48 Al-Fath
শুরু করছি
আল্লাহর নামে যিনি
পরম করুণাময়, অতি
দয়ালু।
[48:1]
নিশ্চয়
আমি আপনার জন্যে
এমন একটা ফয়সালা
করে দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট।
[48:2]
যাতে
আল্লাহ আপনার অতীত
ও ভবিষ্যত ত্রুটিসমূহ
মার্জনা করে দেন
এবং আপনার প্রতি
তাঁর নেয়ামত পূর্ণ
করেন ও আপনাকে
সরল পথে পরিচালিত
করেন।
[48:3]
এবং
আপনাকে দান করেন
বলিষ্ঠ সাহায্য।
[48:4]
তিনি
মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল
করেন, যাতে তাদের
ঈমানের সাথে আরও
ঈমান বেড়ে যায়। নভোমন্ডল
ও ভূমন্ডলের
বাহিনীসমূহ আল্লাহরই
এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
[48:5]
ঈমান
এজন্যে বেড়ে যায়, যাতে তিনি ঈমানদার
পুরুষ ও ঈমানদার
নারীদেরকে জান্নাতে
প্রবেশ করান, যার তলদেশে
নদী প্রবাহিত। সেথায়
তারা চিরকাল বসবাস
করবে এবং যাতে
তিনি তাদের পাপ
মোচন করেন। এটাই আল্লাহর
কাছে মহাসাফল্য।
[48:6]
এবং
যাতে তিনি কপট
বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী
নারী এবং অংশীবাদী
পুরুষ ও অংশীবাদিনী
নারীদেরকে শাস্তি দেন, যারা আল্লাহ
সম্পর্কে মন্দ
ধারণা পোষন করে। তাদের
জন্য মন্দ পরিনাম। আল্লাহ তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ
হয়েছেন, তাদেরকে
অভিশপ্ত করেছেন। এবং তাহাদের
জন্যে জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন। তাদের
প্রত্যাবর্তন
স্থল অত্যন্ত মন্দ।
[48:7]
নভোমন্ডল
ও ভূমন্ডলের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই। আল্লাহ
পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
[48:8]
আমি
আপনাকে প্রেরণ
করেছি অবস্থা
ব্যক্তকারীরূপে, সুসংবাদদাতা
ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।
[48:9]
যাতে
তোমরা আল্লাহ ও
রসূলের প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন
কর এবং তাঁকে সাহায্য
ও সম্মান কর এবং
সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা
ঘোষণা কর।
[48:10]
যারা
আপনার কাছে আনুগত্যের
শপথ করে, তারা
তো আল্লাহর কাছে
আনুগত্যের শপথ
করে। আল্লাহর
হাত তাদের হাতের
উপর রয়েছে। অতএব, যে শপথ
ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই
সে তা নিজের ক্ষতির
জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে
কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ
করে; আল্লাহ সত্ত্বরই
তাকে মহাপুরস্কার
দান করবেন।
[48:11]
মরুবাসীদের
মধ্যে যারা গৃহে বসে রয়েছে, তারা
আপনাকে বলবেঃ আমরা
আমাদের ধন-সম্পদ
ও পরিবার-পরিজনের
কাজে ব্যস্ত
ছিলাম। অতএব, আমাদের
পাপ মার্জনা করান। তারা
মুখে এমন কথা বলবে, যা তাদের অন্তরে নেই। বলুনঃ
আল্লাহ তোমাদের
ক্ষতি অথবা উপকার
সাধনের ইচ্ছা করলে
কে তাকে বিরত রাখতে পারে? বরং তোমরা
যা কর, আল্লাহ সে
বিষয় পরিপূর্ণ
জ্ঞাত।
[48:12]
বরং
তোমরা ধারণ করেছিলে
যে, রসূল ও মুমিনগণ
তাদের বাড়ী-ঘরে
কিছুতেই ফিরে আসতে
পারবে না এবং এই
ধারণা তোমাদের
জন্যে খুবই সুখকর
ছিল। তোমরা
মন্দ ধারণার বশবর্তী
হয়েছিলে। তোমরা
ছিলে ধ্বংসমুখী
এক সম্প্রদায়।
[48:13]
যারা
আল্লাহ ও তাঁর
রসূলে বিশ্বাস
করে না, আমি সেসব কাফেরের
জন্যে জ্বলন্ত
অগ্নি প্রস্তুত
রেখেছি।
[48:14]
নভোমন্ডল
ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি
যাকে ইচ্ছা ক্ষমা
করেন এবং যাকে
ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান।
[48:15]
তোমরা
যখন যুদ্ধলব্ধ
ধন-সম্পদ সংগ্রহের
জন্য যাবে, তখন যারা
পশ্চাতে থেকে গিয়েছিল, তারা
বলবেঃ আমাদেরকেও তোমাদের সঙ্গে
যেতে দাও। তারা
আল্লাহর কালাম
পরিবর্তন করতে
চায়। বলুনঃ
তোমরা কখনও
আমাদের সঙ্গে যেতে
পারবে না। আল্লাহ
পূর্ব থেকেই এরূপ
বলে দিয়েছেন। তারা
বলবেঃ বরং তোমরা
আমাদের প্রতি বিদ্বেষ
পোষণ করছ। পরন্তু
তারা সামান্যই
বোঝে।
[48:16]
গৃহে
অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে
তোমরা এক প্রবল
পরাক্রান্ত জাতির
সাথে যুদ্ধ করতে
আহুত হবে। তোমরা তাদের সাথে
যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ
না তারা মুসলমান
হয়ে যায়। তখন যদি
তোমরা নির্দেশ
পালন কর, তবে আল্লাহ
তোমাদেরকে উত্তম
পুরস্কার দিবেন। আর যদি
পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর যেমন ইতিপূর্বে
পৃষ্ঠপ্রদর্শন
করেছ, তবে তিনি তোমাদেরকে
যন্ত্রনাদায়ক
শাস্তি দিবেন।
[48:17]
অন্ধের
জন্যে, খঞ্জের জন্যে
ও রুগ্নের জন্যে
কোন অপরাধ নাই
এবং যে কেউ আল্লাহ
ও তাঁর রসূলের
অনুগত্য করবে তাকে তিনি জান্নাতে
দাখিল করবেন, যার তলদেশে
নদী প্রবাহিত হয়। পক্ষান্তরে
যে, ব্যক্তি পৃষ্ঠপ্রদর্শন
করবে, তাকে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি দিবেন।
[48:18]
আল্লাহ
মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা
বৃক্ষের নীচে আপনার
কাছে শপথ করল। আল্লাহ
অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে
ছিল। অতঃপর
তিনি তাদের প্রতি
প্রশান্তি নাযিল
করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার
দিলেন।
[48:19]
এবং
বিপুল পরিমাণে
যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, যা তারা লাভ
করবে। আল্লাহ
পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
[48:20]
আল্লাহ
তোমাদেরকে বিপুল
পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ
সম্পদের ওয়াদা
দিয়েছেন, যা তোমরা
লাভ করবে। তিনি
তা তোমাদের জন্যে ত্বরান্বিত করবেন। তিনি
তোমাদের থেকে শত্রুদের
স্তব্দ করে দিয়েছেন-যাতে
এটা মুমিনদের
জন্যে এক নিদর্শন
হয় এবং তোমাদেরকে
সরল পথে পরিচালিত
করেন।
[48:21]
আর
ও একটি বিজয় রয়েছে
যা এখনও তোমাদের
অধিকারে আসেনি, আল্লাহ
তা বেষ্টন করে
আছেন। আল্লাহ
সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।
[48:22]
যদি
কাফেররা তোমাদের
মোকাবেলা করত, তবে অবশ্যই
তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন
করত। তখন তারা
কোন অভিভাবক ও
সাহায্যকারী পেত না।
[48:23]
এটাই
আল্লাহর রীতি, যা পূর্ব থেকে চালু আছে। তুমি
আল্লাহর রীতিতে
কোন পরিবর্তন পাবে
না।
[48:24]
তিনি
মক্কা শহরে তাদের
হাত তোমাদের
থেকে এবং তোমাদের
হাত তাদের থেকে
নিবারিত করেছেন
তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করার পর। তোমরা
যা কিছু কর, আল্লাহ
তা দেখেন।
[48:25]
তারাই
তো কুফরী করেছে
এবং বাধা দিয়েছে
তোমাদেরকে মসজিদে
হারাম থেকে এবং
অবস্থানরত কোরবানীর
জন্তুদেরকে যথাস্থানে পৌছতে। যদি মক্কায়
কিছুসংখ্যক ঈমানদার
পুরুষ ও ঈমানদার
নারী না থাকত, যাদেরকে
তোমরা জানতে না। অর্থাৎ তাদের পিষ্ট
হয়ে যাওয়ার আশংকা
না থাকত, অতঃপর তাদের কারণে তোমরা
অজ্ঞাতসারে ক্ষতিগ্রস্ত
হতে, তবে সব কিছু
চুকিয়ে দেয়া
হত; কিন্তু এ কারণে
চুকানো হয়নি, যাতে
আল্লাহ তা’আলা যাকে
ইচ্ছা স্বীয় রহমতে
দাখিল করে নেন। যদি তারা
সরে যেত, তবে আমি
অবশ্যই তাদের মধ্যে
যারা কাফের তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক
শস্তি দিতাম।
[48:26]
কেননা, কাফেররা
তাদের অন্তরে মূর্খতাযুগের
জেদ পোষণ করত। অতঃপর
আল্লাহ তাঁর রসূল
ও মুমিনদের উপর
স্বীয় প্রশান্তি
নাযিল করলেন এবং
তাদের জন্যে সংযমের
দায়িত্ব অপরিহার্য
করে দিলেন। বস্তুতঃ তারাই
ছিল এর অধিকতর
যোগ্য ও উপযুক্ত। আল্লাহ
সর্ববিষয়ে সম্যক
জ্ঞাত।
[48:27]
আল্লাহ
তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহ
চাহেন তো তোমরা
অবশ্যই মসজিদে
হারামে প্রবেশ
করবে নিরাপদে
মস্তকমুন্ডিত
অবস্থায় এবং কেশ
কর্তিত অবস্থায়। তোমরা
কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি
জানেন যা তোমরা
জান না। এছাড়াও
তিনি দিয়েছেন
তোমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়।
[48:28]
তিনিই
তাঁর রসূলকে হেদায়েত
ও সত্য ধর্মসহ
প্রেরণ করেছেন, যাতে
একে অন্য সমস্ত
ধর্মের উপর জয়যুক্ত
করেন। সত্য প্রতিষ্ঠাতারূপে
আল্লাহ যথেষ্ট।
[48:29]
মুহাম্মদ
আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের
প্রতি কঠোর, নিজেদের
মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি
কামনায় আপনি তাদেরকে
রুকু ও সেজদারত
দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে
সেজদার চিহ্ন । তওরাতে
তাদের অবস্থা এরূপ
এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি
চারা গাছ যা থেকে
নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর
তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের
উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে
আনন্দে অভিভুত
করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা
কাফেরদের অন্তর্জালা
সৃষ্টি করেন। তাদের
মধ্যে যারা বিশ্বাস
স্থাপন করে এবং
সৎকর্ম করে, আল্লাহ
তাদেরকে ক্ষমা
ও মহাপুরস্কারের
ওয়াদা দিয়েছেন।