28 Al-Qasas

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

[28:1]

ত্বা-সীন-মীম

[28:2]

এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত

[28:3]

আমি আপনার কাছে মূসা ও ফেরাউনের বৃত্তান্ত সত্য সহকারে বর্ণনা করছি ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে

[28:4]

ফেরাউন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের একটি দলকে দূর্বল করে দিয়েছিল সে তাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখতনিশ্চয় সে ছিল অনর্থ সৃষ্টিকারী

[28:5]

দেশে যাদেরকে দূর্বল করা হয়েছিল, আমার ইচ্ছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকারী করার

[28:6]

এবং তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় আসীন করার এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য-বাহিনীকে তা দেখিয়ে দেয়ার, যা তারা সেই দূর্বল দলের তরফ থেকে আশংকা করত

[28:7]

আমি মূসা-জননীকে আদেশ পাঠালাম যে, তাকে স্তন্য দান করতে থাকঅতঃপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের আশংকা কর, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ কর এবং ভয় করো না, দুঃখও করো নাআমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বরগণের একজন করব

[28:8]

অতঃপর ফেরাউন পরিবার মূসাকে কুড়িয়ে নিল, যাতে তিনি তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হয়ে যাননিশ্চয় ফেরাউন, হামান, ও তাদের সৈন্যবাহিনী অপরাধী ছিল

[28:9]

ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা করো নাএ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারিপ্রকৃতপক্ষে পরিণাম সম্পর্কে তাদের কোন খবর ছিল না

[28:10]

সকালে মূসা জননীর অন্তর অস্থির হয়ে পড়লযদি আমি তাঁর হৃদয়কে দৃঢ় করে না দিতাম, তবে তিনি মূসাজনিত অস্থিরতা প্রকাশ করেই দিতেনদৃঢ় করলাম, যাতে তিনি থাকেন বিশ্ববাসীগণের মধ্যে

[28:11]

তিনি মূসার ভগিণীকে বললেন, তার পেছন পেছন যাওসে তাদের অজ্ঞাতসারে অপরিচিতা হয়ে তাকে দেখে যেতে লাগল

[28:12]

পূর্ব থেকেই আমি ধাত্রীদেরকে মূসা থেকে বিরত রেখেছিলামমূসার ভগিনী বলল, আমি তোমাদেরকে এমন এক পরিবারের কথা বলব কি, যারা তোমাদের জন্যে একে লালন-পালন করবে এবং তারা হবে তার হিতাকাঙ্ক্ষী?

[28:13]

অতঃপর আমি তাকে জননীর কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু জুড়ায় এবং তিনি দুঃখ না করেন এবং যাতে তিনি জানেন যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, কিন্তু অনেক মানুষ তা জানে না

[28:14]

যখন মূসা যৌবনে পদার্পন করলেন এবং পরিণত বয়স্ক হয়ে গেলেন, তখন আমি তাঁকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানদান করলামএমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি

[28:15]

তিনি শহরে প্রবেশ করলেন, যখন তার অধিবাসীরা ছিল বেখবরতথায় তিনি দুই ব্যক্তিকে লড়াইরত দেখলেনএদের একজন ছিল তাঁর নিজ দলের এবং অন্য জন তাঁর শত্রু দলেরঅতঃপর যে তাঁর নিজ দলের সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলতখন মূসা তাকে ঘুষি মারলেন এবং এতেই তার মৃত্যু হয়ে গেলমূসা বললেন, এটা শয়তানের কাজ নিশ্চয় সে প্রকাশ্য শত্রু, বিভ্রান্তকারী

[28:16]

তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছিঅতএব, আমাকে ক্ষমা করুনআল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেননিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু

[28:17]

তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, এরপর আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না

[28:18]

অতঃপর তিনি প্রভাতে উঠলেন সে শহরে ভীত-শংকিত অবস্থায়হঠাৎ তিনি দেখলেন, গতকল্য যে ব্যক্তি তাঁর সাহায্য চেয়েছিল, সে চিৎকার করে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছেমূসা তাকে বললেন, তুমি তো একজন প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট ব্যক্তি

[28:19]

অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে শায়েস্তা করতে চাইলেন, তখন সে বলল, গতকল্য তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, সে রকম আমাকেও কি হত্যা করতে চাও? তুমি তো পৃথিবীতে স্বৈরাচারী হতে চাচ্ছ এবং সন্ধি স্থাপনকারী হতে চাও না

[28:20]

এসময় শহরের প্রান্ত থেকে একব্যক্তি ছুটে আসল এবং বলল, হে মূসা, রাজ্যের পরিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার পরমর্শ করছেঅতএব, তুমি বের হয়ে যাওআমি তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী

[28:21]

অতঃপর তিনি সেখান থেকে ভীত অবস্থায় বের হয়ে পড়লেন পথ দেখতে দেখতেতিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা কর

[28:22]

যখন তিনি মাদইয়ান অভিমুখে রওয়ানা হলেন তখন বললেন, আশা করা যায় আমার পালনকর্তা আমাকে সরল পথ দেখাবেন

[28:23]

যখন তিনি মাদইয়ানের কূপের ধারে পৌছলেন, তখন কূপের কাছে একদল লোককে পেলেন তারা জন্তুদেরকে পানি পান করানোর কাজে রতএবং তাদের পশ্চাতে দূজন স্ত্রীলোককে দেখলেন তারা তাদের জন্তুদেরকে আগলিয়ে রাখছেতিনি বললেন, তোমাদের কি ব্যাপার? তারা বলল, আমরা আমাদের জন্তুদেরকে পানি পান করাতে পারি না, যে পর্যন্ত রাখালরা তাদের জন্তুদেরকে নিয়ে সরে না যায়আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ

[28:24]

অতঃপর মূসা তাদের জন্তুদেরকে পানি পান করালেনঅতঃপর তিনি ছায়ার দিকে সরে গেলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী

[28:25]

অতঃপর বালিকাদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে তাঁর কাছে আগমন করলবলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, যাতে আপনি যে আমাদেরকে পানি পান করিয়েছেন, তার বিনিময়ে পুরস্কার প্রদান করেনঅতঃপর মূসা যখন তাঁর কাছে গেলেন এবং সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন, তখন তিনি বললেন, ভয় করো না, তুমি জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছ

[28:26]

বালিকাদ্বয়ের একজন বলল পিতাঃ তাকে চাকর নিযুক্ত করুনকেননা, আপনার চাকর হিসেবে সে-ই উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত

[28:27]

পিতা মূসাকে বললেন, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহে দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার চাকুরী করবে, যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, তা তোমার ইচ্ছাআমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নাআল্লাহ চাহেন তো তুমি আমাকে সৎকর্মপরায়ণ পাবে

[28:28]

মূসা বললেন, আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তি স্থির হলদুটি মেয়াদের মধ্য থেকে যে কোন একটি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে নাআমরা যা বলছি, তাতে আল্লাহর উপর ভরসা

[28:29]

অতঃপর মূসা (আঃ) যখন সেই মেয়াদ পূর্ণ করল এবং সপরিবারে যাত্রা করল, তখন সে তুর পর্বতের দিক থেকে আগুন দেখতে পেলসে তার পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসতে পারি অথবা কোন জ্বলন্ত কাষ্ঠখন্ড আনতে পারি, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার

[28:30]

যখন সে তার কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা

[28:31]

আরও বলা হল, তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করঅতঃপর যখন সে লাঠিকে সর্পের ন্যায় দৌড়াদৌড়ি করতে দেখল, তখন সে মুখ ফিরিয়ে বিপরীত দিকে পালাতে লাগল এবং পেছন ফিরে দেখল নাহে মূসা, সামনে এস এবং ভয় করো নাতোমার কোন আশংকা নেই

[28:32]

তোমার হাত বগলে রাখতা বের হয়ে আসবে নিরাময় উজ্জ্বল হয়ে এবং ভয় হেতু তোমার হাত তোমার উপর চেপে ধরএই দুটি ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গের প্রতি তোমার পালনকর্তার তরফ থেকে প্রমাণ নিশ্চয় তারা পাপাচারী সম্প্রদায়

[28:33]

মূসা বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিকাজেই আমি ভয় করছি যে, তারা আমাকে হত্যা করবে

[28:34]

আমার ভাই হারুণ, সে আমা অপেক্ষা প্রাঞ্জলভাষীঅতএব, তাকে আমার সাথে সাহায্যের জন্যে প্রেরণ করুনসে আমাকে সমর্থন জানাবেআমি আশংকা করি যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে

[28:35]

আল্লাহ বললেন, আমি তোমার বাহু শক্তিশালী করব তোমার ভাই দ্বারা এবং তোমাদের প্রধান্য দান করবফলে, তারা তোমার কাছে পৌছাতে পারবে নাআমার নিদর্শনাবলীর জোরে তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা প্রবল থাকবে

[28:36]

অতঃপর মূসা যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে পৌছল, তখন তারা বলল, এতো অলীক জাদু মাত্রআমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এ কথা শুনিনি

[28:37]

মূসা বলল, আমার পালনকর্তা সম্যক জানেন যে তার নিকট থেকে হেদায়েতের কথা নিয়ে আগমন করেছে এবং যে প্রাপ্ত হবে পরকালের গৃহনিশ্চয় জালেমরা সফলকাম হবে না

[28:38]

ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছেহে হামান, তুমি ইট পোড়াও, অতঃপর আমার জন্যে একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর, যাতে আমি মূসার উপাস্যকে উকি মেরে দেখতে পারিআমার তো ধারণা এই যে, সে একজন মিথ্যাবাদী

[28:39]

ফেরাউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করতে লাগল এবং তারা মনে করল যে, তারা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না

[28:40]

অতঃপর আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম, ৎপর আমি তাদেরকে সমু?েদ্র নিক্ষেপ করলামঅতএব, দেখ জালেমদের পরিণাম কি হয়েছে

[28:41]

আমি তাদেরকে নেতা করেছিলাম তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করতকেয়ামতের দিন তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না

[28:42]

আমি এই পৃথিবীতে অভিশাপকে তাদের পশ্চাতে লাগিয়ে দিয়েছি এবং কেয়ামতের দিন তারা হবে দুর্দশাগ্রস্ত

[28:43]

আমি পূর্ববর্তী অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার পর মূসাকে কিতাব দিয়েছি মানুষের জন্যে জ্ঞানবর্তিকা হেদায়েত ও রহমত, যাতে তারা স্মরণ রাখে

[28:44]

মূসাকে যখন আমি নির্দেশনামা দিয়েছিলাম, তখন আপনি পশ্চিম প্রান্তে ছিলেন না এবং আপনি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন না

[28:45]

কিন্তু আমি অনেক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম, অতঃপর তাদের অনেক যুগ অতিবাহিত হয়েছেআর আপনি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলেন না যে, তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করতেন কিন্তু আমিই ছিলাম রসূল প্রেরণকারী

[28:46]

আমি যখন মূসাকে আওয়াজ দিয়েছিলাম, তখন আপনি তুর পর্বতের পার্শ্বে ছিলেন নাকিন্তু এটা আপনার পালনকর্তার রহমত স্বরূপ, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করেন, যাদের কাছে আপনার পূêেব কোন ভীতি প্রদর্শনকারী আগমন করেনি, যাতে তারা স্মরণ রাখে

[28:47]

আর এ জন্য যে, তাদের কৃতকর্মের জন্যে তাদের কোন বিপদ হলে তারা বলত, হে আমাদের পালনকর্তা, তুমি আমাদের কাছে কোন রসূল প্রেরণ করলে না কেন? করলে আমরা তোমার আয়াতসমূহের অনুসরণ করতাম এবং আমরা বিশ্বাস স্থাপনকারী হয়ে যেতাম

[28:48]

অতঃপর আমার কাছ থেকে যখন তাদের কাছে সত্য আগমন করল, তখন তারা বলল, মূসাকে যেরূপ দেয়া হয়েছিল, এই রসূলকে সেরূপ দেয়া হল না কেন? পূর্বে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল, তারা কি তা অস্বীকার করেনি? তারা বলেছিল, উভয়ই জাদু, পরস্পরে একাত্মতারা আরও বলেছিল, আমরা উভয়কে মানি না

[28:49]

বলুন, তোমরা সত্যবাদী হলে এখন আল্লাহর কাছ থেকে কোন কিতাব আন, যা এতদুভয় থেকে উত্তম পথপ্রদর্শক হয়আমি সেই কিতাব অনুসরণ করব

[28:50]

অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেআল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না

[28:51]

আমি তাদের কাছে উপর্যুপরি বাণী পৌছিয়েছিযাতে তারা অনুধাবন করে

[28:52]

কোরআনের পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা এতে বিশ্বাস করে

[28:53]

যখন তাদের কাছে এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলামএটা আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্যআমরা এর পূর্বেও আজ্ঞাবহ ছিলাম

[28:54]

তারা দুইবার পুরস্কৃত হবে তাদের সবরের কারণেতারা মন্দের জওয়াবে ভাল করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে

[28:55]

তারা যখন অবাঞ্চিত বাজে কথাবার্তা শ্রবণ করে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজতোমাদের প্রতি সালামআমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না

[28:56]

আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে ৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তাআলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেনকে ৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন

[28:57]

তারা বলে, যদি আমরা আপনার সাথে সুপথে আসি, তবে আমরা আমাদের দেশ থেকে উৎখাত হবআমি কি তাদের জন্যে একটি নিরাপদ হরম প্রতিষ্ঠিত করিনি? এখানে সর্বপ্রকার ফল-মূল আমদানী হয় আমার দেয়া রিযিকস্বরূপকিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না

[28:58]

আমি অনেক জনপদ ধবংস করেছি, যার অধিবাসীরা তাদের জীবন যাপনে মদমত্ত ছিলএগুলোই এখন তাদের ঘর-বাড়ীতাদের পর এগুলোতে মানুষ সামান্যই বসবাস করেছেঅবশেষে আমিই মালিক রয়েছি

[28:59]

আপনার পালনকর্তা জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না, যে পর্যন্ত তার কেন্দ্রস্থলে রসূল প্রেরণ না করেন, যিনি তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি, যখন তার বাসিন্দারা জুলুম করে

[28:60]

তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা বৈ নয়আর আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উত্তম ও স্থায়ীতোমরা কি বোঝ না ?

[28:61]

যাকে আমি উত্তম প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যা সে পাবে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার দিয়েছি, অতঃপর তাকে কেয়ামতের দিন অপরাধীরূপে হাযির করা হবে?

[28:62]

যেদিন আল্লাহ তাদেরকে আওয়াজ দিয়ে বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক দাবী করতে, তারা কোথায়?

[28:63]

যাদের জন্যে শাস্তির আদেশ অবধারিত হয়েছে, তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তাএদেরকেই আমরা পথভ্রষ্ট করেছিলামআমরা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম, যেমন আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছিলামআমরা আপনার সামনে দায়মুক্ত হচ্ছিতারা কেবল আমাদেরই এবাদত করত না

[28:64]

বলা হবে, তোমরা তোমাদের শরীকদের আহবান করতখন তারা ডাকবে,অতঃপর তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না এবং তারা আযাব দেখবেহায়! তারা যদি সৎপথ প্রাপ্ত হত

[28:65]

যে দিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা রসূলগণকে কি জওয়াব দিয়েছিলে?

[28:66]

অতঃপর তাদের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যাবে এবং তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না

[28:67]

তবে যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আশা করা যায়, সে সফলকাম হবে

[28:68]

আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেনতাদের কোন ক্ষমতা নেইআল্লাহ পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে, তা থেকে উর্ধ্বে

[28:69]

তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে, আপনার পালনকর্তা তা জানেন

[28:70]

তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেইইহকাল ও পরকালে তাঁরই প্রশংসাবিধান তাঁরই ক্ষমতাধীন এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে

[28:71]

বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে? তোমরা কি তবুও কর্ণêপাত করবে না?

[28:72]

বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি দিনকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে যে, তোমাদেরকে রাত্রি দান করতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে ? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবে না ?

[28:73]

তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর

[28:74]

যেদিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে, তারা কোথায়?

[28:75]

প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে আমি একজন সাক্ষী আলাদা করব; অতঃপর বলব, তোমাদের প্রমাণ আনতখন তারা জানতে পারবে যে, সত্য আল্লাহর এবং তারা যা গড়ত, তা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে যাবে

[28:76]

কারুন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্তঅতঃপর সে তাদের প্রতি দুষ্টামি করতে আরম্ভ করলআমি তাকে এত ধন-ভান্ডার দান করেছিলাম যার চাবি বহন করা কয়েকজন শক্তিশালী লোকের পক্ষে কষ্টসাধ্য ছিলযখন তার সম্প্রদায় তাকে বলল, দম্ভ করো না, আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে ভালবাসেন না

[28:77]

আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তদ্বারা পরকালের গৃহ অনুসন্ধান কর, এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভূলে যেয়ো না তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো নানিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না

[28:78]

সে বলল, আমি এই ধন আমার নিজস্ব জ্ঞান-গরিমা দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছিসে কি জানে না যে, আল্লাহ তার পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন, যারা শক্তিতে ছিল তার চাইতে প্রবল এবং ধন-সম্পদে অধিক প্রাচুর্যশীল? পাপীদেরকে তাদের পাপকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে না

[28:79]

অতঃপর কারুন জাঁকজমক সহকারে তার সম্প্রদায়ের সামনে বের হলযারা পার্থিব জীবন কামনা করত, তারা বলল, হায়, কারুন যা প্রাপ্ত হয়েছে, আমাদেরকে যদি তা দেয়া হত! নিশ্চয় সে বড় ভাগ্যবান

[28:80]

আর যারা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিল, তার বলল, ধিক তোমাদেরকে, যারা ঈমানদার এবং সৎকর্মী, তাদের জন্যে আল্লাহর দেয়া সওয়াবই উৎকৃষ্টএটা তারাই পায়, যারা সবরকারী

[28:81]

অতঃপর আমি কারুনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিলামতার পক্ষে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন দল ছিল না, যারা তাকে সাহায্য করতে পারে এবং সে নিজেও আত্মরক্ষা করতে পারল না

[28:82]

গতকল্য যারা তার মত হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছিল, তারা প্রত্যুষে বলতে লাগল, হায়, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন ও হ্রাস করেনআল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করলে আমাদেরকেও ভূগর্ভে বিলীন করে দিতেনহায়, কাফেররা সফলকাম হবে না

[28:83]

এই পরকাল আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় নাখোদাভীরুদের জন্যে শুভ পরিণাম

[28:84]

যে সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে তদপেক্ষা উত্তম ফল পাবে এবং যে মন্দ কর্ম নিয়ে আসবে, এরূপ মন্দ কর্মীরা সে মন্দ কর্ম পরিমানেই প্রতিফল পাবে

[28:85]

যিনি আপনার প্রতি কোরআনের বিধান পাঠিয়েছেন, তিনি অবশ্যই আপনাকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেনবলুন আমার পালনকর্তা ভাল জানেন কে হেদায়েত নিয়ে এসেছে এবং কে প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে আছে

[28:86]

আপনি আশা করতেন না যে, আপনার প্রতি কিতাব অবর্তীর্ণ হবেএটা কেবল আপনার পালনকর্তার রহমতঅতএব আপনি কাফেরদের সাহায্যকারী হবেন না

[28:87]

কাফেররা যেন আপনাকে আল্লাহর আয়াত থেকে বিমুখ না করে সেগুলো আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হওয়ার পর আপনি আপনার পালনকর্তার প্রতি দাওয়াত দিন এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না

[28:88]

আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহবান করবেন নাতিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেইআল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধবংস হবেবিধান তাঁরই এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে