গম্বর প্রেরণ
করেছিলাম। অতঃপর
আমি তাদেরকে অভাব-অনটন
ও রোগ-ব্যধি
দ্বারা পাকড়াও
করেছিলাম যাতে
তারা কাকুতি মিনতি
করে।
[6:43]
অতঃপর
তাদের কাছে যখন
আমার আযাব আসল, তখন কেন
কাকুতি-মিনতি করল
না ? বস্তুতঃ তাদের
অন্তর কঠোর হয়ে
গেল এবং শয়তান
তাদের কাছে সুশোভিত
করে দেখাল, যে কাজ
তারা করছিল।
[6:44]
অতঃপর
তারা যখন ঐ উপদেশ
ভুলে গেল, যা তাদেরকে
দেয়া হয়েছিল, তখন আমি
তাদের সামনে সব
কিছুর দ্বার উম্মুক্ত করে দিলাম। এমনকি, যখন তাদেরকে
প্রদত্ত বিষয়াদির
জন্যে তারা খুব
গর্বিত হয়ে পড়ল, তখন আমি অকস্মাৎ তাদেরকে পাকড়াও
করলাম। তখন তারা
নিরাশ হয়ে গেল।
[6:45]
অতঃপর
জালেমদের মূল শিকড় কর্তিত হল। সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহরই
জন্যে, যিনি বিশ্বজগতের
পালনকর্তা।
[6:46]
আপনি
বলুনঃ বল তো দেখি, যদি আল্লাহ তোমাদের
কান ও চোখ নিয়ে
যান এবং তোমাদের
অন্তরে মোহর এঁটে
দেন, তবে এবং তোমাদের আল্লাহ
ব্যতীত এমন উপাস্য
কে আছে, যে তোমাদেরকে
এগুলো এনে দেবে? দেখ, আমি কিভাবে
ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে
নিদর্শনাবলী বর্ণনা
করি। তথাপি
তারা বিমুখ হচ্ছে।
[6:47]
বলে
দিনঃ দেখতো, যদি আল্লাহর শাস্তি, আকস্মিক
কিংবা প্রকাশ্যে
তোমাদের উপর আসে, তবে জালেম, সম্প্রদায়
ব্যতীত কে ধ্বংস
হবে?
[6:48]
আমি
পয়গম্বরদেরকে
প্রেরণ করি না, কিন্তু সুসংবাদাতা
ও ভীতি প্রদর্শকরূপে
অতঃপর যে বিশ্বাস
স্থাপন করে এবং সংশোধিত হয়, তাদের
কোন শঙ্কা নেই
এবং তারা দুঃখিত
হবে না।
[6:49]
যারা
আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে, তাদেরকে
তাদের নাফরমানীর
কারণে আযাব স্পর্শ
করবে।
[6:50]
আপনি
বলুনঃ আমি তোমাদেরকে
বলি না যে, আমার
কাছে আল্লাহর ভান্ডার
রয়েছে। তাছাড়া
আমি অদৃশ্য বিষয়
অবগতও নই। আমি এমন বলি না
যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো
শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ
করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে
দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান
কি সমান হতে পারে? তোমরা
কি চিন্তা কর না
?
[6:51]
আপনি
এ কোরআন দ্বারা
তাদেরকে ভয়-প্রদর্শন
করুন, যারা আশঙ্কা
করে স্বীয় পালনকর্তার
কাছে এমতাবস্থায়
একত্রিত হওয়ার
যে, তাদের কোন
সাহায্যকারী ও
সুপারিশকারী হবে
না-যাতে তারা গোনাহ
থেকে বেঁচে
থাকে।
[6:52]
আর
তাদেরকে বিতাড়িত
করবেন না, যারা
সকাল-বিকাল স্বীয়
পালকর্তার এবাদত
করে, তাঁর সন্তুষ্টি
কামনা করে। তাদের হিসাব বিন্দুমাত্রও
আপনার দায়িত্বে
নয় এবং আপনার
হিসাব বিন্দুমাত্রও
তাদের দায়িত্বে
নয় যে, আপনি তাদেরকে
বিতাড়িত করবেন। নতুবা
আপনি অবিচারকারীদের
অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবেন।
[6:53]
আর
এভাবেই আমি কিছু
লোককে কিছু লোক দ্বারা পরীক্ষায়
ফেলেছি যাতে তারা
বলে যে, এদেরকেই কি
আমাদের সবার মধ্য থেকে আল্লাহ স্বীয়
অনুগ্রহ দান করেছেন? আল্লাহ
কি কৃতজ্ঞদের সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত নন
?
[6:54]
আর
যখন তারা আপনার
কাছে আসবে যারা আমার নিদর্শনসমূহে
বিশ্বাস করে, তখন আপনি
বলে দিনঃ তোমাদের
উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের
পালনকর্তা রহমত
করা নিজ দায়িত্বে
লিখে নিয়েছেন
যে, তোমাদের মধ্যে
যে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ
কোন মন্দ কাজ করে, অনন্তর
এরপরে তওবা করে
নেয় এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি
অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়।
[6:55]
আর
এমনিভাবে আমি নিদর্শনসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা
করি-যাতে অপরাধীদের
পথ সুস্পষ্ট হয়ে
উঠে।
[6:56]
আপনি
বলে দিনঃ আমাকে
তাদের এবাদত
করতে নিষেধ করা
হয়েছে, তোমরা আল্লাহকে
ছেড়ে যাদের এবাদত
কর। আপনি বলে দিনঃ আমি তোমাদের
খুশীমত চলবো না। কেননা, তাহলে
আমি পথভ্রান্ত
হয়ে যাব এবং সুপথগামীদের
অন্তর্ভুক্ত হব
না।
[6:57]
আপনি
বলে দিনঃ আমার
কাছে প্রতিপালকের
পক্ষ থেকে একটি
প্রমাণ আছে এবং
তোমরা তার প্রতি
মিথ্যারোপ করেছ। তোমরা যে বস্তু
শীঘ্র দাবী করছ, তা আমার
কাছে নেই। আল্লাহ
ছাড়া কারো নির্দেশ চলে না। তিনি
সত্য বর্ণনা করেন
এবং তিনিই শ্রেষ্ঠতম
মীমাংসাকারী।
[6:58]
আপনি
বলে দিনঃ যদি আমার
কাছে তা থাকত, যা তোমরা
শীঘ্র দাবী করছ, তবে আমার
ও তোমাদের পারস্পরিক
বিবাদ কবেই চুকে যেত। আল্লাহ
জালেমদের সম্পর্কে
যথেষ্ট পরিমাণে
অবহিত।
[6:59]
তাঁর
কাছেই অদৃশ্য জগতের
চাবি রয়েছে। এ গুলো
তিনি ব্যতীত কেউ
জানে না। স্থলে
ও জলে যা আছে, তিনিই
জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু
তিনি তা জানেন। কোন শস্য
কণা মৃত্তিকার
অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন
আর্দ্র ও শুস্ক
দ্রব্য পতিত হয়
না; কিন্তু তা
সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।
[6:60]
তিনিই
রাত্রি বেলায়
তোমাদেরকে করায়ত্ত করে
নেন এবং যা কিছু
তোমরা দিনের বেলায়
কর, তা জানেন। অতঃপর
তোমাদেরকে দিবসে সম্মুখিত
করেন-যাতে নির্দিষ্ট
ওয়াদা পূর্ণ হয়।
[6:61]
অনন্তর
তাঁরই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর
তোমাদেরকে বলে
দিবেন, যা কিছু তোমরা
করছিলে। তিনিই
স্বীয় বান্দাদের
উপর প্রবল। তিনি
প্রেরণ করেন তোমাদের
কাছে রক্ষণাবেক্ষণকারী। এমন কি, যখন তোমাদের
কারও মৃত্যু আসে
তখন আমার প্রেরিত
ফেরেশতারা তার
আত্মা হস্তগত করে নেয়।
[6:62]
অতঃপর
সবাইকে সত্যিকার
প্রভু আল্লাহর
কাছে পৌঁছানো হবে। শুনে
রাখ, ফয়সালা তাঁরই
এবং তিনি দ্রুত
হিসাব গ্রহণ করবেন।
[6:63]
আপনি
বলুনঃ কে তোমাদেরকে
স্থল ও জলের
অন্ধকার থেকে উদ্ধার
করেন, যখন তোমরা
তাঁকে বিনীতভাবে
ও গোপনে আহবান
কর যে, যদি আপনি
আমাদের কে এ থেকে
উদ্ধার করে নেন, তবে আমরা
অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে যাব।
[6:64]
আপনি
বলে দিনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তা
থেকে মুক্তি দেন
এব সব দুঃখ-বিপদ
থেকে। তথাপি
তোমরা শেরক কর।
[6:65]
আপনি
বলুনঃ তিনিই শক্তিমান
যে, তোমাদের উপর
কোন শাস্তি উপর
দিক থেকে অথবা
তোমাদের পদতল থেকে
প্রেরণ করবেন অথবা তোমাদেরকে দলে-উপদলে
বিভক্ত করে সবাইকে
মুখোমুখী করে দিবেন
এবং এককে অন্যের
উপর আক্রমণের
স্বাদ আস্বাদন
করাবেন। দেখ, আমি কেমন
ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে
নিদর্শনাবলী বর্ণনা করি যাতে
তারা বুঝে নেয়।
[6:66]
আপনার
সম্প্রদায় একে
মিথ্যা বলছে, অথচ তা
সত্য। আপনি বলে
দিনঃ আমি তোমাদের
উপর নিয়োজিত নই।
[6:67]
প্রত্যেক
খবরের একটি সময় নির্দিষ্ট রয়েছে
এবং অচিরেই তোমরা
তা জেনে নিবে।
[6:68]
যখন
আপনি তাদেরকে দেখেন, যারা আমার আয়াত সমূহে
ছিদ্রান্বেষণ
করে, তখন তাদের
কাছ থেকে সরে যান
যে পর্যন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত
না হয়, যদি শয়তান
আপনাকে ভূলিয়ে
দেয় তবে স্মরণ
হওয়ার পর জালেমদের
সাথে উপবেশন করবেন
না।
[6:69]
এদের
যখন বিচার করা
হবে তখন পরহেযগারদের
উপর এর কোন প্রভাব
পড়বে না; কিন্তু
তাদের দায়িত্ব
উপদেশ দান করা যাতে ওরা ভীত হয়।
[6:70]
তাদেরকে
পরিত্যাগ করুন, যারা নিজেদের ধর্মকে
ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে
গ্রহণ করেছে এবং
পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে
রেখেছে। কোরআন
দ্বারা তাদেরকে
উপদেশ দিন, যাতে
কেউ স্বীয় কর্মে এমন ভাবে গ্রেফতার
না হয়ে যায় যে, আল্লাহ
ব্যতীত তার কোন
সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী
নেই এবং যদি তারা
জগতের বিনিময়ও
প্রদান কবে, তবু তাদের
কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে
না। একাই স্বীয়
কর্মে জড়িত হয়ে
পড়েছে। তাদের
জন্যে উত্তপ্ত পানি এবং যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি রয়েছে-কুফরের
কারণে।
[6:71]
আপনি
বলে দিনঃ আমরা
কি আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুকে
আহবান করব, যে আমাদের
উপকার করতে পারে
না এবং ক্ষতিও
করতে পারে না
এবং আমরা কি পশ্চাৎপদে ফিরে যাব, এরপর
যে, আল্লাহ আমাদেরকে
পথ প্রদর্শন করেছেন? ঐ ব্যক্তির
মত, যাকে শয়তানরা
বনভুমিতে বিপথগামী
করে দিয়েছে-সে
উদভ্রান্ত হয়ে ঘোরাফেরা
করছে। তার সহচররা
তাকে পথের দিকে
ডেকে বলছেঃ আস, আমাদের
কাছে। আপনি
বলে দিনঃ নিশ্চয়
আল্লাহর পথই সুপথ। আমরা
আদিষ্ট হয়েছি
যাতে স্বীয় পালনকর্তা আজ্ঞাবহ
হয়ে যাই।
[6:72]
এবং
তা এই যে, নামায
কায়েম কর এবং তাঁকে ভয়
কর। তাঁর সামনেই
তোমরা একত্রিত
হবে।
[6:73]
তিনিই
সঠিকভাবে নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। যেদিন
তিনি বলবেনঃ হয়ে
যা, অতঃপর হয়ে
যাবে। তাঁর কথা
সত্য। যেদিন
শিঙ্গায় ফুৎকার করা হবে, সেদিন
তাঁরই আধিপত্য
হবে। তিনি অদৃশ্য
বিষয়ে এবং প্রত্যক্ষ
বিষয়ে জ্ঞাত। তিনিই
প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
[6:74]
স্মরণ
কর, যখন ইব্রাহীম
পিতা আযরকে
বললেনঃ তুমি কি
প্রতিমা সমূহকে
উপাস্য মনে কর? আমি দেখতে
পাচ্ছি যে, তুমি ও তোমার সম্প্রদায়
প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট।
[6:75]
আমি
এরূপ ভাবেই ইব্রাহীমকে নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের
অত্যাশ্চর্য বস্তুসমূহ
দেখাতে লাগলাম-যাতে
সে দৃঢ় বিশ্বাসী
হয়ে যায়।
[6:76]
অনন্তর
যখন রজনীর অন্ধকার
তার উপর সমাচ্ছন্ন
হল, তখন সে একটি
তারকা দেখতে পেল, বললঃ
ইহা আমার প্রতিপালক। অতঃপর যখন তা অস্তমিত
হল তখন বললঃ আমি
অস্তগামীদেরকে
ভালবাসি না।
[6:77]
অতঃপর
যখন চন্দ্রকে ঝলমল
করতে দেখল, বললঃ
এটি আমার প্রতিপালক। অনন্তর
যখন তা অদৃশ্য
হয়ে গেল, তখন বলল
যদি আমার প্রতিপালক
আমাকে পথ-প্রদর্শন
না করেন, তবে অবশ্যই
আমি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের
অন্তর্ভুক্ত হয়ে
যাব।
[6:78]
অতঃপর
যখন সূর্যকে চকচক
করতে দেখল, বললঃ
এটি আমার পালনকর্তা, এটি বৃহত্তর। অতপর
যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল
হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা
যেসব বিষয়কে শরীক
কর, আমি ওসব থেকে
মুক্ত।
[6:79]
আমি
এক মুখী হয়ে স্বীয়
আনন ঐ সত্তার
দিকে করেছি, যিনি
নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল
সৃষ্টি করেছেন
এবং আমি মুশরেক
নই।
[6:80]
তাঁর
সাথে তার সম্প্রদায় বিতর্ক করল। সে বললঃ
তোমরা কি আমার
সাথে আল্লাহর একত্ববাদ
সম্পর্কে বিতর্ক
করছ; অথচ তিনি আমাকে
পথ প্রদর্শন করেছেন। তোমরা
যাদেরকে শরীক কর, আমি তাদেরকে
ভয় করি না তবে
আমার পালকর্তাই
যদি কোন কষ্ট দিতে
চান। আমার পালনকর্তাই
প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান
দ্বারা বেষ্টন
করে আছেন। তোমরা
কি চিন্তা কর না
?
[6:81]
যাদেরকে
তোমরা আল্লাহর
সাথে শরীক করে
রেখেছ, তাদেরকে কিরূপে
ভয় কর, অথচ তোমরা
ভয় কর না যে, তোমরা
আল্লাহর সাথে
এমন বস্তুকে শরীক
করছ, যাদের সম্পর্কে
আল্লাহ তোমাদের
প্রতি কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। অতএব, উভয়
সম্প্রদায়ের
মধ্যে শাস্তি লাভের
অধিক যোগ্য কে, যদি তোমরা জ্ঞানী
হয়ে থাক।
[6:82]
যারা
ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর
সাথে মিশ্রিত করে
না, তাদের জন্যেই
শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।
[6:83]
এটি
ছিল আমার যুক্তি, যা আমি ইব্রাহীমকে তাঁর
সম্প্র?দায়ের বিপক্ষে
প্রদান করেছিলাম। আমি যাকে
ইচ্ছা মর্যাদায়
সমুন্নত করি। আপনার
পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী
[6:84]
আমি
তাঁকে দান করেছি
ইসহাক এবং এয়াকুব। প্রত্যেককেই
আমি পথ প্রদর্শন
করেছি এবং পূর্বে
আমি নূহকে পথ প্রদর্শন করেছি-তাঁর সন্তানদের
মধ্যে দাউদ, সোলায়মান, আইউব, ইউসুফ, মূসা
ও হারুনকে। এমনিভাবে আমি
সৎকর্মীদেরকে
প্রতিদান দিয়ে
থাকি।
[6:85]
আর
ও যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা এবং
ইলিয়াসকে। তারা
সবাই পুণ্যবানদের
অন্তর্ভুক্ত ছিল।
[6:86]
এবং
ইসরাঈল, ইয়াসা, ইউনূস, লূতকে
প্রত্যেককেই আমি
সারা বিশ্বের উপর
গৌরবাম্বিত করেছি।
[6:87]
আর
ও তাদের কিছু সংখ্যক পিতৃপুরুষ, সন্তান-সন্ততি
ও ভ্রাতাদেরকে; আমি তাদেরকে
মনোনীত করেছি এবং
সরল পথ প্রদর্শন
করেছি।
[6:88]
এটি
আল্লাহর হেদায়েত। স্বীয় বান্দাদের মধ্যে
যাকে ইচ্ছা, এপথে
চালান। যদি তারা
শেরেকী করত, তবে তাদের
কাজ কর্ম তাদের
জন্যে ব্যর্থ হয়ে
যেত।
[6:89]
তাদেরকেই
আমি গ্রন্থ, শরীয়ত
ও নবুয়ত দান
করেছি। অতএব, যদি এরা
আপনার নবুয়ত অস্বীকার
করে, তবে এর জন্যে
এমন সম্প্রদায়
নির্দিষ্ট করেছি, যারা
এতে অবিশ্বাসী
হবে না।
[6:90]
এরা
এমন ছিল, যাদেরকে
আল্লাহ পথ প্রদর্শন
করেছিলেন। অতএব, আপনিও
তাদের পথ অনুসরণ
করুন। আপনি বলে
দিনঃ আমি তোমাদের
কাছে এর জন্যে
কোন পারিশ্রমিক
চাই না। এটি সারা
বিশ্বের জন্যে
একটি উপদেশমাত্র।
[6:91]
তারা
আল্লাহকে যথার্থ মূল্যায়ন করতে
পারেনি, যখন তারা বললঃ
আল্লাহ কোন মানুষের
প্রতি কোন কিছু অবতীর্ণ করেননি। আপনি
জিজ্ঞেস করুনঃ
ঐ গ্রন্থ কে নাযিল
করেছে, যা মূসা নিয়ে এসেছিল ? যা জ্যোতিবিশেষ
এবং মানব মন্ডলীর
জন্যে হোদায়েতস্বরূপ, যা তোমরা বিক্ষিপ্তপত্রে
রেখে লোকদের জন্যে
প্রকাশ করছ এবং
বহুলাংশকে গোপন
করছ। তোমাদেরকে এমন অনেক বিষয়
শিক্ষা দেয়া হয়েছে, যা তোমরা
এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা
জানতো না। আপনি
বলে দিনঃ আল্লাহ
নাযিল করেছেন। অতঃপর
তাদেরকে তাদের
ক্রীড়ামূলক বৃত্তিতে ব্যাপৃত
থাকতে দিন।
[6:92]
এ
কোরআন এমন গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ন করেছি; বরকতময়, পূর্ববর্তী
গ্রন্থের সত্যতা
প্রমাণকারী এবং
যাতে আপনি মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে
ভয় প্রদর্শন করেন। যারা
পরকালে বিশ্বাস
স্থাপন করে তারা এর প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন
করে এবং তার স্বীয়
নামায সংরক্ষণ
করে।
[6:93]
ঐ
ব্যক্তির চাইতে
বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর
প্রতি মিথ্যা আরোপ
করে অথবা বলেঃ
আমার প্রতি ওহী
অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ তার
প্রতি কোন ওহী
আসেনি এবং যে দাবী
করে যে, আমিও নাযিল
করে দেখাচ্ছি
যেমন আল্লাহ নাযিল
করেছেন। যদি আপনি
দেখেন যখন জালেমরা
মৃত্যু যন্ত্রণায়
থাকে এবং ফেরেশতারা
স্বীয় হস্ত প্রসারিত
করে বলে, বের কর
স্বীয় আত্মা!
অদ্য তোমাদেরকে
অবমাননাকর শাস্তি
প্রদান করা হবে। কারণ, তোমরা
আল্লাহর উপর অসত্য
বলতে এবং তাঁর
আয়াত সমূহ থেকে
অহংকার করতে।
[6:94]
তোমরা
আমার কাছে নিঃসঙ্গ
হয়ে এসেছ, আমি প্রথমবার
তোমাদেরকে সৃষ্টি
করেছিলাম। আমি তোদেরকে
যা দিয়েছিলাম, তা পশ্চাতেই রেখে
এসেছ। আমি তো
তোমাদের সাথে তোমাদের
সুপারিশকারীদের
কে দেখছি না। যাদের সম্পর্কে
তোমাদের দাবী ছিল
যে, তারা তোমাদের
ব্যাপারে অংশীদার। বাস্তুবিকই তোমাদের পরস্পরের
সম্পর্ক ছিন্ন
হয়ে গেছে এবং
তোমাদের দাবী উধাও
হয়ে গেছে।
[6:95]
নিশ্চয়
আল্লাহই বীজ ও
আঁটি থেকে অঙ্কুর
সৃষ্টিকারী; তিনি
জীবিতকে মৃত থেকে
বের করেন ও মৃতকে
জীবিত থেকে বের করেন। তিনি আল্লাহ
অতঃপর তোমরা কোথায়
বিভ্রান্ত হচ্ছ?
[6:96]
তিনি
প্রভাত রশ্মির
উন্মেষক। তিনি রাত্রিকে
আরামদায়ক করেছেন
এবং সূর্য ও চন্দ্রকে
হিসেবের জন্য রেখেছেন। এটি পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানীর
নির্ধারণ।
[6:97]
তিনিই
তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ
সৃজন করেছেন যাতে
তোমরা স্থল ও জলের
অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত
হও। নিশ্চয়
যারা জ্ঞানী তাদের
জন্যে আমি নির্দেশনাবলী
বিস্তারিত বর্ণনা
করে দিয়েছি।
[6:98]
তিনিই
তোমাদের কে এক
ব্যক্তি থেকে
সৃষ্টি করেছেন। অনন্তর
একটি হচ্ছে তোমাদের
স্থায়ী ঠিকানা
ও একটি হচ্ছে গচ্ছিত স্থল। নিশ্চয়
আমি প্রমাণাদি
বিস্তারিত ভাবে
বর্ণনা করে দিয়েছি
তাদের জন্যে, যারা
চিন্তা করে।
[6:99]
তিনিই
আকাশ থেকে পানি
বর্ষণ করেছেন
অতঃপর আমি এর দ্বারা
সর্বপ্রকার উদ্ভিদ
উৎপন্ন করেছি, অতঃপর
আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত
করেছি, যা থেকে যুগ্ম
বীজ উৎপন্ন
করি। খেজুরের
কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে
থাকে এবং আঙ্গুরের
বাগান, যয়তুন, আনার
পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন
গাছের ফলের প্রতি
লক্ষ্য কর যখন
সেুগুলো ফলন্ত
হয় এবং তার পরিপক্কতার
প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয়
এ গুলোতে নিদর্শন
রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে।
[6:100]
তারা
জিনদেরকে আল্লাহর
অংশীদার স্থির
করে; অথচ তাদেরকে
তিনিই সৃস্টি করেছেন। তারা
অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহর
জন্যে পুত্র
ও কন্যা সাব্যস্ত
করে নিয়েছে। তিনি
পবিত্র ও সমুন্নত, তাদের
বর্ননা থেকে।
[6:101]
তিনি
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের
আদি স্রষ্টা। কিরূপে
আল্লাহর পুত্র
হতে পারে, অথচ তাঁর
কোন সঙ্গী নেই
? তিনি
যাবতীয় কিছু
সৃষ্টি করেছেন। তিনি
সব বস্তু সম্পর্কে
সুবিজ্ঞ।
[6:102]
তিনিই
আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি
ব্যতীত কোন উপাস্য
নেই। তিনিই
সব কিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তিনি
প্রত্যেক বস্তুর
কার্যনির্বাহী।
[6:103]
দৃষ্টিসমূহ
তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি
দৃষ্টিসমূহকে
পেতে পারেন। তিনি
অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ।
[6:104]
তোমাদের
কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ
থেকে নিদর্শনাবলী
এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ
করবে, সে নিজেরই উপকার করবে এবং
যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই
ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের
পর্যবেক্ষক নই।
[6:105]
এমনি
ভাবে আমি নিদর্শনাবলী ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে
বর্ণনা করি যাতে
তারা না বলে যে, আপনি
তো পড়ে নিয়েছেন
এবং যাতে আমি
একে সুধীবৃন্দের
জন্যে খুব পরিব্যক্ত
করে দেই।
[6:106]
আপনি
পথ অনুসরণ করুন, যার আদেশ পালনকর্তার পক্ষ
থেকে আসে। তিনি
ব্যতীত কোন উপাস্য
নেই এবং মুশরিকদের
তরফ থেকে মুখ ফিরিয়ে
নিন।
[6:107]
যদি
আল্লাহ চাইতেন
তবে তারা শেরক
করত না। আমি আপনাকে
তাদের সংরক্ষক
করিনি এবং আপনি
তাদের কার্যনির্বাহী
নন।
[6:108]
তোমরা
তাদেরকে মন্দ বলো
না, যাদের তারা
আরাধনা করে আল্লাহকে
ছেড়ে। তাহলে
তারা ধৃষ্টতা করে
অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ
বলবে। এমনিভাবে
আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের
দৃষ্টিতে তাদের
কাজ কর্ম সুশোভিত
করে দিয়েছি। অতঃপর
স্বীয় পালনকর্তার
কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি
তাদেরকে বলে দেবেন
যা কিছু তারা করত।
[6:109]
তারা
জোর দিয়ে আল্লাহর
কসম খায় যে, যদি তাদের
কাছে কোন নিদর্শন
আসে, তবে অবশ্যই
তারা বিশ্বাস স্থাপন
করবে। আপনি
বলে দিনঃ নিদর্শনাবলী
তো আল্লাহর কাছেই
আছে। হে মুসলমানগণ, তোমাদেরকে
কে বলল যে, যখন তাদের
কাছে নিদর্শনাবলী
আসবে, তখন তারা বিশ্বাস
স্থাপন করবেই ?
[6:110]
আমি
ঘুরিয়ে দিব তাদের
অন্তর ও দৃষ্টিকে, যেমন-তারা
এর প্রতি প্রথমবার
বিশ্বাস স্থাপন
করেনি এবং আমি
তাদেরকে তাদের
অবাধ্যতায় উদভ্রান্ত
ছেড়ে দিব।