2 Al-Baqarah
শুরু
করছি আল্লাহর
নামে যিনি পরম
করুণাময়, অতি
দয়ালু।
[2:1]
আলিফ
লাম মীম।
[2:2]
এ
সেই কিতাব যাতে
কোনই সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী
পরহেযগারদের জন্য,
[2:3]
যারা
অদেখা বিষয়ের
উপর বিশ্বাস
স্থাপন করে এবং
নামায প্রতিষ্ঠা
করে। আর আমি
তাদেরকে যে রুযী
দান করেছি তা থেকে ব্যয়
করে
[2:4]
এবং
যারা বিশ্বাস স্থাপন
করেছে সেসব
বিষয়ের উপর যা
কিছু তোমার প্রতি
অবতীর্ণ হয়েছে
এবং সেসব বিষয়ের
উপর যা তোমার
পূর্ববর্তীদের
প্রতি অবতীর্ণ
হয়েছে। আর আখেরাতকে
যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে।
[2:5]
তারাই
নিজেদের পালনকর্তার
পক্ষ থেকে সুপথ
প্রাপ্ত, আর তারাই
যথার্থ সফলকাম।
[2:6]
নিশ্চিতই
যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি
ভয় প্রদর্শন করুন
আর নাই করুন তাতে
কিছুই আসে যায়
না, তারা ঈমান আনবে না।
[2:7]
আল্লাহ
তাদের অন্তকরণ
এবং তাদের
কানসমূহ বন্ধ করে
দিয়েছেন, আর তাদের
চোখসমূহ পর্দায়
ঢেকে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে
কঠোর শাস্তি।
[2:8]
আর
মানুষের মধ্যে
কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা
আল্লাহ ও পরকালের
প্রতি ঈমান এনেছি
অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।
[2:9]
তারা
আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে
তারা নিজেদেরকে
ছাড়া অন্য কাউকে
ধোঁকা দেয় না
অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে
না।
[2:10]
তাদের
অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত
আর আল্লাহ
তাদের ব্যধি আরো
বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ
তাদের জন্য নির্ধারিত
রয়েছে ভয়াবহ
আযাব, তাদের মিথ্যাচারের
দরুন।
[2:11]
আর
যখন তাদেরকে বলা
হয় যে, দুনিয়ার
বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা
সৃষ্টি করো না, তখন তারা
বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি।
[2:12]
মনে
রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু
তারা তা উপলব্ধি
করে না।
[2:13]
আর
যখন তাদেরকে বলা
হয়, অন্যান্যরা
যেভাবে ঈমান এনেছে
তোমরাও সেভাবে
ঈমান আন, তখন তারা
বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই
মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে
তারাই বোকা, কিন্তু
তারা তা বোঝে না।
[2:14]
আর
তারা যখন ঈমানদারদের
সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা
ঈমান এনেছি। আবার
যখন তাদের শয়তানদের
সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা
তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা
তো (মুসলমানদের
সাথে) উপহাস করি মাত্রা।
[2:15]
বরং
আল্লাহই তাদের
সাথে উপহাস করেন। আর তাদেরকে
তিনি ছেড়ে দিয়েছেন
যেন তারা নিজেদের
অহংকার ও কুমতলবে
হয়রান ও পেরেশান
থাকে।
[2:16]
তারা
সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে
গোমরাহী খরিদ করে। বস্তুতঃ
তারা তাদের এ ব্যবসায়
লাভবান হতে পারেনি
এবং তারা হেদায়েতও
লাভ করতে পারেনি।
[2:17]
তাদের
অবস্থা সে ব্যক্তির
মত, যে লোক কোথাও
আগুন জ্বালালো
এবং তার চারদিককার
সবকিছুকে যখন আগুন
স্পষ্ট করে তুললো, ঠিক এমনি সময়
আল্লাহ তার চারদিকের
আলোকে উঠিয়ে নিলেন
এবং তাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে
দিলেন। ফলে, তারা
কিছুই দেখতে পায়
না।
[2:18]
তারা
বধির, মূক ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবে
না।
[2:19]
আর তাদের উদাহরণ
সেসব লোকের মত
যারা দুর্যোগপূর্ণ
ঝড়ো রাতে পথ চলে, যাতে
থাকে আঁধার, গর্জন
ও বিদ্যুৎচমক। মৃত্যুর
ভয়ে গর্জনের সময়
কানে আঙ্গুল দিয়ে
রক্ষা পেতে
চায়। অথচ সমস্ত
কাফেরই আল্লাহ
কর্তৃক পরিবেষ্ঠিত।
[2:20]
বিদ্যুতালোকে
যখন সামান্য আলোকিত হয়, তখন কিছুটা
পথ চলে। আবার
যখন অন্ধকার হয়ে
যায়, তখন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। যদি আল্লাহ
ইচ্ছা করেন, তাহলে
তাদের শ্রবণশক্তি
ও দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে
পারেন। আল্লাহ
যাবতীয় বিষয়ের
উপর সর্বময় ক্ষমতাশীল।
[2:21]
হে
মানব সমাজ! তোমরা
তোমাদের পালনকর্তার
এবাদত কর, যিনি
তোমাদিগকে এবং
তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে
সৃষ্টি করেছেন। তাতে
আশা করা যায়, তোমরা
পরহেযগারী অর্জন
করতে পারবে।
[2:22]
যে
পবিত্রসত্তা তোমাদের
জন্য ভূমিকে
বিছানা এবং আকাশকে
ছাদ স্বরূপ স্থাপন
করে দিয়েছেন, আর আকাশ
থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের
জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন
তোমাদের খাদ্য
হিসাবে। অতএব, আল্লাহর
সাথে তোমরা অন্য
কাকেও সমকক্ষ করো
না। বস্তুতঃ এসব
তোমরা জান।
[2:23]
এতদসম্পর্কে
যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা
আমি আমার বান্দার
প্রতি অবতীর্ণ
করেছি, তাহলে এর মত
একটি সূরা রচনা করে নিয়ে
এস। তোমাদের সেসব
সাহায্যকারীদেরকে
সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে
ছাড়া, যদি তোমরা
সত্যবাদী হয়ে
থাকো।
[2:24]
আর
যদি তা না পার-অবশ্য
তা তোমরা
কখনও পারবে না, তাহলে
সে দোযখের আগুন
থেকে রক্ষা পাওয়ার
চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে
মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত
করা হয়েছে কাফেরদের
জন্য।
[2:25]
আর
হে নবী (সাঃ), যারা
ঈমান এনেছে
এবং সৎকাজসমূহ
করেছে, আপনি তাদেরকে
এমন বেহেশতের সুসংবাদ
দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান
থাকবে। যখনই
তারা খাবার হিসেবে
কোন ফল প্রাপ্ত
হবে, তখনই তারা বলবে, এতো অবিকল
সে ফলই যা আমরা
ইতিপূর্বেও লাভ
করেছিলাম। বস্তুতঃ
তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান
করা হবে। এবং সেখানে
তাদের জন্য শুদ্ধচারিনী
রমণীকূল থাকবে। আর সেখানে তারা
অনন্তকাল অবস্থান
করবে।
[2:26]
আল্লাহ পাক নিঃসন্দেহে
মশা বা তদুর্ধ্ব
বস্তু দ্বারা উপমা
পেশ করতে লজ্জাবোধ
করেন না। বস্তুতঃ যারা
মুমিন তারা নিশ্চিতভাবে
বিশ্বাস করে যে, তাদের
পালনকর্তা কর্তৃক উপস্থাপিত এ উপমা
সম্পূর্ণ নির্ভূল
ও সঠিক। আর যারা
কাফের তারা বলে, এরূপ
উপমা উপস্থাপনে
আল্লাহর মতলবই
বা কি ছিল। এ দ্বারা
আল্লাহ তা’আলা অনেককে
বিপথগামী করেন, আবার অনেককে
সঠিক পথও প্রদর্শন
করেন। তিনি অনুরূপ
উপমা দ্বারা অসৎ ব্যক্তিবর্গ
ভিন্ন কাকেও বিপথগামী
করেন না।
[2:27]
(বিপথগামী ওরাই) যারা আল্লাহর
সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ
হওয়ার পর তা ভঙ্গ
করে এবং আল্লাহ
পাক যা অবিচ্ছিন্ন
রাখতে নির্দেশ
দিয়েছেন, তা ছিন্ন
করে, আর পৃথিবীর
বুকে অশান্তি সৃষ্টি করে। ওরা যথার্থই
ক্ষতিগ্রস্ত।
[2:28]
কেমন
করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী
অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা
ছিলে নিষ্প্রাণ। অতঃপর
তিনিই তোমাদেরকে প্রাণ দান করেছেন, আবার
মৃত্যু দান করবেন। পুনরায়
তোমাদেরকে জীবনদান
করবেন। অতঃপর তারই প্রতি
প্রত্যাবর্তন
করবে।
[2:29]
তিনিই
সে সত্ত্বা যিনি
সৃষ্টি করেছেন
তোমাদের জন্য যা
কিছু জমীনে রয়েছে
সে সমস্ত। তারপর
তিনি মনোসংযোগ
করেছেন আকাশের
প্রতি। বস্তুতঃ
তিনি তৈরী করেছেন
সাত আসমান। আর আল্লাহ
সর্ববিষয়ে অবহিত।
[2:30]
আর
তোমার পালনকর্তা
যখন ফেরেশতাদিগকে
বললেনঃ আমি পৃথিবীতে
একজন প্রতিনিধি
বানাতে যাচ্ছি, তখন ফেরেশতাগণ বলল, তুমি কি পৃথিবীতে
এমন কাউকে সৃষ্টি
করবে যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার
সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা
নিয়ত তোমার গুণকীর্তন
করছি এবং তোমার
পবিত্র সত্তাকে
স্মরণ করছি। তিনি
বললেন, নিঃসন্দেহে
আমি জানি, যা তোমরা
জান না।
[2:31]
আর
আল্লাহ তা’আলা শিখালেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর
নাম। তারপর
সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে
ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন
করলেন। অতঃপর
বললেন, আমাকে তোমরা
এগুলোর নাম বলে
দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।
[2:32]
তারা
বলল, তুমি পবিত্র!
আমরা কোন কিছুই
জানি না, তবে তুমি
যা আমাদিগকে শিখিয়েছ
(সেগুলো ব্যতীত)
নিশ্চয় তুমিই
প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।
[2:33]
তিনি
বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে
বলে দাও এসবের
নাম। তারপর
যখন তিনি বলে দিলেন
সে সবের নাম, তখন তিনি বললেন, আমি কি
তোমাদেরকে বলিনি
যে, আমি আসমান
ও যমীনের যাবতীয়
গোপন বিষয় সম্পর্কে খুব
ভাল করেই অবগত
রয়েছি? এবং সেসব বিষয়ও
জানি যা তোমরা
প্রকাশ কর, আর যা
তোমরা গোপন কর!
[2:34]
এবং
যখন আমি হযরত আদম
(আঃ)-কে সেজদা
করার জন্য ফেরেশতাগণকে
নির্দেশ দিলাম, তখনই
ইবলীস ব্যতীত সবাই
সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন
করতে অস্বীকার
করল এবং অহংকার
প্রদর্শন করল। ফলে সে
কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত
হয়ে গেল।
[2:35]
এবং
আমি আদমকে হুকুম
করলাম যে, তুমি
ও তোমার স্ত্রী
জান্নাতে বসবাস
করতে থাক এবং ওখানে
যা চাও, যেখান থেকে
চাও, পরিতৃপ্তিসহ
খেতে থাক, কিন্তু
এ গাছের নিকটবর্তী
হয়ো না। অন্যথায়
তোমরা যালিমদের
অন্তর্ভূক্ত হয়ে
পড়বে।
[2:36]
অনন্তর
শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত
করেছিল। পরে তারা
যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে
ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং
আমি বললাম, তোমরা
নেমে যাও। তোমরা
পরস্পর একে অপরের
শক্র হবে এবং তোমাদেরকে
সেখানে কিছুকাল
অবস্থান করতে হবে
ও লাভ সংগ্রহ করতে
হবে।
[2:37]
অতঃপর
হযরত আদম (আঃ) স্বীয় পালনকর্তার কাছ
থেকে কয়েকটি কথা
শিখে নিলেন, অতঃপর
আল্লাহ পাক তাঁর
প্রতি (করুণাভরে)
লক্ষ্য করলেন। নিশ্চয়ই
তিনি মহা-ক্ষমাশীল
ও অসীম দয়ালু।
[2:38]
আমি
হুকুম করলাম, তোমরা
সবাই নীচে নেমে
যাও। অতঃপর
যদি তোমাদের নিকট
আমার পক্ষ থেকে
কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার
সে হেদায়েত অনুসারে
চলবে, তার উপর না
কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত
ও সন্তপ্ত হবে।
[2:39]
আর
যে লোক তা অস্বীকার
করবে এবং আমার
নিদর্শনগুলোকে
মিথ্যা প্রতিপন্ন
করার প্রয়াস পাবে, তারাই
হবে জাহান্নামবাসী; অন্তকাল
সেখানে থাকবে।
[2:40]
হে
বনী-ইসরাঈলগণ, তোমরা
স্মরণ কর আমার
সে অনুগ্রহ যা
আমি তোমাদের প্রতি
করেছি এবং তোমরা
পূরণ কর আমার সাথে
কৃত প্রতিজ্ঞা, তাহলে
আমি তোমাদেরকে
প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি
পূরণ করব। আর ভয়
কর আমাকেই।
[2:41]
আর
তোমরা সে গ্রন্থের
প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন কর, যা আমি
অবতীর্ণ করেছি
সত্যবক্তা হিসেবে
তোমাদের কাছে। বস্তুতঃ তোমরা
তার প্রাথমিক অস্বীকারকারী
হয়ো না আর আমার
আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার
(আযাব) থেকে বাঁচ।
[2:42]
তোমরা
সত্যকে মিথ্যার
সাথে মিশিয়ে
দিও না এবং জানা
সত্ত্বে সত্যকে
তোমরা গোপন করো
না।
[2:43]
আর
নামায কায়েম কর, যাকাত
দান কর এবং
নামাযে অবনত হও
তাদের সাথে, যারা
অবনত হয়।
[2:44]
তোমরা
কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং
নিজেরা নিজেদেরকে
ভূলে যাও, অথচ তোমরা
কিতাব পাঠ কর? তবুও
কি তোমরা
চিন্তা কর না?
[2:45]
ধৈর্য্যর
সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর
নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য
তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু
সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই
তা সম্ভব।
[2:46]
যারা
একথা খেয়াল করে
যে, তাদেরকে সম্মুখীন
হতে হবে স্বীয়
পরওয়ারদেগারের
এবং তাঁরই দিকে
ফিরে যেতে হবে।
[2:47]
হে
বনী-ইসরাঈলগণ!
তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের
কথা, যা আমি তোমাদের
উপর করেছি এবং
(স্মরণ কর) সে বিষয়টি
যে, আমি তোমাদেরকে
উচ্চমর্যাদা দান
করেছি সমগ্র বিশ্বের
উপর।
[2:48]
আর
সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য
উপকারে আসবে না
এবং তার পক্ষে
কোন সুপারিশও কবুল
হবে না; কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও
নেয়া হবে না এবং
তারা কোন রকম সাহায্যও
পাবে না।
[2:49]
আর
(স্মরণ কর) সে সময়ের
কথা, যখন আমি তোমাদিগকে
মুক্তিদান করেছি
ফেরআউনের লোকদের
কবল থেকে যারা
তোমাদিগকে কঠিন শাস্তি দান
করত; তোমাদের পুত্রসন্তানদেরকে
জবাই করত এবং তোমাদের স্ত্রীদিগকে
অব্যাহতি দিত। বস্তুতঃ
তাতে পরীক্ষা ছিল
তোমাদের পালনকর্তার
পক্ষ থেকে, মহা পরীক্ষা।
[2:50]
আর
যখন আমি তোমাদের
জন্য সাগরকে
দ্বিখন্ডিত করেছি, অতঃপর
তোমাদেরকে বাঁচিয়ে
দিয়েছি এবং ডুবিয়ে
দিয়েছি ফেরআউনের
লোকদিগকে অথচ তোমরা
দেখছিলে।
[2:51]
আর
যখন আমি মূসার
সাথে ওয়াদা করেছি চল্লিশ
রাত্রির অতঃপর
তোমরা গোবৎস বানিয়ে নিয়েছ
মূসার অনুপস্থিতিতে। বস্তুতঃ তোমরা
ছিলে যালেম।
[2:52]
তারপর
আমি তাতেও তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি, যাতে
তোমরা কৃতজ্ঞতা
স্বীকার করে নাও।
[2:53]
আর
(স্মরণ কর) যখন আমি
মূসাকে কিতাব
এবং সত্য-মিথ্যার
পার্থক্য বিধানকারী
নির্দেশ দান করেছি, যাতে
তোমরা সরল পথ প্রাপ্ত হতে
পার।
[2:54]
আর
যখন মূসা তার সম্প্রদায়কে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা
তোমাদেরই ক্ষতিসাধন
করেছ এই গোবৎস নির্মাণ করে। কাজেই এখন তওবা
কর স্বীয় স্রষ্টার
প্রতি এবং নিজ
নিজ প্রাণ বিসর্জন
দাও। এটাই তোমাদের জন্য
কল্যাণকর তোমাদের
স্রষ্টার নিকট। তারপর
তোমাদের প্রতি
লক্ষ্য করা হল। নিঃসন্দেহে
তিনিই ক্ষমাকারী, অত্যন্ত
মেহেরবান।
[2:55]
আর
যখন তোমরা বললে, হে মূসা, কস্মিনকালেও
আমরা তোমাকে বিশ্বাস
করব না, যতক্ষণ না
আমরা আল্লাহকে
(প্রকাশ্যে) দেখতে পাব। বস্তুতঃ
তোমাদিগকে পাকড়াও
করল বিদ্যুৎ। অথচ তোমরা
তা প্রত্যক্ষ করছিলে।
[2:56]
তারপর, মরে যাবার
পর তোমাদিগকে আমি তুলে দাঁড়
করিয়েছি, যাতে
করে তোমরা কৃতজ্ঞতা
স্বীকার করে নাও।
[2:57]
আর
আমি তোমাদের উপর
ছায়া দান করেছি মেঘমালার
দ্বারা এবং তোমাদের
জন্য খাবার পাঠিয়েছি
’মান্না’ ও সালওয়া’। সেসব পবিত্র বস্তু
তোমরা ভক্ষন কর, যা আমি
তোমাদেরকে দান
করেছি। বস্তুতঃ
তারা আমার কোন
ক্ষতি করতে পারেনি, বরং নিজেদেরই
ক্ষতি সাধন করেছে।
[2:58]
আর
যখন আমি বললাম, তোমরা প্রবেশ কর এ নগরীতে
এবং এতে যেখানে
খুশী খেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে
বিচরণ করতে থাক
এবং দরজার
ভিতর দিয়ে প্রবেশ
করার সময় সেজদা
করে ঢুক, আর বলতে
থাক-‘আমাদিগকে ক্ষমা করে দাও’-তাহলে
আমি তোমাদের অপরাধ
ক্ষমা করব এবং
সৎ কর্মশীলদেরকে
অতিরিক্ত দানও করব।
[2:59]
অতঃপর
যালেমরা কথা পাল্টে দিয়েছে, যা কিছু
তাদেরকে বলে দেয়া
হয়েছিল তা থেকে। তারপর
আমি অবতীর্ণ করেছি যালেমদের উপর
আযাব, আসমান থেকে, নির্দেশ
লংঘন করার কারণে।
[2:60]
আর
মূসা যখন নিজ জাতির
জন্য পানি চাইল, তখন আমি
বললাম, স্বীয় যষ্ঠির
দ্বারা আঘাত কর
পাথরের উপরে। অতঃপর
তা থেকে প্রবাহিত
হয়ে এল বারটি
প্রস্রবণ। তাদের
সব গোত্রই চিনে
নিল নিজ নিজ ঘাট। আল্লাহর দেয়া
রিযিক খাও, পান কর
আর দুনিয়ার বুকে
দাংগা-হাংগামা
করে বেড়িও না।
[2:61]
আর
তোমরা যখন বললে, হে মূসা, আমরা
একই ধরনের খাদ্য-দ্রব্যে
কখনও ধৈর্য্যধারণ
করব না। কাজেই
তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট
আমাদের পক্ষে প্রার্থনা
কর, তিনি যেন আমাদের
জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী
দান করেন যা জমিতে
উৎপন্ন হয়, তরকারী, কাকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা
(আঃ) বললেন, তোমরা
কি এমন বস্তু নিতে
চাও যা নিকৃষ্ট
সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা
কোন নগরীতে উপনীত
হও, তাহলেই পাবে
যা তোমরা কামনা
করছ। আর তাদের
উপর আরোপ করা হল
লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা
আল্লাহর রোষানলে
পতিত হয়ে ঘুরতে
থাকল। এমন হলো
এ জন্য যে, তারা
আল্লাহর বিধি বিধান
মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে
হত্যা করত। তার কারণ, তারা
ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী।
[2:62]
নিঃসন্দেহে
যারা মুসলমান হয়েছে এবং যারা
ইহুদী, নাসারা ও সাবেঈন, (তাদের
মধ্য থেকে) যারা
ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি
ও কিয়ামত দিবসের
প্রতি এবং সৎকাজ করেছে, তাদের
জন্য রয়েছে তার সওয়াব তাদের
পালনকর্তার কাছে। আর তাদের
কোনই ভয়-ভীতি
নেই, তারা দুঃখিতও
হবে না।
[2:63]
আর
আমি যখন তোমাদের
কাছ থেকে অঙ্গীকার
নিয়েছিলাম এবং
তুর পর্বতকে তোমাদের
মাথার উপর তুলে
ধরেছিলাম এই বলে যে, তোমাদিগকে
যে কিতাব দেয়া
হয়েছে তাকে ধর
সুদৃঢ়ভাবে এবং
এতে যা কিছু রয়েছে তা মনে রেখো যাতে
তোমরা ভয় কর।
[2:64]
তারপরেও
তোমরা তা থেকে
ফিরে গেছ। কাজেই
আল্লাহর অনুগ্রহ
ও মেহেরবানী যদি
তোমাদের উপর না
থাকত, তবে অবশ্যই তোমরা ধবংস হয়ে
যেতে।
[2:65]
তোমরা
তাদেরকে ভালরূপে
জেনেছ, যারা শনিবারের
ব্যাপারে সীমা
লঙ্ঘণ করেছিল। আমি বলেছিলামঃ
তোমরা লাঞ্ছিত
বানর হয়ে যাও।
[2:66]
অতঃপর
আমি এ ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের
জন্য দৃষ্টান্ত
এবং আল্লাহভীরুদের
জন্য উপদেশ গ্রহণের উপাদান করে দিয়েছি।
[2:67]
যখন
মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে
বললেনঃ আল্লাহ
তোমাদের একটি গরু
জবাই করতে বলেছেন। তারা
বলল, তুমি কি আমাদের সাথে
উপহাস করছ? মূসা
(আঃ) বললেন, মূর্খদের
অন্তর্ভুক্ত হওয়া
থেকে আমি আল্লাহর
আশ্রয় প্রার্থনা
করছি।
[2:68]
তারা
বলল, তুমি তোমার পালনকর্তার কাছে
আমাদের জন্য প্রার্থনা
কর, যেন সেটির
রূপ বিশ্লেষণ করা
হয়। মূসা
(আঃ) বললেন, তিনি
বলছেন, সেটা হবে একটা
গাভী, যা বৃদ্ধ নয়
এবং কুমারীও নয়-বার্ধক্য
ও যৌবনের মাঝামাঝি
বয়সের। এখন আদিষ্ট
কাজ করে ফেল।
[2:69]
তারা
বলল, তোমার পালনকর্তার কাছে আমাদের জন্য
প্রার্থনা কর যে, তার রঙ
কিরূপ হবে? মূসা
(আঃ) বললেন, তিনি বলেছেন যে, গাঢ়
পীতবর্ণের গাভী-যা
দর্শকদের চমৎকৃত করবে।
[2:70]
তারা
বলল, আপনি প্রভুর
কাছে প্রার্থনা
করুন-তিনি বলে
দিন যে, সেটা কিরূপ? কেননা, গরু আমাদের
কাছে সাদৃশ্যশীল মনে হয়। ইনশাআল্লাহ
এবার আমরা অবশ্যই
পথপ্রাপ্ত হব। মূসা
(আঃ) বললেন, তিনি
বলেন যে, এ গাভী
ভূকর্ষণ ও জল সেচনের
শ্রমে অভ্যস্ত
নয়-হবে নিষ্কলঙ্ক, নিখুঁত।
[2:71]
তারা
বলল, এবার সঠিক
তথ্য এনেছ। অতঃপর
তারা সেটা জবাই
করল, অথচ জবাই করবে
বলে মনে হচ্ছিল
না।
[2:72]
যখন
তোমরা একজনকে হত্যা
করে পরে সে
সম্পর্কে একে অপরকে
অভিযুক্ত করেছিলে। যা তোমরা
গোপন করছিলে, তা প্রকাশ করে দেয়া ছিল
আল্লাহর অভিপ্রায়।
[2:73]
অতঃপর
আমি বললামঃ গরুর
একটি খন্ড দ্বারা
মৃতকে আঘাত কর। এভাবে
আল্লাহ মৃতকে জীবিত
করেন এবং তোমাদেরকে
তাঁর নিদর্শণ
সমূহ প্রদর্শন
করেন-যাতে তোমরা
চিন্তা কর।
[2:74]
অতঃপর
এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে
গেছে। তা পাথরের
মত অথবা তদপেক্ষাও
কঠিন। পাথরের
মধ্যে এমন ও আছে; যা থেকে ঝরণা
প্রবাহিত হয়, এমনও
আছে, যা বিদীর্ণ
হয়, অতঃপর তা থেকে
পানি নির্গত
হয় এবং এমনও আছে, যা আল্লাহর
ভয়ে খসেপড়তে
থাকে! আল্লাহ তোমাদের
কাজকর্ম সম্পর্কে
বে-খবর নন।
[2:75]
হে
মুসলমানগণ, তোমরা
কি আশা কর যে, তারা
তোমাদের কথায়
ঈমান আনবে? তাদের
মধ্যে একদল ছিল, যারা
আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত; অতঃপর
বুঝে-শুনে তা পরিবর্তন
করে দিত এবং তারা
তা অবগত ছিল।
[2:76]
যখন
তারা মুসলমানদের
সাথে মিলিত
হয়, তখন বলেঃ আমরা
মুসলমান হয়েছি। আর যখন
পরস্পরের সাথে
নিভৃতে অবস্থান করে, তখন বলে, পালনকর্তা
তোমাদের জন্যে
যা প্রকাশ করেছেন, তা কি
তাদের কাছে বলে দিচ্ছ? তাহলে যে তারা
এ নিয়ে পালকর্তার
সামনে তোমাদেরকে
মিথ্যা প্রতিপন্ন
করবে। তোমরা
কি তা উপলব্ধি
কর না?
[2:77]
তারা
কি এতটুকুও জানে
না যে, আল্লাহ সেসব
বিষয়ও পরিজ্ঞাত
যা তারা গোপন করে
এবং যা প্রকাশ
করে?
[2:78]
তোমাদের
কিছু লোক নিরক্ষর। তারা মিথ্যা আকাঙ্খা
ছাড়া আল্লাহর
গ্রন্থের কিছুই
জানে না। তাদের
কাছে কল্পনা ছাড়া কিছুই নেই।
[2:79]
অতএব
তাদের জন্যে আফসোস!
যারা নিজ হাতে
গ্রন্থ লেখে এবং
বলে, এটা আল্লাহর
পক্ষ থেকে অবতীর্ণ-যাতে
এর বিনিময়ে সামান্য অর্থ
গ্রহণ করতে পারে। অতএব
তাদের প্রতি আক্ষেপ, তাদের
হাতের লেখার জন্য এবং তাদের প্রতি
আক্ষেপ, তাদের উপার্জনের
জন্যে।
[2:80]
তারা
বলেঃ আগুন আমাদিগকে
কখনও স্পর্শ
করবে না; কিন্তু
গণাগনতি কয়েকদিন। বলে দিনঃ
তোমরা কি আল্লাহর
কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার
পেয়েছ যে, আল্লাহ
কখনও তার খেলাফ
করবেন না-না তোমরা
যা জান না, তা আল্লাহর সাথে
জুড়ে দিচ্ছ।
[2:81]
হাঁ, যে ব্যক্তি
পাপ অর্জন করেছে এবং সে পাপ
তাকে পরিবেষ্টিত
করে নিয়েছে, তারাই
দোযখের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল
থাকবে।
[2:82]
পক্ষান্তরে
যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই
জান্নাতের অধিবাসী। তারা
সেখানেই চিরকাল
থাকবে।
[2:83]
যখন
আমি বনী-ইসরাঈলের
কাছ থেকে অঙ্গীকার
নিলাম যে, তোমরা
আল্লাহ ছাড়া কারও
উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্নীয়-স্বজন, এতীম
ও দীন-দরিদ্রদের
সাথে সদ্ব্যবহার
করবে, মানুষকে সৎ কথাবার্তা
বলবে, নামায প্রতিষ্ঠা
করবে এবং যাকাত
দেবে, তখন সামান্য
কয়েকজন ছাড়া
তোমরা মুখ ফিরিয়ে
নিলে, তোমরাই অগ্রাহ্যকারী।
[2:84]
যখন
আমি তোমাদের কাছ
থেকে অঙ্গীকার
নিলাম যে, তোমরা
পরস্পর খুনাখুনি
করবে না এবং নিজেদেরকে
দেশ থেকে বহিস্কার
করবে না, তখন তোমরা
তা স্বীকার করেছিলে
এবং তোমরা তার
সাক্ষ্য দিচ্ছিলে।
[2:85]
অতঃপর
তোমরাই পরস্পর
খুনাখুনি করছ এবং তোমাদেরই
একদলকে তাদের দেশ
থেকে বহিস্কার
করছ। তাদের
বিরুদ্ধে পাপ ও অন্যায়ের মাধ্যমে
আক্রমণ করছ। আর যদি
তারাই কারও বন্দী
হয়ে তোমাদের কাছে
আসে, তবে বিনিময়
নিয়ে তাদের মুক্ত
করছ। অথচ তাদের
বহিস্কার করাও
তোমাদের জন্য অবৈধ। তবে কি তোমরা গ্রন্থের
কিয়দংশ বিশ্বাস
কর এবং কিয়দংশ
অবিশ্বাস কর? যারা
এরূপ করে পার্থিব
জীবনে দূগর্তি
ছাড়া তাদের আর
কোনই পথ নেই। কিয়ামতের
দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির
দিকে পৌঁছে দেয়া
হবে। আল্লাহ
তোমাদের কাজ-কর্ম
সম্পর্কে বে-খবর নন।
[2:86]
এরাই
পরকালের বিনিময়ে
পার্থিব জীবন
ক্রয় করেছে। অতএব
এদের শাস্তি লঘু
হবে না এবং এরা
সাহায্যও পাবে
না।
[2:87]
অবশ্যই
আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি। এবং তার
পরে পর্যায়ক্রমে
রসূল পাঠিয়েছি। আমি মরিয়ম
তনয় ঈসাকে সুস্পষ্ট মোজেযা
দান করেছি এবং
পবিত্র রূহের মাধ্যমে
তাকে শক্তিদান
করেছি। অতঃপর যখনই কোন রসূল
এমন নির্দেশ নিয়ে
তোমাদের কাছে এসেছে, যা তোমাদের
মনে ভাল লাগেনি, তখনই
তোমরা অহংকার করেছ। শেষ পর্যন্ত
তোমরা একদলকে মিথ্যাবাদী
বলেছ এবং একদলকে
হত্যা করেছ।
[2:88]
তারা
বলে, আমাদের হৃদয় অর্ধাবৃত। এবং তাদের
কুফরের কারণে আল্লাহ
অভিসম্পাত করেছেন। ফলে তারা
অল্পই ঈমান আনে।
[2:89]
যখন
তাদের কাছে আল্লাহর
পক্ষ থেকে কিতাব
এসে পৌঁছাল, যা সে
বিষয়ের সত্যায়ন
করে, যা তাদের কাছে
রয়েছে এবং তারা পূর্বে করত। অবশেষে
যখন তাদের কাছে
পৌঁছল যাকে তারা
চিনে রেখেছিল, তখন তারা তা অস্বীকার করে
বসল। অতএব, অস্বীকারকারীদের
উপর আল্লাহর অভিসম্পাত।
[2:90]
যার
বিনিময়ে তারা
নিজেদের বিক্রি
করেছে, তা খুবই মন্দ; যেহেতু
তারা আল্লাহ যা
নযিল করেছেন, তা অস্বীকার করেছে এই হঠকারিতার
দরুন যে, আল্লাহ
স্বীয় বান্দাদের
মধ্যে যার প্রতি
ইচ্ছা অনুগ্রহ
নাযিল করেন। অতএব, তারা
ক্রোধের উপর ক্রোধ
অর্জন করেছে। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে অপমানজনক
শাস্তি।
[2:91]
যখন
তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা পাঠিয়েছেন
তা মেনে নাও, তখন তারা
বলে, আমরা মানি
যা আমাদের প্রতি
অবর্তীণ হয়েছে। সেটি
ছাড়া সবগুলোকে
তারা অস্বীকার
করে। অথচ এ
গ্রন্থটি সত্য
এবং সত্যায়ন
করে ঐ গ্রন্থের
যা তাদের কাছে
রয়েছে। বলে দিন, তবে তোমরা
ইতিপূর্বে পয়গম্বরদের
হত্যা করতে কেন
যদি তোমরা বিশ্বাসী
ছিলে?
[2:92]
সুস্পষ্ট
মু’জেযাসহ মূসা তোমাদের কাছে
এসেছেন। এরপর
তার অনুপস্থিতিতে
তোমরা গোবৎস বানিয়েছ। বাস্তবিকই তোমরা অত্যাচারী।
[2:93]
আর
যখন আমি তোমাদের
কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি
নিলাম এবং তুর
পর্বতকে তোমাদের
উপর তুলে ধরলাম
যে, শক্ত করে ধর, আমি যা তোমাদের দিয়েছি
আর শোন। তারা
বলল, আমরা শুনেছি
আর অমান্য করেছি। কুফরের কারণে তাদের অন্তরে
গোবৎসপ্রীতি
পান করানো হয়েছিল। বলে দিন, তোমরা
বিশ্বাসী হলে, তোমাদের
সে বিশ্বাস মন্দ
বিষয়াদি শিক্ষা
দেয়।
[2:94]
বলে
দিন, যদি আখেরাতের বাসস্থান আল্লাহর
কাছে একমাত্র তোমাদের
জন্যই বরাদ্দ হয়ে
থাকে-অন্য লোকদের
বাদ দিয়ে, তবে মৃত্যু
কামনা কর, যদি সত্যবাদী
হয়ে থাক।
[2:95]
কস্মিনকালেও
তারা মৃত্যু কামনা করবে না ঐসব গোনাহর
কারণে, যা তাদের হাত
পাঠিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ
গোনাহগারদের সম্পর্কে সম্যক
অবগত রয়েছেন।
[2:96]
আপনি
তাদেরকে জীবনের
প্রতি সবার
চাইতে, এমনকি মুশরিকদের
চাইতেও অধিক লোভী
দেখবেন। তাদের
প্রত্যেকে কামনা করে, যেন হাজার
বছর আয়ু পায়। অথচ এরূপ
আয়ু প্রাপ্তি
তাদেরকে শাস্তি
থেকে রক্ষা
করতে পারবে না। আল্লাহ
দেখেন যা কিছু
তারা করে।
[2:97]
আপনি
বলে দিন, যে কেউ জিবরাঈলের শত্রু
হয়-যেহেতু তিনি
আল্লাহর আদেশে
এ কালাম আপনার
অন্তরে নাযিল করেছেন, যা সত্যায়নকারী
তাদের সম্মুখস্থ
কালামের এবং মুমিনদের
জন্য পথপ্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা।
[2:98]
যে
ব্যক্তি আল্লাহ
তাঁর ফেরেশতা
ও রসূলগণ এবং জিবরাঈল
ও মিকাঈলের শত্রু
হয়, নিশ্চিতই
আল্লাহ সেসব কাফেরের শত্রু।
[2:99]
আমি
আপনার প্রতি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ
অবতীর্ণ করেছি। অবাধ্যরা
ব্যতীত কেউ এগুলো
অস্বীকার করে না।
[2:100]
কি
আশ্চর্য, যখন তারা
কোন অঙ্গীকারে
আবদ্ধ হয়, তখন তাদের
একদল তা ছুঁড়ে
ফেলে, বরং অধিকাংশই
বিশ্বাস করে না।
[2:101]
যখন
তাদের কাছে আল্লাহর
পক্ষ থেকে একজন
রসূল আগমন করলেন-যিনি
ঐ কিতাবের সত্যায়ন
করেন, যা তাদের কাছে
রয়েছে, তখন আহলে কেতাবদের
একদল আল্লাহর গ্রন্থকে
পশ্চাতে নিক্ষেপ
করল-যেন তারা জানেই না।
[2:102]
তারা
ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ
করল, যা সুলায়মানের
রাজত্ব কালে শয়তানরা
আবৃত্তি করত। সুলায়মান
কুফর করেনি; শয়তানরাই
কুফর করেছিল। তারা
মানুষকে জাদুবিদ্যা
এবং বাবেল শহরে
হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার
প্রতি যা অবতীর্ণ
হয়েছিল, তা শিক্ষা
দিত। তারা উভয়ই
একথা না বলে কাউকে শিক্ষা
দিত না যে, আমরা
পরীক্ষার জন্য; কাজেই
তুমি কাফের হয়ো
না। অতঃপর তারা তাদের কাছ
থেকে এমন জাদু
শিখত, যদ্দ্বারা
স্বামী ও স্ত্রীর
মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর
আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা
কারও অনিষ্ট করতে
পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং
উপকার না করে, তারা
তাই শিখে। তারা
ভালরূপে জানে যে, যে কেউ
জাদু অবলম্বন
করে, তার জন্য পরকালে
কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে
তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ
যদি তারা জানত।
[2:103]
যদি
তারা ঈমান আনত
এবং খোদাভীরু
হত, তবে আল্লাহর
কাছ থেকে উত্তম
প্রতিদান পেত। যদি তারা
জানত।
[2:104]
হে
মুমিন গণ, তোমরা
‘রায়িনা’ বলো না-‘উনযুরনা’ বল এবং
শুনতে থাক। আর কাফেরদের
জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
[2:105]
আহলে-কিতাব
ও মুশরিকদের মধ্যে যারা কাফের, তাদের
মনঃপুত নয় যে, তোমাদের
পালনকর্তার পক্ষ
থেকে তোমাদের প্রতি কোন কল্যাণ অবতীর্ণ
হোক। আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা বিশেষ
ভাবে স্বীয় অনুগ্রহ
দান করেন। আল্লাহ মহান অনুগ্রহদাতা।
[2:106]
আমি
কোন আয়াত রহিত
করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে
দিলে তদপেক্ষা
উত্তম অথবা তার
সমপর্যায়ের আয়াত
আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ
সব কিছুর উপর শক্তিমান?
[2:107]
তুমি
কি জান না যে, আল্লাহর জন্যই নভোমন্ডল
ও ভূমন্ডলের আধিপত্য? আল্লাহ
ব্যতীত তোমাদের
কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী
নেই।
[2:108]
ইতিপূর্বে
মূসা (আঃ) যেমন জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন, (মুসলমানগন, ) তোমরাও
কি তোমাদের রসূলকে
তেমনি প্রশ্ন করতে চাও? যে কেউ ঈমানের
পরিবর্তে কুফর
গ্রহন করে, সে সরল
পথ থেকে বিচ্যুত
হয়ে যায়।
[2:109]
আহলে
কিতাবদের অনেকেই প্রতিহিংসাবশতঃ
চায় যে, মুসলমান
হওয়ার পর তোমাদেরকে
কোন রকমে কাফের
বানিয়ে দেয়। তাদের
কাছে সত্য প্রকাশিত
হওয়ার পর (তারা
এটা চায়)। যাক তোমরা
আল্লাহর নির্দেশ
আসা পর্যন্ত তাদের
ক্ষমা কর এবং উপেক্ষা
কর। নিশ্চয় আল্লাহ
সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
[2:110]
তোমরা
নামায প্রতিষ্ঠা
কর এবং যাকাত
দাও। তোমরা
নিজের জন্যে পূর্বে
যে সৎকর্ম
প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর
কাছে পাবে। তোমরা
যা কিছু কর, নিশ্চয়
আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ
করেন।
[2:111]
ওরা
বলে, ইহুদী অথবা
খ্রীস্টান ব্যতীত কেউ জান্নাতে
যাবে না। এটা ওদের
মনের বাসনা। বলে দিন, তোমরা
সত্যবাদী হলে, প্রমাণ উপস্থিত
কর।
[2:112]
হাঁ, যে ব্যক্তি
নিজেকে আল্লাহর
উদ্দেশ্যে সমর্পন
করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে
তার জন্য তার পালনকর্তার কাছে পুরস্কার
বয়েছে। তাদের
ভয় নেই এবং তারা
চিন্তিতও হবে না।
[2:113]
ইহুদীরা
বলে, খ্রীস্টানরা
কোন ভিত্তির
উপরেই নয় এবং
খ্রীস্টানরা বলে, ইহুদীরা
কোন ভিত্তির উপরেই
নয়। অথচ ওরা সবাই কিতাব পাঠ
করে! এমনিভাবে
যারা মূর্খ, তারাও
ওদের মতই উক্তি
করে। অতএব, আল্লাহ
কেয়ামতের দিন
তাদের মধ্যে ফয়সালা
দেবেন, যে বিষয়ে
তারা মতবিরোধ করছিল।
[2:114]
যে
ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর
নাম উচ্চারণ করতে
বাধা দেয় এবং
সেগুলোকে উজাড়
করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে
বড় যালেম আর কে? এদের
পক্ষে মসজিদসমূহে
প্রবেশ করা বিধেয়
নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত
অবস্থায়। ওদের
জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা
এবং পরকালে কঠিন
শাস্তি রয়েছে।
[2:115]
পূর্ব
ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা
যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেদিকেই
আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয়
আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।
[2:116]
তারা
বলে, আল্লাহ সন্তান
গ্রহণ করেছেন। তিনি
তো এসব কিছু থেকে
পবিত্র, বরং নভোমন্ডল
ও ভূমন্ডলে যা
কিছু রয়েছে সবই তার আজ্ঞাধীন।
[2:117]
তিনি
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি
কোন কার্য সম্পাদনের
সিন্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে
একথাই বলেন, ‘হয়ে
যাও’ তৎক্ষণাৎ
তা হয়ে যায়।
[2:118]
যারা
কিছু জানে না, তারা
বলে, আল্লাহ আমাদের
সঙ্গে কেন কথা
বলেন না? অথবা
আমাদের কাছে কোন
নিদর্শন কেন আসে
না? এমনি ভাবে
তাদের পূর্বে যারা
ছিল তারাও তাদেরই
অনুরূপ কথা বলেছে। তাদের
অন্তর একই রকম। নিশ্চয়
আমি উজ্জ্বল নিদর্শনসমূহ
বর্ণনা করেছি তাদের
জন্যে যারা প্রত্যয়শীল।
[2:119]
নিশ্চয়
আমি আপনাকে সত্যধর্মসহ সুসংবাদদাতা
ও ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে
পাঠিয়েছি। আপনি
দোযখবাসীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন
না।
[2:120]
ইহুদী
ও খ্রীষ্টানরা
কখনই আপনার
প্রতি সন্তুষ্ট
হবে না, যে পর্যন্ত
না আপনি তাদের
ধর্মের অনুসরণ
করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ
প্রদর্শন করেন, তাই হল
সরল পথ। যদি আপনি
তাদের আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান
লাভের পর, যা আপনার
কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ
আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী
ও সাহায্যকারী
নেই।
[2:121]
আমি
যাদেরকে গ্রন্থ
দান করেছি, তারা
তা যথাযথভাবে পাঠ
করে। তারাই
তৎপ্রতি বিশ্বাস
করে। আর যারা
তা অবিশ্বাস করে, তারাই হবে
ক্ষতিগ্রস্ত।
[2:122]
হে
বনী-ইসরাঈল! আমার
অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যা আমি
তোমাদের দিয়েছি। আমি তোমাদেরকে
বিশ্বাবাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান
করেছি।
[2:123]
তোমরা
ভয় কর সেদিনকে, যে দিন এক ব্যক্তি থেকে
অন্য ব্যক্তি বিন্দুমাত্র
উপকৃত হবে না, কারও
কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না, কার ও
সুপারিশ ফলপ্রদ
হবে না এবং তারা
সাহায্য প্রাপ্ত
ও হবে না।
[2:124]
যখন
ইব্রাহীমকে তাঁর
পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে
পরীক্ষা করলেন, অতঃপর
তিনি তা পূর্ণ
করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে
মানবজাতির নেতা
করব। তিনি বললেন, আমার
বংশধর থেকেও! তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার
অত্যাচারীদের
পর্যন্ত পৌঁছাবে
না।
[2:125]
যখন
আমি কা’বা গৃহকে মানুষের জন্যে সম্মিলন
স্থল ও শান্তির
আলয় করলাম, আর তোমরা
ইব্রাহীমের দাঁড়ানোর জায়গাকে নামাযের
জায়গা বানাও এবং
আমি ইব্রাহীম ও
ইসমাঈলকে আদেশ
করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, অবস্থানকারী
ও রুকু-সেজদাকারীদের
জন্য পবিত্র রাখ।
[2:126]
যখন
ইব্রাহীম বললেন, পরওয়ারদেগার!
এ স্থানকে তুমি
শান্তিধান কর এবং
এর অধিবাসীদের
মধ্যে যারা অল্লাহ ও কিয়ামতে বিশ্বাস
করে, তাদেরকে ফলের
দ্বারা রিযিক দান
কর। বললেনঃ যারা অবিশ্বাস করে, আমি তাদেরও
কিছুদিন ফায়দা
ভোগ করার সুযোগ
দেব, অতঃপর তাদেরকে বলপ্রয়োগে দোযখের
আযাবে ঠেলে দেবো; সেটা
নিকৃষ্ট বাসস্থান।
[2:127]
স্মরণ
কর, যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল
কা’বাগৃহের ভিত্তি
স্থাপন করছিল। তারা
দোয়া করেছিলঃ
পরওয়ারদেগার! আমাদের থেকে কবুল
কর। নিশ্চয়ই
তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।
[2:128]
পরওয়ারদেগার!
আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ
কর এবং আমাদের
বংশধর থেকেও একটি
অনুগত দল সৃষ্টি
কর, আমাদের হজ্বের রীতিনীতি
বলে দাও এবং আমাদের
ক্ষমা কর। নিশ্চয়
তুমি তওবা কবুলকারী। দয়ালু।
[2:129]
হে
পরওয়ারদেগার!
তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট
একজন পয়গম্বর
প্রেরণ করুণ যিনি
তাদের কাছে তোমার
আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে
কিতাব ও হেকমত
শিক্ষা দিবেন। এবং তাদের
পবিত্র করবেন। নিশ্চয় তুমিই
পরাক্রমশালী হেকমতওয়ালা।
[2:130]
ইব্রাহীমের
ধর্ম থেকে কে মুখ ফেরায়? কিন্তু
সে ব্যক্তি, যে নিজেকে
বোকা প্রতিপন্ন
করে। নিশ্চয়ই
আমি তাকে পৃথিবীতে
মনোনীত করেছি এবং
সে পরকালে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
[2:131]
স্মরণ
কর, যখন তাকে তার পালনকর্তা বললেনঃ
অনুগত হও। সে বললঃ
আমি বিশ্বপালকের
অনুগত হলাম।
[2:132]
এরই
ওছিয়ত করেছে ইব্রাহীম
তার সন্তানদের
এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার
সন্তানগণ, নিশ্চয়
আল্লাহ তোমাদের
জন্য এ ধর্মকে
মনোনীত করেছেন। কাজেই
তোমরা মুসলমান
না হয়ে কখনও মৃত্যুবরণ
করো না।
[2:133]
তোমরা
কি উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের মৃত্যু
নিকটবর্তী হয়? যখন সে
সন্তানদের বললঃ
আমার পর তোমরা
কার এবাদত করবে? তারা বললো, আমরা
তোমার পিতৃ-পুরুষ
ইব্রাহীম, ইসমাঈল
ও ইসহাকের উপাস্যের এবাদত করব। তিনি
একক উপাস্য।
[2:134]
আমরা
সবাই তাঁর আজ্ঞাবহ। তারা ছিল এক সম্প্রদায়-যারা
গত হয়ে গেছে। তারা
যা করেছে, তা তাদেরই
জন্যে। তারা
কি করত, সে সম্পর্কে
তোমরা জিজ্ঞাসিত
হবে না।
[2:135]
তারা
বলে, তোমরা ইহুদী
অথবা খ্রীষ্টান
হয়ে যাও, তবেই
সুপথ পাবে। আপনি
বলুন, কখনই নয়; বরং আমরা
ইব্রাহীমের ধর্মে আছি যাতে
বক্রতা নেই। সে মুশরিকদের
অন্তর্ভুক্ত ছিল
না।
[2:136]
তোমরা
বল, আমরা ঈমান
এনেছি আল্লাহর
উপর এবং যা অবতীর্ণ
হয়েছে আমাদের
প্রতি এবং যা অবতীর্ণ
হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব
এবং তদীয় বংশধরের
প্রতি এবং মূসা, ঈসা, অন্যান্য
নবীকে পালনকর্তার
পক্ষ থেকে যা দান
করা হয়েছে, তৎসমুদয়ের উপর। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য
করি না। আমরা
তাঁরই আনুগত্যকারী।
[2:137]
অতএব
তারা যদি ঈমান
আনে, তোমাদের ঈমান
আনার মত, তবে তারা
সুপথ পাবে। আর যদি
মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতরাং
এখন তাদের জন্যে
আপনার পক্ষ থেকে
আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
[2:138]
আমরা
আল্লাহর রং গ্রহণ
করেছি। আল্লাহর রং এর
চাইতে উত্তম রং
আর কার হতে পারে?আমরা
তাঁরই এবাদত করি।
[2:139]
আপনি
বলে দিন, তোমরা
কি আমাদের সাথে আল্লাহ সম্পর্কে
তর্ক করছ? অথচ তিনিই
আমাদের পালনকর্তা
এবং তোমাদের ও পালনকর্তা। আমাদের
জন্যে আমাদের কর্ম
তোমাদের জন্যে
তোমাদের কর্ম। এবং আমরা তাঁরই প্রতি একনিষ্ঠ।
[2:140]
অথবা
তোমরা কি বলছ যে, নিশ্চয়ই
ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব
(আঃ) ও তাদের সন্তানগন
ইহুদী অথবা খ্রীষ্টান ছিলেন? আপনি
বলে দিন, তোমরা
বেশী জান, না আল্লাহ
বেশী জানেন?
[2:141]
তার
চাইতে অত্যাচারী
কে, যে আল্লাহর
পক্ষ থেকে তার
কাছে প্রমাণিত
সাক্ষ্যকে গোপন
করে? আল্লাহ তোমাদের
কর্ম সম্পর্কে
বেখবর নন। সে সম্প্রদায়
অতীত হয়ে গেছে। তারা
যা করেছে, তা তাদের জন্যে এবং তোমরা
যা করছ, তা তোমাদের
জন্যে। তাদের
কর্ম সম্পর্কে
তোমাদের জিজ্ঞেস করা হবে না।
[2:142]
এখন
নির্বোধেরা বলবে, কিসে মুসলমানদের ফিরিয়ে
দিল তাদের ঐ কেবলা
থেকে, যার উপর তারা
ছিল? আপনি বলুনঃ
পূর্ব ও পশ্চিম
আল্লাহরই। তিনি
যাকে ইচ্ছা সরল
পথে চালান।
[2:143]
এমনিভাবে
আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায়
করেছি যাতে করে
তোমরা সাক্ষ্যদাতা
হও মানবমন্ডলীর
জন্যে এবং যাতে
রসূল সাক্ষ্যদাতা
হন তোমাদের জন্য। আপনি
যে কেবলার উপর
ছিলেন, তাকে আমি এজন্যই কেবলা
করেছিলাম, যাতে
একথা প্রতীয়মান
হয় যে, কে রসূলের
অনুসারী থাকে আর কে পিঠটান দেয়। নিশ্চিতই
এটা কঠোরতর বিষয়, কিন্তু
তাদের জন্যে নয়, যাদেরকে আল্লাহ পথপ্রদর্শন
করেছেন। আল্লাহ
এমন নন যে, তোমাদের
ঈমান নষ্ট করে
দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ, মানুষের
প্রতি অত্যন্ত
স্নেহশীল, করুনাময়।
[2:144]
নিশ্চয়ই
আমি আপনাকে বার
বার আকাশের
দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই
আমি আপনাকে সে
কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে
দেব যাকে আপনি
পছন্দ করেন। এখন আপনি
মসজিদুল-হারামের
দিকে মুখ করুন
এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে
মুখ কর। যারা
আহলে-কিতাব, তারা
অবশ্যই জানে যে, এটাই
ঠিক পালনকর্তার
পক্ষ থেকে। আল্লাহ
বেখবর নন, সে সমস্ত
কর্ম সম্পর্কে
যা তারা করে।
[2:145]
যদি
আপনি আহলে কিতাবদের
কাছে সমুদয়
নিদর্শন উপস্থাপন
করেন, তবুও তারা
আপনার কেবলা মেনে
নেবে না এবং আপনিও তাদের কেবলা মানেন
না। তারাও একে
অন্যের কেবলা মানে
না। যদি আপনি তাদের
বাসনার অনুসরণ
করেন, সে জ্ঞানলাভের
পর, যা আপনার কাছে
পৌঁছেছে, তবে নিশ্চয়
আপনি অবিচারকারীদের অন্তর্ভুক্ত
হবেন।
[2:146]
আমি
যাদেরকে কিতাব
দান করেছি, তারা
তাকে চেনে, যেমন
করে চেনে নিজেদের
পুত্রদেরকে। আর নিশ্চয়ই
তাদের একটি সম্প্রদায় জেনে
শুনে সত্যকে গোপন
করে।
[2:147]
বাস্তব
সত্য সেটাই যা
তোমার পালনকর্তা
বলেন। কাজেই
তুমি সন্দিহান
হয়ো না।
[2:148]
আর
সবার জন্যই রয়েছে
কেবলা একেক
দিকে, যে দিকে সে
মুখ করে (এবাদত
করবে)। কাজেই
সৎকাজে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এগিয়ে যাও। যেখানেই
তোমরা থাকবে, আল্লাহ
অবশ্যই তোমাদেরকে
সমবেত করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ
সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।
[2:149]
আর
যে স্থান থেকে
তুমি বের হও, নিজের
মুখ মসজিদে হারামের
দিকে ফেরাও-নিঃসন্দেহে
এটাই হলো তোমার
পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্ধারিত
বাস্তব সত্য। বস্তুতঃ
তোমার পালনকর্তা
তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনবহিত
নন।
[2:150]
আর
তোমরা যেখান থেকেই
বেরিয়ে আস এবং
যেখানেই অবস্থান
কর, সেদিকেই মুখ
ফেরাও, যাতে করে মানুষের
জন্য তোমাদের সাথে ঝগড়া করার
অবকাশ না থাকে। অবশ্য
যারা অবিবেচক, তাদের
কথা আলাদা। কাজেই তাদের আপত্তিতে
ভীত হয়ো না। আমাকেই
ভয় কর। যাতে
আমি তোমাদের জন্যে
আমার অনুগ্রহ সমূহ পূর্ণ করে
দেই এবং তাতে যেন
তোমরা সরলপথ প্রাপ্ত
হও।
[2:151]
যেমন, আমি পাঠিয়েছি
তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের
জন্যে একজন রসূল, যিনি
তোমাদের নিকট আমার
বাণীসমুহ পাঠ করবেন এবং তোমাদের পবিত্র
করবেন; আর তোমাদের
শিক্ষা দেবেন কিতাব
ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান এবং শিক্ষা দেবেন
এমন বিষয় যা কখনো
তোমরা জানতে না।
[2:152]
সুতরাং
তোমরা আমাকে স্মরণ
কর, আমিও তোমাদের
স্মরণ রাখবো এবং
আমার কৃতজ্ঞতা
প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ
হয়ো না।
[2:153]
হে
মুমিন গন! তোমরা
ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে
সাহায্য প্রার্থনা
কর। নিশ্চিতই
আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের
সাথে রয়েছেন।
[2:154]
আর
যারা আল্লাহর রাস্তায়
নিহত হয়, তাদের
মৃত বলো না। বরং তারা
জীবিত, কিন্তু তোমরা
তা বুঝ না।
[2:155]
এবং
অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা
ভয়, ক্ষুধা, মাল ও
জানের ক্ষতি ও
ফল-ফসল বিনষ্টের
মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও
সবরকারীদের।
[2:156]
যখন
তারা বিপদে পতিত
হয়, তখন বলে, নিশ্চয়
আমরা সবাই আল্লাহর
জন্য এবং আমরা
সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে
ফিরে যাবো।
[2:157]
তারা
সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর
অফুরন্ত অনুগ্রহ
ও রহমত রয়েছে
এবং এসব লোকই হেদায়েত
প্রাপ্ত।
[2:158]
নিঃসন্দেহে
সাফা ও মারওয়া আল্লাহ তা’আলার
নিদর্শন গুলোর
অন্যতম। সুতরাং
যারা কা’বা ঘরে
হজ্ব বা ওমরাহ
পালন করে, তাদের
পক্ষে এ দুটিতে
প্রদক্ষিণ করাতে
কোন দোষ নেই। বরং কেউ
যদি স্বেচ্ছায় কিছু নেকীর কাজ
করে, তবে আল্লাহ
তা’আলার অবশ্যই
তা অবগত হবেন এবং
তার সে আমলের সঠিক মুল্য দেবেন।
[2:159]
নিশ্চয়
যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত
তথ্য এবং হেদায়েতের
কথা নাযিল করেছি
মানুষের জন্য কিতাবের
মধ্যে বিস্তারিত
বর্ণনা করার পরও; সে সমস্ত
লোকের প্রতিই আল্লাহর
অভিসম্পাত এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীগণের
ও।
[2:160]
তবে
যারা তওবা করে
এবং বর্ণিত তথ্যাদির সংশোধন
করে মানুষের কাছে
তা বর্ণনা করে
দেয়, সে সমস্ত লোকের
তওবা আমি কবুল
করি এবং আমি তওবা
কবুলকারী পরম দয়ালু।
[2:161]
নিশ্চয়
যারা কুফরী করে
এবং কাফের
অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ
করে, সে সমস্ত লোকের
প্রতি আল্লাহর
ফেরেশতাগনের এবং সমগ্র মানুষের
লা’নত।
[2:162]
এরা
চিরকাল এ লা’নতের
মাঝেই থাকবে। তাদের
উপর থেকে আযাব
কখনও হালকা করা
হবে না বরং এরা
বিরাম ও পাবে না।
[2:163]
আর
তোমাদের উপাস্য
একইমাত্র উপাস্য। তিনি
ছাড়া মহা করুণাময়
দয়ালু কেউ নেই।
[2:164]
নিশ্চয়ই
আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও
দিনের বিবর্তনে
এবং নদীতে নৌকাসমূহের
চলাচলে মানুষের
জন্য কল্যাণ
রয়েছে। আর আল্লাহ
তা’ আলা আকাশ থেকে
যে পানি নাযিল
করেছেন, তদ্দ্বারা মৃত যমীনকে সজীব
করে তুলেছেন এবং
তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন
সবরকম জীব-জন্তু। আর আবহাওয়া পরিবর্তনে
এবং মেঘমালার যা
তাঁরই হুকুমের
অধীনে আসমান ও
যমীনের মাঝে বিচরণ করে, নিশ্চয়ই
সে সমস্ত বিষয়ের
মাঝে নিদর্শন রয়েছে
বুদ্ধিমান সম্প্রদায়ের
জন্যে।
[2:165]
আর
কোন লোক এমনও রয়েছে
যারা অন্যান্যকে
আল্লাহর সমকক্ষ
সাব্যস্ত করে এবং
তাদের প্রতি তেমনি
ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর
প্রতি ভালবাসা
হয়ে থাকে। কিন্তু
যারা আল্লাহর প্রতি
ঈমানদার তাদের
ভালবাসা ওদের তুলনায়
বহুগুণ বেশী। আর কতইনা
উত্তম হ’ত যদি
এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ
করেই উপলব্ধি করে
নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা
শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য
এবং আল্লাহর আযাবই
সবচেয়ে কঠিনতর।
[2:166]
অনুসৃতরা
যখন অনুসরণকারীদের প্রতি অসন্তুষ্ট
হয়ে যাবে এবং
যখন আযাব প্রত্যক্ষ
করবে আর বিচ্ছিন্ন
হয়ে যাবে তাদের পারস্পরিক
সমস্ত সম্পর্ক।
[2:167]
এবং
অনুসারীরা বলবে, কতইনা
ভাল হত, যদি আমাদিগকে
পৃথিবীতে ফিরে
যাবার সুযোগ দেয়া
হত। তাহলে আমরাও
তাদের প্রতি তেমনি অসন্তুষ্ট
হয়ে যেতাম, যেমন
তারা অসন্তুষ্ট
হয়েছে আমাদের
প্রতি। এভাবেই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে
দেখাবেন তাদের
কৃতকর্ম তাদেরকে
অনুতপ্ত করার জন্যে। অথচ, তারা
কস্মিনকালেও আগুন
থেকে বের হতে পারবে
না।
[2:168]
হে
মানব মন্ডলী, পৃথিবীর
হালাল ও পবিত্র
বস্তু-সামগ্রী
ভক্ষন কর। আর শয়তানের
পদাঙ্ক অনুসরণ
করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের
প্রকাশ্য শত্রু।
[2:169]
সে
তো এ নির্দেশই
তোমাদিগকে দেবে যে, তোমরা
অন্যায় ও অশ্লীল
কাজ করতে থাক এবং
আল্লাহর প্রতি
এমন সব বিষয়ে মিথ্যারোপ কর
যা তোমরা জান না।
[2:170]
আর
যখন তাদেরকে কেউ
বলে যে, সে হুকুমেরই
আনুগত্য কর যা
আল্লাহ তা’আলা নাযিল
করেছেন, তখন তারা বলে
কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই
অনুসরণ করব। যাতে
আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে
দেখেছি। যদি ও
তাদের বাপ দাদারা
কিছুই জানতো না, জানতো
না সরল পথও।
[2:171]
বস্তুতঃ
এহেন কাফেরদের
উদাহরণ এমন, যেন কেউ
এমন কোন জীবকে
আহবান করছে যা
কোন কিছুই শোনে
না, হাঁক-ডাক আর চিৎকার ছাড়া
বধির মুক, এবং অন্ধ। সুতরাং
তারা কিছুই বোঝে
না।
[2:172]
হে
ঈমানদারগণ, তোমরা
পবিত্র বস্তু
সামগ্রী আহার কর, যেগুলো
আমি তোমাদেরকে
রুযী হিসাবে দান
করেছি এবং শুকরিয়া আদায়
কর আল্লাহর, যদি তোমরা
তাঁরই বন্দেগী
কর।
[2:173]
তিনি
তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শুকর
মাংস এবং সেসব
জীব-জন্তু যা আল্লাহ
ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য
যে লোক অনন্যোপায়
হয়ে পড়ে এবং
নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী
না হয়, তার জন্য কোন
পাপ নেই। নিঃসন্দেহে
আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত
দয়ালু।
[2:174]
নিশ্চয়
যারা সেসব বিষয়
গোপন করে, যা আল্লাহ
কিতাবে নাযিল করেছেন
এবং সেজন্য অল্প
মূল্য গ্রহণ করে, তারা
আগুন ছাড়া
নিজের পেটে আর
কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ
কেয়ামতের দিন
তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের
পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ
তাদের জন্যে রয়েছে
বেদনাদায়ক আযাব।
[2:175]
এরাই
হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে
গোমরাহী খরিদ করেছে
এবং (খরিদ করেছে)
ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা
দোযখের উপর কেমন
ধৈর্য্য ধারণকারী।
[2:176]
আর
এটা এজন্যে যে, আল্লাহ নাযিল করেছেন
সত্যপূর্ণ কিতাব। আর যারা
কেতাবের মাঝে মতবিরোধ
সৃষ্টি করেছে নিশ্চয়ই তারা
জেদের বশবর্তী
হয়ে অনেক দূরে
চলে গেছে।
[2:177]
সৎকর্ম শুধু এই
নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে
মুখ করবে, বরং বড়
সৎকাজ হল এই
যে, ঈমান আনবে
আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের
উপর, ফেরেশতাদের
উপর এবং সমস্ত
নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ
ব্যয় করবে
তাঁরই মহব্বতে
আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক
ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের
জন্যে। আর যারা
নামায প্রতিষ্ঠা
করে, যাকাত দান
করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী
এবং অভাবে, রোগে-শোকে
ও যুদ্ধের সময়
ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই
পরহেযগার।
[2:178]
হে
ঈমানদারগন! তোমাদের
প্রতি নিহতদের
ব্যাপারে কেসাস
গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ
করা হয়েছে। স্বাধীন
ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের
বদলায় এবং নারী
নারীর বদলায়। অতঃপর
তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে
কিছুটা মাফ করে
দেয়া হয়, তবে প্রচলিত
নিয়মের অনুসরণ
করবে এবং ভালভাবে
তাকে তা প্রদান
করতে হবে। এটা তোমাদের
পালনকর্তার তরফ
থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও
যে ব্যাক্তি বাড়াবাড়ি
করে, তার জন্য রয়েছে
বেদনাদায়ক আযাব।
[2:179]
হে
বুদ্ধিমানগণ! কেসাসের
মধ্যে তোমাদের
জন্যে জীবন রয়েছে, যাতে
তোমরা সাবধান হতে
পার।
[2:180]
তোমাদের
কারো যখন মৃত্যুর
সময় উপস্থিত
হয়, সে যদি কিছু
ধন-সম্পদ ত্যাগ
করে যায়, তবে তার
জন্য ওসীয়ত করা বিধিবদ্ধ করা
হলো, পিতা-মাতা
ও নিকটাত্নীয়দের
জন্য ইনসাফের সাথে
পরহেযগারদের জন্য এ নির্দেশ
জরুরী। নিশ্চয়
আল্লাহ তা’আলা সবকিছু
শোনেন ও জানেন।
[2:181]
যদি
কেউ ওসীয়ত শোনার
পর তাতে কোন রকম
পরিবর্তন সাধন
করে, তবে যারা পরিবর্তন
করে তাদের উপর
এর পাপ পতিত হবে।
[2:182]
যদি
কেউ ওসীয়তকারীর
পক্ষ থেকে আশংকা করে পক্ষপাতিত্বের
অথবা কোন অপরাধমূলক
সিদ্ধান্তের এবং
তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, তবে তার
কোন গোনাহ হবে
না। নিশ্চয় আল্লাহ
তা’আলা ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।
[2:183]
হে
ঈমানদারগণ! তোমাদের
উপর রোজা ফরয
করা হয়েছে, যেরূপ
ফরজ করা হয়েছিল
তোমাদের পূর্ববর্তী
লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী
অর্জন করতে পার।
[2:184]
গণনার
কয়েকটি দিনের
জন্য অতঃপর
তোমাদের মধ্যে
যে, অসুখ থাকবে
অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে
অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে
নিতে হবে। আর এটি
যাদের জন্য অত্যন্ত
কষ্ট দায়ক হয়, তারা
এর পরিবর্তে
একজন মিসকীনকে
খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি
খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণ
কর হয়। আর যদি
রোজা রাখ, তবে তোমাদের
জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা
তা বুঝতে পার।
[2:185]
রমযান
মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে
কোরআন, যা মানুষের
জন্য হেদায়েত
এবং সত্যপথ যাত্রীদের
জন্য সুষ্পষ্ট
পথ নির্দেশ আর
ন্যায় ও অন্যায়ের
মাঝে পার্থক্য
বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে
যে লোক এ মাসটি
পাবে, সে এ মাসের
রোযা রাখবে। আর যে
লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির
অবস্থায় থাকবে
সে অন্য দিনে গণনা
পূরণ করবে। আল্লাহ
তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের
জন্য জটিলতা কামনা
করেন না যাতে তোমরা
গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত
দান করার দরুন
আল্লাহ তা’আলার
মহত্ত্ব বর্ণনা
কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার
কর।
[2:186]
আর
আমার বান্দারা
যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস
করে আমার ব্যাপারে
বস্তুতঃ আমি রয়েছি
সন্নিকটে। যারা
প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা
কবুল করে নেই, যখন আমার
কাছে প্রার্থনা
করে। কাজেই
আমার হুকুম
মান্য করা এবং
আমার প্রতি নিঃসংশয়ে
বিশ্বাস করা তাদের
একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে
আসতে পারে।
[2:187]
রোযার
রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা
তোমাদের জন্য হালাল
করা হয়েছে। তারা
তোমাদের পরিচ্ছদ
এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ
অবগত রয়েছেন যে, তোমরা
আত্নপ্রতারণা
করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা
করেছেন এবং তোমাদের
অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর
তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে
সহবাস কর এবং যা
কিছু তোমাদের জন্য
আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরন কর। আর পানাহার
কর যতক্ষণ না কাল
রেখা থেকে ভোরের
শুভ্র রেখা পরিষ্কার
দেখা যায়। অতঃপর
রোযা পূর্ণ কর
রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ
তোমরা এতেকাফ অবস্থায়
মসজিদে অবস্থান
কর, ততক্ষণ পর্যন্ত
স্ত্রীদের সাথে
মিশো না। এই হলো
আল্লাহ কর্তৃক
বেঁধে দেয়া
সীমানা। অতএব, এর কাছেও
যেও না। এমনিভাবে
বর্ণনা করেন আল্লাহ
নিজের আয়াত সমূহ মানুষের
জন্য, যাতে তারা
বাঁচতে পারে।
[2:188]
তোমরা
অন্যায়ভাবে একে
অপরের সম্পদ
ভোগ করো না। এবং জনগণের
সম্পদের কিয়দংশ
জেনে-শুনে পাপ
পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে
শাসন কতৃপক্ষের
হাতেও তুলে দিও
না।
[2:189]
তোমার
নিকট তারা জিজ্ঞেস
করে নতুন চাঁদের
বিষয়ে। বলে দাও
যে এটি মানুষের
জন্য সময় নির্ধারণ
এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম। আর পেছনের
দিক দিয়ে ঘরে
প্রবেশ করার মধ্যে
কোন নেকী বা কল্যাণ নেই। অবশ্য
নেকী হল আল্লাহকে
ভয় করার মধ্যে। আর তোমরা
ঘরে প্রবেশ কর
দরজা দিয়ে এবং আল্লাহকে
ভয় করতে থাক যাতে
তোমরা নিজেদের
বাসনায় কৃতকার্য
হতে পার।
[2:190]
আর
লড়াই কর আল্লাহর
ওয়াস্তে তাদের সাথে, যারা
লড়াই করে তোমাদের
সাথে। অবশ্য
কারো প্রতি বাড়াবাড়ি
করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ
সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে
পছন্দ করেন না।
[2:191]
আর
তাদেরকে হত্যাকর
যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে
বের করে দাও সেখান
থেকে যেখান থেকে
তারা বের করেছে তোমাদেরকে। বস্তুতঃ
ফেতনা ফ্যাসাদ
বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা
সৃষ্টি করা হত্যার
চেয়েও কঠিন
অপরাধ। আর তাদের
সাথে লড়াই করো
না মসজিদুল হারামের
নিকটে যতক্ষণ না
তারা তোমাদের
সাথে সেখানে লড়াই
করে। অবশ্য
যদি তারা নিজেরাই
তোমাদের সাথে লড়াই
করে। তাহলে
তাদেরকে হত্যা
কর। এই হল কাফেরদের
শাস্তি।
[2:192]
আর
তারা যদি বিরত
থাকে, তাহলে আল্লাহ অত্যন্ত
দয়ালু।
[2:193]
আর
তোমরা তাদের সাথে
লড়াই কর, যে পর্যন্ত
না ফেতনার অবসান
হয় এবং আল্লাহর
দ্বীন প্রতিষ্ঠিত
হয়। অতঃপর
যদি তারা নিবৃত
হয়ে যায় তাহলে
কারো প্রতি কোন
জবরদস্তি নেই, কিন্তু
যারা যালেম (তাদের
ব্যাপারে আলাদা)।
[2:194]
সম্মানিত
মাসই সম্মানিত
মাসের বদলা। আর সম্মান
রক্ষা করারও বদলা
রয়েছে। বস্তুতঃ
যারা তোমাদের উপর
জবর দস্তি করেছে, তোমরা তাদের
উপর জবরদস্তি কর, যেমন
জবরদস্তি তারা
করেছে তোমাদের
উপর। আর তোমরা আল্লাহকে
ভয় কর এবং জেনে
রাখ, যারা পরহেযগার, আল্লাহ
তাদের সাথে রয়েছেন।
[2:195]
আর
ব্যয় কর আল্লাহর
পথে, তবে নিজের
জীবনকে ধ্বংসের
সম্মুখীন করো না। আর মানুষের
প্রতি অনুগ্রহ
কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে
ভালবাসেন।
[2:196]
আর
তোমরা আল্লাহর
উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ওমরাহ
পরিপূর্ণ ভাবে
পালন কর। যদি তোমরা
বাধা প্রাপ্ত হও, তাহলে
কোরবানীর জন্য যাকিছু সহজলভ্য, তাই তোমাদের
উপর ধার্য। আর তোমরা
ততক্ষণ পর্যন্ত
মাথা মুন্ডন
করবে না, যতক্ষণ
না কোরবাণী যথাস্থানে
পৌছে যাবে। যারা
তোমাদের মধ্যে
অসুস্থ হয়ে
পড়বে কিংবা মাথায়
যদি কোন কষ্ট থাকে, তাহলে
তার পরিবর্তে রোজা
করবে কিংবা খয়রাত দেবে অথবা
কুরবানী করবে। আর তোমাদের
মধ্যে যারা হজ্জ্ব
ওমরাহ একত্রে একই সাথে পালন করতে
চাও, তবে যাকিছু
সহজলভ্য, তা দিয়ে
কুরবানী করাই তার
উপর কর্তব্য। বস্তুতঃ
যারা কোরবানীর
পশু পাবে না, তারা
হজ্জ্বের দিনগুলোর
মধ্যে রোজা রাখবে তিনটি আর
সাতটি রোযা রাখবে
ফিরে যাবার পর। এভাবে
দশটি রোযা পূর্ণ
হয়ে যাবে। এ নির্দেশটি
তাদের জন্য, যাদের
পরিবার পরিজন মসজিদুল
হারামের আশে-পাশে বসবাস করে না। আর আল্লাহকে
ভয় করতে থাক। সন্দেহাতীতভাবে
জেনো যে, আল্লাহর
আযাব বড়ই কঠিন।
[2:197]
হজ্জ্বে
কয়েকটি মাস আছে সুবিদিত। এসব মাসে
যে লোক হজ্জ্বের
পরিপূর্ণ নিয়ত
করবে, তার পক্ষে
স্ত্রীও সাথে নিরাভরণ হওয়া
জায়েজ নয়। না অশোভন
কোন কাজ করা, না ঝাগড়া-বিবাদ
করা হজ্জ্বের সেই সময় জায়েজ
নয়। আর তোমরা
যাকিছু সৎকাজ
কর, আল্লাহ তো
জানেন। আর তোমরা
পাথেয় সাথে
নিয়ে নাও। নিঃসন্দেহে
সর্বোত্তম পাথেয়
হচ্ছে আল্লাহর
ভয়। আর আমাকে
ভয় করতে থাক, হে বুদ্ধিমানগন!
তোমাদের উপর তোমাদের
পালনকর্তার অনুগ্রহ
অন্বেষণ করায়
কোন পাপ নেই।
[2:198]
তোমাদের
উপর তোমাদের পালনকর্তার অনুগ্রহ
অন্বেষন করায়
কোন পাপ নেই। অতঃপর
যখন তওয়াফের জন্য
ফিরে আসবে আরাফাত
থেকে, তখন মাশ‘ আরে-হারামের
নিকটে আল্লাহকে
স্মরণ কর। আর তাঁকে স্মরণ কর তেমনি
করে, যেমন তোমাদিগকে
হেদায়েত করা হয়েছে। আর নিশ্চয়ই
ইতিপূর্বে তোমরা ছিলে অজ্ঞ।
[2:199]
অতঃপর
তওয়াফের জন্যে দ্রুতগতিতে সেখান
থেকে ফিরে আস, যেখান
থেকে সবাই ফিরে। আর আল্লাহর
কাছেই মাগফেরাত
কামনা কর। নিশ্চয়ই
আল্লাহ ক্ষমাকারী, করুনাময়।
[2:200]
আর
অতঃপর যখন হজ্জ্বের
যাবতীয় অনুষ্ঠানক্রিয়াদি
সমাপ্ত করে সারবে, তখন স্মরণ
করবে আল্লাহকে, যেমন
করে তোমরা স্মরণ করতে নিজেদের
বাপ-দাদাদেরকে; বরং তার
চেয়েও বেশী স্মরণ
করবে। তারপর
অনেকে তো বলে
যে পরওয়াদেগার!
আমাদিগকে দুনিয়াতে
দান কর। অথচ তার
জন্যে পরকালে কোন অংশ নেই।
[2:201]
আর
তাদের মধ্যে কেউ
কেউ বলে-হে পরওয়ারদেগার!
আমাদিগকে দুনয়াতেও
কল্যাণ দান কর
এবং আখেরাতেও কল্যাণ
দান কর এবং আমাদিগকে দোযখের
আযাব থেকে রক্ষা
কর।
[2:202]
এদেরই
জন্য অংশ রয়েছে
নিজেদের উপার্জিত
সম্পদের। আর আল্লাহ
দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।
[2:203]
আর
স্মরণ কর আল্লাহকে নির্দিষ্ট সংখ্যক
কয়েকটি দিনে। অতঃপর
যে লোক তাড়াহুড়া
করে চলে যাবে শুধু
দু, দিনের মধ্যে, তার জন্যে
কোন পাপ নেই। আর যে
লোক থেকে যাবে
তাঁর উপর কোন পাপ
নেই, অবশ্য যারা
ভয় করে। আর তোমরা
আল্লাহকে ভয় করতে
থাক এবং নিশ্চিত
জেনে রাখ, তোমরা
সবাই তার সামনে
সমবেত হবে।
[2:204]
আর
এমন কিছু লোক রযেছে
যাদের পার্থিব
জীবনের কথাবার্তা
তোমাকে চমৎকৃত করবে। আর তারা
সাক্ষ্য স্থাপন
করে আল্লাহকে
নিজের মনের কথার
ব্যাপারে। প্রকৃতপক্ষে
তারা কঠিন ঝগড়াটে
লোক।
[2:205]
যখন
ফিরে যায় তখন
চেষ্টা করে যাতে সেখানে অকল্যাণ
সৃষ্টি করতে পারে
এবং শস্যক্ষেত্র
ও প্রাণনাশ করতে
পারে। আল্লাহ
ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা
পছন্দ করেন না।
[2:206]
আর
যখন তাকে বলা হয়
যে, আল্লাহকে ভয়
কর, তখন তার পাপ
তাকে অহঙ্কারে
উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং
তার জন্যে দোযখই যথেষ্ট। আর নিঃসন্দেহে
তা হলো নিকৃষ্টতর
ঠিকানা।
[2:207]
আর
মানুষের মাঝে এক
শ্রেণীর লোক রয়েছে
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে
নিজেদের জানের
বাজি রাখে। আল্লাহ
হলেন তাঁর বান্দাদের
প্রতি অত্যন্ত
মেহেরবান।
[2:208]
হে
ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে
ইসলামের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে যাও এবং শয়তানের
পদাংক অনুসরণ কর
না। নিশ্চিত
রূপে সে তোমাদের
প্রকাশ্য শত্রু।
[2:209]
অতঃপর
তোমাদের মাঝে পরিস্কার নির্দেশ এসে গেছে
বলে জানার পরেও
যদি তোমরা পদস্খলিত
হও, তাহলে নিশ্চিত
জেনে রেখো, আল্লাহ, পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।
[2:210]
তারা
কি সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে যে, মেঘের
আড়ালে তাদের সামনে
আসবেন আল্লাহ ও
ফেরেশতাগণ ? আর তাতেই
সব মীমাংসা
হয়ে যাবে। বস্তুতঃ
সবকার্যকলাপই
আল্লাহর নিকট গিয়ে
পৌঁছবে।
[2:211]
বনী
ইসরাঈলদিগকে জিজ্ঞেস
কর, তাদেরকে আমি
কত স্পষ্ট নির্দশনাবলী
দান করেছি। আর আল্লাহর
নেয়ামত পৌছে যাওয়ার পর যদি কেউ সে নেয়ামতকে
পরিবর্তিত করে
দেয়, তবে আল্লাহর
আযাব অতি কঠিন।
[2:212]
পার্থিব
জীবনের উপর কাফেরদিগকে উম্মত্ত করে দেয়া
হয়েছে। আর তারা
ঈমানদারদের প্রতি
লক্ষ্য করে হাসাহাসি
করে। পক্ষান্তরে
যারা পরহেযগার
তারা সেই কাফেরদের
তুলনায় কেয়ামতের
দিন অত্যন্ত উচ্চমর্যাদায়
থাকবে। আর আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা সীমাহীন
রুযী দান করেন।
[2:213]
সকল
মানুষ একই জাতি
সত্তার অন্তর্ভুক্ত
ছিল। অতঃপর
আল্লাহ তা’আলা পয়গম্বর
পাঠালেন সুসংবাদদাতা
ও ভীতি প্রদর্শনকরী
হিসাবে। আর তাঁদের
সাথে অবর্তীণ করলেন
সত্য কিতাব, যাতে
মানুষের মাঝে
বিতর্কমূলক বিষয়ে
মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুতঃ
কিতাবের ব্যাপারে
অন্য কেউ মতভেদ
করেনি; কিন্তু পরিষ্কার
নির্দেশ এসে যাবার
পর নিজেদের পারস্পরিক
জেদবশতঃ তারাই
করেছে, যারা কিতাব
প্রাপ্ত হয়েছিল। অতঃপর
আল্লাহ ঈমানদারদেরকে
হেদায়েত করেছেন সেই সত্য
বিষয়ে, যে ব্যাপারে
তারা মতভেদ লিপ্ত
হয়েছিল। আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা, সরল পথ
বাতলে দেন।
[2:214]
তোমাদের
কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে
যাবে, অথচ সে লোকদের
অবস্থা অতিক্রম
করনি যারা তোমাদের
পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের
উপর এসেছে বিপদ
ও কষ্ট। আর এমনি
ভাবে শিহরিত হতে
হয়েছে যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা
ঈমান এনেছিল তাদেরকে
পর্যন্ত একথা বলতে
হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্যে!
তোমরা শোনে নাও, আল্লাহর
সাহায্যে একান্তই
নিকটবর্তী।
[2:215]
তোমার
কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও-যে
বস্তুই তোমরা ব্যয়
কর, তা হবে পিতা-মাতার
জন্যে, আত্নীয়-আপনজনের
জন্যে, এতীম-অনাথদের
জন্যে, অসহায়দের
জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে। আর তোমরা
যে কোন সৎকাজ
করবে, নিঃসন্দেহে
তা অত্যন্ত ভালভাবেই
আল্লাহর জানা রয়েছে।
[2:216]
তোমাদের
উপর যুদ্ধ ফরয
করা হয়েছে, অথচ তা
তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে
তোমাদের কাছে হয়তো
কোন একটা বিষয়
পছন্দসই নয়, অথচ তা
তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা
কোন একটি বিষয়
তোমাদের কাছে পছন্দনীয়
অথচ তোমাদের জন্যে
অকল্যাণকর। বস্তুতঃ
আল্লাহই জানেন, তোমরা
জান না।
[2:217]
সম্মানিত
মাস সম্পর্কে তোমার কাছে জিজ্ঞেস
করে যে, তাতে যুদ্ধ
করা কেমন? বলে দাও
এতে যুদ্ধ করা
ভীষণ বড় পাপ। আর আল্লাহর পথে
প্রতিবন্দ্বকতা
সৃষ্টি করা এবং
কুফরী করা, মসজিদে-হারামের
পথে বাধা দেয়া
এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে
বহিস্কার করা, আল্লাহর
নিকট তার চেয়েও বড় পাপ। আর ধর্মের
ব্যাপারে ফেতনা
সৃষ্টি করা নরহত্যা
অপেক্ষাও মহা পাপ। বস্তুতঃ তারা
তো সর্বদাই তোমাদের
সাথে যুদ্ধ করতে
থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে
দিতে পারে যদি
সম্ভব হয়। তোমাদের
মধ্যে যারা নিজের
দ্বীন থেকে
ফিরে দাঁড়াবে
এবং কাফের অবস্থায়
মৃত্যুবরণ করবে, দুনিয়া
ও আখেরাতে তাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট
হয়ে যাবে। আর তারাই
হলো দোযখবাসী। তাতে
তারা চিরকাল বাস করবে।
[2:218]
আর
এতে কোন সন্দেহের
অবকাশ নেই যে, যারা ঈমান
এনেছে এবং যারা
হিজরত করেছে আর
আল্লাহর পথে লড়াই
(জেহাদ) করেছে, তারা
আল্লাহর রহমতের
প্রত্যাশী। আর আল্লাহ
হচ্ছেন ক্ষমাকারী
করুনাময়।
[2:219]
তারা
তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করে। বলে দাও, এতদুভয়ের
মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও
রয়েছে, তবে এগুলোর
পাপ উপকারিতা অপেক্ষা
অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস
করে, কি তারা ব্যয়
করবে? বলে দাও, নিজেদের
প্রয়োজনীয় ব্যয়ের
পর যা বাঁচে
তাই খরচ করবে। এভাবেই
আল্লাহ তোমাদের
জন্যে নির্দেশ
সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে
তোমরা চিন্তা করতে
পার।
[2:220]
দুনিয়া
ও আখেরাতের বিষয়ে। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস
করে, এতীম সংক্রান্ত
হুকুম। বলে দাও, তাদের
কাজ-কর্ম সঠিকভাবে
গুছিয়ে দেয়া
উত্তম আর যদি তাদের
ব্যয়ভার নিজের
সাথে মিশিয়ে নাও, তাহলে
মনে করবে তারা
তোমাদের ভাই । বস্তুতঃ
অমঙ্গলকামী ও মঙ্গলকামীদেরকে
আল্লাহ জানেন। আল্লাহ
যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে
তোমাদের উপর জটিলতা
আরোপ করতে পারতেন। নিশ্চয়ই তিনি
পরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞ।
[2:221]
আর
তোমরা মুশরেক নারীদেরকে বিয়ে করোনা, যতক্ষণ
না তারা ঈমান গ্রহণ
করে। অবশ্য
মুসলমান ক্রীতদাসী
মুশরেক নারী
অপেক্ষা উত্তম, যদিও
তাদেরকে তোমাদের
কাছে ভালো লাগে। এবং তোমরা
(নারীরা) কোন মুশরেকের
সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হয়ো না, যে পর্যন্ত
সে ঈমান না আনে। একজন মুসলমান ক্রীতদাসও
একজন মুশরেকের
তুলনায় অনেক ভাল, যদিও
তোমরা তাদের দেখে
মোহিত হও। তারা
দোযখের দিকে আহ্বান
করে, আর আল্লাহ
নিজের হুকুমের
মাধ্যমে আহ্বান
করেন জান্নাত
ও ক্ষমার দিকে। আর তিনি
মানুষকে নিজের
নির্দেশ বাতলে
দেন যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।
[2:222]
আর
তোমার কাছে জিজ্ঞেস
করে হায়েয
(ঋতু) সম্পর্কে। বলে দাও, এটা অশুচি। কাজেই
তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগমন থেকে
বিরত থাক। তখন পর্যন্ত
তাদের নিকটবর্তী
হবে না, যতক্ষণ না
তারা পবিত্র
হয়ে যায়। যখন উত্তম
রূপে পরিশুদ্ধ
হয়ে যাবে, তখন গমন
কর তাদের কাছে, যেভাবে
আল্লাহ তোমাদেরকে
হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই
আল্লাহ তওবাকারী
এবং অপবিত্রতা
থেকে যারা বেঁচে
থাকে তাদেরকে পছন্দ
করেন।
[2:223]
তোমাদের
স্ত্রীরা হলো তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র। তোমরা
যেভাবে ইচ্ছা তাদেরকে
ব্যবহার কর। আর নিজেদের
জন্য আগামী
দিনের ব্যবস্থা
কর এবং আল্লাহকে
ভয় করতে থাক। আর নিশ্চিতভাবে
জেনে রাখ যে, আল্লাহর
সাথে তোমাদেরকে
সাক্ষাত করতেই
হবে। আর যারা
ঈমান এনেছে তাদেরকে
সুসংবাদ জানিয়ে
দাও।
[2:224]
আর
নিজেদের শপথের
জন্য আল্লাহর নামকে লক্ষ্যবস্তু
বানিও না মানুষের
সাথে কোন আচার
আচরণ থেকে পরহেযগারী
থেকে এবং মানুষের
মাঝে মীমাংসা করে
দেয়া থেকে বেঁচে
থাকার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ
সবকিছুই শুনেন
ও জানেন।
[2:225]
তোমাদের
নিরর্থক শপথের
জন্য আল্লাহ
তোমাদেরকে ধরবেন
না, কিন্তু সেসব
কসমের ব্যাপারে
ধরবেন, তোমাদের মন
যার প্রতিজ্ঞা
করেছে। আর আল্লাহ
হচ্ছেন ক্ষমাকারী
ধৈর্য্যশীল।
[2:226]
যারা
নিজেদের স্ত্রীদের
নিকট গমন করবেনা
বলে কসম খেয়ে
বসে তাদের জন্য
চার মাসের অবকাশ
রয়েছে অতঃপর যদি পারস্পরিক মিল-মিশ
করে নেয়, তবে আল্লাহ
ক্ষামাকারী দয়ালু।
[2:227]
আর
যদি বর্জন করার
সংকল্প করে নেয়, তাহলে নিশ্চয়ই
আল্লাহ শ্রবণকারী
ও জ্ঞানী।
[2:228]
আর
তালাকপ্রাপ্তা
নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে
তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি
সে আল্লাহর প্রতি
এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে
থাকে, তাহলে আল্লাহ
যা তার জরায়ুতে
সৃষ্টি করেছেন
তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি
সদ্ভাব রেখে চলতে
চায়, তাহলে তাদেরকে
ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের
স্বামীরা সংরক্ষণ
করে। আর পুরুষদের
যেমন স্ত্রীদের
উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি
ভাবে স্ত্রীদেরও
অধিকার রয়েছে
পুরুষদের উপর নিয়ম
অনুযায়ী। আর নারীরদের ওপর
পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব
রয়েছে। আর আল্লাহ
হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।
[2:229]
তালাকে-‘রাজঈ’ হ’ল দুবার পর্যন্ত তারপর
হয় নিয়মানুযায়ী
রাখবে, না হয় সহৃদয়তার
সঙ্গে বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া সম্পদ
থেকে কিছু ফিরিয়ে
নেয়া তোমাদের
জন্য জায়েয নয়
তাদের কাছ থেকে। কিন্তু
যে ক্ষেত্রে স্বামী
ও স্ত্রী উভয়েই
এ ব্যাপারে ভয়
করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায়
রাখতে পারবে না, অতঃপর
যদি তোমাদের ভয়
হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ
বজায় রাখতে পারবে
না, তাহলে সেক্ষেত্রে
স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি
নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের
মধ্যে কারোরই কোন
পাপ নেই। এই হলো
আল্লাহ কর্তৃক
নির্ধারিত সীমা। কাজেই
একে অতিক্রম করো
না। বস্তুতঃ যারা
আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা
লঙ্ঘন করবে, তারাই
জালেম।
[2:230]
তারপর
যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার)
তালাক দেয়া হয়, তবে সে
স্ত্রী যে পর্যন্ত
তাকে ছাড়া অপর
কোন স্বামীর
সাথে বিয়ে করে
না নেবে, তার জন্য
হালাল নয়। অতঃপর
যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে
তাদের উভয়ের জন্যই
পরস্পরকে পুনরায়
বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর
হুকুম বজায় রাখার
ইচ্ছা থাকে। আর এই
হলো আল্লাহ কতৃêক নির্ধারিত সীমা; যারা
উপলব্ধি করে তাদের
জন্য এসব বর্ণনা
করা হয়।
[2:231]
আর
যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর
তারা নির্ধারিত
ইদ্দত সমাপ্ত করে
নেয়, তখন তোমরা
নিয়ম অনুযায়ী
তাদেরকে রেখে দাও
অথবা সহানুভুতির
সাথে তাদেরকে মুক্ত
করে দাও। আর তোমরা তাদেরকে
জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি
করার উদ্দেশ্যে
আটকে রেখো না। আর যারা
এমন করবে, নিশ্চয়ই
তারা নিজেদেরই
ক্ষতি করবে। আর আল্লাহর
নির্দেশকে হাস্যকর
বিষয়ে পরিণত
করো না। আল্লাহর
সে অনুগ্রহের কথা
স্মরণ কর, যা তোমাদের
উপর রয়েছে এবং তাও স্মরণ কর, যে কিতাব
ও জ্ঞানের কথা
তোমাদের উপর নাযিল
করা হয়েছে যার
দ্বারা তোমাদেরকে
উপদেশ দান করা
হয়। আল্লাহকে
ভয় কর এবং জেনে
রাখ যে, আল্লাহ সর্ববিষয়েই
জ্ঞানময়।
[2:232]
আর
যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও
এবং তারপর তারাও
নির্ধারিত ইদ্দত
পূর্ন করতে থাকে, তখন তাদেরকে পূর্ব স্বামীদের
সাথে পারস্পরিক
সম্মতির ভিত্তিতে
নিয়মানুযায়ী
বিয়ে করতে বাধাদান করো না। এ উপদেশ
তাকেই দেয়া হচ্ছে, যে আল্লাহ
ও কেয়ামত দিনের
উপর বিশ্বাস
স্থাপন করেছে। এর মধ্যে
তোমাদের জন্য রয়েছে
একান্ত পরিশুদ্ধতা
ও অনেক পবিত্রতা। আর আল্লাহ
জানেন, তোমরা জান
না।
[2:233]
আর
সন্তানবতী নারীরা
তাদের সন্তানদেরকে
পূর্ন দু’বছর দুধ
খাওয়াবে, যদি দুধ
খাওয়াবার পূর্ণ
মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়। আর সন্তানের
অধিকারী অর্থাৎ, পিতার উপর
হলো সে সমস্ত নারীর
খোর-পোষের দায়িত্ব প্রচলিত
নিয়ম অনুযায়ী। কাউকে
তার সামর্থাতিরিক্ত
চাপের সম্মুখীন
করা হয় না। আর মাকে
তার সন্তানের জন্য
ক্ষতিগ্রস্ত করা
যাবে না। এবং যার
সন্তান তাকেও
তার সন্তানের কারণে
ক্ষতির সম্মুখীন
করা যাবে না। আর ওয়ারিসদের
উপরও দায়িত্ব
এই। তারপর যদি
পিতা-মাতা ইচ্ছা
করে, তাহলে দু’বছরের
ভিতরেই নিজেদের পারস্পরিক পরামর্শক্রমে
দুধ ছাড়িয়ে দিতে
পারে, তাতে তাদের
কোন পাপ নেই, আর যদি তোমরা কোন ধাত্রীর
দ্বারা নিজের সন্তানদেরকে
দুধ খাওয়াতে চাও, তাহলে
যদি তোমরা সাব্যস্তকৃত
প্রচলিত বিনিময়
দিয়ে দাও তাতেও
কোন পাপ নেই। আর আল্লাহকে
ভয় কর এবং জেনে
রেখো যে, আল্লাহ
তোমাদের যাবতীয়
কাজ অত্যন্ত ভাল
করেই দেখেন।
[2:234]
আর
তোমাদের মধ্যে
যারা মৃত্যুবরণ
করবে এবং নিজেদের
স্ত্রীদেরকে ছেড়ে
যাবে, তখন সে স্ত্রীদের
কর্তব্য হলো নিজেকে
চার মাস দশ দিন
পর্যন্ত অপেক্ষা
করিয়ে রাখা। তারপর
যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের
ব্যাপারে নীতি
সঙ্গত ব্যবস্থা
নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের
ব্যাপারেই আল্লাহর
অবগতি রয়েছে।
[2:235]
আর
যদি তোমরা আকার
ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের
পয়গাম দাও, কিংবা
নিজেদের মনে গোপন
রাখ, তবে তাতেও
তোমাদের কোন পাপ নেই, আল্লাহ
জানেন যে, তোমরা
অবশ্যই সে নারীদের
কথা উল্লেখ করবে। কিন্তু তাদের সাথে বিয়ে
করার গোপন প্রতিশ্রুতি
দিয়ে রেখো না। অবশ্য
শরীয়তের নির্ধারিত প্রথা অনুযায়ী
কোন কথা সাব্যস্ত
করে নেবে। আর নির্ধারিত
ইদ্দত সমাপ্তি
পর্যায়ে না যাওয়া অবধি
বিয়ে করার কোন
ইচ্ছা করো না। আর একথা
জেনে রেখো যে, তোমাদের
মনে যে কথা
রয়েছে, আল্লাহর তা
জানা আছে। কাজেই
তাঁকে ভয় করতে
থাক। আর জেনে
রেখো যে, আল্লাহ
ক্ষমাকারী ও ধৈর্য্যশীল।
[2:236]
স্ত্রীদেরকে
স্পর্শ করার আগে এবং কোন মোহর সাব্যস্ত
করার পূর্বেও যদি
তালাক দিয়ে দাও, তবে তাতেও
তোমাদের কোন পাপ নেই। তবে তাদেরকে
কিছু খরচ দেবে। আর সামর্থ্যবানদের
জন্য তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবং
কম সামর্থ্যবানদের
জন্য তাদের সাধ্য
অনুযায়ী। যে খরচ
প্রচলিত রয়েছে তা সৎকর্মশীলদের
উপর দায়িত্ব।
[2:237]
আর
যদি মোহর সাব্যস্ত
করার পর স্পর্শ
করার পূর্বে তালাক
দিয়ে দাও, তাহলে
যে, মোহর সাব্যস্ত
করা হয়েছে তার অর্ধেক দিয়ে
দিতে হবে। অবশ্য
যদি নারীরা ক্ষমা
করে দেয় কিংবা
বিয়ের বন্ধন যার অধিকারে সে (অর্থাৎ, স্বামী) যদি
ক্ষমা করে দেয়
তবে তা স্বতন্ত্র
কথা। আর তোমরা পুরুষরা যদি ক্ষমা
কর, তবে তা হবে
পরহেযগারীর নিকটবর্তী। আর পারস্পরিক সহানুভূতির কথা
বিস্মৃত হয়ো না। নিশ্চয়
তোমরা যা কিছু
কর আল্লাহ সেসবই
অত্যন্ত ভাল করে
দেখেন।
[2:238]
সমস্ত
নামাযের প্রতি
যত্নবান হও, বিশেষ
করে মধ্যবর্তী
নামাযের ব্যাপারে। আর আল্লাহর
সামনে একান্ত আদবের
সাথে দাঁড়াও।
[2:239]
অতঃপর
যদি তোমাদের কারো ব্যাপারে ভয়
থাকে, তাহলে পদচারী
অবস্থাতেই পড়ে
নাও অথবা সওয়ারীর
উপরে। তারপর যখন তোমরা নিরাপত্তা
পাবে, তখন আল্লাহকে
স্মরণ কর, যেভাবে
তোমাদের শেখানো হয়েছে, যা তোমরা
ইতিপূর্বে জানতে
না।
[2:240]
আর
যখন তোমাদের মধ্যে
যারা মৃত্যুবরণ
করবে তখন স্ত্রীদের
ঘর থেকে বের না
করে এক বছর পর্যন্ত
তাদের খরচের ব্যাপারে ওসিয়ত
করে যাবে। অতঃপর
যদি সে স্ত্রীরা
নিজে থেকে বেরিয়ে
যায়, তাহলে সে নারী যদি নিজের
ব্যাপারে কোন উত্তম
ব্যবস্থা করে, তবে তাতে
তোমাদের উপর কোন পাপ নেই। আর আল্লাহ
হচ্ছেন পরাক্রমশালী
বিজ্ঞতা সম্পন্ন।
[2:241]
আর
তালাকপ্রাপ্তা
নারীদের জন্য প্রচলিত নিয়ম
অনুযায়ী খরচ দেয়া
পরহেযগারদের উপর
কর্তব্য।
[2:242]
এভাবেই
আল্লাহ তা’আলা তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ
বর্ণনা করেন যাতে
তোমরা তা বুঝতে
পার।
[2:243]
তুমি
কি তাদেরকে দেখনি, যারা মৃত্যুর ভয়ে
নিজেদের ঘর ছেড়ে
বেরিয়ে গিয়েছিলেন? অথচ তারা
ছিল হাজার হাজার। তারপর আল্লাহ
তাদেরকে বললেন
মরে যাও। তারপর
তাদেরকে জীবিত
করে দিলেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষের
উপর অনুগ্রহকারী। কিন্তু
অধিকাংশ লোক শুকরিয়া
প্রকাশ করে না।
[2:244]
আল্লাহর
পথে লড়াই কর এবং
জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে
আল্লাহ সবকিছু
জানেন, সবকিছু শুনেন।
[2:245]
এমন
কে আছে যে, আল্লাহকে
করজ দেবে, উত্তম
করজ; অতঃপর আল্লাহ
তাকে দ্বিগুণ-বহুগুণ
বৃদ্ধি করে দিবেন। আল্লাহই সংকোচিত করেন
এবং তিনিই প্রশস্ততা
দান করেন এবং তাঁরই
নিকট তোমরা সবাই
ফিরে যাবে।
[2:246]
মূসার
পরে তুমি কি বনী ইসরাঈলের একটি
দলকে দেখনি, যখন তারা
বলেছে নিজেদের
নবীর কাছে যে, আমাদের
জন্য একজন বাদশাহ
নির্ধারিত করে
দিন যাতে আমরা
আল্লাহর পথে যুদ্ধ
করতে পারি। নবী বললেন, তোমাদের প্রতিও
কি এমন ধারণা করা
যায় যে, লড়াইর
হুকুম যদি হয়, তাহলে তখন তোমরা লড়বে
না? তারা বলল, আমাদের
কি হয়েছে যে, আমরা
আল্লাহর পথে লড়াই
করব না। অথচ আমরা
বিতাড়িত হয়েছি
নিজেদের ঘর-বাড়ী
ও সন্তান-সন্ততি
থেকে। অতঃপর
যখন লড়াইয়ের
নির্দেশ হলো, তখন সামান্য
কয়েকজন ছাড়া
তাদের সবাই ঘুরে
দাঁড়ালো। আর আল্লাহ তা’আলা জালেমদের
ভাল করেই জানেন।
[2:247]
আর
তাদেরকে তাদের
নবী বললেন, নিশ্চয়ই
আল্লাহ তালূতকে
তোমাদের জন্য বাদশাহ
সাব্যস্ত করেছেন। তারা
বলতে লাগল তা কেমন করে হয়
যে, তার শাসন চলবে
আমাদের উপর। অথচ রাষ্ট্রক্ষমতা
পাওয়ার ক্ষেত্রে
তার চেয়ে আমাদেরই
অধিকার বেশী। আর সে
সম্পদের দিক দিয়েও
সচ্ছল নয়। নবী বললেন, নিশ্চয়
আল্লাহ তোমাদের
উপর তাকে পছন্দ
করেছেন এবং স্বাস্থ্য
ও জ্ঞানের দিক
দিয়ে প্রাচুর্য
দান করেছেন। বস্তুতঃ
আল্লাহ তাকেই রাজ্য
দান করেন, যাকে
ইচ্ছা। আর আল্লাহ
হলেন অনুগ্রহ দানকারী
এবং সব বিষয়ে
অবগত।
[2:248]
বনী-ইসরাঈলদেরকে
তাদের নবী আরো বললেন, তালূতের নেতৃত্বের
চিহ্ন হলো এই যে, তোমাদের
কাছে একটা সিন্দুক
আসবে তোমাদের
পালকর্তার পক্ষ
থেকে তোমাদের মনের
সন্তুষ্টির নিমিত্তে। আর তাতে
থাকবে মূসা, হারুন
এবং তাঁদের সন্তানবর্গের
পরিত্যক্ত কিছু
সামগ্রী। সিন্দুকটিকে
বয়ে আনবে ফেরেশতারা। তোমরা
যদি ঈমানদার হয়ে
থাক, তাহলে এতে
তোমাদের জন্য নিশ্চিতই পরিপূর্ণ নিদর্শন
রয়েছে।
[2:249]
অতঃপর
তালূত যখন সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বেরুল, তখন বলল, নিশ্চয়
আল্লাহ তোমাদিগকে
পরীক্ষা করবেন
একটি নদীর মাধ্যমে। সুতরাং
যে লোক সেই নদীর
পানি পান করবে
সে আমার নয়। আর যে, লোক তার স্বাদ গ্রহণ করলো
না, নিশ্চয়ই সে
আমার লোক। কিন্তু
যে লোক হাতের আঁজলা
ভরে সামান্য
খেয়ে নেবে তার
দোষঅবশ্য তেমন
গুরুতর হবে না। অতঃপর
সবাই পান করল সে পানি, সামান্য কয়েকজন
ছাড়া। পরে তালূত
যখন তা পার হলো
এবং তার সাথে ছিল
মাত্র কয়েকজন
ঈমানদার, তখন তারা
বলতে লাগল, আজকের
দিনে জালূত এবং
তার সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার
শক্তি আমাদের নেই, যাদের
ধারণা ছিল যে, আল্লাহর
সামনে তাদের একদিন উপস্থিত
হতে হবে, তারা
বার বার বলতে লাগল, সামান্য
দলই বিরাট দলের মোকাবেলায় জয়ী
হয়েছে আল্লাহর
হুকুমে। আর যারা
ধৈর্য্যশীল আল্লাহ
তাদের সাথে রয়েছেন।
[2:250]
আর
যখন তালূত ও তার
সেনাবাহিনী শত্রুর সম্মুখীন
হল, তখন বলল, হে আমাদের
পালনকর্তা, আমাদের
মনে ধৈর্য্য সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে
দৃঢ়পদ রাখ-আর
আমাদের সাহায্য
কর সে কাফের জাতির
বিরুদ্ধে।
[2:251]
তারপর
ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালূতের
বাহিনীকে পরাজিত
করে দিল এবং দাউদ
জালূতকে হত্যা
করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন
রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে
যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ
যদি একজনকে
অপরজনের দ্বারা
প্রতিহত না করতেন, তাহলে
গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত
হয়ে যেতো। কিন্তু
বিশ্ববাসীর প্রতি
আল্লাহ একান্তই
দয়ালু, করুণাময়।
[2:252]
এগুলো
হলো আল্লাহর নিদর্শন, যা আমরা তোমাদেরকে
যথাযথভাবে শুনিয়ে
থাকি। আর আপনি
নিশ্চিতই আমার
রসূলগণের অন্তর্ভুক্ত।
[2:253]
এই
রসূলগণ-আমি তাদের
কাউকে কারো
উপর মর্যাদা দিয়েছি। তাদের
মধ্যে কেউ তো হলো
তারা যার সাথে
আল্লাহ কথা বলেছেন, আর কারও
মর্যাদা উচ্চতর
করেছেন এবং আমি
মরিয়ম তনয় ঈসাকে
প্রকৃষ্ট মু’জেযা দান করেছি
এবং তাকে শক্তি
দান করেছি ‘রুহূল
কুদ্দুস’ অর্থৎ জিবরাঈলের মাধ্যমে। আর আল্লাহ
যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে
পরিস্কার নির্দেশ
এসে যাবার পর পয়গম্বরদের
পেছনে যারা ছিল
তারা লড়াই করতো
না। কিন্তু তাদের
মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়ে গেছে। অতঃপর
তাদের কেউ তো ঈমান
এনেছে, আর কেউ হয়েছে
কাফের। আর আল্লাহ যদি ইচ্ছা
করতেন, তাহলে তারা
পরস্পর লড়াই করতো, কিন্তু
আল্লাহ তাই করেন, যা তিনি
ইচ্ছা করেন।
[2:254]
হে
ঈমানদারগণ! আমি
তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন
আসার পূর্বেই তোমরা
তা থেকে ব্যয়
কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে
সুপারিশ কিংবা
বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই
হলো প্রকৃত যালেম।
[2:255]
আল্লাহ
ছাড়া অন্য কোন
উপাস্য নেই, তিনি
জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে
তন্দ্রাও স্পর্শ
করতে পারে না এবং
নিদ্রাও নয়। আসমান
ও যমীনে যা কিছু
রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ
এমন, যে সুপারিশ
করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি
ছাড়া? দৃষ্টির সামনে
কিংবা পিছনে যা
কিছু রয়েছে সে
সবই তিনি জানেন। তাঁর
জ্ঞানসীমা থেকে
তারা কোন কিছুকেই
পরিবেষ্টিত করতে
পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা
করেন। তাঁর সিংহাসন
সমস্ত আসমান ও
যমীনকে পরিবেষ্টিত
করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ
করা তাঁর পক্ষে
কঠিন নয়। তিনিই
সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
[2:256]
দ্বীনের
ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা
নেই। নিঃসন্দেহে
হেদায়াত গোমরাহী
থেকে পৃথক হয়ে
গেছে। এখন যারা গোমরাহকারী
‘তাগুত’দেরকে
মানবে না এবং আল্লাহতে
বিশ্বাস স্থাপন
করবে, সে ধারণ
করে নিয়েছে সুদৃঢ়
হাতল যা ভাংবার
নয়। আর আল্লাহ
সবই শুনেন এবং
জানেন।
[2:257]
যারা
ঈমান এনেছে, আল্লাহ
তাদের অভিভাবক। তাদেরকে
তিনি বের করে আনেন
অন্ধকার থেকে আলোর
দিকে। আর যারা
কুফরী করে তাদের অভিভাবক
হচ্ছে তাগুত। তারা
তাদেরকে আলো থেকে
বের করে অন্ধকারের
দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো
দোযখের অধিবাসী, চিরকাল
তারা সেখানেই থাকবে।
[2:258]
তুমি
কি সে লোককে দেখনি, যে পালনকর্তার ব্যাপারে
বাদানুবাদ করেছিল
ইব্রাহীমের সাথে
এ কারণে যে, আল্লাহ
সে ব্যাক্তিকে
রাজ্য দান করেছিলেন? ইব্রাহীম
যখন বললেন, আমার
পালনকর্তা হলেন
তিনি, যিনি জীবন
দান করেন এবং মৃত্যু
ঘটান। সে বলল, আমি জীবন
দান করি এবং মৃত্যু
ঘটিয়ে থাকি। ইব্রাহীম
বললেন, নিশ্চয়ই
তিনি সুর্যকে উদিত
করেন পূর্ব দিক
থেকে এবার তুমি তাকে পশ্চিম
দিক থেকে উদিত
কর। তখন সে কাফের
হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ সীমালংঘণকারী
সম্প্রদায়কে
সরল পথ প্রদর্শন
করেন না।
[2:259]
তুমি
কি সে লোককে দেখনি
যে এমন এক জনপদ
দিয়ে যাচ্ছিল
যার বাড়ীঘরগুলো
ভেঙ্গে ছাদের উপর
পড়ে ছিল? বলল, কেমন করে আল্লাহ মরনের
পর একে জীবিত করবেন? অতঃপর
আল্লাহ তাকে মৃত
অবস্থায় রাখলেন একশ বছর। তারপর
তাকে উঠালেন। বললেন, কত কাল
এভাবে ছিলে? বলল আমি
ছিলাম, একদিন কংবা একদিনের
কিছু কম সময়। বললেন, তা নয়; বরং তুমি
তো একশ বছর ছিলে। এবার চেয়ে দেখ নিজের
খাবার ও পানীয়ের
দিকে-সেগুলো পচে
যায় নি এবং দেখ
নিজের গাধাটির
দিকে। আর আমি
তোমাকে মানুষের
জন্য দৃষ্টান্ত
বানাতে চেয়েছি। আর হাড়গুলোর দিকে
চেয়ে দেখ যে, আমি এগুলোকে
কেমন করে জুড়ে
দেই এবং সেগুলোর
উপর মাংসের
আবরণ পরিয়ে দেই। অতঃপর
যখন তার উপর এ অবস্থা
প্রকাশিত হল, তখন বলে উঠল-আমি জানি, নিঃসন্দেহে
আল্লাহ সর্ব বিষয়ে
ক্ষমতাশীল।
[2:260]
আর
স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার পালনকর্তা
আমাকে দেখাও, কেমন
করে তুমি মৃতকে
জীবিত করবে। বললেন; তুমি
কি বিশ্বাস কর
না? বলল, অবশ্যই
বিশ্বাস করি, কিন্তু
দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি
লাভ করতে পারি। বললেন, তাহলে
চারটি পাখী ধরে
নাও। পরে সেগুলোকে নিজের
পোষ মানিয়ে নাও, অতঃপর
সেগুলোর দেহের
একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর
রেখে দাও। তারপর
সেগুলোকে ডাক; তোমার
নিকট দৌড়ে চলে
আসবে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই
আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি জ্ঞান
সম্পন্ন।
[2:261]
যারা
আল্লাহর রাস্তায়
স্বীয় ধন সম্পদ
ব্যয় করে, তাদের
উদাহরণ একটি বীজের
মত, যা থেকে সাতটি
শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে
একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ
অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ।
[2:262]
যারা
স্বীয় ধন সম্পদ
আল্লাহর রাস্তায়
ব্যয় করে, এরপর
ব্যয় করার পর
সে অনুগ্রহের কথা
প্রকাশ করে না
এবং কষ্টও
দেয় না, তাদেরই
জন্যে তাদের পালনকর্তার
কাছে রয়েছে পুরস্কার
এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা
চিন্তিতও হবে না।
[2:263]
নম্র
কথা বলে দেয়া
এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা
ঐ দান খয়রাত অপেক্ষা
উত্তম, যার পরে কষ্ট
দেয়া হয়। আল্লাহ তা’আলা সম্পদশালী, সহিঞ্চু।
[2:264]
হে
ঈমানদারগণ!তোমরা
অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে
এবং কষ্ট দিয়ে
নিজেদের দান খয়রাত
বরবাদ করো না সে
ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ
লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে
ব্যয় করে এবং
আল্লাহ ও পরকালের
প্রতি বিশ্বাস
রাখে না। অতএব, এ ব্যাক্তির
দৃষ্টান্ত একটি
মসৃণ পাথরের মত
যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর
এর উপর প্রবল বৃষ্টি
বর্ষিত হলো, অনন্তর
তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে
দিল। তারা ঐ
বস্তুর কোন সওয়াব
পায় না, যা তারা
উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের
সম্প্রদায়কে
পথ প্রদর্শন করেন
না।
[2:265]
যারা
আল্লাহর রাস্তায়
স্বীয় ধন-সম্পদ
ব্যয় করে আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জনের
লক্ষ্যে এবং নিজের
মনকে সুদৃঢ় করার জন্যে তাদের
উদাহরণ টিলায়
অবস্থিত বাগানের
মত, যাতে প্রবল
বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর
দ্বিগুণ ফসল দান
করে। যদি এমন
প্রবল বৃষ্টিপাত
নাও হয়, তবে হাল্কা
বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ
তোমাদের কাজকর্ম
যথার্থই প্রত্যক্ষ
করেন।
[2:266]
তোমাদের
কেউ পছন্দ করে
যে, তার একটি
খেজুর ও আঙ্গুরের
বাগান হবে, এর তলদেশ
দিয়ে নহর প্রবাহিত
হবে, আর এতে সর্বপ্রকার ফল-ফসল
থাকবে এবং সে বার্ধক্যে
পৌছবে, তার দুর্বল
সন্তান সন্ততিও থাকবে, এমতাবস্থায়
এ বাগানের একটি
ঘূর্ণিবায়ু আসবে, যাতে
আগুন রয়েছে, অনন্তর
বাগানটি ভষ্মীভূত
হয়ে যাবে? এমনিভাবে
আল্লাহ তা’আলা তোমাদের
জন্যে নিদর্শনসমূহ
বর্ননা করেন-যাতে
তোমরা চিন্তা-ভাবনা
কর।
[2:267]
হে
ঈমানদারগণ! তোমরা
স্বীয় উপার্জন
থেকে এবং যা আমি
তোমাদের জন্যে
ভূমি থেকে উৎপন্ন করেছি, তা থেকে
উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় কর
এবং তা থেকে নিকৃষ্ট
জিনিস ব্যয় করতে
মনস্থ করো না। কেননা, তা তোমরা কখনও গ্রহণ
করবে না; তবে যদি
তোমরা চোখ বন্ধ
করে নিয়ে নাও। জেনে
রেখো, আল্লাহ অভাব
মুক্ত, প্রশংসিত।
[2:268]
শয়তান
তোমাদেরকে অভাব
অনটনের ভীতি
প্রদর্শন করে এবং
অশ্লীলতার আদেশ
দেয়। পক্ষান্তরে
আল্লাহ তোমাদেরকে
নিজের পক্ষ
থেকে ক্ষমা ও বেশী
অনুগ্রহের ওয়াদা
করেন। আল্লাহ
প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ।
[2:269]
তিনি
যাকে ইচ্ছা বিশেষ
জ্ঞান দান করেন
এবং যাকে বিশেষ
জ্ঞান দান করা
হয়, সে প্রভুত
কল্যাণকর বস্তু
প্রাপ্ত হয়। উপদেশ
তারাই গ্রহণ করে, যারা
জ্ঞানবান।
[2:270]
তোমরা
যে খয়রাত বা সদ্ব্যয় কর কিংবা কোন মানত
কর, আল্লাহ নিশ্চয়ই
সেসব কিছুই জানেন। অন্যায়কারীদের
কোন সাহায্যকারী
নেই।
[2:271]
যদি
তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা
কতইনা উত্তম। আর যদি
খয়রাত গোপনে কর
এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা
তোমাদের জন্যে
আরও উত্তম। আল্লাহ
তা’আলা তোমাদের
কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ
তোমাদের কাজ কর্মের
খুব খবর রাখেন।
[2:272]
তাদেরকে
সৎপথে আনার
দায় তোমার নয়। বরং আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত
করেন। যে মাল
তোমরা ব্যয় কর, তা নিজ উপাকারার্থেই
কর। আল্লাহর সন্তুষ্টি
ছাড়া অন্য কোন
উদ্দেশ্যে ব্যয়
করো না। তোমরা যে, অর্থ
ব্যয় করবে, তার পুরস্কার
পুরোপুরি পেয়ে
যাবে এবং তোমাদের
প্রতি অন্যায়
করা হবে না।
[2:273]
খয়রাত
ঐ সকল গরীব লোকের
জন্যে যারা
আল্লাহর পথে আবদ্ধ
হয়ে গেছে-জীবিকার
সন্ধানে অন্যত্র
ঘোরাফেরা করতে
সক্ষম নয়। অজ্ঞ
লোকেরা যাঞ্চা
না করার কারণে
তাদেরকে অভাবমুক্ত
মনে করে। তোমরা তাদেরকে তাদের
লক্ষণ দ্বারা চিনবে। তারা
মানুষের কাছে কাকুতি-মিনতি
করে ভিক্ষা চায় না। তোমরা যে অর্থ
ব্যয় করবে, তা আল্লাহ
তা’আলা অবশ্যই
পরিজ্ঞাত।
[2:274]
যারা
স্বীয় ধন-সম্পদ
ব্যয় করে, রাত্রে
ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। তাদের
জন্যে তাদের সওয়াব
রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে। তাদের
কোন আশংঙ্কা নেই
এবং তারা চিন্তিত
ও হবে না।
[2:275]
যারা
সুদ খায়, তারা
কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে
দন্ডায়মান হয়
ঐ ব্যক্তি, যাকে
শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে
দেয়। তাদের
এ অবস্থার কারণ
এই যে, তারা বলেছেঃ
ক্রয়-বিক্রয়
ও তো সুদ নেয়ারই
মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয়
বৈধ করেছেন এবং
সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর
যার কাছে তার পালনকর্তার
পক্ষ থেকে উপদেশ
এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে
যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার
আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায়
সুদ নেয়, তারাই
দোযখে যাবে। তারা
সেখানে চিরকাল
অবস্থান করবে।
[2:276]
আল্লাহ
তা’আলা সুদকে
নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে
বর্ধিত করেন। আল্লাহ
পছন্দ করেন না
কোন অবিশ্বাসী
পাপীকে।
[2:277]
নিশ্চয়ই
যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে, সৎকাজ
করেছে, নামায প্রতিষ্ঠিত
করেছে এবং যাকাত
দান করেছে, তাদের
জন্যে তাদের
পুরষ্কার তাদের
পালনকর্তার কছে
রয়েছে। তাদের
কোন শঙ্কা নেই
এবং তারা দুঃখিত
হবে না।
[2:278]
হে
ঈমানদারগণ, তোমরা
আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের
যে সমস্ত বকেয়া
আছে, তা পরিত্যাগ
কর, যদি তোমরা
ঈমানদার হয়ে থাক।
[2:279]
অতঃপর
যদি তোমরা পরিত্যাগ
না কর, তবে আল্লাহ
ও তাঁর রসূলের
সাথে যুদ্ধ করতে
প্রস্তুত হয়ে
যাও। কিন্তু
যদি তোমরা
তওবা কর, তবে তোমরা
নিজের মূলধন পেয়ে
যাবে। তোমরা
কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ
তোমাদের প্রতি
অত্যাচার করবে
না।
[2:280]
যদি
খাতক অভাবগ্রস্থ
হয়, তবে তাকে
সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত
সময় দেয়া উচিত। আর যদি
ক্ষমা করে দাও, তবে তা
খুবই উত্তম
যদি তোমরা উপলব্ধি
কর।
[2:281]
ঐ
দিনকে ভয় কর, যে দিন
তোমরা আল্লাহর
কাছে প্রত্যাবর্তিত
হবে। অতঃপর
প্রত্যেকেই তার
কর্মের ফল পুরোপুরি
পাবে এবং তাদের
প্রতি কোন রূপ
অবিচার করা হবে
না।
[2:282]
হে
মুমিনগণ! যখন তোমরা
কোন নির্দিষ্ট
সময়ের জন্যে ঋনের
আদান-প্রদান কর, তখন তা
লিপিবদ্ধ করে নাও
এবং তোমাদের
মধ্যে কোন লেখক
ন্যায়সঙ্গতভাবে
তা লিখে দেবে; লেখক
লিখতে অস্বীকার
করবে না। আল্লাহ
তাকে যেমন শিক্ষা
দিয়েছেন, তার উচিত
তা লিখে দেয়া। এবং ঋন
গ্রহীতা যেন লেখার
বিষয় বলে দেয়
এবং সে যেন স্বীয়
পালনকর্তা আল্লাহকে
ভয় করে এবং লেখার মধ্যে বিন্দুমাত্রও
বেশ কম না করে। অতঃপর
ঋণগ্রহীতা যদি
নির্বোধ হয় কিংবা দূর্বল হয় অথবা
নিজে লেখার বিষয়বস্তু
বলে দিতে অক্ষম
হয়, তবে তার অভিভাবক ন্যায়সঙ্গতভাবে
লিখাবে। দুজন
সাক্ষী কর, তোমাদের
পুরুষদের মধ্যে
থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন
পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের
মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর
যাতে একজন যদি
ভুলে যায়, তবে একজন
অন্যজনকে স্মরণ
করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের
অস্বীকার করা উচিত
নয়। তোমরা
এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক
কিংবা বড়, নির্দিষ্ট
সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ
করণ আল্লাহর কাছে সুবিচারকে
অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে
অধিক সুসংহত রাখে
এবং তোমাদের সন্দেহে পতিত
না হওয়ার পক্ষে
অধিক উপযুক্ত। কিন্তু
যদি কারবার নগদ
হয়, পরস্পর হাতে হাতে আদান-প্রদান
কর, তবে তা না লিখলে
তোমাদের প্রতি
কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের
সময় সাক্ষী রাখ। কোন লেখক
ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত
করো না। যদি তোমরা এরূপ কর, তবে তা
তোমাদের পক্ষে
পাপের বিষয়। আল্লাহকে
ভয় কর তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা
দেন। আল্লাহ
সব কিছু জানেন।
[2:283]
আর
তোমরা যদি প্রবাসে
থাক এবং কোন লেখক
না পাও তবে বন্ধকী
বন্তু হস্তগত রাখা
উচিত। যদি একে
অন্যকে বিশ্বাস করে, তবে যাকে বিশ্বাস
করা হয়, তার উচিত
অন্যের প্রাপ্য
পরিশোধ করা এবং
স্বীয় পালনকর্তা
আল্লাহকে ভয় কর!
তোমরা সাক্ষ্য
গোপন করো না। যে কেউ
তা গোপন করবে, তার অন্তর
পাপপূর্ণ হবে। তোমরা
যা করা, আল্লাহ সে
সম্পর্কে খুব জ্ঞাত।
[2:284]
যা
কিছু আকাশসমূহে
রয়েছে এবং যা কিছু যমীনে
আছে, সব আল্লাহরই। যদি তোমরা
মনের কথা প্রকাশ
কর কিংবা গোপন
কর, আল্লাহ তোমাদের
কাছ থেকে তার হিসাব
নেবেন। অতঃপর
যাকে ইচ্ছা তিনি
ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা
তিনি শাস্তি দেবেন। আল্লাহ
সর্ববিষয়ে শক্তিমান।
[2:285]
রসূল
বিশ্বাস রাখেন
ঐ সমস্ত বিষয়
সম্পর্কে যা তাঁর
পালনকর্তার পক্ষ
থেকে তাঁর কাছে
অবতীর্ণ হয়েছে
এবং মুসলমানরাও
সবাই বিশ্বাস রাখে
আল্লাহর প্রতি, তাঁর
ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের
প্রতি এবং তাঁর
পয়গম্বরগণের
প্রতি। তারা
বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের
মধ্যে কোন তারতম্য
করিনা। তারা
বলে, আমরা শুনেছি
এবং কবুল করেছি। আমরা তোমার ক্ষমা
চাই, হে আমাদের
পালনকর্তা। তোমারই
দিকে প্রত্যাবর্তন
করতে হবে।
[2:286]
আল্লাহ
কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার
দেন না, সে তাই পায়
যা সে উপার্জন
করে এবং তাই তার
উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের
পালনকর্তা, যদি আমরা
ভুলে যাই কিংবা
ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের
পালনকর্তা! এবং
আমাদের উপর এমন
দায়িত্ব অর্পণ
করো না, যেমন আমাদের
পূর্ববর্তীদের
উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের
প্রভূ! এবং আমাদের
দ্বারা ঐ বোঝা
বহন করিও না, যা বহন
করার শক্তি আমাদের
নাই। আমাদের
পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা
কর এবং আমাদের
প্রতি দয়া কর। তুমিই
আমাদের প্রভু। সুতরাং
কাফের সম্প্রদায়ের
বিরুদ্ধে আমাদের
কে সাহায্যে কর।