Part 9
[7:88]
তার
সম্প্রদায়ের
দাম্ভিক সর্দাররা
বললঃ হে শোয়ায়েব, আমরা
অবশ্যই তোমাকে
এবং তোমার সাথে
বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে
শহর থেকে বের করে
দেব অথবা তোমরা
আমাদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করবে। শোয়ায়েব
বললঃ আমরা অপছন্দ
করলেও কি ?
[7:89]
আমরা
আল্লাহর প্রতি
মিথ্যা অপবাদকারী
হয়ে যাব যদি আমরা
তোমাদের ধর্মে
প্রত্যাবর্তন
করি, অথচ তিনি আমাদেরকে এ থেকে মুক্তি
দিয়েছেন। আমাদের
কাজ নয় এ ধর্মে
প্রত্যাবর্তন
করা, কিন্তু আমাদের প্রতি
পালক আল্লাহ যদি
চান। আমাদের
প্রতিপালক প্রত্যেক
বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা
বেষ্টন করে আছেন। আল্লাহর
প্রতিই আমরা ভরসা
করেছি। হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের
ও আমাদের সম্প্রদায়ের
মধ্যে ফয়সালা
করে ছিল যথার্থ
ফয়সালা। আপনিই শ্রেষ্টতম
ফসলা ফয়সালাকারী।
[7:90]
তার
সম্প্রদায়ের
কাফের সর্দাররা
বললঃ যদি তোমরা
শোয়ায়েবের অনুসরণ
কর, তবে নিশ্চিতই
ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
[7:91]
অনন্তর
পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে তারা
সকাল বেলায় গৃহ
মধ্যে উপুড় হয়ে
পড়ে রইল।
[7:92]
শোয়ায়েবের
প্রতি মিথ্যারোপকারীরা
যেন কোন দিন সেখানে
বসবাসই করেনি। যারা
শোয়ায়েবের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল, তারাই
ক্ষতিগ্রস্থ হল।
[7:93]
অনন্তর
সে তাদের কাছ থেকে প্রস্থান করল
এবং বললঃ হে আমার
সম্প্রদায়, আমি তোমাদেরকে
প্রতিপালকের পয়গাম পৌছে দিয়েছি
এবং তোমাদের হিত
কামনা করেছি। এখন আমি
কাফেরদের জন্যে
কেন দুঃখ করব।
[7:94]
আর
আমি কোন জনপদে
কোন নবী পাঠাইনি, তবে (এমতাবস্থায়)
যে পাকড়াও করেছি
সে জনপদের অধিবাসীদিগকে
কষ্ট ও কঠোরতার
মধ্যে, যাতে তারা
শিথিল হয়ে পড়ে।
[7:95]
অতঃপর
অকল্যাণের স্থলে
তা কল্যাণে
বদলে দিয়েছে। এমনকি
তারা অনেক বেড়ে
গিয়েছি এবং বলতে
শুরু করেছে, আমাদের
বাপ-দাদাদের উপরও
এমন আনন্দ-বেদনা
এসেছে। অতঃপর
আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি এমন আকস্মিকভাবে
যে তারা টেরও পায়নি।
[7:96]
আর
যদি সে জনপদের
অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী
অবলম্বন করত, তবে আমি
তাদের প্রতি আসমানী
ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ
উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু
তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন
করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও
করেছি তাদের কৃতকর্মের
বদলাতে।
[7:97]
এখনও
কি এই জনপদের অধিবাসীরা
এ ব্যাপারে
নিশ্চিন্ত যে, আমার
আযাব তাদের উপর
রাতের বেলায় এসে
পড়বে অথচ তখন তারা থাকবে ঘুমে
অচেতন।
[7:98]
আর
এই জনপদের অধিবাসীরা
কি নিশ্চিন্ত
হয়ে পড়েছে যে, তাদের
উপর আমার আযাব
দিনের বেলাতে এসে
পড়বে অথচ তারা তখন থাকবে খেলা-ধুলায়
মত্ত।
[7:99]
তারা
কি আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত
হয়ে গেছে? বস্তুতঃ
আল্লাহর পাকড়াও
থেকে তারাই নিশ্চিন্ত হতে পারে, যাদের
ধ্বংস ঘনিয়ে আসে।
[7:100]
তাদের
নিকট কি একথা প্রকাশিত হয়নি, যারা উত্তারাধিকার
লাভ করেছে। সেখানকার
লোকদের ধ্বংসপ্রাপ্ত
হবার পর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, , তবে তাদেরকে
তাদের পাপের দরুন
পাকড়াও করে ফেলতাম। বস্তুতঃ আমি মোহর এঁটে
দিয়েছি তাদের
অন্তরসমূহের উপর। কাজেই
এরা শুনতে পায়
না।
[7:101]
এগুলো
হল সে সব জনপদ যার
কিছু বিবরণ
আমি আপনাকে অবহিত
করছি। আর নিশ্চিতই
ওদের কাছে পৌছেছিলেন
রসূল নিদর্শন সহকারে। অতঃপর
কস্মিনকালও এরা
ঈমান আনবার ছিল
না, তারপরে যা
তার ইতিপূর্বে মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন
করেছে। এভাবেই
আল্লাহ কাফেরদের
অন্তরে মোহর এঁটে
দেন।
[7:102]
আর
তাদের অধিকাংশ
লোককেই আমি প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নকারীরূপে
পাইনি; বরং তাদের
অধিকাংশকে পেয়েছি
হুকুম অমান্যকারী।
[7:103]
অতঃপর
আমি তাদের পরে
মূসাকে পাঠিয়েছি
নিদর্শনাবলী দিয়ে
ফেরাউন ও তার সভাসদদের
নিকট। বস্তুতঃ
ওরা তাঁর মোকাবেলায়
কুফরী করেছে। সুতরাং
চেয়ে দেখ, কি পরিণতি
হয়েছে অনাচারীদের।
[7:104]
আর
মূসা বললেন, হে ফেরাউন, আমি বিশ্ব-পালনকর্তার
পক্ষ থেকে আগত
রসূল।
[7:105]
আল্লাহর
পক্ষ থেকে যে সত্য এসেছে, তার ব্যতিক্রম
কিছু না বলার ব্যাপারে
আমি সুদৃঢ়। আমি তোমাদের পরওয়ারদেগারের
নিদর্শন নিয়ে
এসেছি। সুতরাং
তুমি বনী ইসরাঈলদেরকে
আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।
[7:106]
সে
বলল, যদি তুমি কোন
নিদর্শন নিয়ে
এসে থাক, তাহলে
তা উপস্থিত কর
যদি তুমি সত্যবাদী
হয়ে থাক।
[7:107]
তখন
তিনি নিক্ষেপ করলেন
নিজের লাঠিখানা
এবং তাৎক্ষণাৎ
তা জলজ্যান্ত এক
অজগরে রূপান্তরিত
হয়ে গেল।
[7:108]
আর
বের করলেন নিজের
হাত এবং তা সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের
চোখে ধবধবে উজ্জ্বল
দেখাতে লাগল।
[7:109]
ফেরাউনের
সাঙ্গ-পাঙ্গরা
বলতে লাগল, নিশ্চয়
লোকটি বিজ্ঞ-যাদুকর।
[7:110]
সে
তোমাদিগকে তোমাদের
দেশ থেকে বের করে
দিতে চায়। এ ব্যাপারে
তোমাদের কি মত?
[7:111]
তারা
বলল, আপনি তাকে
ও তার ভাইকে
অবকাশ দান করুন
এবং শহরে বন্দরে
লোক পাঠিয়ে দিন
লোকদের সমবেত করার
জন্য।
[7:112]
যাতে
তারা পরাকাষ্ঠাসম্পন্ন বিজ্ঞ যাদুকরদের
এনে সমবেত করে।
[7:113]
বস্তুতঃ
যাদুকররা এসে ফেরাউনের কাছে উপস্থিত
হল। তারা বলল, আমাদের
জন্যে কি কোন পারিশ্রমিক
নির্ধারিত আছে, যদি আমরা জয়লাভ করি?
[7:114]
সে
বলল, হ্যাঁ এবং
অবশ্যই তোমরা
আমার নিকটবর্তী
লোক হয়ে যাবে।
[7:115]
তারা
বলল, হে মূসা! হয়
তুমি নিক্ষেপ
কর অথবা আমরা নিক্ষেপ
করছি।
[7:116]
তিনি
বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। যখন তারা নিক্ষেপ
করল তখন লোকদের
চোখগুলোকে বাধিয়ে
দিল, ভীত-সন্ত্রস্ত
করে তুলল এবং
মহাযাদু প্রদর্শন
করল।
[7:117]
তারপর
আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ
কর তোমার লাঠিখানা। অতএব
সঙ্গে সঙ্গে তা
সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা বানিয়েছিল
যাদু বলে।
[7:118]
সুতরাং
এভাবে প্রকাশ হয়ে
গেল সত্য বিষয়
এবং ভুল প্রতিপন্ন
হয়ে গেল যা কিছু
তারা করেছিল।
[7:119]
সুতরাং
তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব
লাঞ্ছিত হল।
[7:120]
এবং
যাদুকররা সেজদায়
পড়ে গেল।
[7:121]
বলল, আমরা
ঈমান আনছি মহা বিশ্বের পরওয়ারদেগারের
প্রতি।
[7:122]
যিনি
মূসা ও হারুনের পরওয়ারদেগার।
[7:123]
ফেরাউন
বলল, তোমরা কি
(তাহলে) আমার
অনুমতি দেয়ার
আগেই ঈমান আনলে!
এটা প্রতারণা, যা তোমরা
এ নগরীতে প্রদর্শন করলে। যাতে করে
এ শহরের অধিবাসীদিগকে
শহর থেকে বের করে
দিতে পার। সুতরাং
তোমরা শীঘ্রই
বুঝতে পারবে।
[7:124]
অবশ্যই
আমি কেটে দেব তোমাদের হাত ও পা বিপরীত
দিক থেকে। তারপর
তোমাদের সবাইকে
শূলীতে চড়িয়ে
মারব।
[7:125]
তারা
বলল, আমাদেরকে
তো মৃত্যুর পর নিজেদের পরওয়ারদেগারের
নিকট ফিরে যেতেই
হবে।
[7:126]
বস্তুতঃ
আমাদের সাথে তোমার শত্রুতা তো এ কারণেই
যে, আমরা ঈমান
এনেছি আমাদের পরওয়ারদেগারের
নিদর্শনসমূহের প্রতি যখন তা আমাদের
নিকট পৌঁছেছে। হে আমাদের
পরওয়ারদেগার
আমাদের জন্য ধৈর্য্যের দ্বার
খুলে দাও এবং আমাদেরকে
মুসলমান হিসাবে
মৃত্যু দান কর।
[7:127]
ফেরাউনের
সম্প্রদায়ের র্সদাররা বলল, তুমি
কি এমনি ছেড়ে
দেবে মূসা ও তার
সম্প্রদায়কে। দেশময়
হৈ-চৈ করার জন্য
এবং তোমাকে ও তোমার
দেব-দেবীকে বাতিল
করে দেবার জন্য। সে বলল, আমি এখনি হত্যা করব
তাদের পুত্র সন্তানদিগকে; আর জীবিত
রাখব মেয়েদেরকে। বস্তুতঃ আমরা তাদের উপর
প্রবল।
[7:128]
মূসা
বললেন তার কওমকে, সাহায্য প্রার্থনা কর
আল্লাহর নিকট এবং
ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই
এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের
মধ্যে যাকে ইচ্ছা
এর উত্তরাধিকারী
বানিয়ে দেন এবং
শেষ কল্যাণ
মুত্তাকীদের জন্যই
নির্ধারিত রয়েছে।
[7:129]
তারা
বলল, আমাদের কষ্ট
ছিল তোমার
আসার পূর্বে এবং
তোমার আসার পরে। তিনি
বললেন, তোমাদের পরওয়ারদেগার
শীঘ্রই তোমাদের
শক্রদের ধ্বংস
করে দেবেন এবং
তোমাদেরকে দেশে
প্রতিনিধিত্ব
দান করবেন। তারপর দেখবেন, তোমরা
কেমন কাজ কর।
[7:130]
তারপর
আমি পাকড়াও করেছি-ফেরাউনের
অনুসারীদেরকে
দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে
এবং ফল ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে যাতে
করে তারা উপদেশ
গ্রহণ করে।
[7:131]
অতঃপর
যখন শুভদিন ফিরে
আসে, তখন তারা বলতে
আরম্ভ করে যে, এটাই
আমাদের জন্য উপযোগী। আর যদি
অকল্যাণ এসে উপস্থিত হয় তবে
তাতে মূসার এবং
তাঁর সঙ্গীদের
অলক্ষণ বলে অভিহিত
করে। শুনে রাখ তাদের অলক্ষণ
যে, আল্লাহরই এলেমে
রয়েছে, অথচ এরা জানে
না।
[7:132]
তারা
আরও বলতে লাগল, আমাদের উপর জাদু করার
জন্য তুমি যে নিদর্শনই
নিয়ে আস না কেন
আমরা কিন্তু তোমার
উপর ঈমান আনছি
না।
[7:133]
সুতরাং
আমি তাদের উপর
পাঠিয়ে দিলাম
তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ
ও রক্ত প্রভৃতি
বহুবিধ নিদর্শন
একের পর এক। তারপরেও তারা
গর্ব করতে থাকল। বস্তুতঃ
তারা ছিল অপরাধপ্রবণ।
[7:134]
আর
তাদের উপর যখন
কোন আযাব পড়ে
তখন বলে, হে মূসা
আমাদের জন্য তোমার
পরওয়ারদেগারের
নিকট সে বিষয়ে
দোয়া কর যা
তিনি তোমার সাথে
ওয়াদা করে রেখেছেন। যদি তুমি
আমাদের উপর থেকে
এ আযাব সরিয়ে
দাও, তবে অবশ্যই
আমরা ঈমান আনব
তোমার উপর এবং
তোমার সাথে বনী-ইসরাঈলদেরকে যেতে দেব।
[7:135]
অতঃপর
যখন আমি তাদের
উপর থেকে আযাব
তুলে নিতাম নির্ধারিত
একটি সময় পর্যন্ত-যেখান
পর্যন্ত তাদেরকে
পৌছানোর উদ্দেশ্য
ছিল, তখন তড়িঘড়ি
তারা প্রতিশ্রুতি
ভঙ্গ করত।
[7:136]
সুতরাং
আমি তাদের কাছে
থেকে বদলা নিয়ে
নিলাম-বস্তুতঃ
তাদেরকে সাগরে
ডুবিয়ে দিলাম। কারণ, তারা
মিথ্যা প্রতিপন্ন
করেছিল আমার নিদর্শনসমূহকে
এবং তৎপ্রতি
অনীহা প্রদর্শন
করেছিল।
[7:137]
আর
যাদেরকে দুর্বল
মনে করা হত তাদেরকেও আমি
উত্তরাধিকার দান
করেছি এ ভুখন্ডের
পূর্ব ও পশ্চিম
অঞ্চলের যাতে আমি বরকত সন্নিহিত
রেখেছি এবং পরিপূর্ণ
হয়ে গেছে তোমার
পালনকর্তার প্রতিশ্রুত কল্যাণ বনী-ইসরাঈলদের
জন্য তাদের ধৈর্য্যধারণের
দরুন। আর ধ্বংস
করে দিয়েছে সে সবকিছু যা তৈরী
করেছিল ফেরাউন
ও তার সম্প্রদায়
এবং ধ্বংস করেছি
যা কিছু তারা সুউচ্চ নির্মাণ
করেছিল।
[7:138]
বস্তুতঃ
আমি সাগর পার করে দিয়েছি বনী-ইসরাঈলদিগকে। তখন তারা
এমন এক সম্প্রদায়ের
কাছে গিয়ে পৌছাল, যারা স্বহস্তনির্মিত
মূর্তিপুজায়
নিয়োজিত ছিল। তারা
বলতে লাগল, হে মূসা; আমাদের উপাসনার জন্যও
তাদের মূর্তির
মতই একটি মূর্তি
নির্মাণ করে দিন। তিনি
বললেন, তোমাদের মধ্যে
বড়ই অজ্ঞতা রয়েছে।
[7:139]
এরা
যে, কাজে নিয়োজিত
রয়েছে তা ধ্বংস
হবে এবং যা কিছু
তারা করেছে তা
যে ভুল!
[7:140]
তিনি
বললেন, তাহলে কি আল্লাহকে ছাড়া তোমাদের
জন্য অন্য কোন
উপাস্য অনুসন্ধান
করব, অথচ তিনিই
তোমাদিগকে সারা বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব
দান করেছেন।
[7:141]
আর
সে সময়ের কথা
স্মরণ কর, যখন আমি
তোমাদেরকে ফেরাউনের
লোকদের কবল থেকে
মুক্তি দিয়েছি; তারা
তোমাদেরকে দিত নিকৃষ্ট শাস্তি, তোমাদের
পুত্র-সন্তানদের
মেরে ফেলত এবং
মেয়েদের বাঁচিয়ে
রাখত। এতে তোমাদের
প্রতি তোমাদের
পরওয়ারদেগারের
বিরাট পরীক্ষা
রয়েছে।
[7:142]
আর
আমি মূসাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি ত্রিশ
রাত্রির এবং সেগুলোকে
পূর্ন করেছি আরো
দশ দ্বারা। বস্তুতঃ
এভাবে চল্লিশ
রাতের মেয়াদ পূর্ণ
হয়ে গেছে। আর মূসা
তাঁর ভাই হারুনকে
বললেন, আমার সম্প্রদায়ে
তুমি আমার প্রতিনিধি
হিসাবে থাক। তাদের
সংশোধন করতে থাক
এবং হাঙ্গামা
সৃষ্টিকারীদের
পথে চলো না।
[7:143]
তারপর
মূসা যখন আমার প্রতিশ্রুত সময়
অনুযায়ী এসে হাযির
হলেন এবং তাঁর
সাথে তার পরওয়ারদেগার
কথা বললেন, তখন তিনি
বললেন, হে আমার প্রভু, তোমার
দীদার আমাকে দাও, যেন আমি
তোমাকে দেখতে
পাই। তিনি বললেন, তুমি
আমাকে কস্মিনকালেও
দেখতে পাবে না, তবে তুমি পাহাড়ের দিকে
দেখতে থাক, সেটি
যদি স্বস্থানে
দঁড়িয়ে থাকে
তবে তুমিও আমাকে দেখতে পাবে। তারপর
যখন তার পরওয়ারদগার
পাহাড়ের উপর আপন
জ্যোতির বিকিরণ
ঘটালেন, সেটিকে বিধ্বস্ত
করে দিলেন এবং
মূসা অজ্ঞান হয়ে
পড়ে গেলেন। অতঃপর
যখন তাঁর জ্ঞান
ফিরে এল; বললেন, হে প্রভু!
তোমার সত্তা পবিত্র, তোমার
দরবারে আমি তওবা করছি এবং আমিই
সর্বপ্রথম বিশ্বাস
স্থাপন করছি।
[7:144]
(পরওয়ারদেগার)
বললেন, হে মূসা, আমি তোমাকে
আমার বার্তা পাঠানোর
এবং কথা বলার মাধ্যমে
লোকদের উপর বিশিষ্টতা দান
করেছি। সুতরাং
যা কিছু আমি তোমাকে
দান করলাম, গ্রহণ
কর এবং কৃতজ্ঞ থাক।
[7:145]
আর
আমি তোমাকে পটে
লিখে দিয়েছি
সর্বপ্রকার উপদেশ
ও বিস্তারিত সব
বিষয়। অতএব, এগুলোকে
দৃঢ়ভাবে ধারণ
কর এবং স্বজাতিকে
এর কল্যাণকর বিষয়সমূহ
দৃঢ়তার সাথে পালনের
নির্দেশ দাও।
[7:146]
আমি
আমার নিদর্শনসমূহ
হতে তাদেরকে
ফিরিয়ে রাখি, যারা
পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে
গর্ব করে। যদি তারা
সমস্ত নিদর্শন
প্রত্যক্ষ করে
ফেলে, তবুও তা বিশ্বাস
করবে না। আর যদি
হেদায়েতের পথ দেখে, তবে সে পথ
গ্রহণ করে না। অথচ গোমরাহীর
পথ দেখলে তাই গ্রহণ
করে নেয়। এর কারণ, তারা আমার
নিদর্শনসমূহকে
মিথ্যা বলে মনে
করেছে এবং তা থেকে
বেখবর রয়ে গেছে।
[7:147]
বস্তুতঃ
যারা মিথ্যা জেনেছে আমার আয়াতসমূকে
এবং আখেরাতের সাক্ষাতকে, তাদের
যাবতীয় কাজকর্ম
ধ্বংস হয়ে গেছে। তেমন বদলাই
সে পাবে যেমন আমল
করত।
[7:148]
আর
বানিয়ে নিল মূসার সম্প্রদায় তার
অনুপস্থিতিতে
নিজেদের অলংকারাদির
দ্বারা একটি বাছুর
তা থেকে বেরুচ্ছিল
‘হাম্বা
হাম্বা’ শব্দ। তারা
কি একথাও লক্ষ্য
করল না যে, সেটি
তাদের সাথে
কথাও বলছে না এবং
তাদেরকে কোন পথও
বাতলে দিচ্ছে না!
তারা সেটিকে উপাস্য বানিয়ে নিল। বস্তুতঃ
তারা ছিল জালেম।
[7:149]
অতঃপর
যখন তারা অনুতপ্ত
হল এবং বুঝতে
পারল যে, আমরা
নিশ্চিতই গোমরাহ
হয়ে পড়েছি, তখন বলতে
লাগল, আমাদের প্রতি যদি আমাদের পরওয়ারদেগার
করুণা না করেন, তবে অবশ্যই
আমরা ধবংস হয়ে
যাব।
[7:150]
তারপর
যখন মূসা নিজ সম্প্রদায়ে
ফিরে এলেন রাগাম্বিত
ও অনুতপ্ত অবস্থায়, তখন বললেন, আমার অনুপস্থিতিতে
তোমরা আমার কি
নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্বটাই
না করেছ। তোমরা
নিজ পরওয়ারদেগারের
হুকুম থেকে কি
তাড়াহুড়া করে
ফেললে এবং সে তখতীগুলো
ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং নিজের
ভাইয়ের মাথার
চুল চেপে ধরে নিজের
দিকে টানতে লাগলেন। ভাই বললেন, হে আমার মায়ের
পুত্র, লোকগুলো যে
আমাকে দুর্বল মনে
করল এবং আমাকে
যে মেরে ফেলার
উপক্রম করেছিল। সুতরাং
আমার উপর আর শত্রুদের
হাসিও না। আর আমাকে জালিমদের সারিতে
গন্য করো না।
[7:151]
মূসা
বললেন, হে আমার পরওয়ারদেগার, ক্ষমা
কর আমাকে আর আমার
ভাইকে এবং আমাদেরকে
তোমার রহমতের অন্তর্ভুক্ত
কর। তুমি যে সর্বাধিক
করুণাময়।
[7:152]
অবশ্য
যারা গোবৎসকে
উপাস্য বানিয়ে
নিয়েছে, তাদের
উপর তাদের পরওয়ারদেগারের
পক্ষ থেকে পার্থিব
এ জীবনেই গযব ও
লাঞ্জনা এসে পড়বে। এমনি
আমি অপবাদ আরোপকারীদেরকে
শাস্তি দিয়ে থাকি।
[7:153]
আর
যারা মন্দ কাজ
করে, তারপরে তওবা করে নেয়
এবং ঈমান নিয়ে
আসে, তবে নিশ্চয়ই
তোমার পরওয়ারদেগার
তওবার পর অবশ্য
ক্ষমাকারী, করুণাময়।
[7:154]
তারপর
যখন মূসার রাগ
পড়ে গেল, তখন তিনি
তখতীগুলো তুলে
নিলেন। আর যা
কিছু তাতে লেখা
ছিল, তা ছিল সে
সমস্ত লোকের জন্য হেদায়েত
ও রহমত যারা নিজেদের
পরওয়ারদেগারকে
ভয় করে।
[7:155]
আর
মূসা বেছে নিলেন
নিজের সম্প্রদায়
থেকে সত্তর জন
লোক আমার প্রতিশ্রুত
সময়ের জন্য। তারপর
যখন তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও
করল, তখন বললেন, হে আমার
পরওয়ারদেগার, তুমি
যদি ইচ্ছা করতে, তবে তাদেরকে
আগেই ধ্বংস করে
দিতে এবং আমাকেও। আমাদেরকে
কি সে কর্মের কারণে
ধ্বংস করছ, যা আমার
সম্প্রদায়ের
নির্বোধ লোকেরা
করেছে? এসবই তোমার
পরীক্ষা; তুমি
যাকে ইচ্ছা
এতে পথ ভ্রষ্ট
করবে এবং যাকে
ইচ্ছা সরলপথে রাখবে। তুমি
যে আমাদের রক্ষক-সুতরাং
আমাদেরকে ক্ষমা
করে দাও এবং আমাদের
উপর করুনা কর। তাছাড়া
তুমিই তো সর্বাধিক
ক্ষমাকারী।
[7:156]
আর
পৃথিবীতে এবং আখেরাতে আমাদের জন্য কল্যাণ
লিখে দাও। আমরা
তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন
করছি। আল্লাহ
তা’আলা বললেন, আমার
আযাব তারই উপর
পরিব্যাপ্ত। সুতরাং
তা তাদের জন্য
লিখে দেব যারা
ভয় রাখে, যাকাত
দান করে এবং যারা
আমার আয়তসমুহের
উপর বিশ্বাস স্থাপন
করে।
[7:157]
সেসমস্ত
লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ
রসূলের, যিনি উম্মী
নবী, যাঁর সম্পর্কে
তারা নিজেদের কাছে
রক্ষিত তওরাত
ও ইঞ্জিলে লেখা
দেখতে পায়, তিনি
তাদেরকে নির্দেশ
দেন সৎকর্মের, বারণ
করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের
জন্য যাবতীয় পবিত্র
বস্তু হালাল ঘোষনা
করেন ও নিষিদ্ধ
করেন হারাম
বস্তুসমূহ এবং
তাদের উপর থেকে
সে বোঝা নামিয়ে
দেন এবং বন্দীত্ব
অপসারণ করেন
যা তাদের উপর বিদ্যমান
ছিল। সুতরাং
যেসব লোক তাঁর
উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন
করেছে, তাঁকে সাহায্য
করেছে এবং সে নূরের
অনুসরণ করেছে যা
তার সাথে অবতীর্ণ
করা হয়েছে, শুধুমাত্র
তারাই নিজেদের
উদ্দেশ্য সফলতা
অর্জন করতে পেরেছে।
[7:158]
বলে
দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার
প্রতি আমি আল্লাহ
প্রেরিত রসূল, সমগ্র
আসমান ও যমীনে
তার রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে
ছাড়া আর কারো
উপাসনা নয়। তিনি
জীবন ও মৃত্যু
দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস
স্থাপন করো আল্লাহর
উপর তাঁর প্রেরিত
উম্মী নবীর উপর, যিনি
বিশ্বাস রাখেন
আল্লাহর এবং তাঁর
সমস্ত কালামের
উপর। তাঁর অনুসরণ
কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।
[7:159]
বস্তুতঃ
মূসার সম্প্রদায়ে একটি দল রয়েছে
যারা সত্যপথ নির্দেশ
করে এবং সে মতেই
বিচার করে থাকে।
[7:160]
আর
আমি পৃথক পৃথক
করে দিয়েছি তাদের বার জন পিতামহের
সন্তানদেরকে বিরাট
বিরাট দলে, এবং নির্দেশ
দিয়েছি মুসাকে, যখন তার
কাছে তার সম্প্রদায়
পানি চাইল যে, স্বীয়
যষ্টির দ্বারা
আঘাত কর এ পাথরের
উপর। অতঃপর
এর ভেতর থেকে ফুটে
বের হল বারটি প্রস্রবণ। প্রতিটি
গোত্র চিনে
নিল নিজ নিজ ঘাঁটি। আর আমি
ছায়া দান করলাম
তাদের উপর মেঘের
এবং তাদের জন্য অবতীর্ন করলাম
মান্না ও সালওয়া। যে পরিচ্ছন্ন
বস্তুত জীবিকারূপে
আমি তোমাদের দিয়েছি, তা থেকে
তোমরা ভক্ষণ কর। বস্তুতঃ
তারা আমার কোন
ক্ষতি করেনি, বরং ক্ষতি করেছে নিজেদেরই।
[7:161]
আর
যখন তাদের প্রতি
নির্দেশ হল যে, তোমরা এ নগরীতে
বসবাস কর এবং খাও
তা থেকে যেখান
থেকে ইচ্ছা এবং
বল, আমাদের ক্ষমা করুন। আর দরজা
দিয়ে প্রবেশ কর
প্রণত অবস্থায়। তবে আমি
ক্ষমা করে দেব তোমাদের পাপসমুহ। অবশ্য
আমি সৎকর্মীদিগকে
অতিরিক্ত দান
করব।
[7:162]
অনন্তর
জালেমরা এতে অন্য
শব্দ বদলে দিল
তার পরিবর্তে, যা তাদেরকে
বলা হয়েছিল। সুতরাং
আমি তাদের উপর
আযাব পাঠিয়েছি
আসমান থেকে তাদের
অপকর্মের কারণে।
[7:163]
আর
তাদের কাছে সে
জনপদের অবস্থা
সম্পর্কে জিজ্ঞেস
কর যা ছিল নদীর
তীরে অবস্থিত। যখন শনিবার
দিনের নির্দেশের
ব্যাপারে সীমাতিক্রম
করতে লাগল, যখন আসতে
লাগল মাছগুলো তাদের
কাছে শনিবার
দিন পানির উপর, আর যেদিন
শনিবার হত না, আসত না। এভাবে
আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। কারণ, তারা
ছিল নাফরমান।
[7:164]
আর
যখন তাদের মধ্যে
থেকে এক সম্প্রদায়
বলল, কেন সে লোকদের
সদুপদেশ দিচ্ছেন, যাদেরকে
আল্লাহ ধ্বংস করে
দিতে চান কিংবা
আযাব দিতে চান
কঠিন আযাব? সে বললঃ
তোমাদের পালনকর্তার
সামনে দোষ ফুরাবার জন্য
এবং এজন্য যেন
তারা ভীত হয়।
[7:165]
অতঃপর
যখন তারা সেসব
বিষয় ভুলে
গেল, যা তাদেরকে
বোঝানো হয়েছিল, তখন আমি
সেসব লোককে মুক্তি
দান করলাম যারা মন্দ কাজ থেকে
বারণ করত। আর পাকড়াও
করলাম, গোনাহগারদেরকে
নিকৃষ্ট আযাবের মাধ্যমে তাদের
না-ফরমানীর দরুন।
[7:166]
তারপর
যখন তারা এগিয়ে
যেতে লাগল সে
কর্মে যা থেকে
তাদের বারণ করা
হয়েছিল, তখন আমি
নির্দেশ দিলাম
যে, তোমরা লাঞ্ছিত বানর
হয়ে যাও।
[7:167]
আর
সে সময়ের কথা
স্মরণ কর, যখন তোমার
পালনকর্তা সংবাদ
দিয়েছেন যে, অবশ্যই
কেয়ামত দিবস পর্যন্ত
ইহুদীদের উপর এমন লোক পাঠাতে
থাকবেন যারা তাদেরকে
নিকৃষ্ট শাস্তি
দান করতে থাকবে। নিঃসন্দেহে তোমার
পালনকর্তা শীঘ্র
শাস্তি দানকারী
এবং তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
[7:168]
আর
আমি তাদেরকে বিভক্ত
করে দিয়েছি
দেশময় বিভিন্ন
শ্রেনীতে, তাদের
মধ্যে কিছু রয়েছে
ভাল আর কিছু রয়েছে অন্য রকম! তাছাড়া
আমি তাদেরকে পরীক্ষা
করেছি ভাল ও মন্দের
মাধ্যমে যাতে তারা ফিরে আসে।
[7:169]
তারপর
তাদের পেছনে এসেছে
কিছু অপদার্থ, যারা
উত্তরাধিকারী
হয়েছে কিতাবের; তারা
নিকৃষ্ট পার্থিব
উপকরণ আহরণ করছে এবং বলছে, আমাদের
ক্ষমা করে দেয়া
হবে। বস্তুতঃ
এমনি ধরনের উপকরণ
যদি আবারো তাদের সামনে উপস্থিত
হয়, তবে তাও তুলে
নেবে। তাদের
কাছথেকে কিতাবে
কি অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, আল্লাহর
প্রতি সত্য ছাড়া
কিছু বলবে না? অথচ তারা
সে সবই পাঠ করেছে, যা তাতে লেখা
রয়েছে। বস্তুতঃ
আখেরাতের আলয়
ভীতদের জন্য উত্তম-তোমরা
কি তা বোঝ
না ?
[7:170]
আর
যেসব লোক সুদৃঢ়ভাবে কিতাবকে আঁকড়ে
থাকে এবং নামায
প্রতিষ্ঠা করে
নিশ্চয়ই আমি বিনষ্ট
করব না সৎকর্মীদের সওয়াব।
[7:171]
আর
যখন আমি তুলে ধরলাম পাহাড়কে তাদের
উপরে সামিয়ানার
মত এবং তারা ভয়
করতে লাগল যে, সেটি
তাদের উপর পড়বে, তখন আমি বললাম, ধর, যা আমি
তোমাদের দিয়েছি, দৃঢ়ভাবে
এবং স্মরণ রেখো
যা তাতে রয়েছে, যেন তোমরা
বাঁচতে পার।
[7:172]
আর
যখন তোমার পালনকর্তা
বনী আদমের
পৃষ্টদেশ থেকে
বের করলেন তাদের
সন্তানদেরকে এবং
নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি
তোমাদের পালনকর্তা
নই ? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি। আবার
না কেয়ামতের দিন
বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি
আমাদের জানা ছিল না।
[7:173]
অথবা
বলতে শুরু কর যে, অংশীদারিত্বের
প্রথা তো আমাদের
বাপ-দাদারা উদ্ভাবন
করেছিল আমাদের
পূর্বেই। আর আমরা হলাম তাদের
পশ্চাৎবর্তী
সন্তান-সন্ততি। তাহলে
কি সে কর্মের জন্য
আমাদেরকে ধ্বংস করবেন, যা পথভ্রষ্টরা
করেছে?
[7:174]
বস্তুতঃ
এভাবে আমি বিষয়সমূহ সবিস্তারে বর্ণনা
করি, যাতে তারা
ফিরে আসে।
[7:175]
আর
আপনি তাদেরকে শুনিয়ে
দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে
আমি নিজের নিদর্শনসমূহ
দান করেছিলাম, অথচ সে
তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার
পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে
পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েছে।
[7:176]
অবশ্য
আমি ইচ্ছা করলে
তার মর্যাদা
বাড়িয়ে দিতাম
সে সকল নিদর্শনসমূহের
দৌলতে। কিন্তু
সে যে অধঃপতিত
এবং নিজের
রিপুর অনুগামী
হয়ে রইল। সুতরাং
তার অবস্থা হল
কুকুরের মত; যদি তাকে
তাড়া কর তবুও
হাঁপাবে আর যদি
ছেড়ে দাও তবুও
হাঁপাবে। এ হল সেসব
লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন
করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি
বিবৃত করুন এসব
কাহিনী, যাতে তারা
চিন্তা করে।
[7:177]
তাদের
উদাহরণ অতি নিকৃষ্ট, যারা
মিথ্যা প্রতিপন্ন
করেছে আমার আয়াত
সমূহকে এবং তারা
নিজেদেরই ক্ষতি
সাধন করেছে।
[7:178]
যাকে
আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে
তিনি পথ ভ্রষ্ট
করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।
[7:179]
আর
আমি সৃষ্টি করেছি
দোযখের জন্য
বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের
অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা
বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা
দেখে না, আর তাদের
কান রয়েছে, তার দ্বারা
শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর
মত; বরং তাদের
চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই
হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।
[7:180]
আর
আল্লাহর জন্য রয়েছে
সব উত্তম
নাম। কাজেই
সে নাম ধরেই তাঁকে
ডাক। আর তাদেরকে
বর্জন কর, যারা
তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা
পথে চলে। তারা
নিজেদের কৃতকর্মের
ফল শীঘ্রই পাবে।
[7:181]
আর
যাদেরকে আমি সৃষ্টি
করেছি, তাদের মধ্যে
এমন এক দল রয়েছে
যারা সত্য পথ দেখায়
এবং সে অনুযায়ী
ন্যায়চিার করে।
[7:182]
বস্তুতঃ
যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াতসমূহকে, আমি তাদেরকে
ক্রমান্বয়ে পাকড়াও
করব এমন জায়গা
থেকে, যার সম্পর্কে
তাদের ধারণাও হবে
না।
[7:183]
বস্তুতঃ
আমি তাদেরকে ঢিল
দিয়ে থাকি। নিঃসন্দেহে
আমার কৌশল সুনিপুণ।
[7:184]
তারা
কি লক্ষ্য করেনি
যে, তাদের সঙ্গী
লোকটির মস্তিষ্কে
কোন বিকৃতি নেই? তিনি
তো ভীতি প্রদর্শনকারী প্রকৃষ্টভাবে।
[7:185]
তারা
কি প্রত্যক্ষ করেনি
আকাশ ও পৃথিবীর
রাজ্য সম্পর্কে
এবং যা কিছু সৃষ্টি
করেছেন আল্লাহ
তা’আলা বস্তু সামগ্রী থেকে
এবং এ ব্যাপারে
যে, তাদের সাথে
কৃত ওয়াদার সময়
নিকটবর্তী হয়ে এসেছে? বস্তুতঃ এরপর
কিসের উপর ঈমান
আনবে?
[7:186]
আল্লাহ
যাকে পথভ্রষ্ট
করেন। তার কোন
পথপ্রদর্শক নেই। আর আল্লাহ
তাদেরকে তাদের
দুষ্টামীতে মত্ত
অবস্তায় ছেড়ে দিয়ে রাখেন।
[7:187]
আপনাকে
জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত
হবে? বলে দিন এর
খবর তো আমার পালনকর্তার
কাছেই রয়েছে। তিনিই
তা অনাবৃত
করে দেখাবেন নির্ধারিত
সময়ে। আসমান
ও যমীনের জন্য
সেটি অতি কঠিন
বিষয়। যখন তা তোমাদের
উপর আসবে অজান্তেই
এসে যাবে। আপনাকে
জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন আপনি তার অনুসন্ধানে
লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ
বিশেষ করে আল্লাহর
নিকটই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ
লোকই উপলব্ধি করে
না।
[7:188]
আপনি
বলে দিন, আমি আমার
নিজের কল্যাণ
সাধনের এবং অকল্যাণ
সাধনের মালিক নই, কিন্তু
যা আল্লাহ চান। আর আমি
যদি গায়বের
কথা জেনে নিতে
পারতাম, তাহলে বহু
মঙ্গল অর্জন করে
নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও
হতে পারত না। আমি তো
শুধুমাত্র একজন
ভীতি প্রদর্শক
ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।
[7:189]
তিনিই
সে সত্তা যিনি
তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন
একটি মাত্র সত্তা
থেকে; আর তার থেকেই
তৈরী করেছেন তার
জোড়া, যাতে তার কাছে স্বস্তি
পেতে পারে। অতঃপর
পুরুষ যখন নারীকে
আবৃত করল, তখন, সে গর্ভবতী হল। অতি হালকা
গর্ভ। সে তাই
নিয়ে চলাফেরা
করতে থাকল। তারপর
যখন বোঝা হয়ে
গেল, তখন উভয়েই
আল্লাহকে ডাকল
যিনি তাদের পালনকর্তা
যে, তুমি যদি আমাদিগকে
সুস্থ ও ভাল দান
কর তবে আমরা তোমার
শুকরিয়া আদায়
করব।
[7:190]
অতঃপর
তাদেরকে যখন সুস্থ
ও ভাল দান করা
হল, তখন দানকৃত
বিষয়ে তার অংশীদার
তৈরী করতে লাগল। বস্তুতঃ
আল্লাহ তাদের
শরীক সাব্যস্ত
করা থেকে বহু উর্ধে।
[7:191]
তারা
কি এমন কাউকে শরীক সাব্যস্ত করে, যে একটি
বস্তুও সৃষ্টি
করেনি, বরং তাদেরকে
সৃষ্টি করা হয়েছে।
[7:192]
আর
তারা, না তাদের সাহায্য করতে পারে, না নিজের
সাহায্য করতে পারে।
[7:193]
আর
তোমরা যদি তাদেরকে
আহবান কর সুপথের
দিকে, তবে তারা তোমাদের
আহবান অনুযায়ী
চলবে না। তাদেরকে
আহবান জানানো কিংবা নীরব থাকা
উভয়টিই তোমাদের
জন্য সমান।
[7:194]
আল্লাহকে
বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা
সবাই তোমাদের মতই
বান্দা। অতএব, তোমরা
যাদেরকে ডাক, তখন তাদের পক্ষেও তো তোমাদের
সে ডাক কবুল করা
উচিত যদি তোমরা
সত্যবাদী হয়ে
থাক?
[7:195]
তাদের
কি পা আছে, যদ্বারা
তারা চলাফেরা
করে, কিংবা তাদের
কি হাত আছে, যদ্বারা
তারা ধরে। অথবা
তাদের কি চোখ আছে যদ্বারা তারা
দেখতে পায় কিংবা
তাদের কি কান আছে
যদ্বারা শুনতে
পায়? বলে দাও, তোমরা
ডাক তোমাদের অংশীদারদিগকে, অতঃপর
আমার অমঙ্গল কর
এবং আমাকে অবকাশ
দিও না।
[7:196]
আমার
সহায় তো হলেন
আল্লাহ, যিনি কিতাব
অবতীর্ণ করেছেন। বস্তুত; তিনিই
সাহায্য করেন সৎকর্মশীল বান্দাদের।
[7:197]
আর
তোমরা তাঁকে বাদ
দিয়ে যাদেরকে
ডাক তারা না তোমাদের
কোন সাহায্য করতে
পারবে, না নিজেদের
আত্নরক্ষা করতে পারবে।
[7:198]
আর
তুমি যদি তাদেরকে
সুপথে আহবান
কর, তবে তারা তা
কিছুই শুনবে না। আর তুমি
তো তাদের দেখছই, তোমার
দিকে তাকিয়ে
আছে, অথচ তারা কিছুই
দেখতে পাচ্ছে না।
[7:199]
আর
ক্ষমা করার অভ্যাস
গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ
দাও এবং মূর্খ
জাহেলদের থেকে
দূরে সরে থাক।
[7:200]
আর
যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত
করে, তাহলে আল্লাহর
শরণাপন্ন হও তিনিই
শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
[7:201]
যাদের
মনে ভয় রয়েছে, তাদের উপর শয়তানের
আগমন ঘটার সাথে
সাথেই তারা সতর্ক
হয়ে যায় এবং
তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি
জাগ্রত হয়ে উঠে।
[7:202]
পক্ষান্তরে
যারা শয়তানের
ভাই, তাদেরকে সে
ক্রমাগত পথভ্রষ্ট
তার দিকে নিয়ে
যায় অতঃপর তাতে
কোন কমতি করে না।
[7:203]
আর
যখন আপনি তাদের
নিকট কোন নিদর্শন
নিয়ে না যান, তখন তারা
বলে, আপনি নিজের
পক্ষ থেকে কেন
অমুকটি নিয়ে আসলেন না, তখন আপনি
বলে দিন, আমি তো
সে মতেই চলি যে
হুকুম আমার নিকট
আসে আমার পরওয়ারদেগারের
কাছ থেকে। এটা ভাববার
বিষয় তোমাদের
পরওয়ারদেগারের
পক্ষ থেকে এবং হেদায়েত
ও রহমত সেসব লোকের
জন্য যারা ঈমান
এনেছে।
[7:204]
আর
যখন কোরআন পাঠ
করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে
রাখ এবং নিশ্চুপ
থাক যাতে তোমাদের
উপর রহমত হয়।
[7:205]
আর
স্মরণ করতে থাক
স্বীয় পালনকর্তাকে
আপন মনে ক্রন্দনরত
ও ভীত-সন্ত্রস্ত
অবস্থায় এবং এমন
স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা
কম; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর
থেকো না।
[7:206]
নিশ্চয়ই
যারা তোমার পরওয়ারদেগারের
সান্নিধ্যে রয়েছেন, তারা
তাঁর বন্দেগীর
ব্যাপারে অহঙ্কার
করেন না এবং
স্মরণ করেন তাঁর
পবিত্র সত্তাকে; আর তাঁকেই
সেজদা করেন।
@
8 Al-Anfal
শুরু
করছি আল্লাহর
নামে যিনি পরম
করুণাময়, অতি
দয়ালু।
[8:1]
আপনার
কাছে জিজ্ঞেস করে, গনীমতের
হুকুম। বলে দিন, গণীমতের
মাল হল আল্লাহর
এবং রসূলের। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয়
কর এবং নিজেদের
অবস্থা সংশোধন
করে নাও। আর আল্লাহ
এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য কর, যদি ঈমানদার
হয়ে থাক।
[8:2]
যারা
ঈমানদার, তারা
এমন যে, যখন আল্লাহর
নাম নেয়া হয়
তখন ভীত হয়ে পড়ে
তাদের অন্তর। আর যখন
তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের
ঈমান বেড়ে যায়
এবং তারা স্বীয়
পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ
করে।
[8:3]
সে
সমস্ত লোক যারা
নামায প্রতিষ্ঠা
করে এবং আমি তাদেরকে
যে রুযী দিয়েছি
তা থেকে ব্যয়
করে।
[8:4]
তারাই
হল সত্যিকার ঈমানদার! তাদের জন্য রয়েছে
স্বীয় পরওয়ারদেগারের
নিকট মর্যাদা, ক্ষমা
এবং সম্মানজনক রুযী।
[8:5]
যেমন
করে তোমাকে তোমার পরওয়ারদেগার
ঘর থেকে বের করেছেন
ন্যায় ও সৎকাজের জন্য, অথচ ঈমানদারদের
একটি দল (তাতে)
সম্মত ছিল না।
[8:6]
তারা
তোমার সাথে বিবাদ
করছিল সত্য
ও ন্যায় বিষয়ে, তা প্রকাশিত
হবার পর; তারা
যেন মৃত্যুর দিকে
ধাবিত হচ্ছে দেখতে দেখতে।
[8:7]
আর
যখন আল্লাহ দু’টি দলের একটির ব্যাপারে
তোমাদের সাথে ওয়াদা
করেছিলেন যে, সেটি
তোমাদের হস্তগত
হবে, আর তোমরা
কামনা করছিলে যাতে
কোন রকম কন্টক
নেই, তাই তোমাদের
ভাগে আসুক; অথচ আল্লাহ চাইতেন সত্যকে
স্বীয় কালামের
মাধ্যমে সত্যে
পরিণত করতে এবং
কাফেরদের মূল কর্তন করে দিতে,
[8:8]
যাতে
করে সত্যকে সত্য
এবং মিথ্যাকে
মিথ্যা প্রতিপন্ন
করে দেন, যদিও
পাপীরা অসন্তুষ্ট
হয়।
[8:9]
তোমরা
যখন ফরিয়াদ করতে
আরম্ভ করেছিলে
স্বীয় পরওয়ারদেগারের
নিকট, তখন তিনি তোমাদের
ফরিয়াদের মঞ্জুরী
দান করলেন
যে, আমি তোমাদিগকে
সাহায্য করব ধারাবহিকভাবে
আগত হাজার ফেরেশতার
মাধ্যমে।
[8:10]
আর
আল্লাহ তো শুধু
সুসংবাদ দান করলেন যাতে তোমাদের
মন আশ্বস্ত হতে
পারে। আর সাহায্য
আল্লাহর পক্ষ থেকে
ছাড়া অন্য
কারো পক্ষ থেকে
হতে পারে না। নিঃসন্দেহে
আল্লাহ মহাশক্তির
অধিকারী হেকমত ওয়ালা।
[8:11]
যখন
তিনি আরোপ করেন
তোমাদের উপর তন্দ্রাচ্ছন্ন
তা নিজের পক্ষ
থেকে তোমাদের প্রশান্তির
জন্য এবং তোমাদের
উপর আকাশ থেকে
পানি অবতরণ করেন, যাতে
তোমাদিগকে পবিত্র
করে দেন এবং যাতে
তোমাদের থেকে
অপসারিত করে দেন
শয়তানের অপবিত্রতা। আর যাতে
করে সুরক্ষিত করে
দিতে পারেন তোমাদের অন্তরসমূহকে
এবং তাতে যেন সুদৃঢ়
করে দিতে পারেন
তোমাদের পা গুলো।
[8:12]
যখন
নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে
তোমাদের পরওয়ারদেগার
যে, আমি সাথে রয়েছি
তোমাদের, সুতরাং
তোমরা মুসলমানদের
চিত্তসমূহকে ধীরস্থির
করে রাখ। আমি কাফেরদের
মনে ভীতির সঞ্চার
করে দেব। কাজেই
গর্দানের উপর আঘাত
হান এবং তাদেরকে
কাট জোড়ায় জোড়ায়।
[8:13]
যেহেতু
তারা অবাধ্য হয়েছে আল্লাহ এবং তাঁর
রসূলের, সেজন্য এই
নির্দেশ। বস্তুতঃ
যে লোক আল্লাহ
ও রসূলের অবাধ্য
হয়, নিঃসন্দেহে
আল্লাহর শাস্তি
অত্যন্ত কঠোর।
[8:14]
আপাততঃ
বর্তমান এ শাস্তি
তোমরা আস্বাদন
করে নাও এবং জেনে
রাখ যে, কাফেরদের
জন্য রয়েছে দোযখের
আযাব।
[8:15]
হে
ঈমানদারগণ, তোমরা
যখন কাফেরদের
সাথে মুখোমুখী
হবে, তখন পশ্চাদপসরণ
করবে না।
[8:16]
আর
যে লোক সেদিন তাদের
থেকে পশ্চাদপসরণ
করবে, অবশ্য যে লড়াইয়ের
কৌশল পরিবর্তনকল্পে
কিংবা যে নিজ সৈন্যদের নিকট আশ্রয় নিতে
আসে সে ব্যতীত
অন্যরা আল্লাহর
গযব সাথে নিয়ে
প্রত্যাবর্তন করবে। আর তার
ঠিকানা হল জাহান্নাম। বস্তুতঃ
সেটা হল নিকৃষ্ট
অবস্থান।
[8:17]
সুতরাং
তোমরা তাদেরকে
হত্যা করনি, বরং আল্লাহই
তাদেরকে হত্যা
করেছেন। আর তুমি
মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ
করনি, যখন তা নিক্ষেপ
করেছিলে, বরং তা
নিক্ষেপ করেছিলেন
আল্লাহ স্বয়ং
যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে
পারেন যথার্থভাবে। নিঃসন্দেহে
আল্লাহ শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত।
[8:18]
এটাতো
গেল, আর জেনে রেখো, আল্লাহ
নস্যাৎ
করে দেবেন কাফেরদের
সমস্ত কলা-কৌশল।
[8:19]
তোমরা
যদি মীমাংসা কামনা
কর, তাহলে তোমাদের
নিকট মীমাংসা পৌছে
গেছে। আর যদি
তোমরা প্রত্যাবর্তন
কর, তবে তা তোমাদের জন্য
উত্তম এবং তোমরা
যদি তাই কর, তবে আমি
ও তেমনি করব। বস্তুতঃ
তোমাদের কোনই
কাজে আসবে না তোমাদের
দল-বল, তা যত বেশীই
হোক। জেনে রেখ
আল্লাহ রয়েছেন ঈমানদারদের সাথে।
[8:20]
হে
ঈমানদারগণ, আল্লাহ
ও তাঁর রসূলের
নির্দেশ মান্য
কর এবং শোনার পর
তা থেকে বিমুখ
হয়ো না।
[8:21]
আর
তাদের অন্তর্ভুক্ত
হয়ো না, যারা
বলে যে, আমরা শুনেছি, অথচ তারা
শোনেনা।
[8:22]
নিঃসন্দেহে
আল্লাহ তা’আলার নিকট সমস্ত প্রাণীর
তুলনায় তারাই
মূক ও বধির, যারা
উপলদ্ধি করে না।
[8:23]
বস্তুতঃ
আল্লাহ যদি তাদের মধ্যে কিছুমাত্র
শুভ চিন্তা জানতেন, তবে তাদেরকে
শুনিয়ে দিতেন। আর এখনই
যদি তাদের
শুনিয়ে দেন, তবে তারা
মুখ ঘুরিয়ে পালিয়ে
যাবে।
[8:24]
হে
ঈমানদারগণ, আল্লাহ
ও তাঁর রসূলের
নির্দেশ মান্য
কর, যখন তোমাদের
সে কাজের প্রতি
আহবান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের
জীবন। জেনে রেখো, আল্লাহ
মানুষের এবং তার
অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। বস্তুতঃ
তোমরা সবাই তাঁরই
নিকট সমবেত হবে।
[8:25]
আর
তোমরা এমন ফাসাদ
থেকে বেঁচে থাক যা বিশেষতঃ
শুধু তাদের উপর
পতিত হবে না যারা
তোমাদের মধ্যে
জালেম এবং জেনে রেখ যে, আল্লাহর আযাব
অত্যন্ত কঠোর।
[8:26]
আর
স্মরণ কর, যখন তোমরা
ছিলে অল্প, পরাজিত
অবস্থায় পড়েছিলে
দেশে; ভীত-সস্ত্রস্ত্র
ছিলে যে, তোমাদের
না অন্যেরা
ছোঁ মেরে নিয়ে
যায়। অতঃপর
তিনি তোমাদিগকে
আশ্রয়ের ঠিকানা
দিয়েছেন, স্বীয়
সাহায্যের দ্বারা
তোমাদিগকে শক্তি
দান করেছেন এবং
পরিচ্ছন্ন জীবিকা
দিয়েছেন যাতে তোমরা শুকরিয়া
আদায় কর।
[8:27]
হে
ঈমানদারগণ, খেয়ানত
করোনা আল্লাহর
সাথে ও রসূলের
সাথে এবং খেয়ানত
করো না নিজেদের
পারস্পরিক আমানতে জেনে-শুনে।
[8:28]
আর
জেনে রাখ, তোমাদের
ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি
অকল্যাণের সম্মুখীনকারী। বস্তুতঃ
আল্লাহর নিকট রয়েছে
মহা সওয়াব।
[8:29]
হে
ঈমানদারগণ তোমরা
যদি আল্লাহকে
ভয় করতে থাক, তবে তোমাদের
মধ্যে ফয়সালা
করে দেবেন এবং
তোমাদের থেকে তোমাদের পাপকে
সরিয়ে দেবেন এবং
তোমাদের ক্ষমা
করবেন। বস্তুতঃ
আল্লাহর অনুগ্রহ অত্যন্ত মহান।
[8:30]
আর
কাফেরেরা যখন প্রতারণা
করত আপনাকে
বন্দী অথবা হত্যা
করার উদ্দেশ্যে
কিংবা আপনাকে বের
করে দেয়ার জন্য
তখন তারা যেমন
ছলনা করত তেমনি, আল্লাহও
ছলনা করতেন। বস্তুতঃ
আল্লাহর ছলনা সবচেয়ে উত্তম।
[8:31]
আর
কেউ যখন তাদের
নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ
করে তবে বলে, আমরা
শুনেছি, ইচ্ছা করলে
আমরাও এমন বলতে
পারি; এ তো পূর্ববর্তী
ইতিকথা ছাড়া আর
কিছুই নয়।
[8:32]
তাছাড়া
তারা যখন বলতে
আরম্ভ করে যে, ইয়া
আল্লাহ, এই যদি তোমার
পক্ষ থেকে (আগত)
সত্য দ্বীন হয়ে
থাকে, তবে আমাদের
উপর আকাশ থেকে
প্রস্তর বর্ষণ
কর কিংবা আমাদের
উপর বেদনাদায়ক
আযাব নাযিল কর।
[8:33]
অথচ
আল্লাহ কখনই তাদের
উপর আযাব নাযিল
করবেন না যতক্ষণ
আপনি তাদের মাঝে
অবস্থান করবেন। তাছাড়া
তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা
করতে থাকবে আল্লাহ
কখনও তাদের উপর
আযাব দেবেন না।
[8:34]
আর
তাদের মধ্যে এমন
কি বিষয় রয়েছে, যার ফলে
আল্লাহ তাদের উপর
আযাব দান করবেন
না। অথচ তারা মসজিদে-হারামে যেতে বাধাদান
করে, অথচ তাদের
সে অধিকার নেই। এর অধিকার
তো তাদেরই রয়েছে
যারা পরহেযগার। কিন্তু
তাদের অধিকাংশই
সে বিষয়ে অবহিত
নয়।
[8:35]
আর
কা’বার নিকট তাদের
নামায বলতে
শিস দেয়া আর তালি
বাজানো ছাড়া অন্য
কোন কিছুই ছিল
না। অতএব, এবার
নিজেদের কৃত কুফরীর
আযাবের স্বাদ গ্রহণ
কর।
[8:36]
নিঃসন্দেহে
যেসব লোক কাফের, তারা
ব্যয় করে নিজেদের
ধন-সম্পদ, যাতে
করে বাধাদান করতে
পারে আল্লাহর পথে। বস্তুতঃ এখন তারা
আরো ব্যয় করবে। তারপর
তাই তাদের জন্য
আক্ষেপের কারণ
হয়ে এবং শেষ পর্যন্ত
তারা হেরে যাবে। আর যারা
কাফের তাদেরকে
দোযখের দিকে তাড়িয়ে
নিয়ে যাওয়া হবে।
[8:37]
যাতে
পৃথক করে দেন আল্লাহ অপবিত্র ও না-পাককে
পবিত্র ও পাক থেকে। আর যাতে
একটির পর একটিকে
স্থাপন করে সমবেত স্তুপে
পরিণত করেন এবং
পরে দোযখে নিক্ষেপ
করেন। এরাই হল
ক্ষতিগ্রস্ত।
[8:38]
তুমি
বলে দাও, কাফেরদেরকে
যে, তারা যদি বিরত
হয়ে যায়, তবে যা
কিছু ঘটে গেছে
ক্ষমা হবে যাবে। পক্ষান্তরে আবারও যদি তাই
করে, তবে পুর্ববর্তীদের
পথ নির্ধারিত হয়ে
গেছে।
[8:39]
আর
তাদের সাথে যুদ্ধ
করতে থাক যতক্ষণ
না ভ্রান্তি শেষ
হয়ে যায়; এবং আল্লাহর
সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত
হয়ে যায়। তারপর
যদি তারা বিরত
হয়ে যায়, তবে আল্লাহ
তাদের কার্যকলাপ
লক্ষ্য করেন।
[8:40]
আর
তারা যদি না মানে, তবে জেনে রাখ, আল্লাহ তোমাদের
সমর্থক; এবং কতই না
চমৎকার সাহায্যকারী।