6 Al-Anaam
শুরু করছি
আল্লাহর নামে যিনি
পরম করুণাময়, অতি
দয়ালু।
[6:1]
সর্ববিধ
প্রশংসা আল্লাহরই
জন্য যিনি নভোমন্ডল
ও ভূমন্ডল সৃষ্টি
করেছেন এবং অন্ধকার
ও আলোর উদ্ভব করেছেন। তথাপি কাফেররা স্বীয়
পালনকর্তার সাথে
অন্যান্যকে সমতুল্য
স্থির করে।
[6:2]
তিনিই
তোমাদেরকে মাটির
দ্বারা সৃষ্টি
করেছেন, অতঃপর নির্দিষ্টকাল
নির্ধারণ করেছেন। আর অপর
নির্দিষ্টকাল আল্লাহর কাছে
আছে। তথাপি
তোমরা সন্দেহ কর।
[6:3]
তিনিই
আল্লাহ নভোমন্ডলে
এবং ভূমন্ডলে। তিনি
তোমাদের গোপন ও
প্রকাশ্য বিষয়
জানেন এবং তোমরা
যা কর তাও অবগত।
[6:4]
তাদের
কাছে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী
থেকে কোন নিদর্শন
আসেনি; যার প্রতি
তারা বিমুখ হয়
না।
[6:5]
অতএব, অবশ্য
তারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে
যখন তা তাদের কাছে
এসেছে। বস্তুতঃ
অচিরেই তাদের কাছে
ঐ বিষয়ের সংবাদ আসবে, যার সাথে
তারা উপহাস করত।
[6:6]
তারা
কি দেখেনি যে, আমি তাদের পুর্বে কত সম্প্রদায়কে
ধ্বংস করে দিয়েছি, যাদেরকে
আমি পৃথিবীতে এমন
প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম, যা তোমাদেরকে
দেইনি। আমি আকাশকে
তাদের উপর অনবরত
বৃষ্টি বর্ষণ করতে দিয়েছি এবং তাদের
তলদেশে নদী সৃষ্টি
করে দিয়েছি, অতঃপর
আমি তাদেরকে তাদের পাপের কারণে ধ্বংস
করে দিয়েছি এবং
তাদের পরে অন্য
সম্প্রদায় সৃষ্টি
করেছি।
[6:7]
যদি
আমি কাগজে লিখিত
কোন বিষয় তাদের প্রতি নাযিল
করতাম, অতঃপর তারা
তা সহস্তে স্পর্শ
করত, তবুও অবিশ্বাসীরা একথাই বলত যে, এটা প্রকাশ্য
জাদু বৈ কিছু নয়।
[6:8]
তারা
আরও বলে যে, তাঁর
কাছে কোন ফেরেশতা
কেন প্রেরণ করা
হল না ? যদি আমি কোন
ফেরেশতা প্রেরণ
করতাম, তবে গোটা ব্যাপারটাই শেষ
হয়ে যেত। অতঃপর
তাদেরকে সামান্যও
অবকাশ দেওয়া হতনা।
[6:9]
যদি
আমি কোন ফেরেশতাকে
রসূল করে পাঠাতাম, তবে সে
মানুষের আকারেই
হত। এতেও ঐ সন্দেহই
করত, যা এখন করছে।
[6:10]
নিশ্চয়ই
আপনার পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণের
সাথেও উপহাস করা
হয়েছে। অতঃপর
যারা তাঁদের সাথে
উপহাস করেছিল, তাদেরকে
ঐ শাস্তি বেষ্টন
করে নিল, যা নিয়ে
তারা উপহাস করত।
[6:11]
বলে
দিনঃ তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতপর
দেখ, মিথ্যারোপ
কারীদের পরিণাম
কি হয়েছে?
[6:12]
জিজ্ঞেস
করুন, নভোমন্ডল
ও ভুমন্ডলে
যা আছে, তার মালিক
কে? বলে দিনঃআল্লাহ। তিনি
অনুকম্পা প্রদর্শনকে
নিজ দায়িত্বে
লিপিবদ্ধ করে নিয়েছেন। তিনি
অবশ্যই তোমাদেরকে
কেয়ামতের দিন
একত্রিত করবেন। এর আগমনে
কোন সন্দেহ নেই। যারা
নিজেদের কে ক্ষতিগ্রস্ত
করেছে, তারাই বিশ্বাস স্থাপন করে না।
[6:13]
যা
কিছু রাত ও দিনে
স্থিতি লাভ করে, তাঁরই। তিনিই
শ্রোতা, মহাজ্ঞানী।
[6:14]
আপনি
বলে দিনঃ আমি কি
আল্লাহ ব্যতীত-যিনি
নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের
স্রষ্টা এবং যিনি
সবাইকে আহার্য
দানকরেন ও তাঁকে কেউ আহার্য
দান করে না অপরকে
সাহায্যকারী স্থির
করব? আপনি বলে দিনঃ
আমি আদিষ্ট
হয়েছি যে, সর্বাগ্রে
আমিই আজ্ঞাবহ হব। আপনি
কদাচ অংশীবাদীদের
অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
[6:15]
আপনি
বলুন, আমি আমার প্রতিপালকের
অবাধ্য হতে ভয়
পাই কেননা, আমি একটি
মহাদিবসের শাস্তিকে
ভয় করি।
[6:16]
যার
কাছ থেকে ঐদিন
এ শাস্তি সরিয়ে
নেওয়া হবে, তার প্রতি
আল্লাহর অনুকম্পা
হবে। এটাই বিরাট
সাফল্য।
[6:17]
আর
যদি আল্লাহ তোমাকে
কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি
ব্যতীত তা অপসারণকারী
কেউ নেই। পক্ষান্তরে
যদি তোমার মঙ্গল
করেন, তবে তিনি সবকিছুর
উপর ক্ষমতাবান।
[6:18]
তিনিই
পরাক্রান্ত স্বীয় বান্দাদের উপর। তিনিই
জ্ঞানময়, সর্বজ্ঞ।
[6:19]
আপনি
জিজ্ঞেস করুনঃ
সর্ববৃহৎ সাক্ষ্যদাতা
কে ? বলে দিনঃ আল্লাহ
আমার ও তোমাদের
মধ্যে সাক্ষী। আমার
প্রতি এ কোরআন
অবর্তীর্ণ হয়েছে-যাতে
আমি তোমাদেরকে
এবং যাদের কাছে
এ কোরআন পৌঁছে
সবাইকে ভীতি
প্রদর্শন করি। তোমরা
কি সাক্ষ্য দাও
যে, আল্লাহর সাথে
অন্যান্য উপাস্যও রয়েছে ? আপনি
বলে দিনঃ আমি এরূপ
সাক্ষ্য দেব না। বলে দিনঃ
তিনিই একমাত্র উপাস্য; আমি অবশ্যই
তোমাদের শিরক থেকে
মুক্ত।
[6:20]
যাদেরকে
আমি কিতাব দান
করেছি, তারা তাকে
চিনে, যেমন তাদের
সন্তানদেরকে চিনে। যারা
নিজেদেরকে ক্ষতির
মধ্যে ফেলেছে, তারা
বিশ্বাস স্থাপন
করবে না।
[6:21]
আর
যে, আল্লাহর প্রতি
অপবাদ আরোপ
করে অথবা তাঁর
নিদর্শনাবলীকে
মিথ্যা বলে, তার চাইতে
বড় জালেম কে? নিশ্চয় জালেমরা সফলকাম
হবে না।
[6:22]
আর
যেদিন আমি তাদের
সবাইকে একত্রিত
করব, অতঃপর যারা
শিরক করেছিল, তাদের
বলবঃ যাদেরকে তোমরা
অংশীদার বলে ধারণা করতে, তারা
কোথায়?
[6:23]
অতঃপর
তাদের কোন অপরিচ্ছন্নতা থাকবে না; তবে এটুকুই
যে তারা বলবে আমাদের
প্রতিপালক আল্লাহর
কসম, আমরা মুশরিক ছিলাম না।
[6:24]
দেখতো, কিভাবে
মিথ্যা বলছে নিজেদের বিপক্ষে
? এবং যেসব
বিষয় তারা আপনার
প্রতি মিছামিছি
রচনা করত, তা সবই উধাও হয়ে গেছে।
[6:25]
তাদের
কেউ কেউ আপনার
দিকে কান লাগিয়ে
থাকে। আমি তাদের
অন্তরের উপর আবরণ
রেখে দিয়েছি যাতে
একে না বুঝে এবং তাদের কানে বোঝা
ভরে দিয়েছি। যদি তারা
সব নিদর্শন অবলোকন
করে তবুও সেগুলো বিশ্বাস করবে
না। এমনকি, তারা
যখন আপনার কাছে
ঝগড়া করতে আসে, তখন কাফেররা
বলেঃ এটি পুর্ববর্তীদের
কিচ্ছাকাহিনী
বৈ তো নয়।
[6:26]
তারা
এ থেকে বাধা প্রদান
করে এবং এ
থেকে পলায়ন করে। তারা
নিজেদেরকে ধ্বংস
করেছে, কিন্তু বুঝছে
না।
[6:27]
আর
আপনি যদি দেখেন, যখন তাদেরকে দোযখের
উপর দাঁড় করানো
হবে! তারা বলবেঃ
কতই না ভাল হত, যদি আমরা
পুনঃ প্রেরিত
হতাম; তা হলে আমরা
স্বীয় পালনকর্তার
নিদর্শনসমূহে
মিথ্যারোপ করতাম
না এবং আমরা
বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে যেতাম।
[6:28]
এবং
তারা ইতি পূর্বে
যা গোপন করত, তা তাদের
সামনে প্রকাশ হয়ে
পড়েছে। যদি তারা
পুনঃ প্রেরিত হয়, তবুও
তাই করবে, যা তাদেরকে
নিষেধ করা হয়েছিল। নিশ্চয়
তারা মিথ্যাবাদী।
[6:29]
তারা
বলেঃ আমাদের এ
পার্থিব জীবনই
জীবন। আমাদেরকে
পুনরায় জীবিত
হতে হবে না।
[6:30]
আর
যদি আপনি দেখেন; যখন তাদেরকে প্রতিপালকের
সামনে দাঁড় করানো
হবে। তিনি বলবেনঃ
এটা কি বাস্তব
সত্য নয়? তারা
বলবেঃ হঁ্যা আমাদের
প্রতিপালকের কসম। তিনি
বলবেনঃ অতএব, স্বীয়
কুফরের কারণে
শাস্তি আস্বাদন
কর।
[6:31]
নিশ্চয়
তারা ক্ষতিগ্রস্ত, যারা
আল্লাহর সাক্ষাৎকে মিথ্যা মনে
করেছে। এমনকি, যখন কিয়ামত
তাদের কাছে অকস্মাৎ
এসে যাবে, তারা
বলবেঃ হায় আফসোস, এর ব্যাপারে
আমরা কতই না ক্রটি
করেছি। তার স্বীয় বোঝা
স্বীয় পৃষ্ঠে
বহন করবে। শুনে
রাখ, তারা যে বোঝা
বহন করবে, তা নিকৃষ্টতর বোঝা।
[6:32]
পার্থিব
জীবন ক্রীড়া ও
কৌতুক ব্যতীত
কিছুই নয়। পরকালের
আবাস পরহেযগারদের
জন্যে শ্রেষ্টতর। তোমরা
কি বুঝ না ?
[6:33]
আমার
জানা আছে যে, তাদের
উক্তি আপনাকে
দুঃখিত করে। অতএব, তারা
আপনাকে মিথ্যা
প্রতিপন্ন করে
না, বরং জালেমরা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে
অস্বীকার করে।
[6:34]
আপনার
পূর্ববর্তী অনেক পয়গম্বরকে মিথ্যা
বলা হয়েছে। তাঁরা
এতে ছবর করেছেন। তাদের
কাছে আমার সাহায্য পৌঁছে পর্যন্ত
তারা নির্যাতিত
হয়েছেন। আল্লাহর
বানী কেউ পরিবর্তন
করতে পারে না। আপনার কাছে পয়গম্বরদের
কিছু কাহিনী পৌঁছেছে।
[6:35]
আর
যদি তাদের বিমুখতা
আপনার পক্ষে
কষ্টকর হয়, তবে আপনি
যদি ভূতলে কোন
সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে
কোন সিড়ি অনুসন্ধান করতে
সমর্থ হন, অতঃপর
তাদের কাছে কোন
একটি মোজেযা আনতে
পারেন, তবে নিয়ে
আসুন। আল্লাহ
ইচ্ছা করলে সবাইকে
সরল পথে সমবেত
করতে পারতেন। অতএব, আপনি নির্বোধদের অন্তর্ভুক্ত
হবেন না।
[6:36]
তারাই
মানে, যারা শ্রবণ
করে। আল্লাহ
মৃতদেরকে জীবিত
করে উত্থিত করবেন। অতঃপর
তারা তাঁরই দিকে
প্রত্যাবর্তিত হবে।
[6:37]
তারা
বলেঃ তার প্রতি
তার পালনকর্তার
পক্ষ থেকে কোন
নিদর্শন অবতীর্ণ
হয়নি কেন? বলে দিনঃ
আল্লাহ নিদর্শন অবতরণ করতে পূর্ন
সক্ষম; কিন্তু তাদের
অধিকাংশই জানে
না।
[6:38]
আর
যত প্রকার প্রাণী
পৃথিবীতে বিচরণশীল রয়েছে
এবং যত প্রকার
পাখী দু’ ডানাযোগে
উড়ে বেড়ায় তারা
সবাই তোমাদের
মতই একেকটি শ্রেণী। আমি কোন
কিছু লিখতে ছাড়িনি। অতঃপর
সবাই স্বীয় প্রতিপালকের
কাছে সমবেত হবে।
[6:39]
যারা
আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে, তারা
অন্ধকারের মধ্যে
মূক ও বধির। আল্লাহ
যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট
করেন এবং যাকে
ইচ্ছা সরল পথে
পরিচালিত করেন।
[6:40]
বলুন, বলতো
দেখি, যদি তোমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি
পতিত হয় কিংবা
তোমাদের কাছে কিয়ামত
এসে যায়, তবে তোমরা
কি আল্লাহ
ব্যতীত অন্যকে
ডাকবে যদি তোমরা
সত্যবাদী হও।
[6:41]
বরং
তোমরা তো তাঁকেই
ডাকবে। অতঃপর যে বিপদের
জন্যে তাঁকে ডাকবে, তিনি
ইচ্ছা করলে তা
দুরও করে দেন। যাদেরকে অংশীদার করছ, তখন তাদেরকে
ভুলে যাবে।
[6:42]
আর
আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের প্রতিও
পয়গম্বর প্রেরণ
করেছিলাম। অতঃপর
আমি তাদেরকে অভাব-অনটন
ও রোগ-ব্যধি
দ্বারা পাকড়াও
করেছিলাম যাতে
তারা কাকুতি মিনতি
করে।
[6:43]
অতঃপর
তাদের কাছে যখন
আমার আযাব আসল, তখন কেন
কাকুতি-মিনতি করল
না ? বস্তুতঃ তাদের
অন্তর কঠোর হয়ে
গেল এবং শয়তান
তাদের কাছে সুশোভিত
করে দেখাল, যে কাজ
তারা করছিল।
[6:44]
অতঃপর
তারা যখন ঐ উপদেশ
ভুলে গেল, যা তাদেরকে
দেয়া হয়েছিল, তখন আমি
তাদের সামনে সব
কিছুর দ্বার উম্মুক্ত করে দিলাম। এমনকি, যখন তাদেরকে
প্রদত্ত বিষয়াদির
জন্যে তারা খুব
গর্বিত হয়ে পড়ল, তখন আমি অকস্মাৎ তাদেরকে পাকড়াও
করলাম। তখন তারা
নিরাশ হয়ে গেল।
[6:45]
অতঃপর
জালেমদের মূল শিকড় কর্তিত হল। সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহরই
জন্যে, যিনি বিশ্বজগতের
পালনকর্তা।
[6:46]
আপনি
বলুনঃ বল তো দেখি, যদি আল্লাহ তোমাদের
কান ও চোখ নিয়ে
যান এবং তোমাদের
অন্তরে মোহর এঁটে
দেন, তবে এবং তোমাদের আল্লাহ
ব্যতীত এমন উপাস্য
কে আছে, যে তোমাদেরকে
এগুলো এনে দেবে? দেখ, আমি কিভাবে
ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে
নিদর্শনাবলী বর্ণনা
করি। তথাপি
তারা বিমুখ হচ্ছে।
[6:47]
বলে
দিনঃ দেখতো, যদি আল্লাহর শাস্তি, আকস্মিক
কিংবা প্রকাশ্যে
তোমাদের উপর আসে, তবে জালেম, সম্প্রদায়
ব্যতীত কে ধ্বংস
হবে?
[6:48]
আমি
পয়গম্বরদেরকে
প্রেরণ করি না, কিন্তু সুসংবাদাতা
ও ভীতি প্রদর্শকরূপে
অতঃপর যে বিশ্বাস
স্থাপন করে এবং সংশোধিত হয়, তাদের
কোন শঙ্কা নেই
এবং তারা দুঃখিত
হবে না।
[6:49]
যারা
আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে, তাদেরকে
তাদের নাফরমানীর
কারণে আযাব স্পর্শ
করবে।
[6:50]
আপনি
বলুনঃ আমি তোমাদেরকে
বলি না যে, আমার
কাছে আল্লাহর ভান্ডার
রয়েছে। তাছাড়া
আমি অদৃশ্য বিষয়
অবগতও নই। আমি এমন বলি না
যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো
শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ
করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে
দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান
কি সমান হতে পারে? তোমরা
কি চিন্তা কর না
?
[6:51]
আপনি
এ কোরআন দ্বারা
তাদেরকে ভয়-প্রদর্শন
করুন, যারা আশঙ্কা
করে স্বীয় পালনকর্তার
কাছে এমতাবস্থায়
একত্রিত হওয়ার
যে, তাদের কোন
সাহায্যকারী ও
সুপারিশকারী হবে
না-যাতে তারা গোনাহ
থেকে বেঁচে
থাকে।
[6:52]
আর
তাদেরকে বিতাড়িত
করবেন না, যারা
সকাল-বিকাল স্বীয়
পালকর্তার এবাদত
করে, তাঁর সন্তুষ্টি
কামনা করে। তাদের হিসাব বিন্দুমাত্রও
আপনার দায়িত্বে
নয় এবং আপনার
হিসাব বিন্দুমাত্রও
তাদের দায়িত্বে
নয় যে, আপনি তাদেরকে
বিতাড়িত করবেন। নতুবা
আপনি অবিচারকারীদের
অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবেন।
[6:53]
আর
এভাবেই আমি কিছু
লোককে কিছু লোক দ্বারা পরীক্ষায়
ফেলেছি যাতে তারা
বলে যে, এদেরকেই কি
আমাদের সবার মধ্য থেকে আল্লাহ স্বীয়
অনুগ্রহ দান করেছেন? আল্লাহ
কি কৃতজ্ঞদের সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত নন
?
[6:54]
আর
যখন তারা আপনার
কাছে আসবে যারা আমার নিদর্শনসমূহে
বিশ্বাস করে, তখন আপনি
বলে দিনঃ তোমাদের
উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের
পালনকর্তা রহমত
করা নিজ দায়িত্বে
লিখে নিয়েছেন
যে, তোমাদের মধ্যে
যে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ
কোন মন্দ কাজ করে, অনন্তর
এরপরে তওবা করে
নেয় এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি
অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়।
[6:55]
আর
এমনিভাবে আমি নিদর্শনসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা
করি-যাতে অপরাধীদের
পথ সুস্পষ্ট হয়ে
উঠে।
[6:56]
আপনি
বলে দিনঃ আমাকে
তাদের এবাদত
করতে নিষেধ করা
হয়েছে, তোমরা আল্লাহকে
ছেড়ে যাদের এবাদত
কর। আপনি বলে দিনঃ আমি তোমাদের
খুশীমত চলবো না। কেননা, তাহলে
আমি পথভ্রান্ত
হয়ে যাব এবং সুপথগামীদের
অন্তর্ভুক্ত হব
না।
[6:57]
আপনি
বলে দিনঃ আমার
কাছে প্রতিপালকের
পক্ষ থেকে একটি
প্রমাণ আছে এবং
তোমরা তার প্রতি
মিথ্যারোপ করেছ। তোমরা যে বস্তু
শীঘ্র দাবী করছ, তা আমার
কাছে নেই। আল্লাহ
ছাড়া কারো নির্দেশ চলে না। তিনি
সত্য বর্ণনা করেন
এবং তিনিই শ্রেষ্ঠতম
মীমাংসাকারী।
[6:58]
আপনি
বলে দিনঃ যদি আমার
কাছে তা থাকত, যা তোমরা
শীঘ্র দাবী করছ, তবে আমার
ও তোমাদের পারস্পরিক
বিবাদ কবেই চুকে যেত। আল্লাহ
জালেমদের সম্পর্কে
যথেষ্ট পরিমাণে
অবহিত।
[6:59]
তাঁর
কাছেই অদৃশ্য জগতের
চাবি রয়েছে। এ গুলো
তিনি ব্যতীত কেউ
জানে না। স্থলে
ও জলে যা আছে, তিনিই
জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু
তিনি তা জানেন। কোন শস্য
কণা মৃত্তিকার
অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন
আর্দ্র ও শুস্ক
দ্রব্য পতিত হয়
না; কিন্তু তা
সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।
[6:60]
তিনিই
রাত্রি বেলায়
তোমাদেরকে করায়ত্ত করে
নেন এবং যা কিছু
তোমরা দিনের বেলায়
কর, তা জানেন। অতঃপর
তোমাদেরকে দিবসে সম্মুখিত
করেন-যাতে নির্দিষ্ট
ওয়াদা পূর্ণ হয়।
[6:61]
অনন্তর
তাঁরই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর
তোমাদেরকে বলে
দিবেন, যা কিছু তোমরা
করছিলে। তিনিই
স্বীয় বান্দাদের
উপর প্রবল। তিনি
প্রেরণ করেন তোমাদের
কাছে রক্ষণাবেক্ষণকারী। এমন কি, যখন তোমাদের
কারও মৃত্যু আসে
তখন আমার প্রেরিত
ফেরেশতারা তার
আত্মা হস্তগত করে নেয়।
[6:62]
অতঃপর
সবাইকে সত্যিকার
প্রভু আল্লাহর
কাছে পৌঁছানো হবে। শুনে
রাখ, ফয়সালা তাঁরই
এবং তিনি দ্রুত
হিসাব গ্রহণ করবেন।
[6:63]
আপনি
বলুনঃ কে তোমাদেরকে
স্থল ও জলের
অন্ধকার থেকে উদ্ধার
করেন, যখন তোমরা
তাঁকে বিনীতভাবে
ও গোপনে আহবান
কর যে, যদি আপনি
আমাদের কে এ থেকে
উদ্ধার করে নেন, তবে আমরা
অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত
হয়ে যাব।
[6:64]
আপনি
বলে দিনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে তা
থেকে মুক্তি দেন
এব সব দুঃখ-বিপদ
থেকে। তথাপি
তোমরা শেরক কর।
[6:65]
আপনি
বলুনঃ তিনিই শক্তিমান
যে, তোমাদের উপর
কোন শাস্তি উপর
দিক থেকে অথবা
তোমাদের পদতল থেকে
প্রেরণ করবেন অথবা তোমাদেরকে দলে-উপদলে
বিভক্ত করে সবাইকে
মুখোমুখী করে দিবেন
এবং এককে অন্যের
উপর আক্রমণের
স্বাদ আস্বাদন
করাবেন। দেখ, আমি কেমন
ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে
নিদর্শনাবলী বর্ণনা করি যাতে
তারা বুঝে নেয়।
[6:66]
আপনার
সম্প্রদায় একে
মিথ্যা বলছে, অথচ তা
সত্য। আপনি বলে
দিনঃ আমি তোমাদের
উপর নিয়োজিত নই।
[6:67]
প্রত্যেক
খবরের একটি সময় নির্দিষ্ট রয়েছে
এবং অচিরেই তোমরা
তা জেনে নিবে।
[6:68]
যখন
আপনি তাদেরকে দেখেন, যারা আমার আয়াত সমূহে
ছিদ্রান্বেষণ
করে, তখন তাদের
কাছ থেকে সরে যান
যে পর্যন্ত তারা অন্য কথায় প্রবৃত্ত
না হয়, যদি শয়তান
আপনাকে ভূলিয়ে
দেয় তবে স্মরণ
হওয়ার পর জালেমদের
সাথে উপবেশন করবেন
না।
[6:69]
এদের
যখন বিচার করা
হবে তখন পরহেযগারদের
উপর এর কোন প্রভাব
পড়বে না; কিন্তু
তাদের দায়িত্ব
উপদেশ দান করা যাতে ওরা ভীত হয়।
[6:70]
তাদেরকে
পরিত্যাগ করুন, যারা নিজেদের ধর্মকে
ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে
গ্রহণ করেছে এবং
পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে
রেখেছে। কোরআন
দ্বারা তাদেরকে
উপদেশ দিন, যাতে
কেউ স্বীয় কর্মে এমন ভাবে গ্রেফতার
না হয়ে যায় যে, আল্লাহ
ব্যতীত তার কোন
সাহায্যকারী ও সুপারিশকারী
নেই এবং যদি তারা
জগতের বিনিময়ও
প্রদান কবে, তবু তাদের
কাছ থেকে তা গ্রহণ করা হবে
না। একাই স্বীয়
কর্মে জড়িত হয়ে
পড়েছে। তাদের
জন্যে উত্তপ্ত পানি এবং যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি রয়েছে-কুফরের
কারণে।
[6:71]
আপনি
বলে দিনঃ আমরা
কি আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুকে
আহবান করব, যে আমাদের
উপকার করতে পারে
না এবং ক্ষতিও
করতে পারে না
এবং আমরা কি পশ্চাৎপদে ফিরে যাব, এরপর
যে, আল্লাহ আমাদেরকে
পথ প্রদর্শন করেছেন? ঐ ব্যক্তির
মত, যাকে শয়তানরা
বনভুমিতে বিপথগামী
করে দিয়েছে-সে
উদভ্রান্ত হয়ে ঘোরাফেরা
করছে। তার সহচররা
তাকে পথের দিকে
ডেকে বলছেঃ আস, আমাদের
কাছে। আপনি
বলে দিনঃ নিশ্চয়
আল্লাহর পথই সুপথ। আমরা
আদিষ্ট হয়েছি
যাতে স্বীয় পালনকর্তা আজ্ঞাবহ
হয়ে যাই।
[6:72]
এবং
তা এই যে, নামায
কায়েম কর এবং তাঁকে ভয়
কর। তাঁর সামনেই
তোমরা একত্রিত
হবে।
[6:73]
তিনিই
সঠিকভাবে নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। যেদিন
তিনি বলবেনঃ হয়ে
যা, অতঃপর হয়ে
যাবে। তাঁর কথা
সত্য। যেদিন
শিঙ্গায় ফুৎকার করা হবে, সেদিন
তাঁরই আধিপত্য
হবে। তিনি অদৃশ্য
বিষয়ে এবং প্রত্যক্ষ
বিষয়ে জ্ঞাত। তিনিই
প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
[6:74]
স্মরণ
কর, যখন ইব্রাহীম
পিতা আযরকে
বললেনঃ তুমি কি
প্রতিমা সমূহকে
উপাস্য মনে কর? আমি দেখতে
পাচ্ছি যে, তুমি ও তোমার সম্প্রদায়
প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট।
[6:75]
আমি
এরূপ ভাবেই ইব্রাহীমকে নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের
অত্যাশ্চর্য বস্তুসমূহ
দেখাতে লাগলাম-যাতে
সে দৃঢ় বিশ্বাসী
হয়ে যায়।
[6:76]
অনন্তর
যখন রজনীর অন্ধকার
তার উপর সমাচ্ছন্ন
হল, তখন সে একটি
তারকা দেখতে পেল, বললঃ
ইহা আমার প্রতিপালক। অতঃপর যখন তা অস্তমিত
হল তখন বললঃ আমি
অস্তগামীদেরকে
ভালবাসি না।
[6:77]
অতঃপর
যখন চন্দ্রকে ঝলমল
করতে দেখল, বললঃ
এটি আমার প্রতিপালক। অনন্তর
যখন তা অদৃশ্য
হয়ে গেল, তখন বলল
যদি আমার প্রতিপালক
আমাকে পথ-প্রদর্শন
না করেন, তবে অবশ্যই
আমি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের
অন্তর্ভুক্ত হয়ে
যাব।
[6:78]
অতঃপর
যখন সূর্যকে চকচক
করতে দেখল, বললঃ
এটি আমার পালনকর্তা, এটি বৃহত্তর। অতপর
যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল
হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা
যেসব বিষয়কে শরীক
কর, আমি ওসব থেকে
মুক্ত।
[6:79]
আমি
এক মুখী হয়ে স্বীয়
আনন ঐ সত্তার
দিকে করেছি, যিনি
নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল
সৃষ্টি করেছেন
এবং আমি মুশরেক
নই।
[6:80]
তাঁর
সাথে তার সম্প্রদায় বিতর্ক করল। সে বললঃ
তোমরা কি আমার
সাথে আল্লাহর একত্ববাদ
সম্পর্কে বিতর্ক
করছ; অথচ তিনি আমাকে
পথ প্রদর্শন করেছেন। তোমরা
যাদেরকে শরীক কর, আমি তাদেরকে
ভয় করি না তবে
আমার পালকর্তাই
যদি কোন কষ্ট দিতে
চান। আমার পালনকর্তাই
প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান
দ্বারা বেষ্টন
করে আছেন। তোমরা
কি চিন্তা কর না
?
[6:81]
যাদেরকে
তোমরা আল্লাহর
সাথে শরীক করে
রেখেছ, তাদেরকে কিরূপে
ভয় কর, অথচ তোমরা
ভয় কর না যে, তোমরা
আল্লাহর সাথে
এমন বস্তুকে শরীক
করছ, যাদের সম্পর্কে
আল্লাহ তোমাদের
প্রতি কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। অতএব, উভয়
সম্প্রদায়ের
মধ্যে শাস্তি লাভের
অধিক যোগ্য কে, যদি তোমরা জ্ঞানী
হয়ে থাক।
[6:82]
যারা
ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শেরেকীর
সাথে মিশ্রিত করে
না, তাদের জন্যেই
শান্তি এবং তারাই সুপথগামী।
[6:83]
এটি
ছিল আমার যুক্তি, যা আমি ইব্রাহীমকে তাঁর
সম্প্র?দায়ের বিপক্ষে
প্রদান করেছিলাম। আমি যাকে
ইচ্ছা মর্যাদায়
সমুন্নত করি। আপনার
পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী
[6:84]
আমি
তাঁকে দান করেছি
ইসহাক এবং এয়াকুব। প্রত্যেককেই
আমি পথ প্রদর্শন
করেছি এবং পূর্বে
আমি নূহকে পথ প্রদর্শন করেছি-তাঁর সন্তানদের
মধ্যে দাউদ, সোলায়মান, আইউব, ইউসুফ, মূসা
ও হারুনকে। এমনিভাবে আমি
সৎকর্মীদেরকে
প্রতিদান দিয়ে
থাকি।
[6:85]
আর
ও যাকারিয়া, ইয়াহিয়া, ঈসা এবং
ইলিয়াসকে। তারা
সবাই পুণ্যবানদের
অন্তর্ভুক্ত ছিল।
[6:86]
এবং
ইসরাঈল, ইয়াসা, ইউনূস, লূতকে
প্রত্যেককেই আমি
সারা বিশ্বের উপর
গৌরবাম্বিত করেছি।
[6:87]
আর
ও তাদের কিছু সংখ্যক পিতৃপুরুষ, সন্তান-সন্ততি
ও ভ্রাতাদেরকে; আমি তাদেরকে
মনোনীত করেছি এবং
সরল পথ প্রদর্শন
করেছি।
[6:88]
এটি
আল্লাহর হেদায়েত। স্বীয় বান্দাদের মধ্যে
যাকে ইচ্ছা, এপথে
চালান। যদি তারা
শেরেকী করত, তবে তাদের
কাজ কর্ম তাদের
জন্যে ব্যর্থ হয়ে
যেত।
[6:89]
তাদেরকেই
আমি গ্রন্থ, শরীয়ত
ও নবুয়ত দান
করেছি। অতএব, যদি এরা
আপনার নবুয়ত অস্বীকার
করে, তবে এর জন্যে
এমন সম্প্রদায়
নির্দিষ্ট করেছি, যারা
এতে অবিশ্বাসী
হবে না।
[6:90]
এরা
এমন ছিল, যাদেরকে
আল্লাহ পথ প্রদর্শন
করেছিলেন। অতএব, আপনিও
তাদের পথ অনুসরণ
করুন। আপনি বলে
দিনঃ আমি তোমাদের
কাছে এর জন্যে
কোন পারিশ্রমিক
চাই না। এটি সারা
বিশ্বের জন্যে
একটি উপদেশমাত্র।
[6:91]
তারা
আল্লাহকে যথার্থ মূল্যায়ন করতে
পারেনি, যখন তারা বললঃ
আল্লাহ কোন মানুষের
প্রতি কোন কিছু অবতীর্ণ করেননি। আপনি
জিজ্ঞেস করুনঃ
ঐ গ্রন্থ কে নাযিল
করেছে, যা মূসা নিয়ে এসেছিল ? যা জ্যোতিবিশেষ
এবং মানব মন্ডলীর
জন্যে হোদায়েতস্বরূপ, যা তোমরা বিক্ষিপ্তপত্রে
রেখে লোকদের জন্যে
প্রকাশ করছ এবং
বহুলাংশকে গোপন
করছ। তোমাদেরকে এমন অনেক বিষয়
শিক্ষা দেয়া হয়েছে, যা তোমরা
এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা
জানতো না। আপনি
বলে দিনঃ আল্লাহ
নাযিল করেছেন। অতঃপর
তাদেরকে তাদের
ক্রীড়ামূলক বৃত্তিতে ব্যাপৃত
থাকতে দিন।
[6:92]
এ
কোরআন এমন গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ন করেছি; বরকতময়, পূর্ববর্তী
গ্রন্থের সত্যতা
প্রমাণকারী এবং
যাতে আপনি মক্কাবাসী ও পাশ্ববর্তীদেরকে
ভয় প্রদর্শন করেন। যারা
পরকালে বিশ্বাস
স্থাপন করে তারা এর প্রতি
বিশ্বাস স্থাপন
করে এবং তার স্বীয়
নামায সংরক্ষণ
করে।
[6:93]
ঐ
ব্যক্তির চাইতে
বড় জালেম কে হবে, যে আল্লাহর
প্রতি মিথ্যা আরোপ
করে অথবা বলেঃ
আমার প্রতি ওহী
অবতীর্ণ হয়েছে। অথচ তার
প্রতি কোন ওহী
আসেনি এবং যে দাবী
করে যে, আমিও নাযিল
করে দেখাচ্ছি
যেমন আল্লাহ নাযিল
করেছেন। যদি আপনি
দেখেন যখন জালেমরা
মৃত্যু যন্ত্রণায়
থাকে এবং ফেরেশতারা
স্বীয় হস্ত প্রসারিত
করে বলে, বের কর
স্বীয় আত্মা!
অদ্য তোমাদেরকে
অবমাননাকর শাস্তি
প্রদান করা হবে। কারণ, তোমরা
আল্লাহর উপর অসত্য
বলতে এবং তাঁর
আয়াত সমূহ থেকে
অহংকার করতে।
[6:94]
তোমরা
আমার কাছে নিঃসঙ্গ
হয়ে এসেছ, আমি প্রথমবার
তোমাদেরকে সৃষ্টি
করেছিলাম। আমি তোদেরকে
যা দিয়েছিলাম, তা পশ্চাতেই রেখে
এসেছ। আমি তো
তোমাদের সাথে তোমাদের
সুপারিশকারীদের
কে দেখছি না। যাদের সম্পর্কে
তোমাদের দাবী ছিল
যে, তারা তোমাদের
ব্যাপারে অংশীদার। বাস্তুবিকই তোমাদের পরস্পরের
সম্পর্ক ছিন্ন
হয়ে গেছে এবং
তোমাদের দাবী উধাও
হয়ে গেছে।
[6:95]
নিশ্চয়
আল্লাহই বীজ ও
আঁটি থেকে অঙ্কুর
সৃষ্টিকারী; তিনি
জীবিতকে মৃত থেকে
বের করেন ও মৃতকে
জীবিত থেকে বের করেন। তিনি আল্লাহ
অতঃপর তোমরা কোথায়
বিভ্রান্ত হচ্ছ?
[6:96]
তিনি
প্রভাত রশ্মির
উন্মেষক। তিনি রাত্রিকে
আরামদায়ক করেছেন
এবং সূর্য ও চন্দ্রকে
হিসেবের জন্য রেখেছেন। এটি পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানীর
নির্ধারণ।
[6:97]
তিনিই
তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ
সৃজন করেছেন যাতে
তোমরা স্থল ও জলের
অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত
হও। নিশ্চয়
যারা জ্ঞানী তাদের
জন্যে আমি নির্দেশনাবলী
বিস্তারিত বর্ণনা
করে দিয়েছি।
[6:98]
তিনিই
তোমাদের কে এক
ব্যক্তি থেকে
সৃষ্টি করেছেন। অনন্তর
একটি হচ্ছে তোমাদের
স্থায়ী ঠিকানা
ও একটি হচ্ছে গচ্ছিত স্থল। নিশ্চয়
আমি প্রমাণাদি
বিস্তারিত ভাবে
বর্ণনা করে দিয়েছি
তাদের জন্যে, যারা
চিন্তা করে।
[6:99]
তিনিই
আকাশ থেকে পানি
বর্ষণ করেছেন
অতঃপর আমি এর দ্বারা
সর্বপ্রকার উদ্ভিদ
উৎপন্ন করেছি, অতঃপর
আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত
করেছি, যা থেকে যুগ্ম
বীজ উৎপন্ন
করি। খেজুরের
কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে
থাকে এবং আঙ্গুরের
বাগান, যয়তুন, আনার
পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন
গাছের ফলের প্রতি
লক্ষ্য কর যখন
সেুগুলো ফলন্ত
হয় এবং তার পরিপক্কতার
প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয়
এ গুলোতে নিদর্শন
রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে।
[6:100]
তারা
জিনদেরকে আল্লাহর
অংশীদার স্থির
করে; অথচ তাদেরকে
তিনিই সৃস্টি করেছেন। তারা
অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহর
জন্যে পুত্র
ও কন্যা সাব্যস্ত
করে নিয়েছে। তিনি
পবিত্র ও সমুন্নত, তাদের
বর্ননা থেকে।
[6:101]
তিনি
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের
আদি স্রষ্টা। কিরূপে
আল্লাহর পুত্র
হতে পারে, অথচ তাঁর
কোন সঙ্গী নেই
? তিনি
যাবতীয় কিছু
সৃষ্টি করেছেন। তিনি
সব বস্তু সম্পর্কে
সুবিজ্ঞ।
[6:102]
তিনিই
আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। তিনি
ব্যতীত কোন উপাস্য
নেই। তিনিই
সব কিছুর স্রষ্টা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তিনি
প্রত্যেক বস্তুর
কার্যনির্বাহী।
[6:103]
দৃষ্টিসমূহ
তাঁকে পেতে পারে না, অবশ্য তিনি
দৃষ্টিসমূহকে
পেতে পারেন। তিনি
অত্যন্ত সুক্ষদর্শী, সুবিজ্ঞ।
[6:104]
তোমাদের
কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ
থেকে নিদর্শনাবলী
এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ
করবে, সে নিজেরই উপকার করবে এবং
যে অন্ধ হবে, সে নিজেরই
ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের
পর্যবেক্ষক নই।
[6:105]
এমনি
ভাবে আমি নিদর্শনাবলী ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে
বর্ণনা করি যাতে
তারা না বলে যে, আপনি
তো পড়ে নিয়েছেন
এবং যাতে আমি
একে সুধীবৃন্দের
জন্যে খুব পরিব্যক্ত
করে দেই।
[6:106]
আপনি
পথ অনুসরণ করুন, যার আদেশ পালনকর্তার পক্ষ
থেকে আসে। তিনি
ব্যতীত কোন উপাস্য
নেই এবং মুশরিকদের
তরফ থেকে মুখ ফিরিয়ে
নিন।
[6:107]
যদি
আল্লাহ চাইতেন
তবে তারা শেরক
করত না। আমি আপনাকে
তাদের সংরক্ষক
করিনি এবং আপনি
তাদের কার্যনির্বাহী
নন।
[6:108]
তোমরা
তাদেরকে মন্দ বলো
না, যাদের তারা
আরাধনা করে আল্লাহকে
ছেড়ে। তাহলে
তারা ধৃষ্টতা করে
অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ
বলবে। এমনিভাবে
আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের
দৃষ্টিতে তাদের
কাজ কর্ম সুশোভিত
করে দিয়েছি। অতঃপর
স্বীয় পালনকর্তার
কাছে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তখন তিনি
তাদেরকে বলে দেবেন
যা কিছু তারা করত।
[6:109]
তারা
জোর দিয়ে আল্লাহর
কসম খায় যে, যদি তাদের
কাছে কোন নিদর্শন
আসে, তবে অবশ্যই
তারা বিশ্বাস স্থাপন
করবে। আপনি
বলে দিনঃ নিদর্শনাবলী
তো আল্লাহর কাছেই
আছে। হে মুসলমানগণ, তোমাদেরকে
কে বলল যে, যখন তাদের
কাছে নিদর্শনাবলী
আসবে, তখন তারা বিশ্বাস
স্থাপন করবেই ?
[6:110]
আমি
ঘুরিয়ে দিব তাদের
অন্তর ও দৃষ্টিকে, যেমন-তারা
এর প্রতি প্রথমবার
বিশ্বাস স্থাপন
করেনি এবং আমি
তাদেরকে তাদের
অবাধ্যতায় উদভ্রান্ত
ছেড়ে দিব।
[6:111]
আমি
যদি তাদের কাছে ফেরেশতাদেরকে
অবতারণ করতাম এবং
তাদের সাথে মৃতরা
কথাবার্তা বলত
এবং আমি সব বস্তুকে তাদের
সামনে জীবিত করে
দিতাম, তথাপি তারা
কখনও বিশ্বাস স্থাপনকারী
নয়; কিন্তু যদি
আল্লাহ চান। কিন্তু
তাদের অধিকাংশই
মুর্খ।
[6:112]
এমনিভাবে
আমি প্রত্যেক নবীর জন্যে শত্রু করেছি
শয়তান, মানব ও জিনকে। তারা
ধোঁকা দেয়ার জন্যে
একে অপরকে কারুকার্যখচিত
কথাবার্তা শিক্ষা
দেয়। যদি আপনার
পালনকর্তা চাইতেন, তবে তারা
এ কাজ করত না।
[6:113]
অতএব, আপনি
তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যাপবাদকে
মুক্ত ছেড়ে দিন
যাতে কারুকার্যখচিত
বাক্যের প্রতি
তাদের মন আকৃষ্ট হয় যারা পরকালে
বিশ্বাস করে না
এবং তারা একেও
পছন্দ করে নেয়
এবং যাতে ঐসব কাজ করে, যা তারা করছে।
[6:114]
তবে
কি আমি আল্লাহ
ব্যতীত অন্য কোন বিচারক অনুসন্ধান
করব, অথচ তিনিই
তোমাদের প্রতি
বিস্তারিত গ্রন্থ
অবতীর্ন করেছেন? আমি যাদেরকে
গ্রন্থ প্রদান
করেছি, তারা নিশ্চিত
জানে যে, এটি আপনার প্রতি পালকের
পক্ষ থেকে সত্যসহ
অবর্তীর্ন হয়েছে। অতএব, আপনি
সংশয়কারীদের
অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
[6:115]
আপনার
প্রতিপালকের বাক্য
পূর্ণ সত্য
ও সুষম। তাঁর
বাক্যের কোন পরিবর্তনকারী
নেই। তিনিই
শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
[6:116]
আর
যদি আপনি পৃথিবীর
অধিকাংশ লোকের
কথা মেনে নেন, তবে তারা
আপনাকে আল্লাহর
পথ থেকে বিপথগামী
করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার
অনুসরণ করে এবং
সম্পূর্ণ অনুমান
ভিত্তিক কথাবার্তা
বলে থাকে।
[6:117]
আপনার
প্রতিপালক তাদের সম্পর্কে খুব
জ্ঞাত রয়েছেন, যারা
তাঁর পথ থেকে বিপথগামী
হয় এবং তিনি তাদেরকেও খুব ভাল করে জানেন, যারা
তাঁর পথে অনুগমন
করে।
[6:118]
অতঃপর
যে জন্তুর উপর
আল্লাহর নাম উচ্চারিত
হয়, তা থেকে ভক্ষণ
কর যদি তোমরা তাঁর
বিধানসমূহে বিশ্বাসী
হও।
[6:119]
কোন
কারণে তোমরা এমন
জন্তু থেকে
ভক্ষণ করবে না, যার উপর
আল্লাহর নাম উচ্চারিত
হয়, অথচ আল্লাহ
ঐ সব জন্তুর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যেগুলোকে
তোমাদের জন্যে
হারাম করেছেন; কিন্তু
সেগুলোও তোমাদের
জন্যে হালাল, যখন তোমরা
নিরুপায় হয়ে
যাও। অনেক লোক
স্বীয় ভ্রান্ত প্রবৃত্তি দ্বারা
না জেনে বিপথগামী
করতে থাকে। আপনার
প্রতিপালক সীমাতিক্রম কারীদেরকে যথার্থই
জানেন।
[6:120]
তোমরা
প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন গোনাহ পরিত্যাগ
কর। নিশ্চয় যারা
গোনাহ করেছে, তারা
অতিসত্বর তাদের
কৃতকর্মের শাস্তি পাবে।
[6:121]
যেসব
জন্তুর উপর আল্লাহর
নাম উচ্চারিত
হয় না, সেগুলো থেকে
ভক্ষণ করো না; এ ভক্ষণ
করা গোনাহ। নিশ্চয় শয়তানরা তাদের
বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ
করে-যেন তারা তোমাদের
সাথে তর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য
কর, তোমরাও মুশরেক
হয়ে যাবে।
[6:122]
আর
যে মৃত ছিল অতঃপর
আমি তাকে জীবিত
করেছি এবং তাকে
এমন একটি আলো দিয়েছি, যা নিয়ে
সে মানুষের মধ্যে
চলাফেরা করে। সে কি
ঐ ব্যক্তির সমতুল্য
হতে পারে, যে অন্ধকারে
রয়েছে-সেখান থেকে
বের হতে পারছে
না? এমনিভাবে কাফেরদের
দৃষ্টিতে তাদের
কাজকর্মকে সুশোভিত
করে দেয়া হয়েছে।
[6:123]
আর
এমনিভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে অপরাধীদের
জন্য কিছু সর্দার
নিয়োগ করেছি-যেন
তারা সেখানে চক্রান্ত
করে। তাদের
সে চক্রান্ত তাদের
নিজেদের বিরুদ্ধেই; কিন্তু
তারা তা উপলব্ধি
করতে পারে না।
[6:124]
যখন
তাদের কাছে কোন
আয়াত পৌঁছে, তখন বলে, আমরা
কখনই মানব না যে, পর্যন্ত
না আমরাও তা প্রদত্ত
হই, যা আল্লাহর
রসূলগণ প্রদত্ত
হয়েছেন। আল্লাহ
এ বিষয়ে সুপারিজ্ঞাত
যে, কোথায় স্বীয় পয়গাম প্রেরণ
করতে হবে। যারা
অপরাধ করছে, তারা
অতিসত্বর আল্লাহর
কাছে পৌছে লাঞ্ছনা ও কঠোর
শাস্তি পাবে, তাদের
চক্রান্তের কারণে।
[6:125]
অতঃপর
আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে
ইসলামের জন্যে
উম্মুক্ত করে দেন
এবং যাকে বিপথগামী
করতে চান, তার বক্ষকে
সংকীর্ণ অত্যধিক
সংকীর্ণ করে দেন-যেন
সে সবেগে আকাশে
আরোহণ করছে। এমনি
ভাবে যারা বিশ্বাস
স্থাপন করে না। আল্লাহ
তাদের উপর আযাব
বর্ষন করেন।
[6:126]
আর
এটাই আপনার পালনকর্তার
সরল পথ। আমি উপদেশ
গ্রহণকারীদের
জন্যে আয়াতসমূহ
পুঙ্খানুপুঙ্খ
বর্ননা করেছি।
[6:127]
তাদের
জন্যেই তাদের প্রতিপালকের
কাছে নিরাপত্তার
গৃহ রয়েছে এবং
তিনি তাদের বন্ধু
তাদের কর্মের কারণে।
[6:128]
যেদিন
আল্লাহ সবাইকে
একত্রিত করবেন, হে জিন
সম্প্রদায়, তোমরা
মানুষদের মধ্যে
অনেককে অনুগামী
করে নিয়েছ। তাদের মানব বন্ধুরা
বলবেঃ হে আমাদের
পালনকর্তা, আমরা
পরস্পরে পরস্পরের
মাধ্যমে ফল লাভ
করেছি। আপনি
আমাদের জন্যে যে
সময় নির্ধারণ
করেছিলেন, আমরা
তাতে উপনীত হয়েছি। আল্লাহ বলবেনঃ
আগুন হল তোমাদের
বাসস্থান। তথায়
তোমরা চিরকাল অবস্থান
করবে; কিন্তু যখন
চাইবেন আল্লাহ। নিশ্চয়
আপনার পালনকর্তা
প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী।
[6:129]
এমনিভাবে
আমি পাপীদেরকে
একে অপরের
সাথে যুক্ত করে
দেব তাদের কাজকর্মের
কারণে।
[6:130]
হে
জ্বিন ও মানব সম্প্রদায়, তোমাদের
কাছে কি তোমাদের
মধ্য থেকে পয়গম্বরগণ
আগমন করেনি? যাঁরা
তোমাদেরকে আমার বিধানাবলী বর্ণনা
করতেন এবং তোমাদেরকে
আজকের এ দিনের
সাক্ষাতের ভীতি
প্রদর্শন করতেন? তারা বলবেঃ
আমরা স্বীয় গোনাহ
স্বীকার করে নিলাম। পার্থিব
জীবন তাদেরকে প্রতারিত করেছে। তারা
নিজেদের বিরুদ্ধে
স্বীকার করে নিয়েছে
যে, তারা কাফের
ছিল।
[6:131]
এটা
এ জন্যে যে, আপনার প্রতিপালক কোন
জনপদের অধিবাসীদেরকে
জুলুমের কারণে
ধ্বংস করেন না
এমতাবস্থায় যে, তথাকার
অধিবাসীরা অজ্ঞ
থাকে।
[6:132]
প্রত্যেকের
জন্যে তাদের কর্মের আনুপাতিক মর্যাদা
আছে এবং আপনার
প্রতিপালক তাদের
কর্ম সম্পর্কে
বেখবর নন।
[6:133]
আপনার
প্রতিপালক অমুখাপেক্ষী, করুণাময়। তিনি
ইচ্ছা করলে তোমাদের
সবাইকে উচ্ছেদ
করে দিবেন এবং
তোমাদের পর যাকে ইচ্ছা তোমাদের
স্থলে অভিষিক্ত
করবেন; যেমন তোমাদেরকে
অন্য এক সম্প্রদায়ের
বংশধর থেকে
সৃষ্টি করেছেন।
[6:134]
যে
বিষয়ের ওয়াদা
তোমাদের সাথে
করা হয়, তা অবশ্যই
আগমন করবে এবং
তোমরা অক্ষম করতে
পারবে না।
[6:135]
আপনি
বলে দিনঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা
স্বস্থানে কাজ
করে যাও, আমিও
কাজ করি। অচিরেই
জানতে পারবে যে, পরিণাম
গৃহ কে লাভ করে। নিশ্চয়
জালেমরা সুফলপ্রাপ্ত
হবে না।
[6:136]
আল্লাহ
যেসব শস্যক্ষেত্র
ও জীবজন্তু
সৃষ্টি করেছেন, সেগুলো
থেকে তারা এক অংশ
আল্লাহর জন্য নির্ধারণ
করে অতঃপর
নিজ ধারণা অনুসারে
বলে এটা আল্লাহর
এবং এটা আমাদের
অংশীদারদের। অতঃপর
যে অংশ তাদের
অংশীদারদের, তা তো
আল্লাহর দিকে পৌঁছে
না এবং যা আল্লাহর
তা তাদের উপাস্যদের
দিকে পৌছে যায়। তাদের
বিচার কতই না মন্দ।
[6:137]
এমনিভাবে
অনেক মুশরেকের দৃষ্টিতে তাদের
উপাস্যরা সন্তান
হত্যাকে সুশোভিত
করে দিয়েছে যেন
তারা তাদেরকে বিনষ্ট করে দেয়
এবং তাদের ধর্মমতকে
তাদের কাছে বিভ্রান্ত
করে দেয়। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তারা
এ কাজ করত না। অতএব, আপনি
তাদেরকে এবং তাদের
মনগড়া বুলিকে পরিত্যাগ করুন।
[6:138]
তারা
বলেঃ এসব চতুষ্পদ
জন্তু ও শস্যক্ষেত্র
নিষিদ্ধ। আমরা
যাকে ইচছা করি, সে ছাড়া
এগুলো কেউ খেতে
পারবে না, তাদের
ধারণা অনুসারে। আর কিছুসংখ্যক
চতুষ্পদ জন্তুর
পিঠে আরোহন হারাম
করা হয়েছে এবং কিছু সংখ্যক
চতুষ্পদ জন্তুর
উপর তারা ভ্রান্ত
ধারনা বশতঃ আল্লাহর
নাম উচ্চারণ করে না, তাদের মনগড়া
বুলির কারণে, অচিরেই
তিনি তাদের কে
শাস্তি দিবেন।
[6:139]
তারা
বলেঃ এসব চতুষ্পদ
জন্তুর পেটে
যা আছে, তা বিশেষ ভাবে
আমাদের পুরুষদের
জন্যে এবং আমাদের
মহিলাদের জন্যে
তা হারাম। যদি তা
মৃত হয়, তবে তার
প্রাপক হিসাবে
সবাই সমান। অচিরেই
তিনি তাদেরকে তাদের বর্ণনার
শাস্তি দিবেন। তিনি
প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী।
[6:140]
নিশ্চয়
তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা
নিজ সন্তানদেরকে
নির্বুদ্ধিতাবশতঃ
কোন প্রমাণ ছাড়াই
হত্যা করেছে এবং আল্লাহ তাদেরকে
যেসব দিয়েছিলেন, সেগুলোকে
আল্লাহর প্রতি
ভ্রান্ত ধারণা
পোষণ করে হারাম
করে নিয়েছে। নিশ্চিতই
তারা পথভ্রষ্ট
হয়েছে এবং সুপথগামী
হয়নি।
[6:141]
তিনিই
উদ্যান সমূহ সৃষ্টি করেছে-তাও, যা মাচার
উপর তুলে দেয়া
হয়, এবং যা মাচার
উপর তোলা হয় না
এবং খর্জুর
বৃক্ষ ও শস্যক্ষেত্র
যেসবের স্বাদবিশিষ্ট
এবং যয়তুন ও আনার
সৃষ্টি করেছেন-একে
অন্যের সাদৃশ্যশীল
এবং সাদৃশ্যহীন। এগুলোর
ফল খাও, যখন ফলন্ত
হয় এবং হক দান
কর কর্তনের সময়ে
এবং অপব্যয় করো
না। নিশ্চয় তিনি
অপব্যয়ীদেরকে
পছন্দ করেন
না।
[6:142]
তিনি
সৃষ্টি করেছেন
চতুষ্পদ জন্তুর
মধ্যে বোঝা বহনকারীকে
এবং খর্বাকৃতিকে। আল্লাহ
তোমাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন, তা থেকে
খাও এবং শয়তানের
পদাঙ্ক অনুসরণ
করো না। সে তোমাদের
প্রকাশ্য শত্রু।
[6:143]
সৃষ্টি
করেছেন আটটি নর
ও মাদী। ভেড়ার মধ্যে
দুই প্রকার ও ছাগলের
মধ্যে দুই প্রকার। জিজ্ঞেস
করুন, তিনি কি উভয় নর হারাম করেছেন, না উভয়
মাদীকে ? না যা
উভয় মাদীর পেটে
আছে? তোমরা আমাকে প্রমাণসহ বল, যদি তোমরা
সত্যবাদী হও।
[6:144]
সৃষ্টি
করেছেন উটের মধ্যে
দুই প্রকার
এবং গরুর মধ্যে
দুই প্রকার। আপনি
জিজ্ঞেস করুনঃ
তিনি কি উভয় নর
হারাম করেছেন, না উভয়
মাদীকে, না যা উভয়
মাদীর পেটে আছে? তোমরা
কি উপস্থিত ছিলে, যখন আল্লাহ এ নির্দেশ
দিয়েছিলেন? অতএব
সে ব্যক্তি অপেক্ষা
বেশী অত্যচারী
কে, যে আল্লাহ
সম্পর্কে মিথ্যা
ধারণা পোষন করে
যাতে করে মানুষকে
বিনা প্রমাণে পথভ্রষ্ট করতে পারে? নিশ্চয়
আল্লাহ অত্যাচারী
সম্প্রদায়কে
পথপ্রদর্শন করেন
না।
[6:145]
আপনি
বলে দিনঃ যা কিছু
বিধান ওহীর
মাধ্যমে আমার কাছে
পৌঁছেছে, তন্মধ্যে
আমি কোন হারাম
খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে, যা সে
ভক্ষণ করে; কিন্তু
মৃত অথবা প্রবাহিত
রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র
অথবা অবৈধ; যবেহ
করা জন্তু যা আল্লাহ
ছাড়া অন্যের নামে
উৎসর্গ করা হয়। অতপর
যে ক্ষুধায় কাতর
হয়ে পড়ে এমতাবস্থায়
যে অবাধ্যতা করে
না এবং সীমালঙ্গন
করে না, নিশ্চয় আপনার
পালনকর্তা ক্ষমাশীল
দয়ালু।
[6:146]
ইহুদীদের
জন্যে আমি প্রত্যেক নখবিশিষ্ট জন্তু
হারাম করেছিলাম
এবং ছাগল ও গরু
থেকে এতদুভয়ের
চর্বি আমি তাদের জন্যে হারাম করেছিলাম, কিন্তু
ঐ চর্বি, যা পৃষ্টে
কিংবা অন্ত্রে
সংযুক্ত থাকে অথবা অস্থির সাথে
মিলিত থাকে। তাদের
অবাধ্যতার কারণে
আমি তাদেরকে এ
শাস্তি দিয়েছিলাম। আর আমি অবশ্যই
সত্যবাদী।
[6:147]
যদি
তারা আপনাকে মিথ্যবাদী বলে, তবে বলে দিনঃ
তোমার প্রতিপালক
সুপ্রশস্ত করুণার
মালিক। তাঁর
শাস্তি অপরাধীদের
উপর থেকে টলবে
না।
[6:148]
এখন
মুশরেকরা বলবেঃ
যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে না
আমরা শিরক করতাম, না আমাদের
বাপ দাদারা এবং
না আমরা কোন বস্তুকে হারাম
করতাম। এমনিভাবে
তাদের পূর্ববর্তীরা
মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি
তারা আমার শাস্তি
আস্বাদন করেছে। আপনি
বলুনঃ তোমাদের
কাছে কি কোন প্রমাণ
আছে যা আমাদেরকে দেখাতে পার। তোমরা
শুধুমাত্র আন্দাজের
অনুসরণ কর এবং
তোমরা শুধু অনুমান
করে কথা বল।
[6:149]
আপনি
বলে দিনঃ অতএব, পরিপূর্ন যুক্তি আল্লাহরই। তিনি
ইচ্ছা করলে তোমাদের
সবাইকে পথ প্রদর্শন
করতেন।
[6:150]
আপনি
বলুনঃ তোমাদের সাক্ষীদেরকে
আন, যারা সাক্ষ্য
দেয় যে, আল্লাহ
তা’আলা এগুলো
হারাম করেছেন। যদি তারা সাক্ষ্য
দেয়, তবে আপনি এ
সাক্ষ্য গ্রহণ
করবেন না এবং তাদের
কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন
না, যারা আমার
নির্দেশাবলীকে
মিথ্যা বলে, যারা
পরকালে বিশ্বাস
করে না এবং
যারা স্বীয় প্রতিপালকের
সমতুল্য অংশীদার
করে।
[6:151]
আপনি
বলুনঃ এস, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ
করে শুনাই, যেগুলো
তোমাদের প্রতিপালক
তোমাদের জন্যে
হারাম করেছেন। তাএই যে, আল্লাহর
সাথে কোন কিছুকে
অংশীদার করো না, পিতা-মাতার
সাথে সদয় ব্যবহার করো স্বীয় সন্তানদেরকে
দারিদ্রে?র কারণে
হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে
ও তাদেরকে আহার দেই, নির্লজ্জতার
কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য
হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ
হারাম করেছেন, তাকে
হত্যা করো না; কিন্তু
ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ
দিয়েছেন, যেন তোমরা
বুঝ।
[6:152]
এতীমদের
ধনসম্পদের কাছেও
যেয়ো না; কিন্তু
উত্তম পন্থায়
যে পর্যন্ত সে
বয়ঃপ্রাপ্ত না
হয়। ওজন ও
মাপ পূর্ণ কর ন্যায় সহকারে। আমি কাউকে
তার সাধ্যের অতীত
কষ্ট দেই না। যখন তোমরা
কথা বল, তখন সুবিচার
কর, যদিও সে আত্নীয়ও
হয়। আল্লাহর
অঙ্গীকার পূর্ণ
কর।
[6:153]
তোমাদেরকে
এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা
উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত
এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে
চল এবং অন্যান্য
পথে চলো না। তা হলে
সেসব পথ তোমাদেরকে
তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন
করে দিবে। তোমাদেরকে
এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে
তোমরা সংযত হও।
[6:154]
অতঃপর
আমি মূসাকে গ্রন্থ দিয়েছি, সৎকর্মীদের প্রতি
নেয়ামতপূর্ণ
করার জন্যে, প্রত্যেক
বস্তুর বিশদ বিবরণের জন্যে, হোদায়াতের
জন্যে এবং করুণার
জন্যে-যাতে তারা
স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাতে
বিশ্বাসী হয়।
[6:155]
এটি
এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়, অতএব, এর অনুসরণ
কর এবং ভয় কর-যাতে
তোমরা করুণাপ্রাপ্ত
হও।
[6:156]
এ
জন্যে যে, কখনও
তোমরা বলতে শুরু করঃ গ্রন্থ
তো কেবল আমাদের
পূর্ববর্তী দু'সম্প্রদায়ের
প্রতিই অবতীর্ণ হয়েছে এবং আমরা
সেগুলোর পাঠ ও
পঠন সম্পর্কে কিছুই
জানতাম না।
[6:157]
কিংবা
বলতে শুরু করঃ
যদি আমাদের
প্রতি কোন গ্রন্থ
অবতীর্ণ হত, আমরা
এদের চাইতে অধিক
পথপ্রাপ্ত হতাম। অতএব, তোমাদের পালনকর্তার
পক্ষ থেকে তোমাদের
কাছে সুষ্পষ্ট
প্রমাণ, হেদায়েত
ও রহমত এসে গেছে। অতঃপর
সে ব্যক্তির চাইতে
অধিক অনাচারী কে
হবে, যে আল্লাহর
আয়াত সমূহকে
মিথ্যা বলে এবং
গা বাঁচিয়ে চলে। অতি সত্ত্বর
আমি তাদেরকে শাস্তি
দেব। যারা
আমার আয়াত সমূহ
থেকে গা বাঁচিয়ে
চলে-জঘন্য শাস্তি
তাদের গা বাঁচানোর কারণে।
[6:158]
তারা
শুধু এ বিষয়ের
দিকে চেয়ে
আছে যে, তাদের কাছে
ফেরেশতা আগমন করবে
কিংবা আপনার পালনকর্তা
আগমন করবেন অথবা আপনার পালনকর্তার
কোন নির্দেশ আসবে। যেদিন
আপনার পালনকর্তার
কোন নিদর্শন আসবে, সেদিন এমন
কোন ব্যক্তির বিশ্বাস
স্থাপন তার জন্যে
ফলপ্রসূ হবে না, যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস
স্থাপন করেনি কিংবা
স্বীয় বিশ্বাস
অনুযায়ী কোনরূপ
সৎকর্ম করেনি। আপনি
বলে দিনঃ তোমরা
পথের দিকে চেয়ে
থাক, আমরাও পথে
দিকে তাকিয়ে রইলাম।
[6:159]
নিশ্চয়
যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে
এবং অনেক দল হয়ে
গেছে, তাদের সাথে
আপনার কোন সম্পর্ক
নেই। তাদের
ব্যাপার আল্লাহ
তা'আয়ালার নিকট
সমর্পিত। অতঃপর
তিনি বলে দেবেন
যা কিছু তারা
করে থাকে।
[6:160]
যে
একটি সৎকর্ম
করবে, সে তার দশগুণ পাবে এবং
যে, একটি মন্দ
কাজ করবে, সে তার
সমান শাস্তিই পাবে। বস্তুতঃ তাদের প্রতি জুলুম
করা হবে না।
[6:161]
আপনি
বলে দিনঃ আমার
প্রতিপালক আমাকে সরল পথ প্রদর্শন
করেছেন একাগ্রচিত্ত
ইব্রাহীমের বিশুদ্ধ
ধর্ম। সে অংশীবাদীদের
অন্তর্ভূক্ত ছিল
না।
[6:162]
আপনি
বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার
জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক
আল্লাহরই জন্যে।
[6:163]
তাঁর
কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি
এবং আমি প্রথম
আনুগত্যশীল।
[6:164]
আপনি
বলুনঃ আমি কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য প্রতিপালক
খোঁজব, অথচ তিনিই
সবকিছুর প্রতিপালক? যে ব্যক্তি
কোন গোনাহ
করে, তা তারই দায়িত্বে
থাকে। কেউ অপরের
বোঝা বহন করবে
না। অতঃপর তোমাদেরকে সবাইকে
প্রতিপালকের কাছে
প্রত্যাবর্তন
করতে হবে। অনন্তর
তিনি তোমাদেরকে
বলে দিবেন, যেসব
বিষয়ে তোমরা বিরোধ
করতে।
[6:165]
তিনিই
তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছেন
এবং একে অন্যের
উপর মর্যাদা সমুন্নত
করেছেন, যাতে তোমাদের
কে এ বিষয়ে
পরীক্ষা করেন, যা তোমাদেরকে
দিয়েছেন। আপনার
প্রতিপালক দ্রুত
শাস্তি দাতা এবং তিনি অত্যন্ত
ক্ষমাশীল, দয়ালু।